বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
আখেরাতের ময়দানের চিত্র
“হে মানুষ, নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। অতএব দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রতারিত না করে; আর বড় প্রতারক(শয়তান) যেন তোমাদেরকে আল্লাহর ব্যাপারে প্রতারণা না করে। নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু, অতএব তাকে শত্রু হিসেবে গণ্য কর। সে তার দলকে কেবল এজন্যই ডাকে যাতে তারা জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসী হয়”। [সূরা আল-ফাতির, আয়াত: ৫-৬]
শিঙ্গায় ফুৎকার:
রাসূল(সঃ) কে জিজ্ঞেস করা হল, শিংগা কি? তিনি বললেন—এটা একটা শিং যাতে ফুৎকার দেয়া হবে। তিরমিযী-২৩৭২
রাসূল(স) বলেছেন—আমি কিরুপে নিশ্চিন্তে আরাম করতে পারি, অথচ শিংগাওয়ালা (ফেরেশতা ইসরাফীল আ) মুখে শিংগা নিয়ে অধীর আগ্রহে কান পেতে শিংগায় ফুৎকার দেয়ার নির্দেশ শ্রবনের অপেক্ষায় আছে, কখন ফুঁ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে, আর অমনি তিনি ফুঁ দিবেন। বিষয়টি নবী (সঃ) এর সাহাবীদের নিকট অত্যন্ত ভীতিকর মনে হল। তখন তিনি তাদের বলেন—তোমরা বল যে আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধায়ক। আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করলাম।তিরমিযী-২৩৭৩
“সেদিন অপরাধীর মন তার নিজের সন্তান, স্ত্রী, ভাই ও নিজের সহায়তাকারী নিকটতম আত্মীয় এবং সারা দুনিয়ার সমস্ত মানুষকে ক্ষতিপূরণ বাবদ দিতে এবং নিজেকে আযাব থেকে মুক্ত করতে চাইবে।” [সূরা আল-মা’আরিজঃ ১১–১৪]।
তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে, কিয়ামত কবে ও কখন হবে? বলে দাও, একমাত্র আমার রবই এর জ্ঞান রাখেন৷ সঠিক সময়ে তিনিই তা প্রকাশ করবেন৷ আকাশ ও পৃথিবীতে তা হবে ভয়ংকর কঠিন সময়৷ সহসাই তা তোমাদের ওপর এসে পড়বে৷ তারা তোমার কাছে এ ব্যাপারে এমনভাবে জিজ্ঞেস করছে যেন তুমি তার সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছ? বলে দাও, একমাত্র আল্লাহরই এর জ্ঞান রাখেন৷ কিন্তু অধিকাংশ লোক এ সত্যটি জানে না৷ (সূরা আরাফঃ ১৮৭)
﴿يَوْمَ تَرْجُفُ الرَّاجِفَةُ﴾
যেদিন ভূমিকম্পের ধাক্কা ঝাঁকুনি দেবে
﴿تَتْبَعُهَا الرَّادِفَةُ﴾
এবং তারপর আসবে আর একটি ধাক্কা৷
﴿قُلُوبٌ يَوْمَئِذٍ وَاجِفَةٌ﴾
কতক হৃদয় সেদিন ভয়ে কাঁপতে থাকবে৷
﴿أَبْصَارُهَا خَاشِعَةٌ﴾
দৃষ্টি হবে তাদের ভীতি বিহবল৷ সূরা নাযিয়াতঃ ৬-৯
وَإِذَا الْأَرْضُ مُدَّتْ، وَأَلْقَتْ مَا فِيْهَا وَتَخَلَّتْ
‘যেদিন পৃথিবী প্রসারিত হবে।এবং তার ভিতরকার সবকিছু বাইরে নিক্ষেপ করবে ও খালি হয়ে যাবে’। ইনশিক্বাক্বঃ ৩-৪
يَوْمَ تَرْجُفُ الرَّاجِفَةُ
تَتْبَعُهَا الرَّادِفَةُ
যেদিন ভূমিকম্পের ধাক্কা ঝাঁকুনি দেবে এবং তারপর আসবে আর একটি ধাক্কা৷সূরা যিলযালঃ২
ثُمَّ نُفِخَ فِيْهِ أُخْرَى فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَّنْظُرُوْنَ
‘অতঃপর পুনরায় শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে। তখন সবাই উঠে দাঁড়িয়ে যাবে ও দেখতে থাকবে (যুমারঃ ৬৮)।
فَإِذَا جَاءَتِ الصَّاخَّةُ
