হযরত নূহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনী

আসসালামু’আলাইকুম

দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে

 

‘শীথ আ এর পরবর্তী অনেক সময় পর্যন্ত ঘটনা সহিহভাবে জানা যায় না। অনেক বর্ননা শুনা যায় যা ইসরাইলী বই থেকে নেয়া। কিন্তু প্রায় ৮ম বা ১০ম অধঃস্তন পুরুষ  এর মাঝে হযরত নূহ আ কে ১ম রাসূল হিসেবে মনোনিত করেন মহান আল্লাহ।  তিনিঁই ছিলেন প্রথম রাসূল যিনি শিরক থেকে পরিচ্ছন্ন করতে দাওয়া দিয়েছিলেন।

আবুল বাশার ছানী’ (ابوالبشرالثانى ) বা মানবজাতির দ্বিতীয় পিতা বলে খ্যাত নূহ (আলাইহিস সালাম) ছিলেন, পিতা আদম (আলাইহিস সালাম)-এর দশম অথবা অষ্টম অধঃস্তন পুরুষ।

তিনি ছিলেন দুনিয়াতে ১ম রাসূল।( মুসলিম হা/৩২৭ ‘ঈমান’ অধ্যায় ৮৪ অনুচ্ছেদ)

নূহ (আঃ)-এর চারজন পুত্র ছিলঃ সাম, হাম, ইয়াফিছ ও ইয়াম অথবা কেন‘আন।(কুরতুবী, সূরা আনকাবূত ১৪ আয়াতের ব্যাখ্যা।)

রাসূলুল্লাহ (সা) আরও বলেন যে,

‘সাম আরবের পিতা, হাম হাবশার পিতা এবং ইয়াফেছ রোমকদের (গ্রীক) পিতা’

ইবনু আববাস ও ক্বাতাদাহ (রাঃ) বলেন, পরবর্তী মানব জাতি সবাই নূহের বংশধর’।

(তিরমিযী হা/৩২৩০-৩১; আলবানী সনদ ‘যঈফ’ বলেছেন; আহমাদ হা/১৯৯৮২ তাহকীকঃ হামযাহ আহমাদ; হাকেম ২/৫৪৬ পৃঃ; তিনি একে ‘ছহীহ’ বলেছেন ও যাহাবী তাকে সমর্থন করেছেন।)

প্রথম তিনজন ঈমান আনেন। কিন্তু শেষোক্ত জন কাফের হয়ে প্লাবনে ডুবে মারা যায়।

নূহ (আঃ)-এর দাওয়াতে তাঁর কওমের হাতেগণা মাত্র কয়েকজন ঈমানদার ব্যক্তি সাড়া দেন এবং তারাই প্লাবনের সময় নৌকারোহণের মাধ্যমে নাজাত পান। নূহের কিশতীতে কয়জন ঈমানদার ব্যক্তি আরোহণ করে নাজাত পেয়েছিলেন, সে বিষয়ে কুরআনে বা হাদীছে কোন কিছুই বর্ণিত হয়নি। অমনিভাবে কিশতীটি কত বড় ছিল, কিভাবে ও কত দিনে তৈরী হয়েছিল, এসব বিষয়েও কিছু বর্ণিত হয়নি। এসব বিষয়ে যা কিছু বিভিন্ন তাফসীরে বর্ণিত হয়েছে, সবকিছুর ভিত্তি হ’ল ইস্রাঈলী উপকথা সমূহ। যার সঠিক কোন ভিত্তি নেই।( কুরতুবী টীকা সূরা হূদ ৩৮-৪০ আয়াত)

সামাজিক প্রেক্ষাপটঃ

আদম (আঃ)-এর সময়ে ঈমানের সাথে শিরক ও কুফরের মুকাবিলা ছিল না। তখন সবাই তওহীদের অনুসারী একই উম্মতভুক্ত ছিল (বাক্বারাহ ২/২১৩)। তাঁর শরী‘আতের অধিকাংশ বিধানই ছিল পৃথিবী আবাদকরণ ও মানবীয় প্রয়োজনাদির সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু কালের বিবর্তনে মানুষের মধ্য শিরকের অনুপ্রবেশ ঘটে।

মুহাম্মাদ ইবনু ক্বায়েস বলেন, আদম ও নূহ (আঃ)-এর মধ্যবর্তী সময়কালের এই পাঁচজন ব্যক্তি নেককার ও সৎকর্মশীল বান্দা হিসাবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তাঁদের মৃত্যুর পর ভক্ত অনুসারীগণকে শয়তান এই বলে প্ররোচনা দেয় যে, এইসব নেককার মানুষের মূর্তি সামনে থাকলে তাদের দেখে আল্লাহর প্রতি ইবাদতে অধিক আগ্রহ সৃষ্টি হবে। ফলে তারা তাদের মূর্তি বানায়। অতঃপর উক্ত লোকদের মৃত্যুর পরে তাদের পরবর্তীগণ শয়তানের ধোঁকায় পড়ে ঐ মূর্তিগুলিকেই সরাসরি উপাস্য হিসাবে পূজা শুরু করে দেয়। তারা এইসব মূর্তির অসীলায় বৃষ্টি প্রার্থনা করত। (বুখারী মওকুফ সূত্রে আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হ’তে এটি বর্ণনা করেন ‘তাফসীর’ অধ্যায় হা/৪৯২০)।

আর এভাবেই পৃথিবীতে প্রথম মূর্তিপূজার শিরকের সূচনা হয়।

এই মূর্তিগুলি পরবর্তীকালে আরবদের মধ্যেও চালু ছিল। ‘ওয়াদ’ ছিল বনু কালবের জন্য দূমাতুল জান্দালে, সুওয়া‘ ছিল বনু হোযায়েলের জন্য, ইয়াগূছ ছিল বনু গুত্বায়েফ-এর জন্য জুরুফ নামক স্থানে, ইয়া‘ঊক্ব ছিল বনু হামদানের জন্য এবং নাসর ছিল হিমইয়ার গোত্রের বনু যি-কালা এর জন্য’। বুখারী ‘তাফসীর’ অধ্যায় হা/৪৯২০; তাফসীর ইবনে কাছীর, সূরা নূহ।

“তারা বলেছে,তোমরা নিজেদের দেব-দেবীদের কোন অবস্থায় পরিত্যাগ করো না৷ আর ওয়াদ, সুওয়াআ, ইয়াগুস, ইয়াউক, এবং নাসরকেও পরিত্যাগ করো না৷ সূরা নূহঃ ২৩

ইবনু আবী হাতেম-এর বর্ণনায় এসেছে যে, ‘ওয়াদ’ ছিল এদের মধ্যে প্রথম এবং সর্বাধিক নেককার ব্যক্তি। তিনি মারা গেলে লোকেরা তার প্রতি ভক্তিতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। শয়তান এই সুযোগ গ্রহণ করে এবং লোকদেরকে তার মূর্তি বানাতে প্ররোচনা দেয়। ফলে ওয়াদ-এর মূর্তিই হল পৃথিবীর সর্বপ্রথম মূর্তি, আল্লাহকে বাদ দিয়ে যার পূজা শুরু হয়। (তাফসীর ইবনে কাছীর, সূরা নূহ)

পৃথিবীর প্রাচীনতম শিরক হ’ল নেককার মানুষের কবর অথবা তাদের মূর্তিপূজা। যা আজও প্রায় সকল ধর্মীয় সমাজে চালু আছে এবং বর্তমানে যা মুসলিম সমাজে স্থানপূজা, কবর পূজা, ছবি-প্রতিকৃতি, মিনার ও ভাষ্কর্য পূজায় রূপ নিয়েছে। উক্ত পাঁচটি মূর্তির মাহাত্ম্য ও তাদের প্রতি ভক্তি লোকদের হৃদয়ে এমনভাবে প্রোথিত হয়েছিল যে, তারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এবং পারস্পরিক চুক্তি সম্পাদনকালে তাদের নাম উল্লেখ করত। এতদ্ব্যতীত তারা নানাবিধ সামাজিক অনাচারে ডুবে গিয়েছিল। সম্প্রদায়ের এইরূপ পতন দশায় আল্লাহ তাদের হেদায়াতের জন্য নূহ (আঃ)-কে রাসূল হিসাবে প্রেরণ করেন (আ‘রাফ ৭/৬১)।

“নুহকে আমি তার সম্প্রদায়ের কাছে পাঠাই৷ সে বলেঃ হে আমার স্বগোত্রীয় ভাইয়েরা! আল্লাহর ইবাদত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই৷  আমি তোমাদের জন্য একটি ভয়াবহ দিনের আযাবের আশংকা করছি৷

তার সম্প্রদায়ের প্রধানরা জবাব দেয়ঃ আমরা তো দেখতে পাচ্ছি তুমি সুষ্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত হয়েছো৷

