কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ।
সাধারনভাবে ইশা সালাতের পর ও ফযরের সময়ের আগ পর্যন্ত যেকোন সালাতকেই কিয়ামুল লাইল বলা হয় বা রাতের সালাত, আর এই সালাত যখন রামাদানে পড়া হয় তা হয় তারাবী সালাত এবং ইশার সালাতের পর কিছু সময় ঘুমিয়ে উঠে যে সালাত পড়া হয় তা হবে তাহাজ্জুদ সালাত।
মহান রবের সাথে একান্তে কথা বলার একটি উপযুক্ত সময় হলো তাহাজ্জুদ।
মহান আল্লাহ তা’আলা মুমিনদের ও রহমানের বান্দাদের গুনাবলীর অন্যতম একটি এই সালাত আদায়ে সচেষ্ট থাকা।
সমাজে অনেক ধরনের ভুল ধারনা রয়েছে তা হলো এই সালাত কেউ একবার পড়লে আর ছাড়তে পারবে না, সব সময় পড়তে হবে, না পড়লে ক্ষতি হবে। আরেকটি কথাও শুনা যায় তা হলো রাতের সেই সময় অনেকে ভয় পান কারন জীন শয়তান ভয় দেখায় ইত্যাদি। এই ধরনের বানানো কথা দিয়ে মূলত মুমিনকে মহান রবের সাথে সম্পর্ক গভীর করতে ও দু’আ কবুল না করতে নফস ও শয়তান খুব বেশী তৎপর থাকে। তাই আমাদের সঠিক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
মহান আল্লাহ জানিয়েছেন-
অর্থাৎ তারা শয্যা ত্যাগ করে আকাঙ্ক্ষা ও আশংকার সাথে তাদের প্রতিপালককে ডাকে এবং আমি তাদেরকে যে রুযী প্রদান করেছি, তা হতে তারা দান করে। সূরা সেজদাঃ ১৬
আল্লাহভীরুরা জান্নাতে ও প্রস্রবণে থাকবে।
এমতাবস্থায় যে, তারা গ্রহণ করবে যা তাদের পালনকর্তা তাদেরকে দেবেন। নিশ্চয় ইতিপূর্বে তারা ছিল সৎকর্মপরায়ণ,
তারা রাত্রির সামান্য অংশেই নিদ্রা যেত,
রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করত,
এবং তাদের ধন-সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতের হক ছিল। সূরা যারিয়াতঃ ১৫-১৯
মুমিন ব্যক্তির কাছে রাতের শান্ত স্নিগ্ধ নিরব সময়ে বিছানায় আরাম করে শুয়ে ঘুমিয়ে কাটানোর চেয়ে ভালোবাসার স্রষ্টার সাথে কিছু সময় একান্তে কাটানোই যেন লোভনীয় হয়ে উঠে।
আমরা দুনিয়ার জীবনে কোন একটি কষ্ট বা সমস্যা সমাধানের জন্য কোন ব্যক্তির আহবানে আমরা কত রকম পরিশ্রম করতেও প্রস্তুত হয়ে যাই। ব্যক্তিগত সমস্যা থেকে শুরু করে যেকোন কষ্ট বা দুঃখকে জনে জনে আলাপ করে সাহায্য চাই বা মনে করি একটু হালকা হলাম। বিশেষ করে এমন অনেক কষ্ট সমস্যা আছে যা কাউকেই বলার জায়গা পাওয়া যায় না এবং সেই ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধানেরও কোন সুযোগ আসে না। মহান আল্লাহ আমাদের এত্তো ভালোবাসেন তাই আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন, সেই স্থানটুকু যা শান্তি ও সমাধান এনে দিবে, আর তা হলো মহান রব নিজেই কাছে ডাকতে থাকেন নির্দিষ্ট একটি সময়ে নিকটতম আকাশে এসে। অথচ আমরা কিভাবে ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেই! অথচ কত রাত আমরা কত মানুষের খুশির জন্য বা নিজের মনোরঞ্জনের জন্য ঘুমহীন কাটিয়ে দিতে সমস্যা হয় না, অথচ মহান স্রষ্টা আমাদেরই প্রয়োজন পূরনের জন্য ডাকতে থাকেন, আমরা কতজন এই উপলব্ধি করি?
