নিয়্যত বা ইচ্ছা ও ইরাদা-১

আসসালামু’আলাইকুম

 

উইকিপিডিয়া বাংলা অনুযায়ী–

নিয়ত (Arabic: نیّة) আরবী শব্দ। এর বাংলা অর্থঃ ইচ্ছা করা, মনস্ত করা, এরাদা করা, সংকল্প করা। (মুনজিদ, ৮৪৯/ ফতহুল বারী, ১/১৭)] ইচ্ছাই কাজের পূর্বশর্ত।

https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%A4

নিয়ত আরবী শব্দ (نية বা نيَّة) এর আভিধানিক অর্থ: উদ্দেশ্য, অভিপ্রায়, অভিলাষ, মনোবাঞ্ছা, মনের ঝোঁক, কোনো কিছু করার ইচ্ছা, কোনো কাজের প্রতি মনকে ধাবিত করা ইত্যাদি। ইংরেজিতে বলা হয় Intension

শরীয়াতের দৃষ্টিতে আল্লাহতা’আলার সন্তুষ্টি লাভ ও তাঁর আদেশ পালনের উদ্দেশ্যে কোন কাজ করার দিকে হৃদয় মনের লক্ষ্য আরোপ ও উদ্যোগকে নিয়্যত বলে।

আল্লামা খাত্তাবী র. বলেছেন-মনে কোন কাজ করার সদিচ্ছা পোষন করা এবং উহা বাস্তবায়নের জন্য প্রানপন চেষ্টা করাকে নিয়ত বলা হয়।

মোট কথা কোন কাজের পিছনে যে উদ্দেশ্য মানব মনে ক্রিয়াশীল থাকে, চাই সেটা ভালো কাজ বা মন্দ কাজ হউক সেটাকেই নিয়্যত নামে অভিহিত করা হয়।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ وَيُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُواْ ٱلزَّكَوٰةَۚ وَذَٰلِكَ دِينُ ٱلۡقَيِّمَةِ  [البينة: ٥

“তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে এবং নামায কায়েম করতে ও যাকাত প্রদান করতে। আর এটাই সঠিক ধর্ম।” [সূরা আল-বাইয়িনাহ: ০৫]

তবে তাদের মধ্য থেকে যারা তাওবা করবে, নিজেদের কর্মনীতি সংশোধন করে নেবে, আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে এবং নিজেদের দীনকে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে নেবে, তারা মুমিনদের সাথে থাকবে৷ আর আল্লাহ নিশ্চিয়ই মুমিনদেরকে মহাপুরস্কার দান করবেন৷সূরা নিসাঃ১৪৬

উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন:

لا عمل لمن لا نية له، ولا أجر لمن لا حسبة له

“যার নিয়ত নেই তার কোনো আমল নেই। এবং যার কোনো সাওয়াবের উদ্দেশ্য নেই তার কোনো পুরস্কার  নেই।” [যাদুদ দায়িয়াহ-৬]

আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন:

لا ينفع قول إلا بعمل، ولا عمل إلا بنية، ولا ينفع قول ولا عمل ولا نية إلا بما وافق السنة

“কাজ বা আমল ছাড়া কথায় কোনো ফল নেই। আর বিশুদ্ধ নিয়ত ব্যতীত কাজ বা আমল অসার। আবার কর্ম, কথা ও নিয়ত কোনোটিই কাজে আসবে না, যতক্ষণ না তা রাসূলের সুন্নাতের অনুসারে করা হবে।[যাদুদ দায়িয়াহ-৬]

“বলুন, তোমাদের মনে যা আছে তা যদি তোমরা গোপন রাখ কিংবা প্রকাশ করে দাও, আল্লাহ তা‘আলা তা অবগত আছেন।” [সূরা আলে ইমরান: ২৯]

উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি যে, “যাবতীয় কার্য নিয়ত বা সংকল্পের উপর নির্ভরশীল। আর মানুষের জন্য তাই প্রাপ্য হবে, যার সে নিয়ত করবে। অতএব যে ব্যক্তির হিজরত (স্বদেশত্যাগ) আল্লাহর (সন্তোষ লাভের) উদ্দেশ্যে ও তাঁর রসূলের জন্য হবে; তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রসূলের জন্যই হবে। আর যে ব্যক্তির হিজরত পার্থিব সম্পদ অর্জন কিংবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যেই হবে, তার হিজরত যে সংকল্প নিয়ে করবে তারই জন্য হবে।” (বুখারী ১নং, মুসলিম ১৯০৭নং)

এই হাদীসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইমাম শাফেয়ী (রঃ) ও ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল (রঃ) এটিকে ‘এক তৃতীয়াংশ অথবা অর্ধেক দ্বীন’ বলে অভিহিত করেছেন।

