বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
হাশরের ময়দানে সাক্ষ্য :
নিজের হাতে আমলনামা দেখে এবং পাল্লা দিয়ে ওজন করার পরও অনেকে কৃতকর্ম অস্বীকার করে বসবে। তারা বলতে চাইবে আমরা এই এই কাজ করিনি। ফেরশতাগণ কমবেশি বা ভুল করে লিখে রেখেছেন। তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের মুখ বন্ধ করে দিবেন। তাদের ইচ্ছাধীন বাকশক্তির বদলে তাদের জিহ্বা, হাত এবং পা’কে কথা বলার শক্তি দিবেন। তখন জিহ্বা তার কৃতকর্মের সাক্ষ্য দিয়ে বলবে, হে আল্লাহ! সে আমার দ্বারা অমুককে গালি দিয়েছে, এই এই মিথ্যা বলেছে। এমনিভাবে হাত সাক্ষ্য দিবে সে আমার দ্বারা অন্যায়ভাবে অমুকে প্রহার করেছে, আমার দ্বারা এই খারাপ কাজ করেছে। পা সাক্ষ্য দিবে এ আমার দ্বারা এই এই খারাপ কাজ করেছে। পবিত্র কুরআনে আছে
হাসরের ময়দানে সাক্ষী হিসেবে ৪ধরনের অবস্থা দেখা যাবেঃ
প্রথম সাক্ষী : যমীন
যমীনের এই সাক্ষী হওয়ার বর্ণনা আলকুরআনুল কারীমে ও হাদীস শরীফে এভাবে এসেছে –
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াত করলেন,
” يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ أَخْبَارَهَا ”
(তরজমা) সেদিন যমীন তার যাবতীয় সংবাদ জানিয়ে দেবে। (সূরা যিলযাল: ৪) তারপর বললেন, তোমরা কি জানো, ‘যমীনের সংবাদ’ কী? সাহাবীগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তার সংবাদ’ হল, প্রতিটি বান্দা-বান্দি যমীনে যা করেছে সে তার সাক্ষী দিবে; অমুক বান্দা অমুক অমুক কাজ করেছে, অমুক দিনে করেছে। এটাই হল, ‘তার সংবাদ’। -জামে তিরমিযীঃ ২৪২৯
দ্বিতীয় সাক্ষী : ফিরিশতা (ও তাদের লিপিবদ্ধ আমলনামা)
(তরজমা) অবশ্যই তোমাদের জন্য কিছু তত্বাবধায়ক (ফিরিশতা) নিযুক্ত আছে। সম্মানিত লিপিকরবৃন্দ। তোমরা যা কর তারা সব জানে। পূণ্যবানগণ তো থাকবে পরম স্বচ্ছনেদ্য; এবং পাপাচারীরা তো থাকবে জাহান্নামে।-সূরা ইনফিতার: ১০-১৪
তারা কি মনে করে যে, আমি তাদের গোপন কথাবার্তা ও তাদের কানাকানি শুনতে পায় না? অবশ্যই শুনতে পাই। তাছাড়া আমার ফিরিশতাগণ তাদের কাছেই রয়েছে। তারা (সবকিছু) লিপিবদ্ধ করছে। সূরা যুখরুফ : ৪৩ ৮০
তৃতীয় সাক্ষী : আল্লাহ
ইরশাদ হচ্ছে-
أَوَلَمْ يَكْفِ بِرَبِّكَ أَنَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ
‘এটা কি তোমার রবের সম্পর্কে যথেষ্ট নয় যে, তিনি সর্ববিষয়ে অবহিত?’ -সূরা হা-মীম আসসাজদাহ ৪১: ৫৩
আল্লাহ বান্দাকে সতর্ক করে বলছেন-
أَلَمْ يَعْلَمْ بِأَنَّ اللَّهَ يَرَى
‘সে কি জানে না যে, আল্লাহ তাকে দেখছেন’। -সূরা আলাক ৯৬: ১৪
আনাস ইব্ন মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামীদের সবচেয়ে হালকা আযাবের ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন বলবেনঃ তোমার জন্য যদি দুনিয়াতে যা রয়েছে সব হয় তুমি কি তা মুক্তিপণ হিসেবে দিবে? সে বলবেঃ হ্যাঁ, তিনি বলবেনঃ আমি তোমার কাছে এরচেয়ে কম চেয়েছিলাম যখন তুমি আদমের ঔরসে ছিলেঃ আমার সাথে কোন বস্তুকে অংশীদার করবে না, কিন্তু তুমি আমার সাথে অংশীদার না করে ক্ষান্ত হওনি”। [বুখারি ও মুসলিম]হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
চতুর্থ সাক্ষী :অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ
الْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلَى أَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَا أَيْدِيهِمْ وَتَشْهَدُ أَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ
‘আজ আমি তাদের মুখে মোহর লাগিয়ে দিব। ফলে তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের পা সাক্ষ্য দেবে তাদের কৃতকর্মের।’-সূরা ইয়াসীন ৩৬: ৬৫
অবশেষে যখন তারা জাহান্নামের কাছে পৌঁছবে, তখন তাদের কান, তাদের চোখ ও তাদের চামড়া তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। তারা তাদের চামড়াকে বলবে, তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছ কেন? ‘আল্লাহ আমাদেরকে বাকশক্তি দান করেছেন, যিনি বাকশক্তি দান করেছেন প্রতিটি জিনিসকে -সূরা হা-মীম আসসাজদাহ্ : ২০-২১
সেদিন প্রকাশ করে দিবে তাদের জিহ্বা, তাদের হাত ও তাদের পা, যা তারা করত।(সুরা নুর : ২৪)
একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। অকস্মাৎ তিনি হেসে উঠলেন, অতঃপর বললেন, তোমরা জান, আমি কি কারণে হেসেছি? আমরা আরয করলাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই জানেন। তিনি বললেন, আমি সে কথা স্মরণ করে হেসেছি, যা হাশরে হিসাবের জায়গায় বান্দা তার পালনকর্তাকে বলবে। সে বলবে হে রব, আপনি কি আমাকে যুলুম থেকে আশ্রয় দেননি? আল্লাহ বলবেন, অবশ্যই দিয়েছি। তখন বন্দা বলবে, তাহলে আমি আমার হিসাব নিকাশের ব্যাপারে অন্য কারও সাক্ষ্যে সন্তুষ্ট নই। আমার অস্তিত্বের মধ্য থেকেই কোন সাক্ষী না দাড়ালে আমি সন্তুষ্ট হব না। আল্লাহ তা’আলা বলবেন (كَفَىٰ بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ حَسِيبًا) অর্থাৎ ভাল কথা, তুমি নিজেই তোমার হিসাব করে নাও। এরপর তার মুখে মোহর এটে দেয়া হবে এবং তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে বলবে, অর্থাৎ তোমরা ধ্বংস হও, আমি তো দুনিয়াতে যা কিছু করেছি, তোমাদেরই সুখের জন্য করেছি। এখন তোমরাই আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে শুরু করলে। [মুসলিম: ২৯৩৯] অন্য বর্ণনায় এসেছে, এ ব্যক্তির মুখে মোহর এটে দেয়া হবে এবং উরুকে বলা হবে, তুমি কথা বল এবং তার ক্রিয়াকর্ম বর্ণনা কর। তখন মানুষের উরু, মাংস, অস্থি সকলেই তার কর্মের সাক্ষ্য দেবে। [মুসলিম: ২৯৬৮]
আর [বলা হবে] হে অপরাধীরা, আজ তোমরা পৃথক হয়ে যাও। হে বনী আদম, আমি কি তোমাদেরকে এ মর্মে নির্দেশ দেইনি যে, তোমরা শয়তানের উপাসনা করো না। নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু ? আর আমারই ইবাদাত কর। এটিই সরল পথ। আর অবশ্যই শয়তান তোমাদের বহু দলকে পথভ্রষ্ট করেছে। তবুও কি তোমরা অনুধাবন করনি? এটি সেই জাহান্নাম, যার সম্পর্কে তোমরা ওয়াদাপ্রাপ্ত হয়েছিলে। তোমরা যে কুফরী করতে সে কারণে আজ তোমরা এতে প্রবেশ কর। (সূরা ইয়াসীন, আয়াত ৫৯-৬৪)
মিজান বা ন্যয় বিচারের মানদণ্ড
“আর কেয়ামতের দিনে আমরা ন্যায়বিচারের মানদণ্ড স্থাপন করব, সুতরাং কারো প্রতি কোন যুলুম করা হবে না এবং কাজ যদি শস্য দানা পরিমাণ ওজনেরও হয় তবুও তা আমরা উপস্থিত করব।” [সূরা আল-আম্বিয়া: ৪৭]
مَوَازِين শব্দটি ميزان শব্দের বহুবচন। [কুরতুবী] অর্থ ওজনের যন্ত্র তথা দাঁড়িপাল্লা। আয়াতের অর্থ, দাঁড়িপাল্লাসমূহ স্থাপন করা হবে। এখন প্রশ্ন হলো, মানদন্ড কি একটি না বহু? এখানে আয়াতে বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে দেখে কোন কোন তফসীরবিদ বলেন যে, আমল ওজন করার জন্য অনেকগুলো দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করা হবে। আমলের শ্রেণী অনুসারে অনেক দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করা হবে অথবা, প্ৰত্যেকের জন্যে ভিন্ন ভিন্ন দাঁড়িপাল্লা হবে। আবার এটাও হতে পারে যে, একই মীযানকে বহু হিসেবে দেখানো হয়েছে। [কুরতুবী] কিন্তু অধিকাংশ আলেমগণের মতে, দাঁড়িপাল্লা একটিই হবে। যার থাকবে দু’টি পাল্লা। যে দু’টি পাল্লা সবাই দেখতে পাবে, অনুভব করতে পারবে
হাদীসেও মিযান বা দাঁড়িপাল্লার বর্ণনা এসেছে। সুতরাং এর প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিব। কিয়ামতের দিন যে দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করা হবে তা প্রকৃত দাঁড়িপাল্লা। তার দু’টি পাল্লা থাকবে, যেমন হাদীসে এসেছে:
সাত আকাশ ও তাতে আমি ছাড়া যা কিছু আছে এবং সাত জমিনকে যদি এক পাল্লায় রাখা হয় আর অন্য পাল্লায় যদি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” রাখা হয় তাহলে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”-এর পাল্লা ভারী হবে। (ইবনু হিব্বান হা: ২৩২৪, মুসতাদরাক হাকেম ১/৫২৮, সহীহ)
আমলসমূহ তো বিমূর্ত অশরীরী বস্তু যার বাহ্যিক কোন আকার ও ওজন নেই, অতএব তা কিভাবে ওজন করা হবে? এ ব্যাপারে একটি মত হল, মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন সেগুলোকে বাহ্যিক রূপ দান করবেন, অতঃপর সেগুলোর ওজন হবে।
দ্বিতীয় মত হল, যে দপ্তর ও খাতাসমূহে আমলসমূহ লিপিবদ্ধ করা হয়, সেগুলোকে ওজন করা হবে।
তৃতীয় মত হল, স্বয়ং আমলকারীকে ওজন করা হবে। এই তিনটি মত পোষণকারীদের কাছে স্ব স্ব মতের সমর্থনে অনেক সহীহ হাদীস ও আষার (সাহাবীদের উক্তিসমূহ) বিদ্যমান রয়েছে। এই জন্যই ইমাম ইবনে কাসীর বলেন, তিনটি মতই সঠিক হতে পারে। হতে পারে কখনো আমল, কখনো আমলনামা এবং কখনো আমলকারীকে ওজন করা হবে।
৭:৮ وَ الۡوَزۡنُ یَوۡمَئِذِ ۣالۡحَقُّ ۚ فَمَنۡ ثَقُلَتۡ مَوَازِیۡنُهٗ فَاُولٰٓئِکَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ
ওয়াল ওয়াজনু ইয়াওমাঈযিল হাক্কু। ফামাং ছাকুলাত মাওয়াঝিনুহু ফা উলাইকা হুমুল মুফলিহুন।
৭:৯ وَ مَنۡ خَفَّتۡ مَوَازِیۡنُهٗ فَاُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ خَسِرُوۡۤا اَنۡفُسَهُمۡ بِمَا کَانُوۡا بِاٰیٰتِنَا یَظۡلِمُوۡنَ
. আর সেদিন ওজন যথাযথ হবে।সুতরাং যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই সফলকাম হবে। আর যাদের পাল্লা হালকা হবে, তারাই সে সব লোক, যারা নিজেদের ক্ষতি করেছে, যেহেতু তারা আমাদের আয়াতসমূহের প্রতি যুলুম করত। আরাফঃ ৮-৯
“নিশ্চয় আল্লাহ অণু পরিমাণও যুলুম করেন না। আর কোন পুণ্য কাজ হলে আল্লাহ সেটাকে বহুগুণ বর্ধিত করেন এবং আল্লাহ তার কাছ থেকে মহাপুরস্কার প্রদান করেন।” [সূরা আন-নিসা: ৪০]
মিযানে তিনটি জিনিসের ওজন করা হবে—–
১. আমলকারী মানুষকে ওজন করা হবে-
যেমন হাদীসে এসেছে: যখন সাহাবীরা ইবনু মাসউদ (রাঃ) এর পায়ের হালকা পেণ্ডলী দেখে হাসতে ছিল, তখন নাবী (সাঃ) বললেন: তোমরা কেন হাসছ? তারা বললেন: তার পায়ের হালকা পেণ্ডলী দেখে। নাবী (সাঃ) বললেন: সে সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ, তার পা দু’টি মিযানের পাল্লায় ওহুদ পাহাড়ের চেয়ে বেশি ভারী হবে। (মুসনাদ আহমাদ হা: ৩৯৯১, ইবনু শায়বাহ ১২/১১৩, তাবরানী কাবীর হা: ৮৪৫২, সহীহ)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أُولٰ۬ئِكَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِاٰيٰتِ رَبِّهِمْ وَلِقَا۬ئِه۪ فَحَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فَلَا نُقِيْمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا)
‘তারাই অস্বীকার করে তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলী ও তাঁর সাথে তাদের সাক্ষাতের বিষয়। ফলে তাদের কর্ম নিষ্ফল হবে; সুতরাং কিয়ামতের দিন তাদের জন্য ওজনের কোন ব্যবস্থা রাখব না।’ (সূরা কাহফ ১৮:১০৫)
২. আমল ওজন করা হবে, এক পাল্লায় সৎ আমল, অন্য পাল্লায় খারাপ আমল।
বানী আদমের আমল ও কথা ওজন করা হবে। প্রমাণস্বরূপ হাদীস এসেছে: নাবী (সাঃ) বলেন: দু’টি কথা যা দয়াময় আল্লাহ তা‘আলার কাছে খুবই প্রিয়, উচ্চারণে হালকা ও মিযানের পাল্লায় ভারী তা হল:
سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِهِ سُبْحَانَ اللّٰهِ الْعَظِيْمِ
(সহীহ বুখারী হা: ৭৫৬৩)
৩. আমলনামা ওজন করা হবে, যে আমলনামায় আমলসমূহ লেখা হয়েছে। (আকীদাহ তাহাবীয়াহ হা: ৫৪১)
যাদের পুণ্যের আমলনামা ভারী হবে তারা সফলকাম হবে আর যাদের পাপের আমলনামা ভারী হবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যেমন হাদীসে বলা হয়েছে- নিরানব্বইটি পাপের খাতা এক পাল্লায় থাকবে আর শাহাদাতের একটি কার্ড অন্য পাল্লায় থাকবে। তখন শাহাদাতের কার্ডটি বেশি ভারী হবে। (তিরমিযী হা: ২৬৩৯, ইবনু মাযাহ হা: ৪৩০০, সহীহ)
সাত আকাশ ও তাতে আমি ছাড়া যা কিছু আছে এবং সাত জমিনকে যদি এক পাল্লায় রাখা হয় আর অন্য পাল্লায় যদি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” রাখা হয় তাহলে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”-এর পাল্লা ভারী হবে। (ইবনু হিব্বান হা: ২৩২৪, মুসতাদরাক হাকেম ১/৫২৮, সহীহ)
১। উদাহরন —–আমলকারীকেও ওজন করা হবেঃ
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কেয়ামতের দিন অনেক বড় মোটা তাজা মানুষকে নিয়ে আসা হবে; যার ওজন আল্লাহর কাছে মশার ডানার সমান হবে। তিনি (প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যদি চাও তবে আল্লাহর বাণী (সুরা কাহাফের ১০৫নং আয়াত) পড়-
‘আমি তাদের জন্য কেয়ামতের দিন কোনো ওজনই স্থির করবো না।’ (বুখারি, মুসলিম)
হাদীসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু ‘আরাক’ গাছে উঠলেন, তিনি ছিলেন সরু গোড়ালী বিশিষ্ট মানুষ, ফলে বাতাস তাকে নাড়াচ্ছিল তাতে উপস্থিত লোকেরা হেসে উঠল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেনঃ “তোমরা হাসছ কেন?” তারা বললঃ হে আল্লাহর নবী! তার সরু গোড়ালীর কারণে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ “যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ করে বলছি, এ দু’টি মীযানের উপর উহুদ পাহাড়ের চেয়েও বেশী ভারী”। [মুসনাদে আহমাদঃ ১/৪২০–৪২১, মুস্তাদরাক ৩/৩১৭]।
২।———– আমল বা কাজ ওজন করা হবে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, দুটি বাক্য উচ্চারণের দিক দিয়ে খুবই হালকা; কিন্তু দাঁড়িপাল্লায় অত্যন্ত ভারী এবং আল্লাহর কাছে অতি প্রিয়। বাক্য দুটি হচ্ছে, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী’, ‘সুবহানাল্লাহিল আযীম’। [বুখারীঃ ৭৫৬৩]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেনঃ ‘সুবহানাল্লাহ’ বললে আমলের দাড়িপাল্লার অর্ধেক ভরে যায় আর ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললে বাকী অর্ধেক পূর্ণ হয়ে যায়। [মুসনাদে আহমাদঃ ৪/২৬০, ৫/৩৬৫; সুনান দারমীঃ ৬৫৩]
অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘আমলের ওজনের বেলায় কোন আমলই সচ্চরিত্রতার সমান ভারী হবে না’। [আবু দাউদঃ ৪৭৯৯; তিরমিযীঃ ২০০৩]
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি জানাযার সাথে কবরস্থান পর্যন্ত যায়, তার আমলের ওজনে দুটি কিরাত রেখে দেয়া হবে। [বুখারীঃ ১২৬১]।
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, এই কিরাতের ওজন হবে ওহুদ পাহাড়ের সমান। [মুসলিমঃ ৬৫৪]
৩।——— আমলনামা ওজন করা হবেঃ
“আর যার পাল্লাসমূহ হালকা হবে, তার স্থান হবে ‘হা-ওয়িয়াহ’, আর আপনাকে কিসে জানাবে সেটা কী? অত্যন্ত উত্তপ্ত আগুন।” [সূরা আল-কারি’আহ: ৮–১১] আরও বলেন,
“আর যাদের পাল্লা হালকা হবে তারাই নিজেদের ক্ষতি করেছে; তারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে। আগুন তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে এবং তারা সেখানে থাকবে বীভৎস চেহারায়। [সূরা আল-মুমিনুন: ১০৩–১০৪]
ফরয কাজে ত্রুটি পুরন করা হবে যেভাবে—
হাদীসে রয়েছে যে, যদি কোন বান্দার ফরয কাজসমূহে কোন ক্রটি পাওয়া যায়, তবে রাব্বুল আলামীন বলবেনঃ দেখ, তার নফল কাজও আছে কি না। নফল কাজ থাকলে ফরযের ক্রটি নফল দ্বারা পূরণ করা হবে। [মুসনাদে আহমাদঃ ৪/৬৫]
সাওমের পুরস্কার আল্লাহ স্বয়ং দিবেনঃ
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
كل عمل ابن آدم يضاعف الحسنة بعشر أمثالها إلى سبعمائة ضعف، قال الله تعالى : الا الصوم فإنه لى وانا أجزى به يدع شهوته وطعامه من أجلى.