আসলে মহান রবের প্রতি ভালোবাসার স্থান নিয়েই প্রশ্ন এসে যায়? প্রতিপালককে যত সুন্দর ও স্বচ্ছভাবে জানতে পারবো, তত বেশী আস্থার জায়গাটা মজবুত হবে এবং মহান রবের প্রতি ভালোবাসা তত গভীর হবে, মহান রবের সাথে একান্তে কথা বলতে ততই মন অস্থির হয়ে থাকবে। মহান আল্লাহর সাথে আমাদের সম্পর্ক আরো গভীর হোক আমরা সেই দু’আ করি।
আবু হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিত। (তিনি বলেন) রাসূল(সঃ) বলেছেন—মহান ও কল্যানময় আমাদের প্রতিপালক প্রতি রাতের শেষ-তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আসমানে অবতরন করে বলতে থাকেন, কে আছো যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আছো, যে নিজের অভাব-অনটন দূর করার জন্য আমার কাছে প্রার্থনা করবে? আমি তাকে তা প্রদান করবো এবং কে আছো, যে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।
(বুখারী-অধ্যায় তাহাজ্জুদ-১১৪৫)
আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “হে লোক সকল! তোমরা ব্যাপকভাবে সালাম প্রচার কর, (ক্ষুধার্তকে) অন্ন দাও এবং লোকে যখন রাতে ঘুমিয়ে থাকবে তখন নামায পড়। তাহলে তোমরা নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
তিরমিযী: ২৪৮৫, ইবনু মাজাহ ১৩৩৪
২০/১১৮৬। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বললেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, “রাত্রিকালে এমন একটি সময় আছে, কোন মুসলিম ব্যক্তি তা পেয়েই দুনিয়া ও আখিরাত বিষয়ক যে কোন উত্তম জিনিস প্রার্থনা করলে আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই তাকে তা দিয়ে থাকেন। ঐ সময়টি প্রত্যেক রাতে থাকে।” মুসলিম: ৭৫৭
রাসূল স. কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদের সালাতকে কিভাবে শুরু করতে হবে তার নির্দেশিকাও দিয়েছেন। উম্মতের যেন কষ্ট না হয় আবার উম্মতের প্রতি ভালোবাসা আছে বলে, উম্মত যেন মর্যাদা ও পুরুষ্কার থেকে বঞ্চিত না হয় সেই দিকে প্রিয় রাসূল স. সব সময় নজর রাখতেন। আর তাই বলেছেন-
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ রাতে নামায পড়ার জন্য উঠবে, সে যেন হাল্কা-ভাবে দু’ রাকআত পড়ার মাধ্যমে নামায শুরু করে।” মুসলিম ৭৬৮, আবূ দাউদ ১৩২৩,
আলী রা হতে বর্ণিত, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ও ফাতেমার নিকট রাত্রি বেলায় আগমন করলেন এবং বললেন, “তোমরা (স্বামী-স্ত্রী) কি (তাহাজ্জুদের) নামায পড় না?” সহীহুল বুখারী ১১২৭, ৪৭২৪, , মুসলিম ৭৭৫
আমাদের সমাজে কতজন পিতা আছেন যে, নিজ কন্যার কাছে যেয়ে কন্যাকে তার স্বামীসহ তাহাজ্জুদের কথা স্মরন করিয়ে দেন? তাহাজ্জুদের সালাতের মর্যাদা অনেক বেশী বলেই রাসূল স.তাঁর কন্যাকে তাগাদাসূচক প্রশ্ন করেছিলেন।