নূহ বলেঃ হে আমার সম্প্রদায়ের ভাইয়েরা!আমি কোন গোমরাহীতে লিপ্ত হইনি বরং আমি রব্বুল আলামীনের রসূল৷ তোমাদের কাছে আমার রবের বানী পৌঁছে দিচ্ছি৷ আমি তোমাদের কল্যাণকামী৷ আল্লাহর পক্ষ থেকে আমি এমন সব কিছু জানি যা তোমার জান না৷ তোমরা কি এ জন্য অবাক হচ্ছো যে, তোমাদের কাছে তোমাদের স্বীয় সম্প্রদায়েরই এক ব্যক্তির মাধ্যমে তোমাদের রবের স্মারক এসেছে, তোমাদেরকে সতর্ক করার জন্যে যাতে তোমরা ভূল পথে চলা থেকে রক্ষা পাও এবং তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়”?   সূরা আরাফঃ ৫৯-৬৩

(তাফহীমুল কুর’আন তাফসির)-

{হযরত নূহ আলাইহিস সালাম ও তার সম্প্রদায় থেকে এ ঐতিহাসিক বিবরণের সূচনা করা হযেছে৷ কারণ কুরআনের দৃষ্টিতে হযরত আদম আলাইহিস সালাম তাঁর সন্তানদের যে সৎ ও সুস্থ জীবনে প্রতিষ্ঠিত করে যান, তাতে প্রথম বিকৃতি দেখা দেয় হযরত নূহের যুগে এবং এরি সংশোধন ও এ জীবনে ব্যব্স্থাকে আবার সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্যে মহান আল্লাহ হযরত নূহকে পাঠান৷

কুরআনের ইংগিত ও বাইবেলের সুষ্পষ্ট বর্ণনার পর একথা আজ নিশ্চিতভাবে চিহ্নিত হয়ে গেছে যে, বর্তমান ইরাকেই হযরত নূহের সম্প্রাদায়ের বসবাস ছিল৷ বেবিলনের প্রাচীন ধ্বংসাবশেসে অভ্যন্তরে বাইবেলের চাইতেও যে প্রাচীন লিপি পাওয়া গেছে , তা থেকেও এর সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যায়৷ কুরআনে ও তাওরাতে যে ঘটনা বর্নিত হয়েছে ঐ প্রাচীন লিপিতেও তদ্রুপ এক কাহিনীর উল্লেখ পাওয়া যায়৷ ঘটনাটি মুসেল এর আশেপাশে ঘটেছিল বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে৷ আবার কুর্দিস্তান ও আরমেনিয়া এলাকায় প্রাচীনকাল থেকে বংশ পরম্পরায় যেসব কিংবদন্তী চলে আসছে তা থেকেও জানা যায় যে, প্লাবনের পর হযরত নূহের নৌকা এ এলাকার কোন এক স্থানে থেমেছিল৷ আজো মুসেলের উত্তরে ইবনে উমর দ্বীপের আশেপাশে এবং আরমেনিয়া সীমান্তে “আরারাত” পাহাড়ের আশেপাশে নূহ আলাইহিস সালামের বিভিন্ন নিদর্শন চিহ্নিত করা হয়ে থাকে৷ ‘নখচীওয়ান’ শহরের অধিবাসীদের মধ্যে আজো এ প্রবাদ প্রচলিত যে, হযরত নুহ এ শহরের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন৷

নূহের প্লাবনের মত প্রায় একই ধরনের ঘটনার কথা গ্রীক, মিসর, ভারত ও চীনের প্রাচীন সাহিত্যেও পাওয়া যায়৷এছাড়াও বার্মা, মালয়েশিয়া, পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ, অষ্ট্রেলিয়া , নিউগিনি এবং আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন এলাকায় ও এ একই ধরনের কিংবদন্তী প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে৷ এ থেকে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে , এ ঘটনাটি এমন এক সময়ের সাথে সম্পর্কিত যখন সমগ্র মানব জাতির দুনিয়ার একই এলাকায় অবস্থান করতো, তারপর সেখান থেকে তাদের বংশধরেরা দুনিয়ার চতুরদিকে ছড়িয়ে পড়ে৷ তাই সকল জাতি তাদের উন্মেষকালীন ইতিহাসে একটি সর্বব্যাপী প্লাবনের ঘটনা নির্দেশ করেছে৷ অবশ্য কালের আবর্তনের এর যথার্থ বিস্তারিত তথ্যাদি তারা বিস্মৃত হয়ে গেছে এবং প্রত্যেকে নিজের চিন্তা-ভাবনা অনুযায়ী আসল ঘটনার গায়ে প্রলেপ লাগিয়ে এক একটা বিরাট কল্পকাহিনী তৈরী করে নিয়েছে৷

এ ব্যাপারটি ঘটেছিল হযরত নূহ (আ) ও তাঁর জাতির মধ্যে ৷ ঠিক এ একই ধরনের ঘট্না ঘটছিল হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্যে৷হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)এর নবুওয়াতের বিরুদ্ধে যেসব সন্দেহ প্রকাশ করছিল সেই একই ধরনের সন্দেহ হাজার হাজার বছর আগে হযরত নূহের সম্প্রদায়ের প্রধানরাও পেশ করেছিল৷ আবার এসবের জবাবে হযরত নূহ (আ) যেসব কথা বলতেন, হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ও সেই একই কথা বলতেন৷ পরবর্তীতে অন্যান্য নবীদের ও তাদের জাতির যেসব ঘট্না ধারাবাহিকভাবে বর্ণিত হয়েছে সেখানেও এটাই দেখানো হয়েছে যে, প্রত্যেক নবীর জাতির ভূমিকা মক্কাবাসীদের ভূমিকার সাথে এবং প্রত্যেক নবীর ভাষণ মুহাম্মাদ (সাঃ) এর ভাষনের সাথে পুরোপুরি সাদৃশ্য রাখে৷ এর সাহায্যে কুরআন তার পাঠক ও শ্রোতাদেরকে একথা বুঝাতে চায় যে, প্রতি যুগে মানুষের গোমরাহী মূলগতভাবে একই ধরনের ছিল এবং আল্লাহর পাঠানো মানবতার শিক্ষকদের দাওয়াতও প্রতি যুগে প্রত্যকেটি দেশে একই রকম ছিল৷ অনুরূপভাবে যারা নবীদের দাওয়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং নিজেদের গোমরাহীর নীতিতে অবিচল থেকেছে তাদের পরিণামও একই হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে৷

নূহের কওমের উপাস্যদের দেবীদের মধ্য থেকে  সেসব দেব-দেবীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে পরবর্তীকালে মক্কাবাসীরা যাদের পূজা করতে শুরু করেছিল এবং ইসলামের প্রাথমিক যুগে আরবের বিভিন্ন স্থানে তাদের মন্দির ও বর্তমান ছিল৷ এটা অসম্ভব নয় যে, মহা প্লাবনে যেসব লোক রক্ষা পেয়েছিল পরবর্তী বংশধরগণ তাদের মুখ থেকে নূহের (আ) জাতির প্রাচীন উপাস্য দেব-দেবীদের নাম শুনেছিল এবং পরে তাদের বংশধরদের নতুন করে জাহেলিয়াত ছড়িয়ে পড়লে তারা সেসব -দেব-দেবীর প্রতিমা তৈরী করে তাদের পূজা অর্চন শুরু করেছিল৷

“ওয়াদ্দ” ছিল “কুদা”আ” গোত্রের “বনী কালব ইবনে দবরা” শাখার উপাস্য দেবতা৷ “দামাতুল জানদাল” নামক স্থানে তারা এর বেদী নির্মাণ করে রেখেছিল৷ আরবের প্রাচীন শিলা লিপিতে তার নাম “ওয়াদ্দম আবাম”(ওয়াদ্দ বাপু) উল্লেখিত আছে৷ কালবীর মতে তার মূর্তি ছিল এক বিশালদেহী পুরুষের আকৃতিতে নির্মিত৷ কুরাইশরাও তাকে উপাস্য দেবতা হিসেবে মানতো৷ তাদের কাছে এর নাম ছিল “উদ্দ”৷ তার নামা অনুসারে ইতিহাসে “আবদে উদ্দ” নামে এক ব্যক্তির উল্লেখ দেখা যায়৷

“সুওয়া” ছিল হুযাইল গোত্রের দেবী৷ তার মুর্তি ছিল নারীর আকৃতিতে তৈরী৷ ইয়াম্বুর সন্নিকটেস্থ “রুহাত” নামক স্থানে তার মন্দির ছিল৷

“ইয়াগুস” ছিল “তায়” গোত্রের “আনউম” শাখায় এবং “মাযহিজ” গোত্রের কোন কোন শাখার উপাস্য দেবতা৷ “মাযহিজে”র শাখা গোত্রের লোকেরা ইয়ামান ও হিজাযের মধ্যবর্তী “জুরাশ” নামক স্থানে তার সিংহাকৃতির মূর্তি স্থাপন করে রেখেছিল৷ কুরাইশ গোত্রেরাও কোন কোন লোকের নাম আবদে ইয়াগুস ছিল বলে দেখা যায়৷

“ইয়াউক” ইয়ামানের হামদান অঞ্চলের অধিবাসী হামদান গোত্রের “খাওয়ান” শাখার উপাস্য দেবতা ছিল এর মূর্তি ছিল ঘোড়ার আকৃতির৷