মানুষের প্রত্যেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করা হয়। একটি নেকীর সওয়াব দশ গুণ থেকে সাতাশ গুণ পর্যন্ত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, কিন্তু রোযা আলাদা। কেননা তা একমাত্র আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর বিনিময় প্রদান করব। বান্দা একমাত্র আমার জন্য নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং পানাহার পরিত্যাগ করেছে।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৫১ (১৬৪); মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৯৭১৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৮৯৮৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৬৩৮
৩টি সময়ের ভয়াবহতা ভুলিয়ে দিবে আপনজনকেও
সুনান আবি দাউদে বর্ণিত হয়েছে একদিন আয়েশা (রা.) জাহান্নামের কথা স্মরণ করে কাঁদতে লাগলেন। (তাকে দেখে) রাসুলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞেস করলেন : তুমি কাঁদছ কেন? আয়েশা (রা.) বললেন : জাহান্নামের কথা স্মরণ হওয়ায় আমি কাঁদছি। (হে আল্লাহর নবী) আপনি কি কেয়ামতের দিন আপনার পরিবার-পরিজনের কথা মনে রাখবেন? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন : তিনটি স্থান এমন আছে, যেখানে কেউ কারও কথা স্মরণ করবে না। যথা ১। মিজান বা মাপের সময়, যতক্ষণ না কেউ জানতে পারবে, তার পাল্লা ভারী না হালকা, ২। কিতাব বা আমলনামা পাওয়ার সময়, যখন বলা হবে দৌড়ে এসো এবং নিজ নিজ আমলনামা পাঠ কর। যতক্ষণ কেউ জানতে পারবে না যে, তা কোন দিক থেকে আসে ডান, বাম না পেছনের দিক থেকে এবং ৩। সে সময় যখন সে পুলসিরাতের ওপর থাকবে এবং তা জাহান্নামের ওপর রাখা হবে। ‘অতঃপর যখন শিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া হবে, সেদিন তাদের পারস্পরিক আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না এবং একে অপরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে না। যাদের পাল্লা ভারী হবে, তারাই হবে সফলকাম এবং যাদের পাল্লা হাল্কা হবে তারাই নিজেদের ক্ষতিসাধন করেছে, তারা দোজখেই চিরকাল বসবাস করবে।’ (সুরা আল-মুমিনুন : ১০১-১০৩)।
যেসব আমল পরকালে দাঁড়িপাল্লাকে ভারী করবে
১. কালেমায়ে তাওহীদ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ :
২. সুবহান আল্লাহ, আল-হামদুল্লিাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার বলা
৩. উত্তম চরিত্র :
৪. জানাযা ও দাফনে অংশগ্রহণ করা :
৫. আল্লাহর রাস্তায় ঘোড়া প্রস্ত্তত রাখা :
৬. ফরয সালাতের পরে যিকর করা
৭. সন্তানের মৃত্যুতে ধৈর্য ধারণ করা ও ছওয়াব কামনা করা :
যেসব আমল পরকালে দাঁড়িপাল্লাকে হালকা করে
১. রিয়া বা লৌকিকতা :
২. আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমারেখা লঙ্ঘন করা :
৩. মানুষের প্রতি যুলুম করা, গালি দেওয়া, গীবত করা ও মারধর করা
৪। হিংসা, খোঁটা দেয়া
তাওহীদের সুফলঃ
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত যে তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা সকল মানুষের মধ্য থেকে এক ব্যক্তিকে মুক্তি দিবেন এভাবে যে তার সামনে নিরানব্বইটি পাপের দফতর উপস্থিত করা হবে। প্রতিটি দফতরের পরিধি হবে চোখের নজরের পরিধির মত বিশাল। আল্লাহ তাআলা তাকে বলবেন, তুমি কি এর কোনটি অস্বীকার করো? আমার লেখক ফেরেশতারা কি তোমার প্রতি অন্যায় করে এসব লিখেছে? সে উত্তরে বলবে, না, হে আমার প্রভূ! আল্লাহ বলবেন এসব পাপের ব্যাপারে তোমার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ বা বক্তব্য আছে? সে উত্তরে বলবে, না, হে আমার প্রভূ! আল্লাহ তাআলা বলবেন, তাহলে শোন, তোমার জন্য আমার কাছে একটি মাত্র নেক আমল আছে। আর আজ তোমার প্রতি কোন জুলুম করা হবে না। এরপর আল্লাহ একটি টিকেট বের করবেন। তাতে লেখা আছে, আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। আরো স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ আল্লাহ তাআলার বান্দা ও রাসূল। এরপর আল্লাহ বলবেন, আমি এ টিকেটটির ওযন দেব। লোকটি বলবে, হে আমার প্রভূ! এ টিকেটটির সাথে এতগুলো বিশাল দফতরের ওযন দিলে কী লাভ হবে? আল্লাহ তাআলা বলবেন, তোমার উপর কোন জুলুম করা হবে না।
এই টিকেটটি এক পাল্লায় রাখা হবে আর পাপের দফতরগুলো রাখা হবে অন্য পাল্লায়। টিকেটটির পাল্লা ভারী হয়ে যাবে। আসলে আল্লাহ তাআলার নামের সামনে কোন কিছু কি ভারী হতে পারে?
(বর্ণনায় : আহমাদ, তিরমিজী, হাকেম, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুন সিলসিলাতুল আহাদীস আস সহীহা নং ১৩৫)
২—– একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জুওয়াইরিয়াহ (রাঃ)-এর কাছ থেকে বেরিয়ে এলেন। ইতিপূর্বে তার নাম ছিল বাররাহ। নবী করীম ছাঃ) তার এ নাম পরিবর্তন করেন। তিনি তার কাছ থেকে বেরিয়ে আসার সময়ও মুছাল্লায় বসে তাসবীহ পাঠ করতে দেখেন এবং ফিরে এসেও তাকে ঐ মুছাল্লায় বসে থাকতে দেখেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি তখন থেকে একটানা এ মুছাল্লায় বসে আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রাসূল (ছাঃ) বললেন,لَقَدْ قُلْتُ بَعْدَكِ أَرْبَعَ كَلِمَاتٍ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ لَوْ وُزِنَتْ بِمَا قُلْتِ مُنْذُ الْيَوْمِ لَوَزَنَتْهُنَّ سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ وَرِضَا نَفْسِهِ وَزِنَةَ عَرْشِهِ وَمِدَادَ كَلِمَاتِهِ. ‘তোমার কাছ থেকে যাওয়ার পর আমি তিনবার চারটি কালিমা পড়েছি; এ দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তুমি যা কিছু পাঠ করেছ, উভয়টি ওযন করা হ’লে আমার ঐ চারটি কালেমা ওযনে ভারী হবে। তা হচ্ছে ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি আদাদা খালক্বিহি, ওয়া রিযা নাফসিহি, ওয়া যিনাতা আরশিহি, ওয়া মিদাদা কালিমাতিহি’। অর্থ- ‘মহাপবিত্র আল্লাহ এবং সকল প্রশংসা তাঁর জন্য। তাঁর সৃষ্টিকুলের সংখ্যার সমপরিমাণ, তাঁর সত্তার সন্তুষ্টির সমপরিমাণ এবং তাঁর আরশের ওযন ও মহিমাময় বাক্য সমূহের ব্যাপ্তি সমপরিমাণ’। মুসলিম হা/২৭২৬, ‘দো‘আ ও যিকর’ অধ্যায়, ‘দিনের প্রথম প্রহরে তাসবীহ পাঠ’, অনুচ্ছেদ; তিরমিযী হা/৩৫৫৫; নাসাঈ হা/১৩৫১; ইবনু মাজাহ হা/৩৮০৮।
৩। —–মানুষ উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে দুনিয়াতে যেমন সম্মানিত ও সমাদৃত হয়, পরকালেও তেমনি অশেষ ছওয়াবের অধিকারী হবে। আর এ বৈশিষ্ট্য তার নেকীর পাল্লাকে ভারী করবে। আবুদ দারদা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَا شَىْءٌ أَثْقَلُ فِىْ مِيزَانِ الْمُؤْمِنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ خُلُقٍ حَسَنٍ وَإِنَّ اللهَ لَيَبْغَضُ الْفَاحِشَ الْبَذِىءَ. ‘ক্বিয়ামত দিবসে মুমিনের দাঁড়িপাল্লায় সচ্চরিত্র ও সদাচারের চেয়ে অধিক ওযনের আর কোন জিনিস হবে না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা অশ্লীল ও কটুভাষীর প্রতি রাগান্বিত হন’। তিরমিযী হা/২০০২; ছহীহাহ হা/৮৭৬।