অতঃপর যখন তীক্ষ্ণ আওয়াজ আসবে
يَوْمَ يَفِرُّ الْمَرْءُ مِنْ أَخِيهِ
সেদিন মানুষ পলায়ন করবে আপন ভ্রাতা হতে,
وَأُمِّهِ وَأَبِيهِ
এবং তার মাতা, তার পিতা,
وَصَاحِبَتِهِ وَبَنِيهِ
তার পত্নী ও তার সন্তান থেকে
لِكُلِّ امْرِئٍ مِّنْهُمْ يَوْمَئِذٍ شَأْنٌ يُغْنِيهِ
সেদিন তাদের প্রত্যেকের হবে এমন গুরুতর অবস্থা যা তাকে সম্পূর্ণরূপে ব্যস্ত রাখবে।আবাসাঃ ৩৩-৩৭
الصاخة শব্দটির মূল অর্থ হলো, “এমন কঠোর ডাক যার ফলে মানুষ শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “পৃথিবী তার কলিজার টুকরা বিশালাকার স্বর্ণ খণ্ডের আকারে উদগীরণ করে দেবে। তখন যে ব্যক্তি ধনসম্পদের জন্যে কাউকে হত্যা করেছিল, সে তা দেখে বলবে, এর জন্যেই কি আমি এতবড় অপরাধ করেছিলাম? যে ব্যক্তি অর্থের কারণে আত্মীয়দের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছিল, সে বলবে, এর জন্যেই কি আমি এ কাণ্ড করেছিলাম? চুরির কারণে যার হাত কাটা হয়েছিল, সে বলবে, এর জন্যেই কি আমি নিজের হাত হারিয়েছিলাম? অতঃপর কেউ এসব স্বর্ণখণ্ডের প্রতি ভ্রুক্ষেপও করবে না। সহিহ মুসলিম
নিশ্চয় আমারই নিকট তাদের প্রত্যাবর্তন। তারপর নিশ্চয় তাদের হিসাব-নিকাশ আমারই দায়িত্বে। [সূরা আল-গাশিয়া: ২৫-২৬
কবর থেকে সকলে উঠে আসবে হাসরের মাঠেঃ
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ প্রসঙ্গে বলেন,
“আর শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে। ফলে আল্লাহ যাদেরকে ইচ্ছা করেন তারা ছাড়া আসমানসমূহে যারা আছে এবং পৃথিবীতে যারা আছে সকলেই বেহুঁশ হয়ে পড়বে। তারপর আবার শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে, তখন তারা দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে। আর যমীন তার রবের নূরে আলোকিত হবে, আমলনামা উপস্থিত করা হবে এবং নবী ও সাক্ষীগণকে আনা হবে, তাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করা হবে। এমতাবস্থায় যে, তাদের প্রতি যুলম করা হবে না”। (সূরা আয-যুমার. আয়াত: ৬৮-৬৯)
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দুই ফুঁৎকারের মধ্যবর্তী সময় হবে চল্লিশ। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথীরা বলল, চল্লিশ দিন? আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি এটা বলতে অস্বীকার করছি, তারা বলল, চল্লিশ বছর? তিনি বললেন, আমি এটা বলতেও অস্বীকার করছি। তারা বলল, তাহলে কি চল্লিশ মাস? তিনি বললেন, আমি এটাও বলতে অস্বীকার করছি। তবে মানুষের সবকিছু পঁচে যায় একমাত্র মেরুদণ্ডের নিম্নভাগের একটি ছোট্ট কোষ ব্যতীত। তার উপরই আবার সৃষ্টি জড়ো হবে।” [বুখারী ৪৮১৪, মুসলিম: ২৯৫৫]
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আবু হুরাইরা(রা.) এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: كُلَّ ابْنِ آدَمَ تَأْكُلُ الْأَرْضُ، إِلَّا عَجْبَ الذَّنَبِ مِنْهُ خُلِقَ وَفِيهِ يُرَكَّبُ
অর্থঃ রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেনঃ প্রতিটি আদম সন্তানকে মাটি খেয়ে ফেলবে, শুধু মেরুদণ্ডের নিচের হাড়টুকু (বা পশ্চাদ্দেশের হাড়) বাকি থাকবে। এ থেকেই তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এ থেকেই তাকে পুনর্গঠন করা হবে। [আবু দাউদ, হাদিস নং : ৪৬৬৫]