“নাসর” ছিল হিমইয়ার অঞ্চলের হিমইয়র গোত্রের “আলে যুল-কুলা শাখার দেবতা৷ বালখা” নামক স্থানে তার মূর্তি ছিল৷ এ মূর্তির আকৃতি ছিল শকুনের মত৷ সাবার প্রাচীন শিলালিপিতে এর নাম উল্লেখিত হয়েছে “নাসূর”৷ এর মন্দিরকে লোকেরা “বায়তে নাসূর” বা নাসূরের ঘর এবং এর পূজারীদের “আহলে নাসূর ” বা নাসূরের পূজারী বলতো৷ প্রাচীন মন্দিরসমূহের যে ধ্বংসাবশেষ আরব এবং তার সন্নিহিত অঞ্চলসমূহে পাওয়া যায় সেসব মন্দিরের অনেকগুলোর দরজায় শকুনের চিত্র খোদিত দেখা যায়৷}

স্বীয় কওমের প্রতি নূহ (আঃ)-এর দাওয়াত

আল্লাহ বলেন,

‘আমরা নূহকে তার কওমের নিকটে প্রেরণ করলাম তাদের উপরে মর্মান্তিক আযাব নাযিল হওয়ার পূর্বেই তাদেরকে সতর্ক করার জন্য।‘নূহ তাদেরকে বলল, হে আমার জাতি! আমি তোমাদের জন্য স্পষ্ট সতর্ককারী।‘এ বিষয়ে যে তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।‘তাতে আল্লাহ তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দিবেন। তবে এটা নিশ্চিত যে, আল্লাহর নির্ধারিত সময় যখন এসে যাবে, তখন তা এতটুকুও পিছানো হবে না। যদি তোমরা তা জানতে’ (নূহ ৭১/১-৪)।

অতঃপর তিনি তাদেরকে শিরক পরিত্যাগ করে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর ইবাদতে ফিরিয়ে আনার জন্য বান্দার উপরে আল্লাহর অসংখ্য অনুগ্রহ ও অগণিত নেমতরাজির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন,

‘তোমরা কি লক্ষ্য কর না, আল্লাহ কিভাবে সপ্ত আকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন।‘সেখানে তিনি চন্দ্রকে রেখেছেন আলো রূপে এবং সূর্যকে রেখেছেন প্রদীপ রূপে।‘আল্লাহ তোমাদেরকে মাটি থেকে উদ্গত করেছেন।‘অতঃপর তাতে ফিরিয়ে নিবেন ও আবার পুনরুত্থিত করবেন’। ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য যমীনকে করেছেন বিছানা সদৃশ।‘যাতে তোমরা চলাফেরা করতে পার প্রশস্ত রাস্তাসমূহে। (নূহঃ১৫-২০)।

নূহ (আঃ) স্বীয় কওমকে দিন-রাত দাওয়াত দিতে থাকেন। তিনি তাদেরকে প্রকাশ্যে ও গোপনে বিভিন্ন পন্থায় ও পদ্ধতিতে দাওয়াত দেন। কিন্তু ফলাফল হয় নিতান্ত নৈরাশ্যজনক। তাঁর দাওয়াতে অতিষ্ট হয়ে তারা তাঁকে দেখলেই পালিয়ে যেত। কখনো কানে আঙ্গুল দিত। কখনো তাদের চেহারা কাপড় দিয়ে ঢেকে ফেলতো। তারা তাদের হঠকারিতা ও যিদে অটল থাকত এবং চরম ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করত’ (নূহঃ ৬-৯)।

এক সময় কওমের সর্দাররা লোকদের ডেকে বলল,

وَقَالُوا لاَ تَذَرُنَّ آلِهَتَكُمْ وَلاَ تَذَرُنَّ وَدّاً وَلاَ سُوَاعاً وَّلاَ يَغُوثَ وَيَعُوقَ وَنَسْراً- (نوح ২১-২৩)-

(খবরদার!) ‘তোমরা তোমাদের পূর্ব পুরুষদের পূজিত উপাস্য ওয়াদ, সুওয়া‘, ইয়াগূছ, ইয়াঊক্ব, নাসর-কে কখনোই পরিত্যাগ করবে না’। (এভাবে) ‘তারা বহু লোককে পথভ্রষ্ট করে এবং (তাদের ধনবল ও জনবল দিয়ে) নূহ-এর বিরুদ্ধে ভয়ানক সব চক্রান্ত শুরু করে।(নূহঃ২১-২৩)।

নূহ (আঃ)-এর বিরুদ্ধে পাঁচটি আপত্তি

কওমের অবিশ্বাসী নেতারা জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য নূহ (আঃ)-এর বিরুদ্ধে পাঁচটি আপত্তি উত্থাপন করেছিল।যা কুর’আন থেকে জানা যায় (হূদঃ২৭,মুমিনূনঃ২৪-২৫)

যথাঃ

(১) আপনি তো আমাদের মতই একজন মানুষ। নবী হ’লে তো ফেরেশতা হতেন।

(২) আপনার অনুসারী হ’ল আমাদের মধ্যকার হীন ও কম বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরা

(৩) কওমের উপরে আপনাদের কোন প্রাধান্য পরিদৃষ্ট হয় না।

(৪) আপনার দাওয়াত আমাদের বাপ-দাদাদের রীতি বিরোধী

(৫) আপনি আসলে নেতৃত্বের অভিলাষী। অতএব আপনাকে আমরা মিথ্যাবাদী মনে করি।

“জবাবে সেই কওমের সরদাররা, যারা তার কথা মানতে অস্বীকার করেছিল, বললোঃ “আমাদের দৃষ্টিতে তুমি তো ব্যস আমাদের মতো একজন মানুষ বৈ আর কিছুই নও৷ আর আমরা তো দেখছি আমাদের সমাজের মধ্যে যারা অত্যন্ত নিকৃষ্ট ও নিম্বশ্রেণীর ছিল তারাই কোন প্রকার চিন্তা-ভাবনা না করে তোমার অনুসরণ করেছে৷ আমরা এমন কোন জিনিসও দেখছি না যাতে তোমরা আমাদের চেয়ে অগ্রবর্তী আছো৷বরং আমরা তো তোমাদের মিথ্যাবাদী মনে করি৷” (হূদঃ২৭)।

তার সম্প্রদায়ের যেসব সরদার তার কথা মেনে নিতে অস্বীকার করলো তারা বলতে লাগলো, ‘‘এ ব্যক্তি আর কিছুই নয় কিন্তু তোমাদেরই মতো একজন মানুষ৷এর লক্ষ্য হচ্ছে তোমাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা৷আল্লাহ পাঠাতে চাইলে ফেরেশতা পাঠাতেন ৷একথা তো আমরা আমাদের বাপদাদাদের আমলে কখনো শুনিনি (যে,মানুষ রসূল হয়ে আসে) ৷ কিছুই নয়, শুধুমাত্র এ লোকটিকে একটু পাগলামিতে পেয়ে বসেছে, কিছু দিন আরো দেখে নাও (হয়তো পাগলামি ছেড়ে যাবে)”৷(মুমিনূনঃ২৪-২৫)

এদের পূর্বে নূহের (আ) জাতিও অস্বীকার করেছে৷ তারা আমার বান্দাকে মিথ্যাবাদী বলে আখ্যায়িত করেছে, এবং বলেছে, এ লোকটি পাগল৷ উপরন্তু তাকে তীব্রভাবে তিরষ্কার ও করা হয়েছে৷ ক্বামারঃ ৯)।

জনগণকে ক্ষেপিয়ে তোলার জন্য নূহ-এর দাওয়াতকে ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক আন্দোলন বলে আখ্যায়িত করে কাফের নেতারা।

আপত্তি সমূহের জওয়াব

(১) গোত্রের নেতাদের উপরোক্ত আপত্তি ও অপবাদ সমূহের জবাবে নূহ (আঃ) বলেন,

قَالَ يَا قَوْمِ أَرَأَيْتُمْ إِنْ كُنْتُ عَلَى بَيِّنَةٍ مِّن رَّبِّيْ وَآتَانِيْ رَحْمَةً مِّنْ عِنْدِهِ فَعُمِّيَتْ عَلَيْكُمْ أَنُلْزِمُكُمُوْهَا وَأَنتُمْ لَهَا كَارِهُوْنَ- (هود ২৮)-

‘হে আমার কওম! আমি যদি আমার প্রভুর পক্ষ হতে স্পষ্ট দলীলের উপরে থাকি, আর তিনি যদি তাঁর পক্ষ হতে আমাকে রহমত দান করেন, আর সেসব থেকে যদি তোমাদের চক্ষু অন্ধ থাকে, তাহলে কি আমি তা তোমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তোমাদের উপরে চাপিয়ে দিতে পারি? (হূদ ১১/২৮)।

একথা দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, নবুওয়াত ও রিসালাত চেয়ে পাওয়া যায় না। এটা সস্পূর্ণরূপে আল্লাহর ইচ্ছাধীন। তিনি মানুষের জন্য কোন ফেরেশতাকে নয়, বরং তাঁর মনোনীত কোন মানুষকেই নবী করে পাঠিয়ে থাকেন স্পষ্ট দলীল-প্রমাণ সহকারে। নূহ (আঃ) তাঁর কওমকে আরও বলেন,