‘আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, হে আবূ যার! তোমাকে কি এমন দু’টো স্বভাবের কথা বলব, যে স্বভাব দু’টি পিঠে খুব হাল্কা; কিন্তু পাল্লায় অন্য দু’টি অপেক্ষা খুব ভারী? আমি বললাম, বলুন। তিনি বললেন, দীর্ঘ নিরবতা ও উত্তম ব্যবহার। যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম! বান্দা এ দু’টো কাজের মতো উত্তম আর কোন কাজ করে না’।বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান; মিশকাত হা/৪৮৬৭; ছহীহাহ হা/১৯৩৮, সনদ হাসান।
৪।—– যে ব্যক্তি মৃতের জন্য ছালাত আদায় করা পর্যন্ত জানাযায় উপস্থিত থাকবে, তার জন্য এক ক্বীরাত। আর যে ব্যক্তি মৃতের দাফন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত উপস্থিত থাকবে তার জন্য দু’ক্বীরাত। জিজ্ঞেস করা হ’ল দু’ক্বীরাত কী? তিনি বললেন, দু’টি বিশাল পর্বত সমতুল্য (ছওয়াব)’।বুখারী হা/১৩২৫, ৪৭; মুসলিম হা/৯৪৫।
৫।—— আল্লাহর কালিমা তথা দ্বীনকে সমুন্নত করার জন্য অনেক সময় কাফির, মুশরিক শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়। সেই জিহাদে ব্যবহারের জন্য যে ব্যক্তি ঘোড়া প্রস্ত্তত রাখে তার জন্য ছওয়াব রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنِ احْتَبَسَ فَرَسًا فِى سَبِيلِ اللهِ إِيْمَانًا بِاللهِ وَتَصْدِيقًا بِوَعْدِهِ، فَإِنَّ شِبَعَهُ وَرِيَّهُ وَرَوْثَهُ وَبَوْلَهُ فِى مِيزَانِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান ও তাঁর প্রতিশ্রুতির প্রতি বিশ্বাস রেখে আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য ঘোড়া প্রস্ত্তত রাখে, ক্বিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তির পাল্লায় ঘোড়ার খাদ্য, পানীয়, গোবর ও পেশাব ওযন করা হবে’। বুখারী হা/২৮৫৩; নাসাঈ হা/৩৫৮২; মিশকাত হা/৩৮৬৮।
৬।—- ‘দু’টি বিষয় বা দু’টি অভ্যাসের প্রতি যে মুসলিম হেফাযত করবে সে নিশ্চয়ই জান্নাতে যাবে। অভ্যাস দু’টি সহজ কিন্তু তা আমলকারীর সংখ্যা কম। তা হ’ল (১) প্রত্যেক ছালাতের পর দশবার সুবহানাল্লাহ, দশবার আলহামদুলিল্লাহ ও দশবার আল্লাহু আকবার বলবে। মুখে (পাঁচ ওয়াক্ত) এর সংখ্যা একশত পঞ্চাশ। কিন্তু মীযানে তা এক হাযার পাঁচশত (২) যখন শয্যায় যাবে তখন চৌত্রিশবার আল্লাহু আকবার, তেত্রিশবার আলহামদুলিল্লাহ ও তেত্রিশবার সুবহানাল্লাহ বলবে। তা মুখে একশত। কিন্তু মীযানে এক হাযার। আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে তা হাতের আঙ্গুলে গণনা করতে দেখেছি। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! অভ্যাস দু’টি সহজ হওয়া সত্ত্বেও এর আমলকারীর সংখ্যা কম কেন? তিনি বললেন, তোমরা বিছানায় ঘুমাতে গেলে শয়তান তোমাদের কোন লোককে তা বলার আগেই ঘুম পাড়িয়ে দেয়। আর ছালাতের মধ্যে শয়তান এসে তার বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং সে ঐগুলো বলার আগেই প্রয়োজনের দিকে চলে যায়’।আবূদাঊদ হা/৫০৬৫; মিশকাত হা/২৩০৬।
৭।—– রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন
,بَخٍ بَخٍ لِخَمْسٍ مَا أَثْقَلَهُنَّ فِى الْمِيْزَانِ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ وَسُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَالْوَلَدُ الصَّالِحُ يُتَوَفَّى فَيَحْتَسِبُهُ وَالِدُهُ، ‘পাঁচটি জিনিসের জন্য বাহঃ বাহঃ। যা দাঁড়িপাল্লায় অধিক ভারী হবে। তাহ’ল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ (বলা) এবং সৎ সন্তানের মৃত্যুর পরে পিতার ছওয়াব কামনা করা’। মুসনাদে আহমাদ হা/১৮১০১; ছহীহাহ হা/১২০৪; ছহীহুল জামে‘ হা/২৮১৭।
আমলনামায় ওজন কমায়ঃ———-
১। ‘মাহমূদ বিন লাবীদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমাদের উপর আমার সবচেয়ে অধিক যে জিনিসের ভয় হয় তাহ’ল ছোট শিরক। ছাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! ছোট শিরক কী জিনিস? উত্তরে তিনি বললেন, রিয়া (লোকপ্রদর্শনের উদ্দেশ্যে আমল)। আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা যখন (ক্বিয়ামতে) লোকেদের আমলসমূহের বদলা দান করবেন তখন সকলের উদ্দেশ্যে বলবেন, তোমরা তাদের নিকট যাও, যাদেরকে প্রদর্শন করে দুনিয়াতে তোমরা আমল করেছিলে। অতঃপর দেখ, তাদের নিকট কোন প্রতিদান পাও কি-না’। আহমাদ হা/২৩৬৮০; ছহীহ তারগীব হা/২৯; ছহীহাহ হা/৯৫১।
২— ‘আমি আমার উম্মাতের কতক দল সম্পর্কে অবশ্যই জানি, যারা ক্বিয়ামতের দিন তিহামার শুভ্র পর্বতমালার সমতুল্য নেক আমলসহ উপস্থিত হবে। মহামহিম আল্লাহ সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করবেন। ছাওবান (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাদের পরিচয় পরিষ্কারভাবে আমাদের নিকট বর্ণনা করুন, যাতে অজ্ঞাতসারে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত না হই। তিনি বলেন, তারা তোমাদেরই ভ্রাতৃগোষ্ঠী এবং তোমাদের সম্প্রদায়ভুক্ত। তারা রাতের বেলা তোমাদের মতই ইবাদত করবে। কিন্তু তারা এমন লোক যে, একান্ত গোপনে আল্লাহর হারামকৃত বিষয়ে লিপ্ত হবে’। ইবনু মাজাহ হা/৪২৪৫; আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৭৮; ছহীহাহ হা/৫০৫।
৩—— আয়েশা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত আছে, নবী করীম (ছাঃ)-এর সম্মুখে বসে এক লোক বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার কয়েকটি গোলাম আছে। আমার নিকট এরা মিথ্যা কথা বলে, আমার সম্পদে ক্ষতিসাধন (খিয়ানত) করে এবং আমার অবাধ্যতা করে। এ কারণে তাদেরকে আমি বকাবকি ও মারধর করি। তাদের সাথে এমন ব্যবহারে আমার অবস্থা কি হবে? তিনি বললেন, তারা যে তোমার সাথে খিয়ানত করে, তোমার অবাধ্যতা করে এবং তোমার নিকট মিথ্যা বলে, আর এ কারণে তাদের সাথে তুমি যেমন আচরণ কর- এ সবেরই হিসাব-নিকাশ হবে। যদি তোমার দেয়া শাস্তি তাদের অপরাধের সমান হয়, তবে ঠিক আছে। তোমারও কোন অসুবিধা হবে না, তাদেরও কোন অসুবিধা হবে না। যদি তোমার দেয়া শাস্তি তাদের অপরাধের তুলনায় কম হয়, তাহ’লে তোমার জন্য অতিরিক্ত (ছওয়াব) রয়ে গেল। আর তোমার প্রদত্ত শাস্তি যদি তাদের অপরাধের তুলনায় বেশী হয়, তাহ’লে অতিরিক্ত অংশের জন্য তোমাকে শাস্তি পেতে হবে।
বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শুনে লোকটি চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে আলাদা হয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আল্লাহ তা‘আলার কিতাবে তুমি কি এ কথা পড় নাই যে, ‘আমরা ক্বিয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করব। সুতরাং কোন লোকের উপর কোন যুলুম করা হবে না। কারো বিন্দু পরিমাণও কিছু কৃতকর্ম থাকলে আমরা তাও হাযির করব। আর হিসাব সম্পন্ন করার জন্য আমরাই যথেষ্ট’ (আম্বিয়া ২১/৪৭)। লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কসম! তাদের মাঝে এবং আমার মাঝে বিচ্ছিন্নতা ছাড়া আমার ও তাদের কল্যাণের আর কোন পথ দেখছি না। আপনাকে আমি সাক্ষী রেখে বলছি, তাদের সবাই এখন হ’তে মুক্ত’। তিরমিযী হা/৩১৬৫; মিশকাত হা/৫৫৬১; ছহীহ আত-তারগীব হা/২২৯০।
সেইদিন সবচেয়ে দরিদ্র ব্যক্তি কে?
