আসসালামু’আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে
নবী কাহিনী-১
কেনো নবীদের ঘটনা জানতে হবে?
মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন-
আর হে মুহাম্মদ! এ রসূলদের বৃত্তান্ত, যা আমি তোমাকে শোনাচ্ছি, এসব এমন জিনিস যার মাধ্যমে আমি তোমার হৃদয়কে মজবুত করি৷ এসবের মধ্যে তুমি পেয়েছো সত্যের জ্ঞান এবং মুমিনরা পেয়েছে উপদেশ ও জাগরণবাণী৷ সূরা হুদঃ১২০
অর্থাৎ এর উদ্দেশ্য হল, যাতে আল্লাহর রাসূল (সা) নবুঅতের গুরু দায়িত্ব বহন করার জন্য যেকোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্ত্তত হয়ে যান এবং তাঁর উম্মত এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে
হে মুহাম্মদ! এসব গায়েবের খবর, যা আমি তোমাকে অহীর মাধ্যমে জানাচ্ছি৷ এর আগে তুমি এসব জানতে না এবং তোমার কওমও জানতো না৷ কাজেই সবর করো৷ মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম৷ হুদঃ ৪৯
”পূর্ববর্তী লোকদের এ কাহিনীর মধ্যে বুদ্ধি ও বিবেচনা সম্পন্ন লোকদের জন্য শিক্ষা রয়েছে৷ কুরআনে এ যা কিছু বর্ণনা করা হচ্ছে এগুলো বানোয়াট কথা নয় বরং এগুলো ইতিপূর্বে এসে যাওয়া কিতাবগুলোতে বর্ণিত সত্যের সমর্থন এবং সবকিছুর বিশদ বিবরণ, আর যারা ঈমান এসেছে তাদের জন্য হেদায়াত ও রহমত”৷ (সূরা ইউসুফ ১১১)
তুমি এ কাহিনী তাদেরকে শুনাতে থাকো, হয়তো তারা কিছু চিন্তা -ভাবনা করবে৷ (আরাফ ১৭৬)
তাহলে বুঝা যাচ্ছে কুর’আনে বর্নিত ঘটনাবলী কিছু উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই উল্লেখিত হয়েছে। আর এ থেকে পাওয়া যায়ঃ
১। আকলকে (বিবেক) ব্যবহার করা।
২। শিক্ষা গ্রহন করা।
৩। চিন্তার উপাদান তৈরি করা।
৪। হৃদয় মনের মযবুতি অর্জন করা।
৫। নিজেদের কর্তব্য নির্ধারণ করা।
আদম (আলাইহিস সালাম) হতে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত ৩১৫ জন রাসূল সহ এক লক্ষ চবিবশ হাযার পয়গম্বর প্রেরিত হন।আহমাদ, ত্বাবারাণী, মিশকাত হা/৫৭৩৭ ‘ক্বিয়ামতের অবস্থা’ অধ্যায় ‘সৃষ্টির সূচনা ও নবীগণের আলোচনা’ অনুচ্ছেদ; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬৬৮।
বহু নবীর নিকটে আল্লাহ পাক ‘ছহীফা’ বা পুস্তিকা প্রদান করেন এবং প্রত্যেক রাসূলকে দেন পৃথক পৃথক শরী‘আত বা জীবন বিধান।
এখানে একটি বিষয় জানা প্রয়োজন তা হলো, নবী রাসূল এর মাঝে কোনো পার্থক্য আছে কি না?