 

 

নিয়ত ও ইরাদার মাঝে মূল পার্থক্য হলো কোন কাজের পিছনে মানব মনে যে উদ্দেশ্য কাজ করে তা হলো নিয়্যত এবং শুধুমাত্র কাজের উদ্যোগ গ্রহন করার মনের অবস্থা হলো ইরাদা।

আরেকটু বিস্তারিত পার্থক্যে যাওয়ার জন্য  নিচের অংশটুকু নেট থেকে সংগ্রহ করা হলো–

ভাষাতত্ত্ববিদদের মতে, মনের মধ্যে কোনো ভাবের উদয় হলে, সে ভাব অনুযায়ী ‘আমল করা কিংবা না করার কোনো দিকেই মন ধাবিত না হলে, মনের ভেতরে ঘুরপাক খাওয়া সে ভাবকে বলা হয় হাদসুন-নাফস বা ওয়াস্ওয়াসা।

আর সে ভাবকে বাস্তবে রূপদানের জন্য মনকে ধাবিত করার নাম ‘হাম্ম’ বা নিয়ত (অভিপ্রায়) এবং মজবুত নিয়তকে বলা হয় ‘আযম তথা সংকল্প।[ইযাহুল মিশকাত বাংলা (১/২৪৭)]

আবার  নিয়ত  (অভিপ্রায়) এবং ইরাদাহ (ইচ্ছা) শব্দ দু’টি বাহ্যত সমার্থক মনে হলেও এবং কখনো কখনো এক অর্থে ব্যবহৃত হওয়া সত্ত্বেও উভয়ের মাঝে কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন,

এক. ইরাদাহ (ইচ্ছা)-এর সম্পর্ক নিজের কাজের সাথেই নির্দিষ্ট নয়; বরং অন্যের কাজের সাথেও ইরাদাহ (ইচ্ছা)-এর সম্পর্ক হতে পারে। পক্ষান্তরে নিয়তের সম্পর্ক শুধু নিয়তকারীর কাজের সাথেই হয়ে থাকে। যেমন, এটা বলা চলে যে, “আমি তোমার নিকট এ ধরণের আচরণের ইরাদাহ বা ইচ্ছা (কামনা) করি নি” কিন্তু এভাবে বলা যায় না যে, ‘‘আমি তোমার নিকট এ ধরণের আচরণের নিয়ত বা উদ্দেশ্য করি নি।”

দুই. ইরাদাহ (ইচ্ছা) সম্ভাব্য কাজের ব্যাপারেই কেবল ব্যবহৃত হয়। পক্ষান্তরে নিয়ত শব্দটি সম্ভব-অসম্ভব সকল কাজের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আর এজন্যই আল্লাহর ব্যাপারে নিয়ত শব্দের ব্যবহার করা যায় না। যেহেতু তাঁর নিকট সবকিছুই সম্ভব তাই তিনি কোনো কাজ করার ইরাদাহ বা  ইচ্ছা করেন, নিয়ত নয়। তবে যেহেতু কখনো কখনো উভয় শব্দ একই অর্থে ব্যবহৃত হয় তাই কুরআন মাজীদে অনেক স্থানে আল্লাহ তা‘আলা ইরাদাহ শব্দটিকে নিয়ত অর্থে ব্যবহার করেছেন।[ডক্টর ওসমান শাব্বীর: القواعد الكلية والضوابط الفقهية[৯৩-৯৪],] নিয়্যত একটি তাত্তিক পর্যালোচনা লেখকঃ সাইফুল ইসলাম

 

এবার আসি মহান রবের ইবাদাতের ক্ষেত্রে নিয়্যতের ভূমিকাঃ

১। মাকসুদা বা মূল উদ্দেশ্য

এখানে সাওয়াবের সাথে দায়িত্বমুক্তির ব্যাপার যুক্ত। যেমন সালাত সাওম।

আর তাই এইক্ষেত্রে ইবাদাত বিশুদ্ধ ও কবুল হওয়ার জন্য নিয়্যত পূর্ব শর্ত।

২। গায়রে মাকসুদা বা মাধ্যম

মূল উদ্দেশ্যের জন্য মাধ্যম। যেমন অযু তায়াম্মুম। এইক্ষেত্রে নিয়্যত ব্যতিরেকে শুদ্ধ হবে কিন্তু সাওয়াব পাওয়া যাবে না।

ফরয গোসল ব্যতিত স্বাভাবিক গোসলে যদি নিয়্যত থাকে তবে সাওয়াব পাওয়া যাবে।ফরয গোসলের ক্ষেত্রে নিয়্যত অত্যাবশ্যক।

 

https://www.youtube.com/watch?v=2NvhLpiQTpc

 

https://www.youtube.com/watch?v=wGWovmpGKio