أَوَعَجِبْتُمْ أَنْ جَاءَكُمْ ذِكْرٌ مِّن رَّبِّكُمْ عَلَى رَجُلٍ مِّنكُمْ لِيُنْذِرَكُمْ وَلِتَتَّقُوا وَلَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ- (الأعراف ৬৪)-

‘তোমরা কি এ বিষয়ে আশ্চর্যবোধ করছ যে, তোমাদের পালনকর্তার পয়গাম তোমাদের মধ্য থেকেই একজনের মাধ্যমে তোমাদের কাছে এসেছে, যাতে সে তোমাদের ভীতি প্রদর্শন করে ও তার ফলে তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও। আল্লাহ বলেন, ‘কিন্তু তারা নূহকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে। তখন আমরা তাকে ও তার নৌকারোহী সাথীদেরকে মুক্ত করি এবং আমাদের আয়াত সমূহে মিথ্যারোপকারীদের ডুবিয়ে মারি। বস্ত্ততঃ তারা ছিল জ্ঞানান্ধ’ (আ‘রাফঃ ৬৩-৬৪)।

মুসলিম উম্মাহর মধ্যে একদল লোক শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে ‘নূরের নবী’ বলে পরোক্ষভাবে তাঁকে ‘ফেরেশতা নবী’ বানাতে চায়। এভাবে তারা বিগত যুগের কাফিরদের সন্দেহবাদের অনুসরণ করে মাত্র। অথচ আল্লাহ বলেন,

وَلَوْ جَعَلْنَاهُ مَلَكًا لَّجَعَلْنَاهُ رَجُلاً وَلَلَبَسْنَا عَلَيْهِم مَّا يَلْبِسُوْنَ- (الأنعام ৯)-

‘যদি আমরা কোন ফেরেশতাকে রাসূল করে পাঠাতাম, তবে সে মানুষের আকারেই হ’ত। কিন্তু এতেও তারা ঐ সন্দেহই প্রকাশ করত, যা এখন করছে’ (আন‘আম ৬/৯)।

(২) তাদের দ্বিতীয় আপত্তির জবাবে নূহ (আঃ) বলেন,

وَمَا أَنَا بِطَارِدِ الَّذِينَ آمَنُوْا إِنَّهُم مُّلاَقُوْ رَبِّهِمْ وَلَـكِنِّيْ أَرَاكُمْ قَوْماً تَجْهَلُوْنَ، وَيَا قَوْمِ مَن يَّنْصُرُنِيْ مِنَ اللهِ إِنْ طَرَدتُّهُمْ أَفَلاَ تَذَكَّرُوْنَ؟- (هود ২৯-৩০)-

‘আমি কোন (গরীব) ঈমানদার ব্যক্তিকে তাড়িয়ে দিতে পারি না। তারা অবশ্যই তাদের পালনকর্তার দীদার লাভে ধন্য হবে। বরং আমি তোমাদেরই মূর্খ দেখছি’। ‘হে আমার কওম! আমি যদি ঐসব লোকদের তাড়িয়ে দেই, তাহ’লে কে আমাকে আল্লাহর পাকড়াও থেকে রক্ষা করবে? তোমরা কি উপদেশ গ্রহণ করবে না? হূদঃ ২৯-৩০।

তারা জবাব দিল, “আমরা কি তোমাকে মেনে নেবো, অথচ নিকৃষ্টতম লোকেরা তোমার অনুসরণ করছে? নূহ বললো, “তাদের কাজ কেমন, আমি কেমন করে জানবো। তাদের হিসেব গ্রহণ করা তো আমার প্রতিপালকের কাজ৷ হায়! যদি তোমরা একটু সচেতন হতে৷ যে ঈমান আনে তাকে তাড়িয়ে দেয়া আমার কাজ নয়৷ আমি তো মূলত একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী৷ শো‘আরাঃ১১১-১১৫)

(৩) তৃতীয় আপত্তির জবাবে তিনি বলেন,

وَلاَ أَقُولُ لِلَّذِينَ تَزْدَرِي أَعْيُنُكُمْ لَن يُؤْتِيَهُمُ الله ُخَيْراً اللّهُ أَعْلَمُ بِمَا فِي أَنفُسِهِمْ إِنِّي إِذاً لَّمِنَ الظَّالِمِينَ- (هود ৩১)-

‘তোমাদের দৃষ্টিতে যারা দীনহীন-অবাঞ্ছিত ব্যক্তি তাদেরকে আল্লাহ কোনরূপ কল্যাণ দান করবেন না। তাদের মনের কথা আল্লাহ ভাল করেই জানেন। সুতরাং এমন কথা বললে আমি অন্যায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব’ (হূদঃ৩১)।

অতএব দুনিয়াবী প্রাধান্য মূলতঃ কোন প্রাধান্য নয়। পরকালীন উচ্চ মর্যাদাই হ’ল প্রকৃত মর্যাদা।

(৪) চতুর্থ আপত্তির জবাবে তিনি পয়গম্বরসুলভ উত্তর দিয়ে বলেন,

 

قَالَ يَا قَوْمِ لَيْسَ بِيْ ضَلاَلَةٌ وَلَكِنِّيْ رَسُوْلٌ مِّن رَّبِّ الْعَالَمِيْنَ، أُبَلِّغُكُمْ رِسَالاَتِ رَبِّيْ وَأَنْصَحُ لَكُمْ وَأَعْلَمُ مِنَ اللهِ مَا لاَ تَعْلَمُونَ (الأعراف ৬১-৬২)-

‘হে আমার কওম! আমার মধ্যে কোনই পথভ্রষ্টতা নেই। বরং আমি বিশ্বপালকের পক্ষ হ’তে প্রেরিত রাসূল’। ‘আমি তোমাদের নিকটে আমার প্রভুর রিসালাত পৌঁছে দেই এবং আমি তোমাদেরকে সদুপদেশ দিয়ে থাকি। কেননা আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন বিষয় জানি, যা তোমরা জানো না’ (আ‘রাফঃ৬১-৬২)।

অতএব আল্লাহ প্রদত্ত রিসালাত তথা অহী-র বিধান পালন করা ও তা জনগণের নিকটে পৌঁছে দেওয়াই আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য- পিতৃধর্ম পালন করা নয়। বস্ত্ততঃ বাপ-দাদার ধর্মের দোহাই নূহ (আঃ) থেকে শুরু করে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) পর্যন্ত সবাইকে দেওয়া হয়েছিল। আর সেকারণে প্রায় সকল নবীকেই স্ব স্ব জাতির নিকট থেকে চরম নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছিল।

(৫) অতঃপর নেতৃত্ব লাভের আশায় নূহ (আঃ) লোকদের নিকটে দাওয়াত দিচ্ছেন মর্মে তাদের পঞ্চম আপত্তির জবাবে তিনি স্পষ্টভাষায় বলে দেন যে,

 

وَيَا قَوْمِ لاَ أَسْئَلُكُمْ عَلَيْهِ مَالاً إِنْ أَجْرِيَ إِلاَّ عَلَى رَبِّ الْعَالَمِيْنَ- (الشعراء ১০৯)-

‘এই দাওয়াতের বিনিময়ে আমি তোমাদের কাছে কোন মাল-দৌলত বা কোন বিনিময় কামনা করি না। আমার পুরষ্কার তো কেবল বিশ্বপালকের (আল্লাহর) নিকটেই রয়েছে (শো‘আরাঃ১০৯)

তোমরা আমার নসীহত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছো৷(এতে আমার কি ক্ষতি করছো), আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাইনি৷ আমার প্রতিদান তো আল্লাহর কাছে৷ আমাকে হুকুম দেয়া হয়েছে (কেউ স্বীকার করুক বা না করুক) আমি যেন মুসলিম হিসেবে থাকি৷ (ইউনুসঃ৭২)

হে আমার কওম! এ কাজের জন্য আমি তোমাদের কাছে কোন অর্থ চাচ্ছি না৷আমার প্রতিদান তো আল্লাহর কাছেই রয়েছে৷ আর যারা আমার কথা মেনে নিয়েছে তাদেরকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়াও আমার কাজ নয়, তারা নিজেরাই নিজেদের রবের কাছে যাবে৷ কিন্তু আমি দেখছি তোমার মূর্খতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছ৷ (হূদঃ২৯)।

 

বস্তুতঃপক্ষে সকল নবীই একথা বলেছেন। শেষনবী মুহাম্মাদ সা-এর কাছে এসে তাঁর কওমের নেতারা যখন নেতৃত্ব গ্রহণের অথবা মাল-দৌলতের বিনিময়ে তাওহীদের দাওয়াত পরিত্যাগের প্রস্তাব দিয়েছিল, তখন তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, ‘যদি তোমরা আমার ডানহাতে সূর্য ও বামহাতে চন্দ্র এনে দাও, তথাপি আমি যে সত্য নিয়ে আগমন করেছি, তা পরিত্যাগ করব না’ (আর-রাহীক্ব পৃঃ ৯৭)।