আবু সাঈদ(রা.) থেকে অপর বর্ণনায় আছে, তিনি জিজ্ঞেস করেছেন, এটি (পশ্চাদ্দেশের হাড় / মেরুদণ্ডের নিম্নাংশের হাড়) কেমন হে আল্লাহর রাসুল? তিনি [রাসুলুল্লাহ(ﷺ)] বললেন, এটি সরিষার দানার মতো। [আহমাদ ও ইবন হিব্বান]
যখন মানুষ কবর থেকে উঠে দাড়াবে তাদের বলা হবে, তোমরা আসো তোমাদের প্রতিপালকের কাছে, আর থামো, তোমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তখন সকল মানুষ হতাশায় আতঙ্কিত হয়ে পড়বে। পরাক্রমশালী এক অদ্বিতীয় প্রভুর সামনে সকলে মাথা নত করে দিবে। তারা সেদিন এ আহবানে সাড়া দিতে দৌড়াদৌড়ি আরম্ভ করে দিবে।
“আর শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে, তৎক্ষণাৎ তারা কবর থেকে তাদের রবের দিকে ছুটে আসবে। তারা বলবে, হায় আমাদের দুর্ভোগ! কে আমাদেরকে আমাদের নিদ্রাস্থল থেকে উঠালো? (তাদেরকে বলা হবে) এটা তো তা যার ওয়াদা পরম করুনাময় করেছিলেন এবং রাসূলগণ সত্য বলেছিলেন। তা ছিল শুধুই একটি বিকট আওয়াজ, ফলে তৎক্ষণাৎ তাদের সকলকে আমার সামনে উপস্থিত করা হবে। সুতরাং আজ কাউকেই কোনো যুলম করা হবে না এবং তোমরা যা আমল করছিলে শুধু তারই প্রতিদান তোমাদের দেওয়া হবে”। [সূরা ইয়াসীন, আয়াত: ৫১-৫৪]
আর যখন কবরসমূহ উন্মোচিত হবে,তখন প্রত্যেকে জানবে, সে কী আগে পাঠিয়েছে ও কী পিছনে রেখে গিয়েছে। ইনফিতারঃ৪-৫
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“সেদিন তারা আহ্বানকারীর (ফিরিশতার) অনুসরণ করবে। এর কোনো এদিক সেদিক হবে না এবং পরম করুণাময়ের সামনে সকল আওয়াজ নিচু হয়ে যাবে। তাই মৃদু আওয়াজ ছাড়া তুমি কিছুই শুনতে পাবে না”। [সূরা ত্বাহা, আয়াত: ১০৮]
“অতএব তাদেরকে ছেড়ে দাও, তারা (বেহুদা কথায়) মত্ত থাকুক আর খেল-তামাশা করুক যতক্ষণ না তারা দেখা পায় সেদিনের, যার প্রতিশ্রুতি তাদেরকে দেওয়া হয়েছে। যেদিন দ্রুতবেগে তারা কবর থেকে বের হয়ে আসবে, যেন তারা কোনো লক্ষ্যের দিকে ছুটছে অবনত চোখে। লাঞ্ছনা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে! এটিই সেদিন যার ওয়াদা তাদেরকে দেওয়া হয়েছিল”। [সূরা আল-মা‘আরিজ, আয়াত: ৪২-৪৪]
তোমরা যদি মানতে অস্বীকার করো তাহলে সেদিন কিভাবে রক্ষা পাবে যেদিনটি শিশুকে বৃদ্ধ বানিয়ে দেবে? যেদিনের কঠোরতায় আকাশ মণ্ডল বিদীর্ণ হয়ে যেতে থাকবে? আল্লাহর প্রতিশ্রুতি তো পূর্ন হবেই৷ এ একটি উপদেশ বাণী৷ অতএব যে চায় সে তার প্রভুর পথ অবলম্বন করুক৷মুযযাম্মিলঃ ১৭-১৯
হে আমাদের রব! নিশ্চয় আপনি সমস্ত মানুষকে একদিন একত্রে সমবেত করবেন এতে কোন সন্দেহ নেই; নিশ্চয় আল্লাহ ওয়াদা খেলাফ করেন না। আলে ইমরানঃ৯
“আর আমরা তাদের সকলকে একত্র করব; তারপর তাদের কাউকে ছাড়ব না।” [সূরা আল-কাহাফ: ৪৭]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ্ তা’আলা পূর্বাপর সকল মানুষকে কিয়ামতের দিন এক মাঠে একত্রিত করবেন। অতঃপর তাদের অবস্থা এমন হবে যে, তাদের চক্ষু পরস্পরকে বেষ্টন করবে এবং তারা যে কোন আহবানকারীর আহবান শুনতে পাবে। আর সূর্য তাদের নিকটবর্তী করা হবে।” [বুখারী ৩৩৬১]