জোড়ালো মত হলো পার্থক্য আছে, তা হলো রাসূলদের পাঠানো হয়েছে কাফের ও ইমানদারদের মাঝে, নবীদের পাঠানো হয়েছে ইমানদারদের মাঝে।
এই হিসেবে জানা যায় হযরত আদম আ ছিলেন নবী, বা
আরেকটি মত হলো আসমানী কিতাব নাযিল হয়েছে রাসূলদের মাঝে , নবীদের দেয়া হয়েছে সহিফা বা পূর্ববর্তী নবী বা রাসূলের উত্তরসুরী হিসেবে।
তবে চার জন শ্রেষ্ঠ রাসূলের নিকটে আল্লাহ প্রধান চারটি ‘কিতাব’ প্রদান করেন।
যথাক্রমে হযরত মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর উপরে ‘তাওরাত’,
হযরত দাঊদ (আঃ)-এর উপরে ‘যবূর’,
হযরত ঈসা (আঃ)-এর উপরে ‘ইনজীল’ এবং
শেষনবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপরে ‘কুরআন’।
হাদীছে বর্ণিত উপরোক্ত বিরাট সংখ্যক নবীগণের মধ্যে পবিত্র কুরআনে মাত্র ২৫ জন নবীর নাম এসেছে।
তন্মধ্যে একত্রে ১৭ জন নবীর নাম এসেছে সূরা আন‘আম ৮৩ হ’তে ৮৬ আয়াতে। বাকী নাম সমূহ এসেছে কুরআনের বিভিন্ন স্থানে।
ইবরাহীমকে তার জাতির মোকাবিলায় আমি এ যুক্তি-প্রমাণ প্রদান করেছিলাম৷ আমি যাকে চাই উন্নত মর্যাদা দান করি৷ প্রকৃত সত্য হচ্ছে এই যে, তোমার রব প্রজ্ঞাময় ও জ্ঞানী৷
তারপর আমি ইবরাহীমকে ইসহাক ও ইয়াকূবের মতো সন্তান দিয়েছি এবং সবাইকে সত্য পথ দেখিয়েছি, ( সে সত্য পথ যা)ইতিপূর্বে নূহকে দেখিয়েছিলাম৷ আর তারই বংশধরদের থেকে দাউদ, সুলাইমান, আইউব, ইউসুফ, মূসা ও হারুণকে (হেদায়াত দান করেছি)৷ এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদেরকে তাদের সৎকাজের বদলা দিয়ে থাকি৷
( তারই সন্তানদের থেকে ) যাকারিয়া, ইয়াহিয়া, ঈসা ও ইলিয়াসকে (সত্য পথের পথিক বানিয়েছি)৷ তাদের প্রত্যেকে ছিল সৎ ৷
কেবলমাত্র ইউসুফ (আঃ)-এর কাহিনী সূরা ইউসুফে একত্রে বর্ণিত হয়েছে। বাকী নবীগণের কাহিনী কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রসঙ্গে এসেছে। যেমন মূসা ও ফেরাঊনের ঘটনা কুরআনের ২৭টি সূরায় ৭৫টি স্থানে বর্ণিত হয়েছে। সেগুলিকে একত্রিত করে কাহিনীর রূপ দেওয়া রীতিমত কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
আল্লাহ বলেন, وَرُسُلاً قَدْ قَصَصْنَاهُمْ عَلَيْكَ مِنْ قَبْلُ وَرُسُلاً لَّمْ نَقْصُصْهُمْ عَلَيْكَ.