বস্তুতঃ শিরকের মাধ্যমে দুনিয়া অর্জন সহজলভ্য হয় বিধায় যুগ যুগ ধরে দুনিয়াপূজারী এক শ্রেণীর বকধার্মিক লোক মূর্তি, কবর ও মাযার নিয়ে পড়ে আছে। লোকেরা তাদেরকে আল্লাহর অলী ভাবে। অথচ ওরা মূলতঃ শয়তানের অলী। ইবরাহীম (আঃ) এদের উদ্দেশ্যেই বলেছিলেন,

‘হে প্রভু! এ মূর্তিগুলি বহু লোককে পথভ্রষ্ট করেছে। এক্ষণে যারা আমার অনুগামী হয়েছে, কেবল তারাই আমার দলভুক্ত। আর যারা আমার অবাধ্যতা করেছে (তাদের ব্যাপারে আপনিই সবকিছু), নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (ইবরাহীমঃ৩৬)।

নিঃসন্দেহে যারা শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর সত্যিকারের অনুসারী হবে, কেবল তারাই আখেরাতে মুক্তি পাবে। যেহেতু ‘শিরকপন্থীদের জন্য আল্লাহ জান্নাতকে হারাম করেছেন’ (মায়েদাহ ৫/৭২),

সেহেতু শিরকের মাধ্যমে দুনিয়া অর্জনকারী লোকেরা এবং মুশরিক ব্যক্তিরা মুখে আল্লাহকে স্বীকার করলেও ওরা চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামের অধিবাসী হবে। অতএব হে মানুষ! শিরক হ’তে সাবধান হও!

নূহ (আঃ)-এর দাওয়াতের ফলশ্রুতি

আল্লাহ তা‘আলা নূহ (আঃ)-কে সাড়ে নয়শত বছরের সুদীর্ঘ জীবন দান করেছিলেন। তিনি এক পুরুষের পর দ্বিতীয় পুরুষকে অতঃপর তৃতীয় পুরুষকে শুধু এই আশায় দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছিলেন যে, তারা ঈমান আনবে।

কিন্তু শতাব্দীর পর শতাব্দী অক্লান্তভাবে দাওয়াত দেওয়া সত্ত্বেও তারা ঈমান আনেনি। মূলতঃ এই সময় নূহ (আঃ)-এর কওম জনবল ও অর্থবলে বিশ্বে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। সংখ্যাধিক্যের কারণে ইরাকের ভূখন্ড ও পাহাড়েও তাদের আবাস সংকুলান হচ্ছিল না।

আল্লাহর চিরন্তন নীতি এই যে, তিনি অবাধ্য জাতিকে সাময়িকভাবে অবকাশ দেন

“আল্লাহ এদের সাথে তামাশা করছেন, এদের রশি দীর্ঘায়িত বা ঢিল দিয়ে যাচ্ছেন এবং এরা নিজেদের আল্লাহদ্রোহিতার মধ্যে অন্ধের মতো পথ হাতড়ে মরছে” ৷  (বাক্বারাহঃ১৫)।

নূহের কওম সংখ্যাশক্তি ও ধনাঢ্যতার শিখরে উপনীত হয়ে দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। তারা নূহ (আঃ)-এর দাওয়াতকে তাচ্ছিল্য ভরে প্রত্যাখ্যান করেছিল। নূহ (আঃ) তাদেরকে দিবারাত্রি দাওয়াত দেন। কখনো গোপনে কখনো প্রকাশ্যে অর্থাৎ সকল পন্থা অবলম্বন করে তিনি নিজ কওমকে দ্বীনের পথে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করেন।

ইরশাদ হয়েছে–

“সে  বললোঃ হে আমার বর, আমি আমার কওমের লোকদের রাতদিন আহবান করেছি৷কিন্তু আমার আহবান তাদের দূরে সরে যাওয়াকে কেবল বাড়িয়েই তুলেছে৷

তুমি যাতে তাদের ক্ষমা করে দাও এ উদ্দেশ্যে আমি যখনই তাদের আহবান করেছি তখনই তারা কানে আঙুল দিয়েছে, এবং কাপড় দিয়ে মুখ ঢেলে নিয়েছে, নিজেদের আচরণে অনড় থেকেছে এবং অতি মাত্রায় ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছে৷

অতপর আমি তাদেরকে উচ্চকণ্ঠে আহবান জানিয়েছি৷

তারপর প্রকাশ্যে তাদের কাছে তাবলীগ করেছি এবং গোপনে চুপে চুপে বুঝিয়েছি”৷ (নূহঃ ৫-৯)

আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, এই সুদীর্ঘ দাওয়াতী যিন্দেগীতে তিনি যেমন কখনো চেষ্টায় ক্ষান্ত হননি, তেমনি কখনো নিরাশও হননি। সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে নানাবিধ নির্যাতনের সম্মুখীন হয়েও তিনি সবর করেন।

কওমের নেতারা বলল,

‘হে নূহ! যদি তুমি বিরত না হও, তবে পাথর মেরে তোমার মস্তক চূর্ণ করে দেওয়া হবে’ (শো‘আরাঃ১১৬)।

তবুও বারবার আশাবাদী হয়ে তিনি সবাইকে দাওয়াত দিতে থাকেন। আর তাদের জন্য দোআ করতে থাকেন।

ওদিকে তাঁর সম্প্রদায়ের অনীহা, অবজ্ঞা, তাচ্ছিল্য এবং ঔদ্ধত্য ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকে। মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব বলেন,

নিহত কোন নবী ব্যতীত অন্য কোন নবী তার কওমের নিকট থেকে নূহের মত নির্যাতন ভোগ করেননি’ (ইবনু কাছীর, সূরা আ‘রাফ ৫৯-৬২)। বলা চলে যে, তাদের অহংকার ও অত্যাচার চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছিল এবং পাপ ষোলকলায় পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। ফলে এক পর্যায়ে নূহ (আঃ) স্বীয় কওমকে ডেকে বললেন,

‘হে আমার কওম! যদি তোমাদের মাঝে আমার অবস্থিতি ও আল্লাহর আয়াত সমূহের মাধ্যমে তোমাদের উপদেশ দেওয়া ভারি বলে মনে হয়, তবে আমি আল্লাহর উপরে ভরসা করছি। এখন তোমরা তোমাদের যাবতীয় শক্তি একত্রিত কর ও তোমাদের শরীকদের সমবেত কর, যাতে তোমাদের মধ্যে কোনরূপ দ্বিধা-সংকোচ না থাকে। অতঃপর আমার ব্যাপারে একটা ফায়ছালা করে ফেল এবং আমাকে মোটেও অবকাশ দিয়ো না। ‘এরপরেও যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও। তবে জেনে রেখ, আমি তোমাদের কাছে কোনরূপ বিনিময় কামনা করি না। আমার বিনিময় কেবলমাত্র আল্লাহর নিকটেই রয়েছে। আর আমার প্রতি নির্দেশ রয়েছে যেন আমি আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হই’। ‘কিন্তু তারপরও তারা তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল…’ (ইউনুসঃ৭১-৭৩)।

বলা বাহুল্য যে, এটা ছিল কওমের দুরাচার নেতাদের প্রতি নূহ (আঃ)-এর ছুঁড়ে দেওয়া চ্যালেঞ্জ, যার মুকাবিলা করা তাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব ছিল না।

এ সময় আল্লাহ পাক অহী নাযিল করে বলেন,

أَنَّهُ لَن يُّؤْمِنَ مِنْ قَوْمِكَ إِلاَّ مَنْ قَدْ آمَنَ فَلاَ تَبْتَئِسْ بِمَا كَانُوْا يَفْعَلُوْنَ- (هود ৩৬)-

‘তোমার কওমের যারা ইতিমধ্যে ঈমান এনেছে, তারা ব্যতীত আর কেউ ঈমান আনবে না। অতএব তুমি ওদের কার্যকলাপে বিমর্ষ হয়ো না’ (হূদঃ৩৬)।

এভাবে আল্লাহর অহী মারফত তিনি যখন জেনে নিলেন যে, এরা কেউ আর ঈমান আনবে না। বরং কুফর, শিরক ও পথভ্রষ্টতার উপরেই ওরা যিদ করে থাকবে, তখন নিরাশ হয়ে তিনি প্রার্থনা করলেন,

قَالَ رَبِّ انصُرْنِي بِمَا كَذَّبُوْنِ- (مؤمنون ২৬)-

‘হে আমার পালনকর্তা! আমাকে সাহায্য কর। কেননা ওরা আমাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করেছে’ (মুমিনূন ২৩/২৬)।

فَافْتَحْ بَيْنِيْ وَبَيْنَهُمْ فَتْحًا وَنَجِّنِيْ وَمَن مَّعِيَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ- (الشعراء ১১৮)-

‘অতএব তুমি আমার ও তাদের মাঝে চূড়ান্ত ফয়ছালা করে দাও এবং আমাকে ও আমার সাথী মুমিনদেরকে তুমি (ওদের হাত থেকে) মুক্ত কর’ (শো‘আরা ২৬/১১৮)।