কাজেই শপথ আপনা রব-এর! আমরা তো তাদেরকে ও শয়তানদেরকে একত্রে সমবেত করবই তারপর আমরা নতজানু অবস্থায় জাহান্নামের চারদিকে তাদেরকে উপস্থিত করবই। মরইয়ামঃ৬৮
হাশরের ময়দানের অবস্থা
আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন ময়দার রুটির ন্যায় (বৃত্তাকার) লালচে সাদা যমীনের উপরে লোকদের একত্রিত করা হবে। সেখানে কারো কোন বিশেষ নিদর্শন বিদ্যমান থাকবে না। সহিহ মুসলিমঃ ৬৭৯৮।
হাদীসে এসেছে: সাহল ইবন সা‘আদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى أَرْضٍ بَيْضَاءَ عَفْرَاءَ، كَقُرْصَةِ النَّقِيِّ، لَيْسَ فِيهَا عَلَمٌ لِأَحَدٍ»
“কিয়ামতের দিবসে মানুষকে সাদা পোড়ামাটি রংয়ের উদ্ভিদহীন একটি যমীনে একত্র করা হবে। যেখানে কারো জন্য কোনো আলামত থাকবে না”। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৯০।
তাদেরকে সেই দিনের ভয় দেখাও যেদিন পৃথিবী ও আকাশকে পরিবর্তিত করে অন্য রকম করে দেয়া হবে এবং সবাই এক মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর সমানে উন্মুক্ত হয়ে হাযির হবে৷সূরা ইবরাহীমঃ৪৮
“এ লোকেরা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে, সেদিন এ পাহাড়গুলো কোথায় চলে যাবে? বলো, আমার রব তাদেরকে ধূলি বানিয়ে উড়িয়ে দেবেন এবং যমীনকে এমন সমতল প্রান্তরে পরিণত করে দেবেন যে, তার মধ্যে তোমরা কোন উঁচু নিচু ও ভাঁজ দেখতে পাবে না৷সূরা ত্বাহাঃ১০৫-১০৭
শামে হাশরের ময়দান হবে মর্মে ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। আর তৎকালীন শাম বর্তমানে সিরিয়া, জর্দান, লেবানন, ফিলিস্তীন ও ইসরাঈলের পুরো ভূখন্ড এবং ইরাক, তুরস্ক, মিসর ও সঊদী আরবের কিছু অংশকে শামিল করে (উইকিপিডিয়া) ।
আবু যর গেফারী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘শাম হ’ল একত্রিত হওয়ার ও পুনরুত্থিত হওয়ার স্থান’ (ছহীহুল জামে‘ হা/৩৭২৬) । অন্য বর্ণনায় তিনি হাশরের স্থান হিসাবে শামের দিকে ইশারা করেছেন (আহমাদ হা/২০০৪৩, ছহীহুল জামে‘ হা/২৩০২)
হাশর নাশর হবে শাম দেশে।
নাশর অর্থ ছড়িয়ে যাবে, কবর থেকে বের হয়ে ছড়িয়ে যাবে।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি তিনি বলতেন:
«يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلًا» قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ النِّسَاءُ وَالرِّجَالُ جَمِيعًا يَنْظُرُ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ، قَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا عَائِشَةُ الْأَمْرُ أَشَدُّ مِنْ أَنْ يَنْظُرَ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ»
“কিয়ামতের দিন মানুষকে উলঙ্গ, খালি পায়ে ও খতনাবিহীন অবস্থায় একত্র করা হবে। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! পুরুষ ও নারী সকলকে একত্র করা হবে আর একজন অপর জনের দিকে তাকাবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হে আয়েশা! সেদিন অবস্থা এমন ভয়াবহ হবে যে একজন অপর জনের দিকে তাকানোর ফুরসত পাবে না।সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮৫৯।