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রতি কোন অন্যায় করেছে, অথবা তার সম্মানহানী করেছে কিংবা অন্যকোনভাবে তার ক্ষতি করেছে সে যেন যেদিন কোন টাকা-পয়সা কাজে আসবে না সে দিন আসার পূর্বে আজই (দুনিয়াতে থাকাবস্থায়) তার প্রতিকার করে নেয়। কেয়ামতের বিচারে অন্যায়কারীর কোন নেক আমল থাকলে তা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পাওনা আদায় করা হবে। আর যদি অন্যায়কারীর নেক আমল না থাকে তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পাপগুলো তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। (বুখারী)
হাদীসে আরো এসেছে –
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: তোমরা কি জান দরিদ্র অসহায় ব্যক্তি কে? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আমাদের মধ্যে দরিদ্র অসহায় ব্যক্তিতো সে যার কোন টাকা পয়সা বা সম্পদ নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আমার উম্মতের মধ্যে সত্যিকার দরিদ্র অসহায় হলো সেই ব্যক্তি যে কেয়ামতের দিন সালাত, সিয়াম ও যাকাতসহ অনেক ভাল কাজ নিয়ে উপস্থিত হবে, অথচ দুনিয়াতে বসে সে কাউকে গালি দিয়েছিল, কারো প্রতি অপবাদ দিয়েছিল, করো সম্পদ আত্নসাত করেছিল, কারো রক্তপাত ঘটিয়েছিল, কাউকে মারধোর করেছিল ফলে তার নেক আমলগুলো থেকে নিয়ে তার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পাওনা আদায় করা হবে। এভাবে যখন তার নেক আমলগুলো শেষ হয়ে যাবে ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়ার জন্য আর কিছু থাকবে না তখন তাদের পাপগুলো তাকে দেয়া হবে ফলে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। (মুসলিম)
রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন, তোমরা কি জান, নিঃস্ব কে? তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমাদের মধ্যে নিঃস্ব হচ্ছে সেই ব্যক্তি যার দিরহামও (নগদ অর্থ) নেই, কোন সম্পদও নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আমার উম্মাতের মধ্যে সেই ব্যক্তি হচ্ছে নিঃস্ব যে ক্বিয়ামত দিবসে ছালাত, ছিয়াম, যাকাতসহ বহু আমল নিয়ে উপস্থিত হবে এবং এর সাথে সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, কারো রক্ত প্রবাহিত (হত্যা) করেছে, কাউকে মারধর করেছে ইত্যাদি অপরাধও নিয়ে আসবে। সে তখন বসবে এবং তার নেক আমল হ’তে এ ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে ও ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে। এভাবে সম্পূর্ণ বদলা (বিনিময়) নেয়ার আগেই তার সৎ আমল নিঃশেষ হয়ে গেলে তাদের গুনাহ সমূহ তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে, তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে’।মুসলিম হা/২৫৮১; তিরমিযী হা/২৪১৮; ছহীহাহ হা/৮৪৫।
কাজেই শপথ আপনা রব-এর! আমরা তো তাদেরকে ও শয়তানদেরকে একত্রে সমবেত করবই তারপর আমরা নতজানু অবস্থায় জাহান্নামের চারদিকে তাদেরকে উপস্থিত করবই। তারপর প্রত্যেক দলের মধ্যে যে দয়াময়ের সর্বাধিক অবাধ্য আমরা তাকে টেনে বের করবই। সূরা মরিয়মঃ ৬৮-৬৯
১৯:৮৫ یَوۡمَ نَحۡشُرُ الۡمُتَّقِیۡنَ اِلَی الرَّحۡمٰنِ وَفۡدًا
(স্মরণ কর,) যেদিন আমি পরম দয়াময়ের নিকট সাবধানীদেরকে অতিথিরূপে (সওয়ার অবস্থায়) সমবেত করব।
এবং অপরাধীদেরকে তৃষ্ণাতুর অবস্থায় জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাব। মরিয়মঃ ৮৫-৮৬
وَفد শব্দটি وَافِد শব্দের বহুবচন, যেমন رَكب শব্দটি رَاكِب শব্দের বহুবচন। অর্থ এই যে, সেদিন পরহেযগার ও সাধানীদেরকে উট ও ঘোড়ার উপর চড়িয়ে অত্যন্ত ইয্যত ও সম্মানের সাথে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। وِردًا এর অর্থ পিপাসার্ত। অর্থাৎ, তাঁদের বিপরীত অপরাধীদেরকে ক্ষুধার্ত ও পিপাসিত অবস্থায় জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে।
যেদিন তারা ফিরিশতাদেরকে দেখতে পাবে সেদিন অপরাধীদের জন্য কোন সুসংবাদ থাকবে না এবং তারা বলবে, রক্ষা কর, রক্ষা কর। ফুরকানঃ২২
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে এর অর্থ حرامًا محرمًا বর্ণিত আছে। অর্থাৎ কেয়ামতের দিন যখন তারা ফিরিশতাদেরকে আযাবসহ দেখবে এবং তাদের কাছে ক্ষমা করার ও জান্নাতে যাওয়ার আবেদন করবে: কিংবা অভিপ্ৰায় প্রকাশ করবে, তখন ফিরিশতারা জবাবে (حِجْرًا مَحْجُورًا) বলবে। অর্থাৎ কাফেরদের জন্য জান্নাত হারাম ও নিষিদ্ধ। [দেখুন-তাবারী, ইবন কাসীর, ফাতহুল কাদীর]
আর আমরা তাদের কৃতকর্মের প্রতি অগ্রসর হয়ে সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব। ফুরকানঃ২৩
যালিম ব্যক্তি সেদিন নিজের দু’হাত দংশন করতে করতে বলবে, হায়, আমি যদি রাসূলের সাথে কোন পথ অবলম্বন করতাম। হায়, দুর্ভোগ আমার, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্ৰহণ না করতাম! ফুরকানঃ২৭-২৮
“হে আমাদের রব! আমরা আমাদের সরদারদের ও বড়দের আনুগত্য করেছিলাম এবং তারা আমাদের সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করেছে৷ হে আমাদের রব!তাদেরকে দ্বিগুন আযাব দাও এবং তাদের প্রতি কঠোর লানত বর্ষণ করো”আহযাবঃ ৬৭-৬৮
পুল সিরাতঃ
মূলত: সিরাত শব্দের আভিধানিক অর্থঃ স্পষ্ট রাস্তা। আর শরীআতের পরিভাষায় সিরাত বলতে বুঝায়ঃ এমন এক পুল, যা জাহান্নামের পৃষ্ঠদেশের উপর প্রলম্বিত, যার উপর দিয়ে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবাই পার হতে হবে, যা হাশরের মাঠের লোকদের জন্য জান্নাতে প্রবেশের রাস্তা।
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَإِن مِّنكُمۡ إِلَّا وَارِدُهَاۚ كَانَ عَلَىٰ رَبِّكَ حَتۡمٗا مَّقۡضِيّٗا
ثُمَّ نُنَجِّي ٱلَّذِينَ ٱتَّقَواْ وَّنَذَرُ ٱلظَّٰلِمِينَ فِيهَا جِثِيّٗا
“আর তোমাদের প্রত্যেকেই তার (জাহান্নামের) উপর দিয়েই অতিক্রম করবে, এটা আপনার রবের অনিবার্য সিদ্ধান্ত।” পরে আমরা উদ্ধার করব তাদেরকে, যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে এবং যালেমদেরকে সেখানে নতজানু অবস্থায় রেখে দেব।”সূরা মরিয়ামঃ ৭১-৭১
‘যার তিন তিনটি সন্তান সাবালক হওয়ার আগে মৃত্যুবরণ করবে তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না; কিন্তু প্রতিজ্ঞা পালনের জন্য (জাহান্নামের উপর বেয়ে অতিক্রম করবে)। (বুখারী, মুসলিম) আর সেই প্রতিজ্ঞা, যা উক্ত আয়াতে ‘‘এটা তোমার প্রতিপালকের অনিবার্য সিদ্ধান্ত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং জাহান্নামে প্রবেশ করার অর্থ হবে, শুধুমাত্র পুলসিরাতের উপর বেয়ে পার হওয়া।
. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“এমন সময় জাহান্নামের উপর পুল স্থাপন করা হবে। সাহাবীগণ বললেন, সে পুলটি কেমন হবে হে আল্লাহর রাসূল?
তিনি বললেন, “দুর্গম পিচ্ছিল স্থান। এর ওপর আংটা ও হুক থাকবে, শক্ত চওড়া উল্টো কাঁটা বিশিষ্ট হবে, যা নাজদের সাদান বৃক্ষের কাঁটার মত হবে। সে পুলের উপর দিয়ে ঈমানদারগণের কেউ পার হয়ে যাবে চোখের পলকের মতো, কেউ বিদ্যুতের মতো, কেউ বাতাসের মতো আবার কেউ দ্রুতগামী ঘোড়া ও সাওয়ারের মতো।”
তবে মুক্তিপ্রাপ্তরা কেউ নিরাপদে চলে আসবেন, আবার কেউ জাহান্নামের আগুনে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাবে। এ কবারে শেষে অতিক্রম করবে যে লোকটি, সে হেঁচড়িয়ে কোন ভাবে পার হয়ে আসবে।” বুখারী: ৭৪৩৯]
[সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) অধ্যায়: ৯৭/ তাওহীদ, পরিচ্ছেদঃ ৯৭/২৪. আল্লাহর বাণীঃ কতক মুখ সেদিন উজ্জ্বল হবে। তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে। (সূরাহ আল-ক্বিয়ামাহ ৭৫/২২-২৩)]
সহিহ মুসলিমে বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত হয়েছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“তোমাদের প্রথম দলটি এ সিরাত বিদ্যুৎ গতিতে পার হয়ে যাবে।”
সাহাবী বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনার জন্য আমার পিতামাতা উৎসর্গ হউক। আমাকে বলে দিন “বিদ্যুৎ গতির ন্যায়” কথাটির অর্থ কি?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আকাশের বিদ্যুৎ চমক কি কখনো দেখনি? চক্ষের পলকে এখান থেকে সেখানে চলে যায় আবার ফিরে আসে।”
তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “এর পরবর্তী দলগুলি যথাক্রমে বায়ুর বেগে, পাখির গতিতে, তারপর লম্বা দৌড়ের গতিতে পার হয়ে! যাবে। প্রত্যেকেই তার আমল হিসাবে তা অতিক্রম করবে।”
আর তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে অবস্থায় পুলসিরাতের উপর দাঁড়িয়ে এ দুআ করতে থাকবে: “হে আল্লাহ, এদেরকে নিরাপদে পৌছে দিন, এদেরকে নিরাপদে পৌঁছে দিন, এদেরকে নিরাপদে পৌঁছে দিন।”
এভাবে মানুষের আমল মানুষকে চলতে অক্ষম করে দেয়ার পূর্ব পর্যন্ত তারা এ সিরাত অতিক্রম করতে থাকবে।