তিনি স্বীয় প্রভুকে আহবান করে বললেন,

فَدَعَا رَبَّهُ أَنِّيْ مَغْلُوْبٌ فَانْتَصِرْ- (القمر ১০)-

‘আমি অপারগ হয়ে গেছি। এক্ষণে তুমি ওদের বদলা নাও’ (ক্বামারঃ১০)।

তিনি অতঃপর চূড়ান্তভাবে বদ দো‘আ করে বললেন,

وَقَالَ نُوْحٌ رَّبِّ لاَ تَذَرْ عَلَى الْأَرْضِ مِنَ الْكَافِرِيْنَ دَيَّارًا، إِنَّكَ إِنْ تَذَرْهُمْ يُضِلُّوا عِبَادَكَ وَلاَ يَلِدُوْا إِلاَّ فَاجِرًا كَفَّارًا- (نوح ২৬-২৭)-

‘হে প্রভু! পৃথিবীতে একজন কাফের গৃহবাসীকেও তুমি ছেড়ে দিয়ো না’। ‘যদি তুমি ওদের রেহাই দাও, তাহ’লে ওরা তোমার বান্দাদের পথভ্রষ্ট করবে এবং ওরা কোন সন্তান জন্ম দিবে না পাপাচারী ও কাফের ব্যতীত’ (নূহঃ ২৬-২৭)।

বলা বাহুল্য, নূহ (আঃ)-এর এই দো‘আ আল্লাহ সাথে সাথে কবুল করেন। যার ফলে তারা ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন হ’ল এবং কেবলমাত্র মুষ্টিমেয় মুমিন নর-নারী মুক্তি পেলেন। বর্তমান পৃথিবীর সবাই তাদের বংশধর। আল্লাহ বলেন,

ذُرِّيَّةَ مَنْ حَمَلْنَا مَعَ نُوحٍ إِنَّهُ كَانَ عَبْداً شَكُوْراً-

‘তোমরা তাদের বংশধর, যাদেরকে আমরা নূহের সাথে (নৌকায়) সওয়ার করিয়েছিলাম। বস্ত্ততঃ সে ছিল একজন কৃতজ্ঞ বান্দা’ (ইসরাঃ ৩)

(ইতিপূর্বে)  নূহ আমাকে ডেকেছিল, তাহলে দেখো, আমি ছিলাম কত ভালো জওয়াবদাতা৷ আমি তাকে ও তার পরিবারবর্গকে উদ্ধার করি ভয়াবহ যন্ত্রণা থেকে, শুধু তার বংশধরদেরকেই টিকিয়ে রাখি  এবং পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে তারই প্রশংসা ছেড়ে দেই সমগ্র বিশ্ববাসীর মধ্যে নূহের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক ।সৎকর্মশীলদেরকে আমি এমনই প্রতিদান দিয়ে থাকি৷ সাফফাতঃ ৭৭-৮০)।

এখান থেকে বুঝা যায় এখন পর্যন্ত যত বংসের ধারা সকলেই হযরত নূহ আ এর বংশধর।

নূহের প্লাবন ও গযবের কুরআনী বিবরণ

এ বিষয়ে সূরা হূদে পরপর ১২টি আয়াত নাযিল হয়েছে। যেমন, চূড়ান্ত গযব আসার পূর্বে আল্লাহ নূহ (আঃ)-কে বললেন,

‘তুমি আমার সম্মুখে আমারই নির্দেশনা মোতাবেক একটা নৌকা তৈরী কর এবং (স্বজাতির প্রতি দয়া পরবশ হয়ে) যালেমদের ব্যাপারে আমাকে কোন কথা বলো না। অবশ্যই ওরা ডুবে মরবে’ (হূদঃ৩৭)।

আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর নূহ নৌকা তৈরী শুরু করল। তার কওমের নেতারা যখন পাশ দিয়ে যেত, তখন তারা তাকে বিদ্রুপ করত। নূহ তাদের বলল, তোমরা যদি আমাদের উপহাস করে থাক, তবে জেনে রেখো তোমরা যেমন আমাদের উপহাস করছ, আমরাও তেমনি তোমাদের উপহাস করছি’ (৩৮)।

‘অচিরেই তোমরা জানতে পারবে লাঞ্ছনাকর আযাব কাদের উপরে আসে এবং কাদের উপরে নেমে আসে চিরস্থায়ী গযব’ (৩৯)।

আল্লাহ বলেন, ‘অবশেষে যখন আমার হুকুম এসে গেল এবং চুলা উদ্বেলিত হয়ে উঠল, (অর্থাৎ রান্নার চুলা হ’তে পানি উথলে উঠলো), তখন আমি বললাম, সর্বপ্রকার জোড়ার দু’টি করে এবং যাদের উপরে পূর্বেই হুকুম নির্ধারিত হয়ে গেছে, তাদের বাদ দিয়ে তোমার পরিবারবর্গ ও সকল ঈমানদারগণকে নৌকায় তুলে নাও। বলা বাহুল্য, অতি অল্প সংখ্যক লোকই তার সাথে ঈমান এনেছিল’ (৪০)।

এটা ছিলো সংকেত, যা নূহ আ সংগীদের নিয়ে নৌকায় উঠে যাবেন।

‘নূহ তাঁদের বলল, তোমরা এতে আরোহণ কর। আল্লাহর নামেই এর গতি ও স্থিতি। নিশ্চয়ই আমার প্রভু অতীব ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (৪১)।

‘অতঃপর নৌকাখানি তাদের বহন করে নিয়ে চলল পর্বতপ্রমাণ তরঙ্গমালার মাঝ দিয়ে। এ সময় নূহ তার পুত্রকে (ইয়ামকে) ডাক দিল- যখন সে দূরে ছিল, হে বৎস! আমাদের সাথে আরোহণ কর, কাফেরদের সাথে থেকো না’ (৪২)।

‘সে বলল, অচিরেই আমি কোন পাহাড়ে আশ্রয় নেব। যা আমাকে প্লাবনের পানি হ’তে রক্ষা করবে’। নূহ বলল, ‘আজকের দিনে আল্লাহর হুকুম থেকে কারু রক্ষা নেই, একমাত্র তিনি যাকে দয়া করবেন সে ব্যতীত। এমন সময় পিতা-পুত্র উভয়ের মাঝে বড় একটা ঢেউ এসে আড়াল করল এবং সে ডুবে গেল’ (৪৩)।

অতঃপর নির্দেশ দেওয়া হ’ল, হে পৃথিবী! তোমার পানি গিলে ফেল (অর্থাৎ হে প্লাবনের পানি! নেমে যাও)। হে আকাশ! ক্ষান্ত হও (অর্থাৎ তোমার বিরামহীন বৃষ্টি বন্ধ কর)। অতঃপর পানি কমে গেলো ও গযব শেষ হ’ল। ওদিকে জূদী পাহাড়ে গিয়ে নৌকা ভিড়ল এবং ঘোষণা করা হ’ল, যালেমরা নিপাত যাও’ (৪৪)।

‘এ সময় নূহ তার প্রভুকে ডেকে বলল, হে আমার পালনকর্তা! আমার পুত্র তো আমার পরিবারের অন্তর্ভুক্ত, আর তোমার ওয়াদাও নিঃসন্দেহে সত্য, আর তুমিই সর্বাপেক্ষা বিজ্ঞ ফায়ছালাকারী (৪৫)।

‘আল্লাহ বললেন, হে নূহ! নিশ্চয়ই সে তোমার পরিবারভুক্ত নয়। নিশ্চয়ই সে দুরাচার। তুমি আমার নিকটে এমন বিষয়ে আবেদন কর না, যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই। আমি তোমাকে সতর্ক করে দিচ্ছি যেন জাহিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না’ (৪৬)।

‘নূহ বলল, হে আমার পালনকর্তা! আমার অজানা বিষয়ে আবেদন করা হ’তে আমি তোমার নিকটে পানাহ চাচ্ছি। তুমি যদি আমাকে ক্ষমা না কর ও অনুগ্রহ না কর, তাহ’লে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব’ (৪৭)।

‘বলা হ’ল, হে নূহ! এখন (নৌকা থেকে) অবতরণ কর আমাদের পক্ষ হ’তে নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি সহকারে তোমার উপর ও তোমার সঙ্গী দলগুলির উপর এবং সেই (ভবিষ্যৎ) সম্প্রদায়গুলির উপর- যাদেরকে আমরা সত্বর সম্পদরাজি দান করব। অতঃপর তাদের উপরে আমাদের পক্ষ হ’তে মর্মান্তিক আযাব স্পর্শ করবে’ (হূদঃ ৩৭-৪৮)।

এই আয়াতের মধ্যে উল্লেখ কয়েকটি জিনিষ সম্পর্কে জানিঃ———

কিশতী :