আর তাদেরকে আপনার রব-এর কাছে উপস্থিত করা হবে সারিবদ্ধভাবে এবং আল্লাহ্ বলবেন, তোমাদেরকে আমরা প্রথমবার যেভাবে সৃষ্টি করেছিলাম উপস্থিত হয়েছ, অথচ তোমরা মনে করতে যে, তোমাদের জন্য আমরা কোন প্রতিশ্রুত সময় নির্ধারণ করব না। কাহফঃ৪৮
“সেদিন রূহ ও ফিরিশতাগণ এক কাতার হয়ে দাঁড়াবে; দয়াময় যাকে অনুমতি দেবেন। সে ছাড়া অন্যেরা কথা বলবে না এবং সে যথাৰ্থ বলবে।” [সূরা আন-নাবাঃ ৩৮]
এবং যখন আপনার প্রতিপালক উপস্থিত হবেন ও সারিবদ্ধভাবে ফিরিশতাগণও” [সূরা আল-ফাজার: ২২]
হাশরের মাঠে উঠার আহবানঃ
আর শোনো যেদিন আহ্বানকারী (প্রত্যেক মানুষের) নিকট স্থান থেকে আহ্বান করবে, যেদিন সকলে হাশরের কোলাহল ঠিকমত শুনতে পাবে, সেদিনটি হবে কবর থেকে মৃতুদের বেরুবার দিন৷
আমিই জীবন দান করি, আমিই মৃত্যু ঘটাই৷ এবং আমার কাছেই সবাইকে ফিরে আসতে হবে সেদিন
সেদিন পৃথিবী বিদীর্ণ হবে, এবং লোকেরা তার ভেতর থেকে বেরিয়ে জোর কদমে ছুটতে থাকবে, এরূপ হাশর সংঘটিত করা আমার নিকট খুবই সহজ৷সুরা ক্বাফঃ ৪১-৪৪
পরস্পরকে চিনতে পারবে কিন্তু—-
কেয়ামতে যখন মৃতদেহকে কবর থেকে উঠানো হবে, তখন একে অপরকে চিনতে পারবে এবং মনে হবে দেখা-সাক্ষাত হয়নি তা যেন খুব একটা দীর্ঘ সময় নয়। তবে অন্য আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, তারা চিনতে পারলেও একে অপরকে কিছু জিজ্ঞাসা করবে না। আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ “সেদিন তারা একে অপরকে জিজ্ঞাসা করবে না” [সূরা আল-কাসাসঃ ৬৬]
আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেনঃ যেদিন শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে সেদিন তাদের মাঝে না থাকবে বংশের সম্পর্ক, না তারা একে অপরকে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করবে। [সূরা আল-মুমিনুনঃ ১০১]
আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ “সেদিন কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু অপর বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করবে না।” [সূরা আল-মা’আরিজঃ ১০]
অন্যান্য প্রানীকেও ঊঠানো হবেঃ
আর যমীনে বিচরণশীল প্রতিটি জীব বা দু’ডানা দিয়ে উড়ে এমন প্রতিটি পাখি, তোমাদের মত এক একটি উম্মত। এ কিতাবে আমরা কোন কিছুই বাদ দেইনি; তারপর তাদেরকে তাদের রব-এর দিকে একত্র করা হবে। আন’আমঃ ৩৮
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ কেয়ামতের দিন তোমরা সব হক আদায় করবে, এমনকি (আল্লাহ্ তা’আলা এমন সুবিচার করবেন যে,) কোন শিং বিশিষ্ট জন্তু কোন শিংবিহীন জন্তুকে দুনিয়াতে আঘাত করে থাকলে এ দিনে তার প্রতিশোধ তার কাছ থেকে নেয়া হবে। [মুসনাদে আহমাদঃ ২/৩৬২] এমনিভাবে অন্যান্য জন্তুর পারস্পরিক নির্যাতনের প্রতিশোধও নেয়া হবে। [মুসনাদে আহমাদঃ ২/৩৬২]
‘শিংবিশিষ্ট কোন ছাগল যদি শিংহীন কোন ছাগলের উপর যুলুম করে থাকে, তাহলে কিয়ামতের দিন শিংবিশিষ্ট ছাগলের কাছে থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করা হবে।’’ (মুসলিম ১৯৯৭নং)
সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি কবর থেকে উঠবেন?