‘আমরা আপনার পূর্বে এমন বহু রাসূল পাঠিয়েছি, যাদের বৃত্তান্ত আপনাকে শুনিয়েছি এবং এমন বহু রাসূল পাঠিয়েছি, যাদের বৃত্তান্ত আপনাকে শুনাইনি…’ (নিসা ৪/১৬৪, মুমিন ৪০/৭৮)।
হযরত আদম আ থেকে হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত নবী রাসলঃ
কুর’আনে বর্নিত নবীদের ধারাবাহিকতা
হযরত আদম আ : ১ম মানব ও ১ম নবী (প্রথম পিতা)
দাওয়াতঃ বংশধরদের মাঝে, হায়াতঃ ৯৬০ বছর, (আদম আ থেকে নূহ আ পর্যন্ত ১০ জেনারেশন পর্যন্ত তাওহীদ বজায়।)
হযরত শীষ আ ( কুর’আনে উল্লেখ নেই তবে হাদীস থেকে জানা যায়,আদম আ এর ছেলে, ৫০টি নির্দেশিকা প্রাপ্ত)
হযরত নূহ আঃ ১ম রাসূল
(বলা হয় ২য় পিতা,আদম আ এর দশম অথবা অষ্টম অধঃস্তন পুরুষ, দাওয়াতঃ ইরাকের মূছেল নগরী, হায়াতঃ ১৫০বছর, ৪০ বছরে অহীপ্রাপ্ত, মহাপ্লাবনের পর ৬০ বছর জীবিত। চার পুত্রঃ সাম(আরবের পিতা),হাম(হাবসার পিতা), ইয়াফিছ(রোমকদের/গ্রীক পিতা)ও ইয়াম অথবা কেন’আন( মহা প্লাবনে ধ্বংসপ্রাপ্ত),
হযরত ইদরীস আঃ
(মতান্তর নূহ আ এর আগে এসেছেন, আল্লাহ তাঁর মাধ্যমে জ্যোতির্বিজ্ঞান ও অংকবিজ্ঞান, কলমের সাহায্যে লিখন পদ্ধতি ও বস্ত্র সেলাই শিল্প, ওযন ও পরিমাপের পদ্ধতি সূচনা করেন ,৪র্থ আসমানে মালাকুল মউত কর্তৃক তাঁর জান কবয করা,), ৩০টি ছহীফা প্রাপ্ত।
হযরত হূদ আঃ
(আদ জাতির প্রতি প্রেরিত) হযরত নূহের আ প্লাবনের পরে সর্বপ্রথম মূর্তিপূজা শুরু। নূহের পঞ্চম অথবা অষ্টম অধঃস্তনপুরুষ, আযাবঃ সাত রাত্রি ও আট দিন ব্যাপী অনবরত ঝড়-তুফান বইতে থাকে, মৃত্যুঃ মক্কায় বা ইয়েমেন।
হযরত সালেহ আঃ
(কওমে সামূদ এর প্রতি প্রেরিত)(‘আদ জাতির ধ্বংসের প্রায় ৫০০ বছর পর, কওমে ‘আদ ও কওমে সামূদ একই দাদা‘ইরাম(নূহের পুত্র)’-এর দু’টি বংশধারার নাম। ‘হিজ্র’ যা শামদেশ অর্থাৎ সিরিয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্তমানে ‘মাদায়েনে ছালেহ। আযাবঃ মুখমন্ডল গভীর হলুদ বর্ণ ধারণ’ দ্বিতীয় দিন সবার মুখমন্ডল লাল বর্ণ ও তৃতীয় দিন ঘোর কৃষ্ণবর্ণ, ৪র্থ দিন ভীষণ ভূমিকম্প শুরু হ’ল এবং উপর থেকে বিকট ও ভয়াবহ এক গর্জন।
হযরত ইবরাহীম আঃ
( ‘আবুল আম্বিয়া’ বা নবীগণের পিতা বলা হয়,জন্ম বাবেল শহর, (নূহ (আঃ)-এর সম্ভবত: এগারোতম অধঃস্তন পুরুষ)। সালেহআ এর প্রায় ২০০বছর পরে, নূহ আ থেকে ইবরাহীম আ পর্যন্ত সময় ২০০০ বছর, ইসা আ এর সাথে সময় ১৭০০/২০০০ বছর, কালেডীয় (كلدانى ) জাতি বসবাসেরএকচ্ছত্র সম্রাট ছিলেন নমরূদ, পিতাঃমন্ত্রী ও প্রধান পুরোহিত ‘আযর’। ২০০শ বছর জীবিত, মৃত্যুঃ বায়তুল মুক্বাদ্দাসের অদূরে কেন‘আন নামক স্থানে, যা এখন তাঁর নামানুসারে ‘খালীল নামে পরিচিত।