নূহ (আঃ)-কে যখন নৌকা তৈরীর নির্দেশ দেওয়া হয়, তখন তিনি নৌকাও চিনতেন না, তৈরী করতেও জানতেন না। আর সেকারণেই আল্লাহ নির্দেশ দিলেন, ‘তুমি নৌকা তৈরী কর আমাদের চোখের সম্মুখে ও আমাদের অহী অনুসারে’ (হূদ ১১/৩৭; মুমিনূন ২৩/২৭)। এর দ্বারা বুঝা যায়. যে, নৌকা তৈরীর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সমূহ ও নির্মাণ কৌশল জিবরীল (আঃ) নূহ (আঃ)-কে শিক্ষা দিয়েছিলেন। এভাবে সরাসরি অহীর মাধ্যমে নূহ (আঃ)-এর হাতে নৌকা ও জাহায নির্মাণ শিল্পের গোড়াপত্তন হয়। অতঃপর যুগে যুগে তার উন্নতি সাধিত হয়েছে এবং মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্যের মালামাল ও যাত্রী পরিবহনে নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। আধুনিক বিশ্ব সভ্যতা যার উপরে দাঁড়িয়ে আছে।

একথা ধারণা করা মোটেই অমূলক হবে না যে, উক্ত নৌকা তৈরী করতে নূহ (আঃ)-এর বহুদিন সময় লেগেছিল। নৌকাটি অবশ্যই বিরাটায়তনের ছিল। যাতে মানুষ, পশু ও পাখি পৃথকভাবে থাকতে পারে। কিন্তু এজন্য নৌকাটি কয় তলা বিশিষ্ট ছিল, কি কাঠের ছিল, কত গজ লম্বা ও চওড়া ছিল, এসব কাহিনীর কোন সঠিক ভিত্তি নেই। নদীবিহীন মরু এলাকায় বিনা কারণে নৌকা তৈরী করাকে পশুশ্রম ও নিছক পাগলামি বলে ‘কওমের নেতারা নূহ (আঃ)-কে ঠাট্টা করত’ (হূদ ৩৮)। এ ব্যাপরে নূহ (আঃ) বলতেন, তোমাদের ঠাট্টার জবাব সত্বর তোমরা জানতে পারবে (হূদ ৩৯)। দীর্ঘ দিন ধরে নৌকা তৈরী শেষ হবার পরেই আল্লাহর চূড়ান্ত ফায়ছালা নেমে আসে এবং গযবের প্রাথমিক আলামত হিসাবে চুলা থেকে পানি বের হ’তে থাকে।

(২) তান্নূর ও তূফান :

‘তান্নূর’ বলা হয় মূলতঃ উনুন বা চুলাকে। এটি অনারব শব্দ, যাকে আরবী করা হয়েছে (কুরতুবী)। সহজ-সরল ও প্রকাশ্য অর্থ অনুযায়ী ইরাকের মূছেল নগরীতে অবস্থিত নূহ (আঃ)-এর পারিবারিক চুলা থেকে পানি উথলে বের হওয়ার আলামতের মাধ্যমেই নূহের তুফানের সূচনা হয়। অর্থাৎ এটি ছিল প্লাবনের প্রাথমিক আলামত মাত্র (কুরতুবী)।

‘তূফান’ অর্থ যেকোন বস্ত্তর অত্যাধিক্য। প্লাবনকে ‘তূফান’ বলা হয় পানির আধিক্যের কারণে, যা সব কিছুকে ডুবিয়ে দেয়। আল্লাহ বলেন, ‘আমরা নূহকে প্রেরণ করেছিলাম তার সম্প্রদায়ের নিকট। সে তাদের মধ্যে পঞ্চাশ কম এক হাযার বছর অবস্থান করেছিল। অতঃপর তাদেরকে ‘তূফান’ (অর্থাৎ মহাপ্লাবন) গ্রাস করেছিল। আর তারা ছিল অত্যাচারী (আনকাবূত ২৯/১৪)। যদিও অনেকে এর নানারূপ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যার সবকিছুই ইস্রাঈলিয়াত এবং ভিত্তিহীন।

ভূতলের উত্থিত পানি ছাড়াও তার সাথে যুক্ত হয়েছিল অবিরাম ধারে আকাশবন্যা। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘অবশেষে যখন আমার হুকুম এসে পৌঁছল এবং চুলা উচ্ছ্বসিত হ’ল (অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠ পানিতে উদ্বেলিত হয়ে উঠল)-(হূদ ৪০)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন,

‘তখন আমরা খুলে দিলাম আকাশের দুয়ার সমূহ প্রবল বারিপাতের মাধ্যমে। ‘এবং ভূমি থেকে প্রবাহিত করলাম নদী সমূহকে। অতঃপর উভয় পানি মিলিত হল একটি পূর্ব নির্ধারিত কাজে (অর্থাৎ ডুবিয়ে মারার কাজে)’। ‘আমি নূহকে আরোহন করালাম এক কাষ্ঠ ও পেরেক নির্মিত জলযানে’। ‘যা চলত আমার দৃষ্টির সম্মুখে। এটা তার (অর্থাৎ আল্লাহর) পক্ষ থেকে প্রতিশোধ ছিল, যাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল’। ‘আমরা একে নিদর্শন হিসাবে রেখে দিয়েছি। অতএব কোন চিন্তাশীল আছে কি’? (ক্বামারঃ১১-১৫)। যে কারণে নূহ-পুত্র ‘ইয়াম’ পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েও রেহাই পায়নি (হূদ ৪৩)। ঐ সময় কোন কোন ঢেউ পাহাড়ের চূড়া হতেও উঁচু ছিল। অতঃপর প্লাবন বিধ্বংসীরূপ ধারণ করে এবং পাহাড়ের মত ঢেউয়ের মধ্য দিয়ে নৌকা চলতে থাকে’ (হূদ ৪২)।

২০০৪ সালের ২৬শে ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ার সাগরতলে সংঘটিত ভূমিকম্পের সুনামিতে উত্থিত ৩৩ ফুট উঁচু ঢেউ নূহের তূফানকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

মাক্কী জীবনের চরম আতংক ও উৎকণ্ঠার মধ্যে সূরা হূদ নাযিল করে সেখানে যথাক্রমে নূহ, হূদ, ছালেহ, ইব্রাহীম, লূত, শু‘আয়েব ও মূসা প্রমুখ বিগত নবী ও রাসূলগণের ও তাদের সম্প্রদায়ের কাহিনী সংক্ষেপে বর্ণনার মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সা) ও তাঁর সাথীদেরকে আল্লাহ সান্ত্বনা দিয়েছেন। যেমন প্রথমে নূহ (আঃ)-এর কাহিনী বর্ণনা শেষে আল্লাহ বলেন,

‘এটি গায়েবের খবর যা আমরা আপনার নিকটে অহী করেছি। যা ইতিপূর্বে আপনি বা আপনার সম্প্রদায় জানতো না। অতএব আপনি ধৈর্য ধারণ করুন। নিশ্চয়ই শুভ পরিণাম কেবল আল্লাহভীরুদের জন্যই’ (হূদঃ ৪৯)। বস্ত্ততঃ কুরআনের মাধ্যমেই পৃথিবীবাসী সর্বপ্রথম বিগত যুগের এই সব ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির খবর জানতে পেরেছে।

নৌকার আরোহীগণ

তূফানের আলামত প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে নূহ (আঃ)-কে হুকুম দেওয়া হ’ল,

‘জোড় বিশিষ্ট প্রত্যেক প্রাণীর এক এক জোড়া করে নৌকায় তুলে নাও’ (হূদঃ৪০)

“আমি তার কাছে অহী করলাম, ‘‘আমার তত্বাবধানে এবং আমার অহী মোতাবেক নৌকা তৈরী করো৷ তারপর যখন আমার হুকুম এসে যাবে এবং চুলা উথলে উঠবে, তখন তুমি সব ধরনের প্রাণীদের এক একটি জোড়া নিয়ে এতে আরোহণ করো এবং পরিবার পরিজনদেরকেও সংগে নাও, তাদের ছাড়া যাদের বিরুদ্ধে আগেই ফায়সালা হয়ে গেছে এবং জালেমদের ব্যাপারে আমাকে কিছুই বলো না, তারা এখন ডুবতে যাচ্ছে৷ তারপর যখন তুমি নিজের সাথীদের নিয়ে নৌকায় আরোহণ করবে তখন বলবে, আল্লাহর শোকর, যিনি আমাদের উদ্ধার করেছেন জালেমদের হাত থেকে। আর বলো,হে পরওয়ারদিগার ! আমাকে নামিয়ে দাও বরকতপূর্ণ স্থানে এবং তুমি সর্বোত্তম স্থান দানকারী।( মুমিনূনঃ ২৭-২৯)।

এর দ্বারা কেবল ঐসব প্রাণী বুঝানো হয়েছে, যা নর ও মাদীর মিলনে জন্মলাভ করে এবং যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনে অতীব প্রয়োজনীয়। যেমন গরু-ছাগল, ঘোড়া-গাধা ও হাঁস-মুরগী ইত্যাদি পশু-পক্ষী

এরপর নূহ (আঃ)-কে নির্দেশ দেওয়া হয় কেবল তাঁর পরিবারসহ ঈমানদার নর-নারীকে নৌকায় তুলে নিতে। যাদের সংখ্যা অতীব নগণ্য ছিল।