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘দ্বিতীয়বার শিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়ার পর সর্বপ্রথম আমি মাথা তুলব। তখন আমি দেখব, হজরত মুসা (আ.) আরশের এক পায়া ধরে আছেন। আমি জানব না, তিনি এভাবেই ছিলেন নাকি দ্বিতীয়বার শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়ার পর সেখানে গিয়েছেন। (বুখারি : ৪৮১৩)
সর্বপ্রথম কাপড় পড়ানো হবে যাকে
২৪২৩। ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামত দিবসে মানুষকে খালি পায়ে, উলঙ্গ শরীরে ও খাৎনাবিহীন অবস্থায় হাযির করা হবে, যেভাবে প্রথমবার সৃষ্টি করা হয়েছিল। তারপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেনঃ “আমি যেভাবে প্রথমবার সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেভাবেই আবার সৃষ্টি করব। প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা আমার কর্তব্য, আমি তা পালন করবই” (সূরাঃ আম্বিয়া- ১০৪)।
ইবরাহীম (আঃ)-কে সকল সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম পোশাক পরিধান করানো হবে। আমার সাহাবীগণের মধ্যকার কিছু সংখ্যক লোককে বন্দী করে ডানে-বামে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলব, হে প্ৰভু! এরা তো আমার অনুসারী। আমাকে তখন বলা হবে, আপনি তো জানেন না, আপনার পরে এরা যে কি সব বিদ’আতী কাজ করেছে। আপনি তাদের কাছ থেকে পৃথক হওয়ার পর হতে তারা পূর্বাবস্থায় ফিরে যেতে আরম্ভ করেছে। তখন আমি আল্লাহ তা’আলার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাহ (ঈসা (আঃ)-এর মতো বলব, (সূরাঃ মাইদা— ১১৮) “আপনি যদি তাদের শাস্তি দেন তাহলে তারা তো আপনারই বান্দাহ, আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করেন তাহলে নিশ্চয়ই আপনি মহা পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়”। সহীহ, বুখারী, মুসলিম। তিরমিযীঃ২৪২৩
আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনের সময়ঃ
আর যেদিন তিনি তাদেরকে একত্র করবেন (সেদিন তাদের মনে হবে দুনিয়াতে) যেন তাদের অবস্থিতি দিনের মুহূর্তকাল মাত্র ছিল; তারা পরস্পরকে চিনবে। অবশ্যই তারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে যারা আল্লাহ্র সাক্ষাতের ব্যাপারে মিথ্যারোপ করেছে এবং তারা সৎপথ প্রাপ্ত ছিল না। ইউনুসঃ ৪৫
অতএব , হে নবী, দৃঢ়চেতা রসূলদের মত ধৈর্য ধারণ করো এবং তাদের ব্যাপারে তাড়াহুড়া করো না৷৩৭ এদেরকে এখন যে জিনিসের ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে যেদিন এরা তা দেখবে সেদিন এদের মনে হবে যেন পৃথিবীতে অল্প কিছুক্ষণের বেশি অবস্থান করেনি৷ কথা পৌছিয়ে দেয়া হয়েছে৷ অবাধ্য লোকেরা ছাড়া কি আর কেউ ধ্বংস হবে? সূরা আল-আহকাফের ৩৫,
সেদিন যখন সিংগায় ফুঁক দেয়া হবে এবং আমি অপরাধীদেরকে এমনভাবে ঘেরাও করে আনবো যে, তাদের চোখ (আতংকে) দৃষ্টিহীন হয়ে যাবে৷
তারা পরস্পর চুপিচুপি বলাবলি করবে, দুনিয়ায় বড়জোর তোমরা দশটা দিন অতিবাহিত করেছো। আমি ভালোভাবেই জানি তারা কিসব কথা বলবে, (আমি এও জানি) সে সময় তাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বেশী সতর্ক অনুমানকারী হবে সে বলবে, না তোমাদের দুনিয়ার জীবনতো মাত্র একদিনের জীবন ছিল৷ সূরা ত্বা-হা এর ১০২–১০৪