শেষে এক ব্যক্তিকে দেখা যাবে, সে নিতম্বের উপর ভর করে পথ অতিক্রম করছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, “সিরাতের উভয় পার্শের ঝুলান থাকবে কাঁটাযুক্ত লৌহশলাকা। এরা আল্লাহর নির্দেশ ক্রমে চিহ্নিত পাপীদেরকে পাকড়াও করবে। তন্মধ্যে কাউকে তো ক্ষত-বিক্ষত করেই ছেড়ে দিবে; সে নাজাত পাবে। আর কতক আঘাত প্রাপ্ত হয়ে জাহান্নামের গর্ভে নিক্ষিপ্ত হবে।”
সেদিন আপনি দেখবেন মুমিন নর-নারীদেরকে তাদের সামনে ও ডানে তাদের নূর ছুটতে থাকবে। বলা হবে, আজ তোমাদের জন্য সুসংবাদ জান্নাতের, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তোমরা স্থায়ী হবে, এটাই তো মহাসাফল্য।সূরা হাদীদঃ ১২
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “তাদেরকে তাদের আমল অনুযায়ী নূর দেয়া হবে। তাদের কারও কারও নূর হবে পাহাড়সম। তাদের মধ্যে সবচেয়ে কম নূরের যে অধিকারী হবে তার নূর থাকবে তার বৃদ্ধাঙ্গুলীতে। যা একবার জলবে আরেকবার নিভবে।” [মুস্তাদরাকে হাকিম ২/৪৭৮]
সেদিন যখন তোমরা মুমিন পুরুষ ও স্ত্রী লোকদেরকে দেখবে যে, তাদের নূর তাদের সামনে, তাদের ডান দিকে ছুটতে থাকবে। (হাদীদ-১২)
সেদিন মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারীরা যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে বলবে, ‘তোমরা আমাদের জন্য একটু থাম, যাতে আমরা তোমাদের নূরের কিছু গ্ৰহণ করতে পারি। বলা হবে, তোমরা তোমাদের পিছনে ফিরে যাও ও নূরের সন্ধান কর। তারপর উভয়ের মাঝামাঝি স্থাপিত হবে একটি প্রাচীর যাতে একটি দরজা থাকবে, যার ভিতরে থাকবে রহমত এবং বাইরে থাকবে শাস্তি। সূরা হাদীদঃ১৩
মুনাফিকরা মুমিনদেরকে ডেকে জিজ্ঞেস করবে, আমরা কি তোমাদের সঙ্গে ছিলাম না? তারা বলবে, হ্যাঁ, কিন্তু তোমরা নিজেরাই নিজেদেরকে বিপদগ্ৰস্ত করেছ। আর তোমরা প্ৰতীক্ষা করেছিলে, সন্দেহ পোষণ করেছিলে এবং অলীক আকাংখা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছিল, অবশেষে আল্লাহর হুকুম আসল। আর মহাপ্ৰতারক তোমাদেরকে প্ৰতারিত করেছিল আল্লাহ সম্পর্কে। হাদীদঃ ১৪
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেন,
فَمَنْ مَرَّ عَلَى الصِّرَاطِ دَخَلَ الْجَنَّةَ فَإِذَا عَبَرُوا عَلَيْهِ وُقِفُوا عَلَى قَنْطَرَةٍ بَيْنَ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ فَيُقْتَصُّ لِبَعْضِهِمْ مِنْ بَعْضٍ فَإِذَا هُذِّبُوا وَنُقُّوا أُذِنَ لَهُمْ فِي دُخُولِ الْجَنَّةِ
যারা পুলসিরাত অতিক্রম করতে সক্ষম হবে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। তবে যখন তারা পুলসিরাত পার হবে, তখন তাদেরকে জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে একটি সেতুর উপর থামানো হবে। এখানে তাদের একজন থেকে অপরজনের কিসাস বা বদলা গ্রহণ করা হবে। অতঃপর যখন তাদেরকে পারস্পরিক যুলুম থেকে পরিশুদ্ধ ও পরিস্কার করা হবে, তখন তাদেরকে জান্নাতে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হবে।
কিয়ামতের দিন জাহান্নামের উপর নির্মিত পুলসিরাতের উপর দিয়ে সকল মানুষকে অবশ্যই অতিক্রম করতে হবে। যেসকল ঈমানদারের জন্য আল্লাহ তাআলা জান্নাতের ফায়সালা করেছেন তারা জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাবেন এবং তারা পুলসিরাত অতিক্রম করতে সক্ষম হবেন আর কাফের, মুশরিক, নাস্তিক, মুনাফিকগণ এবং যাদের ওপর জাহান্নামের আগুন অবধারিত হয়ে গেছে তারা পুলসিরাত অতিক্রম করার সময় জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে। (মহান আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমিন)
ইরশাদ হয়েছে–
হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর বিশুদ্ধ তওবা। সম্ভবতঃ তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কর্মগুলোকে মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার নিম্নদেশে নদীমালা প্রবাহিত। সেই দিন আল্লাহ নবী এবং তাঁর বিশ্বাসী দাসদেরকে অপদস্থ করবেন না। তাদের জ্যোতি তাদের সম্মুখে ও ডান পার্শ্বে বিচ্ছুরিত হবে, তারা বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জ্যোতিকে পূর্ণতা দান কর এবং আমাদেরকে ক্ষমা কর। নিশ্চয় তুমি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান।’আত তাহরীমঃ৮
বিশুদ্ধ বা নিষ্ঠাপূর্ণ তওবা হল, (ক) তওবা একমাত্র আল্লাহর জন্য হতে হবে। (খ) যে গুনাহ হতে তওবা করা হচ্ছে, তা সত্বর ত্যাগ করতে হবে। (গ) এই গুনাহ করে ফেলার জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে। (ঘ) আগামীতে এই গুনাহ ‘আর করব না’ বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে। (ঙ) যদি এই গুনাহের সম্পর্ক কোন বান্দার অধিকারের সাথে হয়, তবে যার অধিকার নষ্ট হয়েছে, তার সাথে মিটমাট করে নিতে হবে। যার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে, তার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। পক্ষান্তরে কেবল মৌখিক তওবা করার কোন অর্থ হয় না।
এই দু’আ মু’মিনরা তখন করবে, যখন মুনাফিকদের জ্যোতি কেড়ে নেওয়া হবে এবং তাদের উপর অন্ধকার নেমে আসবে। এর আলোচনা সূরা হাদীদ ১২নং আয়াতে উল্লিখিত হয়েছে। মু’মিনরা তখন বলবে, জান্নাতে প্রবেশ করা অবধি আমাদের এই জ্যোতিকে অবশিষ্ট রাখ এবং তাতে পূর্ণতা দান কর।
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, “শপথ সে সত্তার, যার হাতে আবু হুরায়রার প্রাণ। জেনে রাখ, জাহান্নামের গভীরতা সত্তর খারিফ (অর্থাৎ সত্তর হাজার বছরের পথ তুল্য)।:
[সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ১/ কিতাবুল ঈমান, পরিচ্ছেদ: ৮০. সর্বনিম্ন মর্যাদার জান্নাতবাসী]
আরাফবাসী কারাঃ
আরাফবাসী ঐ সমস্ত লোকেরা যাদের সৎ এবং অসৎকর্ম সমান হয়ে যাবে। কেউ কেউ বলেনঃ কিছু লোক এমনও থাকবে, যারা জাহান্নাম থেকে তো মুক্তি পাবে, কিন্তু তখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করার আশা পোষণ করবে। তাদেরকেই আরাফবাসী বলা হয়। ইবন জারীর বলেন, তাদের সম্পর্কে এটা বলাই বেশী সঠিক যে, তারা হচ্ছে এমন কিছু লোক যারা জান্নাতী ও জাহান্নামীদেরকে তাদের নিদর্শনের মাধ্যমে চিনতে পারবে। [তাবারী]
জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে একটি প্রাচীর ও বেষ্টনী হবে। এ বেষ্টনীর উপরিভাগের নাম আরাফ। কেননা আরাফ ‘ওরফ’ শব্দের বহুবচন। এর অর্থ প্রতিটি বস্তুর উপরিভাগ
أعراف শব্দটি عرف এর বহুবচন। এর অর্থ প্রত্যেক বস্তুর উপরিভাগ। এ ব্যাখ্যা থেকে জানা গেল, জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী প্রাচীরবেষ্টনীর উপরিভাগকে আরাফ বলা হয়। আয়াতে বলা হয়েছে যে, হাশরে এ স্থানে কিছুসংখ্যাক লোক থাকবে। তারা জান্নাত ও জাহান্নাম উভয় দিকের অবস্থা নিরীক্ষণ করবে এবং উভয়পক্ষের লোকদের সাথে প্রশ্নোত্তর ও কথাবার্তা বলবে। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আরাফ উঁচু টাওয়ারের মত যা জান্নাত এবং জাহান্নামের মাঝখানে থাকবে। গোনাহগার কিছু বান্দাকে সেখানে রেখে দেয়া হবে। কেউ কেউ বলেনঃ আরাফ নামকরণ এজন্য করা হয়েছে যে, এখান থেকে তারা একে অপরকে চিনতে পারবে।
ইরশাদ হয়েছে-
আর তাদের উভয়ের মধ্যে পর্দা থাকবে। আর আ’রাফে কিছু লোক থাকবে, যারা প্রত্যেককে তার চিহ্ন দ্বারা চিনবে। আর তারা জান্নাতবাসীদেরকে সম্বোধন করে বলবে, তোমাদের উপর সালাম। তারা তখনো জান্নাতে প্রবেশ করেনি, কিন্তু আকাংখা করে।
আর যখন তাদের দৃষ্টি অগ্নিবাসীদের দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে, তখন তারা বলবে, হে আমাদের রব! আমাদেরকে যালিম সম্প্রদায়ের সঙ্গী করবেন না।
আর আরাফবাসীরা এমন লোকদেরকে ডাকবে, যাদেরকে তারা তাদের চিহ্ন দ্বারা চিনবে, তারা বলবে, ‘তোমাদের দল ও তোমাদের অহংকার কোন কাজে আসল না।এরাই কি তারা, যাদের সম্বন্ধে তোমরা শপথ করে বলতে যে, আল্লাহ তোমাদেরকে রহমতে শামিল করবেন না? (এদেরকেই বলা হবে,) তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর, তোমাদের কোন ভয় নেই এবং তোমরা চিন্তিতও হবে না। সূরা আরাফঃ ৪৬-৪৯
শাফায়াতঃ