হযরত লূত্ব আঃ
( ইবরাহীম আএর ভাতিজা) কেন‘আন থেকে অল্প দূরে জর্ডান ও বায়তুল মুক্বাদ্দাসের মধ্যবর্তী ‘সাদূম’ অঞ্চলে প্রেরিত।কওমে লূত- এর বর্ণিত ধ্বংসস্থলটি বর্তমানে‘বাহরে মাইয়েত’ বা ‘বাহরে লূত’ অর্থাৎ ‘মৃত সাগর’ বা ‘লূত সাগর’ নামে খ্যাত। ফিলিস্তীন ও জর্ডান নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে, লূত-এর পরিবারটি (স্ত্রী ছাড়া) ব্যতীত মুসলমান ছিল না মতান্তরে কয়েকজন।
হযরত ইসমাঈল আঃ
৪০ বছর বয়সে নবুঅত , নবুঅতী মিশন আমৃত্যু মক্কা কেন্দ্রিক বনু জুরহুম গোত্রে তাওহীদের দাওয়াত দেন। ইস্রাঈলীবর্ণনানুসারে তিনি ১৩৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ও মা হাজেরার পাশে কবরস্থ হন।
হযরত ইসহাক্ব আঃ
দুই যমজ পুত্র ঈছ ও ইয়াকূব-এর মধ্যে ছোট ছেলে ইয়াকূব নবী হন। ১৮০বছর বয়স পান। কেন‘আনে মৃত্যুবরণ করেন এবং পুত্র ঈছ ও ইয়াকূবের মাধ্যমে হেবরনে পিতা ইবরাহীমের কবরের পাশে সমাহিত হন।
হযরত ইয়াকূব আঃ
অপর নাম ছিল ‘ইস্রাঈল যার অর্থ আল্লাহর দাস। ইয়াকূবের ১২ পুত্রের মধ্যে ইউসুফ আ নবী হন। প্রথমা স্ত্রীর পুত্র লাভী (لاوى) -এর পঞ্চম অধঃস্তন পুরুষ মূসা আ ও হারূণ আনবী হন। ১৪৭ বছর বয়সে মিসরে মৃত্যুবরণ করেন এবং হেবরনে পিতা ইসহাক (আঃ)-এর কবরের পাশে সমাধিস্থ হন।
হযরত ইউসুফ আঃ
১২০ বছর বয়সে মিসরে ইন্তেকাল করেন এবং হেবরনের একই স্থানে সমাধিস্থ ঈসা (আঃ)-এর অন্যূন আঠারশ’বছর পূর্বেকার। দুই ছেলে ছিল ইফরাঈম ও মানশা।
হযরত আইয়ূব আঃ
ইসহাক (আঃ)-এর দুই যমজ পুত্র ঈছ ও ইয়াকূবের মধ্যেকার প্রথম পুত্র ঈছ- এর প্রপৌত্র ছিলেন। তাঁর স্ত্রী ছিলেন ইয়াকূব-পুত্র ইউসুফ (আঃ)-এর পৌত্রী ,৭০ বছর বয়সে পরীক্ষায় পতিত, ৯৩ বছর বা কিছু বেশী বয়সে মৃত্যুবরণ।
হযরত শু‘আয়েব আঃ
আহলে মাদইয়ান’ প্রতি প্রেরিত। ‘মাদইয়ান’ হ’ল লূত সাগরের নিকটবর্তী সিরিয়া ও হিজাযের সীমান্তবর্তী জনপদ। খাত্বীবুল আম্বিয়া’ (নবীগণের মধ্যে সেরা বাগ্মী) নামে খ্যাত ছিলেন।[মাদইয়ান (مدين ) ছিলেন হাজেরা ও সারাহর মৃত্যুরপরে হযরত ইবরাহীমের আরব বংশোদ্ভূত কেন‘আনী স্ত্রী ক্বানতূরা বিনতে ইয়াক্বত্বিন (قنطورا بنت يقطن) -এর ৬টি পুত্র সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ পুত্র শুআয়েব (আঃ) ও সাথীগণ মক্কায় যান ও মৃত্যুবরণ করেন। কাবা গৃহের পশ্চিম দিকে দারুন নাদওয়া ও দার বনু সাহ্মের মধ্যবর্তী স্থানে তাদের কবর হয়’। আযাবঃ মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, বিকট নিনাদ,ভূমিকম্প।