আর যখন সেই সময় শুরু হবে, যখন অপরাধীরা কসম খেয়ে খেয়ে বলবে , আমরা তো মুহূর্তকালের বেশি অবস্থান করিনি৷ এভাবে তারা দুনিয়ার জীবনে প্রতারিত হতো৷সূরা আর-রূম ৫৫
যেদিন এরা তা দেখে নেবে সেদিন এর অনুভব করবে যেন ( এরা দুনিয়ায় অথবা মৃত অবস্থায় ) একদিন বিকালে বা সকালে অবস্থান করছে মাত্র। সূরা আন-নাযি’আতের ৪৬
তারপর আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, বলো,পৃথিবীতে তোমরা কত বছর থাকলে? তারা বলবে, ‘‘এক দিন বা দিনেরও কিছু অংশে আমরা সেখানে অবস্থান করেছিলাম, গণনাকারীদেরকে জিজ্ঞেস করে নিন৷ বলবেন, ‘‘অল্পক্ষণই অবস্থান করেছিলে,হায়!যদি তোমরা একথা সে সময় জানতে ৷
তোমরা কি মনে করেছিলে আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদের কখনো আমার দিকে ফিরে আসতে হবে না? সূরা আল-মুমিনুন ১১২–১১৫
কাফেররা অন্ধ ও চেহারার উপর ভর করে উপস্থিত হবে
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,“আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জন্য হবে নিশ্চয় এক সংকুচিত জীবন এবং আমি তাকে কিয়ামত দিবসে উঠাবো অন্ধ অবস্থায়। সে বলবে, হে আমার রব, কেন আপনি আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন? অথচ আমি তো ছিলাম দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন? তিনি বলবেন, এমনিভাবেই তোমার নিকট আমার নিদর্শনাবলী এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবেই আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হলো”। [সূরা ত্বাহা, আয়াত: ১২৪-১২৬]
তিনি আরো বলেন,
﴿وَنَحۡشُرُهُمۡ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ عَلَىٰ وُجُوهِهِمۡ عُمۡيٗا وَبُكۡمٗا وَصُمّٗاۖ مَّأۡوَىٰهُمۡ جَهَنَّمُۖ كُلَّمَا خَبَتۡ زِدۡنَٰهُمۡ سَعِيرٗا ٩٧ ﴾ [الاسراء: ٩٧]
“আর আমরা কিয়ামতের দিনে তাদেরকে একত্র করব উপুড় করে, অন্ধ, মূক ও বধির অবস্থায়। তাদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম; যখনই তা নিস্তেজ হবে তখনই আমি তাদের জন্য আগুন বাড়িয়ে দেব”। [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৯৭]
হাদীসে এসেছে: আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
«أَنَّ رَجُلًا قَالَ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ يُحْشَرُ الكَافِرُ عَلَى وَجْهِهِ يَوْمَ القِيَامَةِ؟ قَالَ: «أَلَيْسَ الَّذِي أَمْشَاهُ عَلَى الرِّجْلَيْنِ فِي الدُّنْيَا قَادِرًا عَلَى أَنْ يُمْشِيَهُ عَلَى وَجْهِهِ يَوْمَ القِيَامَةِ» قَالَ قَتَادَةُ: بَلَى وَعِزَّةِ رَبِّنَا»
“এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কিয়ামতের দিন কাফিরদের কীভাবে চেহারার উপর উপুর করে উঠানো হবে? তিনি বললেন: যে মহান সত্ত্বা দুনিয়াতে দু’পা দিয়ে চলাচল করিয়েছেন, তিনি কি কিয়ামতের দিন মুখ-মন্ডল দিয়ে চলাচল করাতে পারবেন না? কাতাদা বললেন: অবশ্যই তিনি পারবেন, মহান রবের সম্মানের কসম করে বলছি”। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৭৬০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮০৬