বুখারীর বর্ণনায় এসেছে তারা বলবে, এটা আমাদের অবস্থান। যতক্ষণ না আমাদের প্রতিপালক আমাদের কাছে আসেন। আমাদের প্রতিপালক যখন আসবেন আমরা তাকে চিনতে পারবো। আল্লাহ তাদের কাছে এমন আকৃতিতে আসবেন যে তারা দেখে চিনতে পারবে। নবীগণই তাঁর সাথে কথা বলবেন। তিনি জিজ্ঞেস করবেন, তোমাদের আর তোমাদের প্রভূর মধ্যে এমন কোন আলামত আছে যা দেখে তোমরা তাকে চিনতে পারো? তখন তারা বলবে, তাঁর পায়ের গোছা আমরা চিনি। তখন তিনি তাঁর পায়ের গোছা উম্মুক্ত করবেন। প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তি তাকে সেজদা করবে। কিন্তু যারা মানুষকে দেখানো বা শুনানোর জন্য নামাজ পড়তো তারা সেজদা করতে পারবে না। তারা চেষ্টা করবে সেজদা দিতে কিন্তু তাদের পিঠ একটি সোজা কাঠের তক্তার মত শক্ত হয়ে যাবে। অত:পর জাহান্নামের উপর একটি পুল স্থাপন করা হবে। এ কথা শুনে সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলো ইয়া রাসূলাল্লাহ! পুলটি কি ধরনের হবে? তিনি বললেন, পুলটি হবে পিচ্ছিল, লোহার কাটা ওয়ালা, দীর্ঘ, তাতে থাকবে আরো এমন কাটা যা দেখতে নজদ এলাকার সাদান কাটার মত। ঈমানদার ব্যক্তিরা কেহ পার হবে চোখের পলকের গতিতে, কেহ পার হবে বিজলীর গতিতে, কেহ পার হবে বাতাসের গতিতে, কেহ পার হবে ঘোড়া বা যানবাহনের গতিতে। এভাবে একদল সহি সালামতে পার হয়ে যাবে। একদল পার হবে অনেক কষ্টে। আর একদল পার হতে গিয়ে পতিত হবে জাহান্নামে। এমনকি সর্বশেষ ব্যক্তি সাতার দেয়ার মত হামাগুরি দিয়ে করে পুল পার হবে। সেদিনটি হবে এমনি একটি কঠিন ও ভয়াবহ দিন। সেদিন মহাপরাক্রমশালীর কাছে সত্যিকার ঈমানদারগণ প্রকাশ হয়ে পড়বেন। যখন ঈমানদারগণ দেখবে যে তারা নিজেরা মুক্তি পেয়েছে কিন্তু নিজেদের অনেক সঙ্গী সাথী জাহান্নামে পতিত হয়েছে তখন তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এ ভাইয়েরা তো আমাদের সাথে নামাজ পড়েছে, আমাদের সাথে সওম রেখেছে, আমাদের সাথে অন্যান্য নেক আমল করেছে। আল্লাহ তাআলা তখন বলবেন, তোমরা যাও। যার মধ্যে তোমরা একটি দীনার পরিমাণ ঈমান পাবে তাকে বের করে আনো। আল্লাহ তাদের শরীরকে জাহান্নামের আগুনের জন্য হারাম করে দিবেন। তাদের নিয়ে আসা হবে। কারো শরীর পা পর্যন্ত, কারো শরীর অর্ধ গোছা পর্যন্ত জাহান্নামের আগুন স্পর্ষ করেছে। এভাবে পরিচিত জনকে বের করে আনা হবে। এরপর আল্লাহ তাআলা আবার বলবেন, এবার যাও। যাদের মধ্যে অর্ধেক দীনার পরিমাণ ঈমান পাবে তাদের বের করে আনো। তারা যাবে ও যাদের চিনতে পারবে তাদের বের করে আনবে। এরপর আল্লাহ বলবেন, আবার যাও যাদের অন্তরে অনু পরিমাণ ঈমান পাবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আসো। তারা যাদের চিনবে তাদের বের করে আনবে। হাদীসটির বর্ণনাকারী আবু সায়ীদ রা. বলেন, যদি তোমরা আমার কথা বিশ্বাস না করো তবে আল্লাহ তাআলার এ বাণীটি পড়ে দেখ : আল্লাহ কারো প্রতি অনু পরিমাণ জুলুম করেন না। যদি কোন ভাল থাকে তাকে তিনি অনেক গুণে বাড়িয়ে দেন।
নবীগণ, ফেরেশতাগণ ও ঈমানদারগণ শুপারিশ করবেন।
এরপর মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তাআলা বলবেন, আমার শুপারিশ বাকী আছে।
তিনি জাহান্নাম থেকে অগ্নিদগ্ধ এক মুষ্ঠিকে বের করে আনবেন। তাদের জান্নাতের সম্মুখে একটি নদীতে ছেড়ে দিবেন। সেই নদীটির নাম মা-উল হায়াত (জীবন নদী) সেখানে তারা নতুনভাবে গঠিত হবে যেমন ভাবে নতুন পলি পেয়ে উদ্ভিদ অংকুরিত হয়। যেমনটি তোমরা দেখে থাকো যে রোদ লাগা বৃক্ষটি সবুজ হয় আর রোদের আড়ালে থাকা বৃক্ষটি সাদা হয়ে যায়। তারা এ নদী থেকে বের হয়ে আসবে হীরার মত উজ্জল হয়ে। তাদের গল দেশে সীলমোহর করে দেয়া হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখন জান্নাতবাসীরা বলবে, এরা হল দয়াময় আল্লাহর পক্ষ থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত। আল্লাহ তাআলা তাদের জান্নাতে প্রবেশ করালেন কিন্তু তারা দুনিয়াতে কোন সৎকর্ম করেনি ও কোন কল্যাণকর কিছু সংগ্রহও করেনি। তখন তাদের বলা হবে, যা তোমরা পেলে তা তো তোমাদের জন্য আছেই, সাথে সাথে তাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করা হয়েছে তার অনুরূপ অনুগ্রহ তোমরা লাভ করবে। (বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম)
মুমিনদের জাহান্নাম থেকে বের করার জন্য নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শাফাআত
কেয়ামতের পর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটি শাফাআত হবে সকলের জন্য। আর সেটা বিচার – ফয়সালা শুরু করার আবেদন সম্পর্কে। সকল নবী ও রাসূল এ ব্যাপারে শাফাআত করতে অস্বীকার করবে, নিজেদের অপরাগতা প্রকাশ করবে। শেষে আখেরী নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাফাআত করবেন। এটা হল সাধারণ শাফাআত। সকল মানুষ এ শাফআত দ্বারা উপকৃত হবে।
আরেকটি শাফাআত হবে যে সকল মুমিন পাপের কারণে জাহান্নামে গেছে তাদের উদ্ধার ও মুক্তির জন্য নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাফাআত করবেন।যেমন হাদীসে এসেছে –
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: প্রত্যেক নবীর রয়েছে কিছু দুআ যা অবশ্যই কবুল করা হয়। সকল নবী এ দুআগুলো করার ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করেছেন। কিন্তু আমার উম্মতকে কেয়ামতের দিন শাফাআত করার জন্য এ দুআগুলো আমি ব্যবহার করিনি। ইনশা আল্লাহ সেই শাফাআত পাবে আমার অনুসারী ঐ সকল ব্যক্তিবর্গ যারা কখনো আল্লাহ তাআলার সাথে কোন কিছু শরীক করেনি। (বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম) হাদীসে আরো এসেছে
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ, কেয়ামতের দিন আপনার শাফাআত দ্বারা কে ভাগ্যবান হবে? তিনি বললেন, হে আবু হুরাইরা আমি জানি তোমার পূর্বে কেহ এ হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেনি। তোমাকে হাদীসের বিষয়ে বেশী আগ্রহী দেখছি। কেয়ামতের দিন আমার শাফাআত দ্বারা সবচেয়ে ভাগ্যবান হবে ঐ ব্যক্তি যে অন্তর দিয়ে নির্ভেজাল পদ্ধতিতে বলেছে আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। (বর্ণনায় : বুখারী)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন আমরা মানুষদের উপরে একটি উঁচু জায়গায় থাকব। তখন প্রত্যেক জাতিকে তাদের দেব-দেবীসহ ধারাবাহিকভাবে একের পর এক ডাকা হবে। তারপর আমাদের মহান রব আসবেন এবং বলবেন, তোমরা কিসের অপেক্ষায় আছ? তখন তারা বলবে, আমরা আমাদের মহান রবের অপেক্ষায় আছি। তখন তিনি বলবেন, আমি তোমাদের রব। তারা বলবে, আমরা তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখব। তখন তিনি তাদের জন্য তাজাল্লি দিবেন এমতাবস্থায় যে, তিনি হাসছেন। আর তখন মুমিন ও মুনাফিক প্রত্যেককে নুর দিবেন। যার উপরে অন্ধকার চাপা থাকবে।
তারপর তারা তার অনুসরণ করবে পুল-সিরাতের দিকে। তাদের সাথে মুনাফিকরাও থাকবে। সে পুল-সিরাতে থাকবে লোহার হুক ও বশি। এগুলো যাকে ইচ্ছা পাকড়াও করবে। তারপর মুনাফিকদের নুর নিভিয়ে দেয়া হবে। আর মুমিনরা নাজাত পাবে।
তখন প্রথম দল যারা নাজাত পাবে তাদের চেহারা হবে চৌদ্দ তারিখের রাত্রির চাঁদের মত। সত্তর হাজার লোক, তাদের কোন হিসাব হবে না। তারপর যারা তাদের কাছাকাছি হবে তারা হবে আকাশের সবচেয়ে উজ্জল তারকাটির মত। তারপর অন্যরা। শেষ পর্যন্ত শাফা’আত আপতিত হবে। ফলে তারা শাফা’আত করবে, এমনকি যে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে, যার অন্তরে যব পরিমাণ তা থাকবে তাকেও বের করা হবে। তাকে জান্নাতের আঙ্গিনায় রাখা হবে। আর জান্নাতিরা তাদের গায়ে পানি ফেলতে থাকবে, ফলে তারা বন্যার উদ্ভিদ যেভাবে উৎপন্ন হয় সেভাবে উদগত হবে। আর তাদের পোড়া চলে যাবে। তারপর তারা আল্লাহর কাছে চাইবে, শেষ পর্যন্ত তাদের জন্য থাকবে দুনিয়া ও তার মত দশগুণ। [মুসনাদে আহমাদ ৩/৩৪৫–৩৪৬]
সর্বশেষ যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে
পুলসিরাত সম্পর্কিত একটি দীর্ঘ হাদীসের শেষাংশে এসেছে
এক ব্যক্তি জাহান্নামের দিকে মুখ করা অবস্থায় থাকবে। তখন সে বলবে, হে আমার প্রভূ! জাহান্নামের গরম বায়ু আমাকে শেষ করে দিল। আমার চেহারাটা আপনি জাহান্নাম থেকে অন্য দিকে ফিরিয়ে দিন। সে এভাবে আল্লাহ তাআলার কাছে বার বার প্রার্থনা করতে থাকবে। আল্লাহ তাকে বলবেন, তোমার এ প্রার্থনা কবুল হলে এরপর তুমি যেন আর কিছু না চাও। সে বলবে, আপনার মর্যাদার কসম করে বলছি, এরপর আপনার কাছে আর কিছু চাবো না। তখন জাহান্নামের দিক থেকে তার চেহারা ফিরিয়ে দেয়া হবে। তারপর সে আবার বলতে শুরু করবে, হে আমার প্রভূ! আমাকে একটু জান্নাতের দরজার নিকটবর্তী করে দেন। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি বলোনি এরপর আর কিছু চাইবে না? ধিক হে মানব সন্তান। তুমি কোন কথা রাখো না। কিন্তু এ ব্যক্তি প্রার্থনা করতই থাকবে। আল্লাহ তাআলা বলবেন, আমার তো মনে হয় তোমার এ দাবী পুরণ করা হলে আবার অন্য কিছু চাইবে। সে বলবে, আপনার মর্যাদার কসম করে বলছি, এরপর আপনার কাছে আর কিছু চাইবো না। সে আর কিছু চাইবে না এ শর্তে আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের গেটের নিকটবর্তী করে দিবেন। যখন সে জান্নাতে গেটের দিকে তাকিয়ে জান্নাতের সূখ শান্তি দেখবে তখন কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার প্রার্থনা করতে শুরু করবে, হে আমার প্রভু আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিন। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি বলোনি এরপর আর কিছু চাইবে না? ধিক হে মানব সন্তান। তুমি কোন কথা রাখো না। সে বলবে, হে আমার প্রভূ আমাকে আপনার সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে দুর্ভাগা করে রাখবেন না। এভাবে সে প্রার্থনা করতে থাকবে। অবশেষে আল্লাহ হাসি দিবেন। তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম)
এরপর আরো একটি পরীক্ষা যারা জান্নাতের প্রায় কাছেই চলে এসেছেন তাদের জন্য।
পিছনে জাহান্নামকে ফেলে, পুল সিরাত পার হয়ে এসে জান্নাতে প্রবেশের আর বেশী সময় দূরে নেই ঠিক সেই সময় আরো একটি পরীক্ষা নেয়া হবে আর তা হলো কানতারা, যা মুমিনের অন্তরের পারস্পরিক হিংসা বিদ্বেস বা অভিোগ দূর করার জন্য।
কানতারা কি?