কিন্তু সঠিক সংখ্যা কুরআন বা হাদীছে উল্লেখিত হয়নি। তবে আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, তাদের সংখ্যা ছিল চল্লিশ জন করে পুরুষ ও নারী মোট আশি জন। প্লাবনের পর তারা ইরাকের মূছেল নগরীর যে স্থানটিতে বসতি স্থাপন করেন, তা ‘ছামানূন’ বা আশি নামে খ্যাত হয়ে যায়। কুরতুবী, ইবনু কাছীর;

প্লাবনে মুক্তিপ্রাপ্তদের ‘সূমর’ (سومر ) জাতি বলা হত। ‘জূদী’ (جودى) পাহাড়ে গিয়ে নৌকা নোঙর করে ।

এ পাহাড়টি আজও ঐ নামেই পরিচিত। এটি নূহ (আঃ)-এর মূল আবাস ভূমি ইরাকের মূছেল নগরীর উত্তরে ‘ইবনে ওমর’ দ্বীপের অদূরে আর্মেনিয়া সীমান্তে অবস্থিত। বস্ত্ততঃ এটি একটি পবর্তমালার অংশ বিশেষের নাম। এর অপর এক অংশের নাম ‘আরারাত’ পর্বত। প্রাচীন ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে যে, ইরাকের বিভিন্ন স্থানে উক্ত কিশতীর ভগ্ন টুকরা সমূহ অনেকের কাছে সংরক্ষিত আছে। যা বরকত মনে করা হয় এবং বিভিন্ন রোগ-ব্যধিতে আরোগ্যের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়।

উল্লেখ্য যে, নূহের পুত্র কাফিরদের দলভুক্ত হওয়ায় মহাপ্লাবনে ধ্বংস হয়েছিল। কিন্তু নূহের স্ত্রী সম্পর্কে এখানে কিছু বলা হয়নি। এতে স্পষ্ট হয় যে, তিনি আগেই মারা গিয়েছিলেন (ইবনু কাছীর, )। তিনি গোপনে কুফরী পোষণ করতেন ও কাফিরদের সমর্থন করতেন। নূহের স্ত্রী ও লূত্বের স্ত্রী স্ব স্ব স্বামীর নবুঅতের উপরে বিশ্বাস স্থাপনের ক্ষেত্রে খেয়ানত করেছিল বলে স্বয়ং আল্লাহ বর্ণনা করেছেন। নবীদের স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও কুফরীর কারণে তারা জাহান্নামবাসী হয়েছেন।

“আল্লাহ কাফেরদের ব্যাপারে নূহ এবং লুতের স্ত্রীদেরকে উদাহরণ হিসেবে পেশ করেছেন৷ তারা আমার দুই নেক্‌কার বান্দার স্ত্রী ছিল৷ কিন্তু তারা তাদের স্বামীর সাথে খেয়ানত করেছিল৷ তারা আল্লাহর মোকাবিলায় তাদের কোন কাজেই আসতে পারেনি৷ দু’জনকেই বলে দেয়া হয়েছে : যাও, আগুনে প্রবেশকারীদের সাথে তুমিও প্রবেশ কর। (তাহরীমঃ ১০)।

এখানে খেয়ানতের অর্থ হচ্ছে তার হযরত নূহ (আ) ও লূতের (আ) সাথে ঈমানের পথে চলেনি, বরং তাদের বিরুদ্ধে দীন ইসলামের শত্রুদের সহযোগিতা করে এসেছে ৷ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ কোন নবীর স্ত্রী কখনো ব্যভিচারী ছিল না ৷ প্রকৃতপক্ষে এ দু’জন মহিলার খেয়ানত ছিল দীনের ব্যাপারে ৷ তারা হযরত নূহ (আ) ও লূতের (আ) দীন গ্রহণ করেনি ৷ হযরত নূহের (আ) স্ত্রী তার কওমের জালেমদের কাছে ঈমান গ্রহণকারী সম্পর্কে খবর পৌছাত এবং হযরত লূতের (আ) স্ত্রী তার স্বামীর কাছে আগত লোকদের খবর তার কওমের দুশ্চরিত্র লোকদের কাছে পৌছে দিত ৷ (ইবনে জারীর) ৷

সম্ভবতঃ মহাপ্লাবনের সময় নূহের স্ত্রী জীবিত ছিলেন না। সেকারণ গযবের ঘটনা বর্ণনায় কেবল পুত্র ইয়ামের কথা এসেছে। কিন্তু তার মায়ের কথা আসেনি।

ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, তিনি চল্লিশ বছর বয়সে নবুঅত প্রাপ্ত হন এবং মহাপ্লাবনের পর ষাট বছর জীবিত ছিলেন। কুরতুবী, ইবনু কাছীর

ফলে সুদীর্ঘকাল যাবত তিনি নবী হিসাবে শিরকে নিমজ্জিত হঠকারী কওমকে দাওয়াত দেন। প্লাবনের পর তাঁর সাথে নৌকারোহী মুমিন নর-নারীদের মাধ্যমে পৃথিবীতে নতুনভাবে আবাদ শুরু হয় এবং তাদেরকে তিনি সত্যের পথে পরিচালিত করেন। এ কারণে তাঁকে ‘মানব জাতির দ্বিতীয় পিতা’ বলা হয়।

আদম (আঃ) ৯৬০ বছর বেঁচে ছিলেন এবং নূহ (আঃ) ৯৫০ বছর জীবন পেয়েছিলেন (আনকাবূতঃ ১৪)। উল্লেখ্য যে, আদম ও নূহ (আঃ)-এর দীর্ঘ বয়স আল্লাহর বিশেষ দান ও তাঁদের মু‘জেযা স্বরূপ ছিল। নূহ (আঃ)-এর পুরুষানুক্রমিক বয়স তাঁর ন্যায় দীর্ঘ ছিল না। নূহ (আঃ) ইরাকের মূছেল নগরীতে স্বীয় সম্প্রদায়ের সাথে বসবাস করতেন। তারা বাহ্যতঃ সভ্য হলেও শিরকের অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। তিনি তাদের হেদায়াতের জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন।

আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “নুহ (আঃ) মৃত্যুর সময় তাঁর দুই ছেলেকে অসিয়ত করে বললেন, —আমি তোমাকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (বলার) আদেশ করছি। যেহেতু যদি সাত আসমান এবং সাত যমীনকে দাঁড়িপাল্লার এক পাল্লায় রাখা হয় এবং ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’কে অপর পাল্লায় রাখা হয়, তাহলে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র পাল্লা বেশী ভারী হবে। যদি সাত আসমান এবং সাত যমীন নিরেট গোলাকার বস্তু হয়, তাহলেও ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তা চূৰ্ণবিচূর্ণ করে দেবে।—” (আহমদ ৭ ১০ ১, ত্বাবরানী বায্‌যার, মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/২ ১৯, সিঃ সহীহাহ ১৩৪নং)

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

Ibn Abi’d-Dunya narrated in az-Zuhd (no. 358) with his isnaad from Anas ibn Maalik (may Allah be pleased with him) that he said:

The Angel of Death came to Nooh (peace be upon him) and said: O longest-lived of the Prophets, how did you find this world and its pleasures? He said: Like a man who entered a room with two doors, and he stood in the middle of the room for a brief moment, then he went out of the other door. End quote.

The discerning Muslim is the one who pays attention to these lessons and develops the determination and resolve to strive. He should not be preoccupied with the details of history which the revelation did not highlight or explain, and for which there is no sound proof or shar‘i evidence.

উল্লেখ্য যে, হযরত নূহ (আঃ) সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের ২৮টি সূরায় ৮১টি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। যথাক্রমে আলে ইমরান ৩/৩৩-৩৪; নিসা ৪/১৬৩; আন‘আম ৬/৬, ৮৪; আ‘রাফ ৭/৫৯, ৬৯, ১৩৩= ৩; তওবা ৯/৭০; ইউনুস ১০/৭১; হূদ ১১/২৫, ৩২, ৩৬, ৪২, ৪৫, ৪৬, ৪৮, ৮৯= ৮; ইবরাহীম ১৪/৯; ইসরা ১৭/৩, ১৭; মারিয়াম ১৯/৫৮; আম্বিয়া ২১/৭৬; হজ্জ ২২/৪২; মুমিনূন ২৩/২৩; ফুরক্বান ২৫/৩৭; শো‘আরা ২৬/১০৫, ১০৬, ১১৬; আনকাবূত ২৯/১৪-১৫; আহযাব ৩৩/৭; ছাফফাত ৩৭/৭৫, ৭৯; ছোয়াদ ৩৮/১২; গাফের/মুমিন ৪০/৫, ৩১-৩৩= ৪; শূরা ৪২/১৩; ক্বাফ ৫০/১২; যারিয়াত ৫১/৪৬; নাজম ৫৩/৫২; ক্বামার ৫৪/৯-১৬= ৮; হাদীদ ৫৭/২৬; তাহরীম ৬৬/১০; নূহ ৭১/১-২৮= ২৮। সর্বমোট = ৮১ টি।

(নবী কাহিনী-ড আসাদুল্লাহ গালিব থেকে অনেকাংশ সংগৃহিত)

 

https://islamqa.info/en/answers/130293/did-everyone-on-earth-drown-at-the-great-flood-at-the-time-of-nooh-peace-be-upon-him

https://islamqa.info/en/answers/1485/finding-noah146s-ark