হযরত মূসা আঃ
মূসা ইবনে ইমরান বিন ক্বাহেছ বিন ‘আযের বিন লাভী বিন ইয়াকূব বিন ইসহাক্ব বিন ইবরাহীম (আঃ)। ইবরাহীম(আঃ)-এর ৮ম অধঃস্তন পুরুষ। প্রথম ৩০ বছর মিসরে, ১০ বছর মাদিয়ানে, তূর পাহাড়ের নিকটে ‘তুবা’ (طُوَى) উপত্যকায় ৪০ বছর বয়সে নবুঅত লাভ। অতঃপর ২০ বছর মিসরে তাওহীদের দাওয়াত প্রদান। ৬০ বছর বয়সে বনু ইস্রাঈলদের নিয়ে মিসর হ’তে প্রস্থান এবং ফেরাঊনের সলিল সমাধি। অতঃপর আদি বাসস্থান কেন‘আন অধিকারী আমালেক্বাদের বিরুদ্ধে জিহাদের হুকুম অমান্য করায় অবাধ্য ইস্রাঈলীদের নিয়ে ৪০ বছর যাবত তীহ্ প্রান্তরে উন্মুক্ত কারাগারে অবস্থান ও বায়তুল মুক্বাদ্দাসের সন্নিকটে মৃত্যু সম্ভবতঃ ৮০ থেকে ১০০ বছর বয়সের মধ্যে। মূসা (আঃ)-এর কবরহয় বায়তুল মুক্বাদ্দাসের উপকণ্ঠে। দশ বছরে তিনি দু’টি পুত্র সন্তান লাভ করেন।
হযরত হারূণ আঃ
দু’ভাই (মুসা আ ও হারুন আ) পরপর তিন বছরের ব্যবধানে মৃত্যু বরণ করলেন।
হযরত ইউনুস আঃ
ইউনুস (আঃ) বর্তমান ইরাকের মূছেল নগরীর নিকটবর্তী ‘নীনাওয়া’ (نينوى) জনপদের অধিবাসীদের
হযরত দাঊদ আঃ
পিতা ও পুত্র দাঊদ ও সুলায়মান (আঃ)। বর্তমান ফিলিস্তীন সহ সমগ্র ইরাক ও শাম (সিরিয়া) দাঊদের বয়স ৬০ হ’তে ১০০ বছরে বৃদ্ধি পায়[পুত্র সন্তানের সংখ্যা ছিল ১৯ জন, ৪০ বছরে নবুয়ত, ১০০ বছর জীবিত।
হযরত সুলায়মান আঃ
সুলায়মান (আঃ)-এর মোট বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। তিনি ৪০ বছর কাল রাজত্ব করেন। তাঁর পুত্র রাহবা‘আম (رحبعام) ১৭বছর রাজত্ব করেন।
হযরত ইলিয়াস আঃ
তিনি হযরত হিয্ক্বীল (আঃ)-এর পর এবং হযরত আল-ইয়াসা‘ (আঃ)-এর পূর্বে দামেষ্কের পশ্চিমে বা‘লা বাক্কা (بعلبك) অঞ্চলের বনু ইস্রাঈলগণের প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন। এই সময় হযরত সুলায়মান (আঃ)-এর উত্তরসুরীদের অপকর্মের দরুণ বনু ইস্রাঈলের সাম্রাজ্য দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। এক ভাগকে ‘ইয়াহূদিয়াহ’ বলা হ’ত এবং তাদের রাজধানী ছিল বায়তুল মুক্বাদ্দাসে। অপর ভাগের নাম ছিল ‘ইস্রাঈল’ এবং তাদের রাজধানী ছিল তৎকালীন সামেরাহ এবং বর্তমান নাবলুসে।
হযরত আল-ইয়াসা আঃ
তিনি ইফরাঈম বিন ইউসুফ বিন ইয়াকূব-এর বংশধর ছিলেন। তিনি ইলিয়াস (আঃ)-এর চাচাতো ভাই এবং তাঁর নায়েব বা প্রতিনিধি ছিলেন।
হযরত যুল-কিফ্ল আঃ