রাসুলু্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“মুমিনগণ জাহান্নাম থেকে মুক্ত হয়ে জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝে ‘কানতারা বা সাঁকোপথ অতিক্রমকালে তাদের পরস্পরিক দেনা পাওনা পরিশোধের কাজ সমাপ্ত করা হবে, যে দেনা-পাওনা দুনিয়াতে অমিমাংসিত রয়ে গেছে। পারস্পরিক দেনা-পাওনা পরিশোধিত হবার পরই তারা জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি লাভ করবে। সহীহ বুখারী।
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেন,
فَمَنْ مَرَّ عَلَى الصِّرَاطِ دَخَلَ الْجَنَّةَ فَإِذَا عَبَرُوا عَلَيْهِ وُقِفُوا عَلَى قَنْطَرَةٍ بَيْنَ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ فَيُقْتَصُّ لِبَعْضِهِمْ مِنْ بَعْضٍ فَإِذَا هُذِّبُوا وَنُقُّوا أُذِنَ لَهُمْ فِي دُخُولِ الْجَنَّةِ
যারা পুলসিরাত অতিক্রম করতে সক্ষম হবে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। তবে যখন তারা পুলসিরাত পার হবে, তখন তাদেরকে জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে একটি সেতুর উপর থামানো হবে। এখানে তাদের একজন থেকে অপরজনের কিসাস বা বদলা গ্রহণ করা হবে। অতঃপর যখন তাদেরকে পারস্পরিক যুলুম থেকে পরিশুদ্ধ ও পরিস্কার করা হবে, তখন তাদেরকে জান্নাতে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হবে।
জান্নাতের ঘরসমূহ এবং উহার নেয়ামতগুলো অত্যন্ত পবিত্র ও সুন্দর। সুতরাং তার অধিবাসীগণও হবে পবিত্র। তাই যার মধ্যে সামান্যতম দোষ-ত্রুটি এবং অপবিত্রতা থাকবে, তাকে উহা থেকে পবিত্র না করে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবেনা।
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া فإذا عبروا বাক্য দ্বারা এই কথার প্রতিই ইঙ্গিত করেছেন। অর্থাৎ তারা যখন পুলসিরাত পার হবে এবং জাহান্নামে পড়ে যাওয়া থেকে বেঁচে যাবে, তখন তারা একটি কানতারার উপর থামবে। সেতু, ওভার ব্রীজ এবং যমীনের উপর যেসব ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হয়, তার চেয়ে উঁচু বস্ত্তকে কানতারা বলা হয়। এই কানতারা সম্পর্কে একাধিক কথা পাওয়া যায়। কেউ বলেছেনঃ এটি হচ্ছে পুলসিরাতের ঐ কিনারা, যা জান্নাতের নিকটবর্তী। কেউ কেউ বলেছেনঃ এটি হচ্ছে শুধু মুমিনদের জন্য খাস আরেকটি সিরাত।
فَيُقْتَصُّ لِبَعْضِهِمْ مِنْ بَعْضٍ অতঃপর তাদের একজনের জন্য অপরজন থেকে কিসাস বা বদলা গ্রহণ করা হবেঃ অর্থাৎ তাদের মধ্যকার পারস্পরিক যুলুমের বদলা নেওয়া হবে। যালেম থেকে মাযলুমের হক আদায় করে নেওয়া হবে। অতঃপর তাদেরকে যখন পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হবে অর্থাৎ মাযলুমের হক আদায় এবং অন্যান্য দায়ভার হতে মুক্ত হবে, তখন তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করা হবে। তখন তাদের কতকের অন্তরে অন্যদের প্রতি যেই হিংসা-বিদ্বেষ ছিল, তা দূর হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
﴿وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِم مِّنْ غِلٍّ إِخْوَانًا عَلَىٰ سُرُرٍ مُّتَقَابِلِينَ﴾
‘তাদের মনে যে সামান্য কিছু মনোমালিন্য থাকবে তা আমি বের করে দেবো, তারা পরস্পর ভাই ভাইয়ে পরিণত হয়ে মুখোমুখি আসনে বসবে’। (সূরা হিজরঃ ৪৭)
কিয়ামত দিবসের সময়কাল কতটুকুঃ
ফেরেশতা এবং রূহ আল্লাহ্র দিকে উর্ধ্বগামী হয় এমন এক দিনে, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর। সুরা মায়ারিজঃ ৪
যাকাত না প্রদানকারীকে শাস্তির মেয়াদ বর্ণনার হাদীসে বলা হয়েছে যে, “তার এ শাস্তি চলতে থাকবে এমন এক দিনে যার পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছর, তারপর তার ভাগ্য নির্ধারণ হবে হয়। জান্নাতের দিকে না হয় জাহান্নামের দিকে”। [মুসলিম: ৯৮৭, আবু দাউদ: ১৬৫৮, নাসায়ী: ২৪৪২, মুসনাদে আহমাদ: ২/৩৮৩] [কুরতুবী]
“যেদিন দাঁড়াবে সমস্ত মানুষ সৃষ্টিকুলের রবের সামনে!” [সূরা আল-মুতাফফিফীন: ৬]
এ আয়াতের তাফসীরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তা হবে এমন একদিনে যার পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছর, তারা তাদের কান পর্যন্ত ঘামে ডুবে থাকবে”। [মুসনাদে আহমাদ: ২/১১২]
তবে তা লোকভেদে ভিন্ন ভিন্ন বোধ হবে। কাফেরদের নিকট পঞ্চাশ হাজার বছর বলে মনে হবে। কিন্তু ঈমানদারের জন্য তা এত দীর্ঘ হবে না। হাদীসে এসেছে,
সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এই দিনের দৈর্ঘ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেনঃ “আমার প্রান যে সত্তার হাতে, তার শপথ করে বলছি। এই দিনটি মুমিনের জন্য একটি ফরয সালাত আদায়ের সময়ের চেয়েও কম হবে।” [মুসনাদে আহমাদ: ৩/৭৫]
অন্য হাদীসে বর্ণিত আছে, “এই দিনটি মুমিনদের জন্যে যোহর ও আছরের মধ্যবর্তী সময়ের মত হবে।” [মুস্তাদরাকে হাকিম: ১/১৫৮, নং ২৮৩]
একটি বিষয় পরিস্কার করাঃ——-
“আল্লাহ্ তা’আলা কাজ-কর্ম করে আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত অতঃপর তাঁর দিকে উর্ধ্বগমন করেন এমন এক দিনে যা তোমাদের হিসাব অনুযায়ী এক হাজার বছরের সমান।” [সূরা আস-সাজদাহ: ৫]
সূরা আল-মা’আরিজে বর্ণিত পঞ্চাশ হাজার বছর সময় কিয়ামতের দিনের সাথে সংশ্লিষ্ট, যা পার্থিব দিন অপেক্ষা অনেক বড়। এর দৈর্ঘ্য ও সংক্ষিপ্ততা বিভিন্ন লোকের জন্যে তাদের অবস্থা অনুযায়ী বিভিন্নরূপ অনুভূত হবে। আর সূরা আস-সাজদাহ বর্ণিত এক হাজার বছর সময় আসমান ও যমীনের মধ্যকার চলাচলের সময় বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং আয়াতদ্বয়ে কোন বৈপরিত্ব নেই। [দেখুন: ফাতহুল কাদীর, সূরা আস-সাজদা, আয়াত নং ৫]
Power point Presentation