বাহয ইবনু হাকীম (রহঃ) হতে তার বাবা, অতঃপর তার দাদার সুত্রে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ (কিয়ামত দিবসে) তোমাদের পায়ে হাটিয়ে, সাওয়ারী হিসাবে এবং কিছু সংখ্যককে মুখের উপর উপুড় করে টেনে হাযির করা হবে। সহীহ, ফাযাইলুশশাম (১৩)। তিরমিযীঃ২৪২৪
আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।
ঘামের ভিতর ডুবে যাবেঃ
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«يَعْرَقُ النَّاسُ يَوْمَ القِيَامَةِ حَتَّى يَذْهَبَ عَرَقُهُمْ فِي الأَرْضِ سَبْعِينَ ذِرَاعًا، وَيُلْجِمُهُمْ حَتَّى يَبْلُغَ آذَانَهُمْ»
“কিয়ামতের দিন মানুষ ঘর্মাক্ত হবে। এমনকি যমীনের সত্তর হাত ঘামে ডুবে যাবে। তাদের ঘামে তারা কান পর্যন্ত ডুবে যাবে”। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৫৩২।
মিকদাদ ইবন আসওয়াদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
“কিয়ামত দিবসে সূর্য মানুষের খুব নিকটবর্তী হবে। এমনকি এর দুরত্ব এক মাইল পরিমাণ হবে। এ সম্পর্কে সুলাইম ইবন আমের বলেন, আল্লাহর শপথ! মাইল বলতে এখানে কোনো মাইল তিনি বুঝিয়েছেন আমি তা জানি না। জমির দূরত্ব পরিমাপের মাইল বুঝিয়েছেন, না সুরমা দানির মাইল (শলাকা) বুঝিয়েছেন? মানুষ তার আমল অনুযায়ী ঘামের মধ্যে থাকবে। কারো ঘাম হবে পায়ের গিরা বরাবর। কারো ঘামের পরিমাণ হবে হাটু বরাবর। কারো ঘামের পরিমাণ হবে কোমর বরাবর। আবার কারো ঘামের পরিমাণ হবে তার মুখ বরাবর”। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮৬৪।
হে আল্লাহর বান্দা! আপনি এভাবে চিন্তা করে দেখতে পারেন, আমার অবস্থা তখন কেমন হবে? আমি কি সেদিন সৌভাগ্যবান হবো না দুর্ভাগা? আমার জীবনের অধিকাংশ কাজ কি সৎ কাজ হয়েছে না পাপাচার বেশি হয়েছে?
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“কখনো নয়, যখন পৃথিবীকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হবে পরিপূর্ণভাবে। আর তোমার রব ও ফিরিশতাগণ উপস্থিত হবেন সারিবদ্ধভাবে। আর সেদিন জাহান্নামকে উপস্থিত করা হবে, সেদিন মানুষ স্মরণ করবে, কিন্তু সেই স্মরণ তার কী উপকারে আসবে? সে বলবে, হায়! যদি আমি কিছু আগে পাঠাতাম আমার এ জীবনের জন্য!” [সূরা আল-ফাজর, আয়াত: ২১-২৪]
ইবনু উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, হাম্মাদ (রহঃ) বলেন, আমাদের নিকট এ হাদীসটি মারফুভাবে অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী হিসাবে বর্ণিত হয়েছে। “মানুষ যেদিন জগতসমূহের প্রতিপালকের সামনে দাড়াবে” (সূরা মুতাফফিফীনঃ ৬) আয়াত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানুষ কানের অর্ধেক পর্যন্ত ঘামে ডুবে থাকাবস্থায় দাড়িয়ে থাকবে। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৪২৭৮), বুখারী, মুসলিম।
Power point presentation
৪। মৃত ব্যক্তি ও আমরা পর্বঃ ৪র্থ
https://www.islamweb.net/en/fatwa/280627/
https://zafrulmobin.blogspot.com/2015/08/Resurrection.html