‘যুল-কিফল’ (ذو الكفل)। উপাধি দেওয়া হয়। যার অর্থ, দায়িত্ব পূর্ণকারীব্যক্তি, আল-ইয়াসা‘-এর পরে নবী হন এবং ফিলিস্তীন অঞ্চলে বনু ইস্রাঈলগণের মধ্যে তাওহীদের দাওয়াত দেন।
হযরত যাকারিয়া আঃ
হযরত ইয়াহ্ইয়া আ, সুলায়মান পরবর্তী দুই নবী পরস্পরে পিতা-পুত্র ছিলেন এবং বায়তুল মুক্বাদ্দাসের অধিবাসী ছিলেন। ইয়াহইয়া ছিলেন পরবর্তী নবী ঈসা (আঃ)-এর আপন খালাতো ভাই এবং বয়সে ছয় মাসের বড়। তিনি ঈসার ছয় মাস পূর্বেই দাওয়াতের কাজ শুরু করেন।
হযরত ঈসা আঃ
বনু ইস্রাঈল বংশের সর্বশেষ নবী ও কিতাবধারী রাসূল। তিনি ‘ইনজীল’ প্রাপ্ত , ৩০/৩৫ বছরে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়।পৌঢ় বয়সে পুনরায় দুনিয়ায় ফিরে এসে মানুষকে তাওহীদের দাওয়াত দিবেন।
হযরত মুহাম্মাদ সাঃ
রাসূল (সা)-এর জন্ম ১ম হস্তীবর্ষের ৯ই রবীউল আউয়াল সোমবার ছুবহে ছাদিকের পর মক্কায় নিজ পিতৃগৃহে জন্মগ্রহণ করেন । ৫৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে এপ্রিল সোমবার এবং মৃত্যু ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই জুন সোমবার। চান্দ্রবর্ষ হিসাবে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর ৪দিন এবং সৌরবর্ষ হিসাবে ৬১ বছর ১ মাস ১৪ দিন। তাঁর জন্ম হয়েছিল আবরাহা কর্তৃক কা‘বা আক্রমণের ৫০ দিন পরে (ইবনু হিশাম ১/১৫৮-টীকা ৪)। এটা ছিল ইবরাহীম (আঃ)থেকে ২৫৮৫ বছর ৭ মাস ২০ দিন পরে এবং নূহ (আঃ)-এর প্লাবনের ৩৬৭৫ বছর পরের ঘটনা। ১১ হিজরী সনের ১লা রবীউল আউয়াল সোমবার সকাল ১০টার দিকে মদীনায় মৃত্যুবরণ করেন।
কুর’আনে উল্লেখিত সেই নবী-তাঁরা হচ্ছে- আদম, ইদ্রিস, নূহ, হুদ, সালেহ, ইব্রাহিম, লুত, ইসমাইল, ইসহাক, ইয়াকুব, ইউসুফ, শুয়াইব, আইয়ুব, যুলকিফল, মূসা, হারুন, দাউদ, সুলাইমান, ইলিয়াস, আল-ইসাআ, ইউনুস, যাকরিয়্যা, ইয়াহইয়া, ইসা, মুহাম্মদ (তাঁদের সকলের উপর আল্লাহ্র রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক)।
ইউসুফ (আঃ)-এর মৃত্যুর পরে তাঁর পঞ্চম অধঃস্তন পুরুষ মূসা ও হারূন আ। অর্থাৎ মূসা হ’লেন ইবরাহীম (আঃ)-এর ৮ম অধঃস্তন পুরুষ।
শেষনবী (সা)-এর আবির্ভাবের প্রায় ১৫৪৬ বছর পূর্বে সুলায়মান (আঃ) মৃত্যুবরণ করেন।
তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর পুত্র রাহবা‘আম (رحبعام) ১৭ বছর রাজত্ব করেন। অতঃপর বনু ইস্রাঈলের রাজত্ব বিভক্ত হয়ে যায়।
এক ভাগকে ‘ইয়াহূদিয়াহ বলা হত এবং তাদের রাজধানী ছিল বায়তুল মুক্বাদ্দাসে।
অপর ভাগের নাম ছিল ‘ইস্রাঈল এবং তাদের রাজধানী ছিল তৎকালীন সামেরাহ এবং বর্তমান নাবলুসে।
প্রথম ছিল মক্কায় বায়তুল্লাহ বা কা‘বাগৃহ। যা হযরত আদম (আঃ) কর্তৃক প্রথম নির্মিত হয়। অতঃপর ইবরাহীম ও তৎপুত্র ইসমাঈলের হাতে পুনর্নির্মিত হয়।
দ্বিতীয়টি ছিল বায়তুল মুক্বাদ্দাস, যা কাবাগৃহের চল্লিশ বছর পর আদম-পুত্রগণের কারো হাতে প্রথম নির্মিত হয়, যা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। অতঃপর ইবরাহীম (আঃ)-এর পৌত্র ইয়াকূব বিন ইসহাক (আঃ) কর্তৃক নির্মিত হয়। অতঃপর দাউদ ও সুলায়মান (আঃ) কর্তৃক পুনর্নির্মিত হয়।
১ম ভাগে মুহাম্মাদ (ছাঃ) থেকে ঊর্ধ্বতন পুরুষ ‘আদনান পর্যন্ত ২২টি স্তর। যে ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত নেই। এর উপরে ২য় ভাগে ‘আদনান থেকে ইবরাহীম (আঃ) পর্যন্ত ৪১টি স্তর এবং তার উপরে তৃতীয় ভাগে ইবরাহীম (আঃ) থেকে আদম (আঃ) পর্যন্ত ১৯টি স্তর। সর্বমোট ৮২টি স্তর। যাদুল মা‘আদ ১/৭০; ইবনু কাছীর, সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৩ পৃঃ
Muhammad ibn Sa’d mentioned in his book al-Tabaqaat that Ibn ‘Abbaas said: “between Moosa ibn ‘Imraan and ‘Eesa ibn Maryam (peace be upon them both) there were one thousand and seven hundred years,
The period between ‘Eesa and our Prophet (peace be upon them both): al-Bukhaari narrated that Salmaan al-Faarisi said: “The period between ‘Eesa and our Prophet (peace be upon them both) was six hundred years.”
যেখানে নাম ও স্তরের ব্যাপারে বিদ্বানগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। আমরা নিম্নে ‘আদনান পর্যন্ত বংশধারা উল্লেখ করলাম। যেখানে কোন মতভেদ নেই এবং এতেও কোন মতভেদ নেই যে, ‘আদনান নবী ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশধর ছিলেন’। বুখারী, ‘আনছারদের মর্যাদা’ অধ্যায়, ২৮ অনুচ্ছেদ ‘নবী (ছাঃ)-এর আগমন’।
(১) মুহাম্মাদ বিন (২) আব্দুল্লাহ বিন (৩) আব্দুল মুত্ত্বালিব বিন (৪) হাশেম বিন (৫) ‘আবদে মানাফ বিন (৬) কুছাই বিন (৭) কিলাব বিন (৮) মুররাহ বিন (৯) কা‘ব বিন (১০) লুওয়াই বিন (১১) গালিব বিন (১২) ফিহর (লকব কুরায়েশ) বিন (১৩) মালেক বিন (১৪) নাযার বিন (১৫) কিনানাহ বিন (১৬) খুযায়মা বিন (১৭) মুদরেকাহ বিন (১৮) ইলিয়াস বিন (১৯) মুযার বিন (২০) নিযার বিন (২১) মা‘দ বিন (২২) ‘আদনান
এর মধ্যে পরদাদা হাশেম-এর নামে হাশেমী গোত্র এবং দ্বাদশতম পুরুষ ফিহর যার উপাধি ছিল কুরায়েশ, তাঁর নামানুসারে ‘কুরায়েশ’ বংশ প্রসিদ্ধি লাভ করে