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ সেই ব্যক্তির প্রতি দয়া করুন, যে রাতে উঠে নামায পড়ে এবং নিজ স্ত্রীকেও জাগায়। অতঃপর যদি সে (জাগতে) অস্বীকার করে, তাহলে তার মুখে পানির ছিটা মারে। অনুরূপ আল্লাহ সেই মহিলার প্রতি দয়া করুন, যে রাতে উঠে নামায পড়ে এবং নিজ স্বামীকেও জাগায়। অতঃপর যদি সে (জাগতে) অস্বীকার করে, তাহলে সে তার মুখে পানির ছিটা মারে।”
আবূ দাউদ ১৩০৮, নাসায়ী ১৬১০, ইবনু মাজাহ ১৩৩৬, আহমাদ ৭৩৬২
রাসূল স. দু’আ করেছেন মহান রবের দয়া লাভের যে স্বা্মী বা স্ত্রী এইভাবে রাতের সালাতে জাগিয়ে দেন।
সালেম ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একবার) বললেন, “আব্দুল্লাহ ইবনে উমার কতই না ভাল মানুষ হত, যদি সে রাতে (তাহাজ্জুদের) নামায পড়ত।” সালেম বলেন, ‘তারপর থেকে (আমার আব্বা) আব্দুল্লাহ রাতে অল্পক্ষণই ঘুমাতেন।’ সহীহুল বুখারী ৪৪০, ১১২২, মুসলিম ২৪৭৮,
এই হাদীস থেকেও দেখা যায় একজন মানুষের ভালো হওয়ার গুনের মাঝে তাহাজ্জুদ সালাত একটি গুরুত্বপূর্ণ।
এর মূল কারন হলো ব্যক্তির মহান রবের প্রতি ভালোবাসা ও আস্থার জায়গাটি আরো গভীর ও মজবুত হয়। আর তখন রবের সাথে কথা বলার আনন্দটাই হয় অন্যরকম। ঘুম ও আরাম তখন হয়ে উঠে তার কাছে অপ্রিয় বরং রাতে কখন মহান রবের সান্নিধ্যে যেয়ে একটু চোখের পানি ফেলে কথা বলবেন সেটাই হয়ে উঠে অত্যন্ত প্রিয়।
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তাআলা বান্দার কাছ থেকে সর্বপ্রথম তার ফরজ নামাজের হিসাব নিবেন।
যদি ফরজ নামাজ পরিপূর্ণ ও ঠিক থাকে তাহলে সে সফলকাম হবে এবং মুক্তি পাবে। আর যদি ফরজ নামাজে কোনো ঘাটতি দেখা যায়, তখন ফেরেশতাদের বলা হবে, দেখো তো আমার বান্দার কোনো নফল নামাজ আছে কিনা?
তার যদি নফল নামাজ থেকে থাকে তাহলে তা দিয়ে আমার বান্দার ফরজের এ ঘাটতি পূরণ করো। অতঃপর অন্যান্য ‘আমলগুলোও (রোজা ও জাকাত) এভাবে গ্রহণ করা হবে। (তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, নাসাঈ)
মহান আল্লাহ তাঁর রাসুল স.কে রাতের সালাত পড়ার ব্যপারে তাগিদ করেছিলেন, রাসূল স.এর জন্য প্রাথমিক দিকে তা ছিল বাধ্যতামূলক।
মহান আল্লাহ যিনি তাঁর রাসূলের স. অন্তরকে পরিচ্ছন্ন করে দিয়েছেন,যাঁর সকল কাজ নিয়ন্ত্রিত, যিনি মহান রবের একজন সম্মানিত রাসূল ও বন্ধু, সেই রাসূল স.কে রাতের কিছু অংশকে দাঁড়িয়ে ইবাদাতে মশগুল থাকতে আহবান করেছেন কারন এই সময়ে প্রবৃত্তি দমন করতে সহায়ক হবে এবং কুর’আন সুস্পষ্ট সুন্দর ও মনযোগের সাথে পড়তে সহায়ক হবে। দিনে এতো কর্মব্যস্থতা থাকে তাই মহান আল্লাহ তাঁর ভালোবাসার রাসূল স.কে রাতে শান্ত, স্নিগ্ধ, নিরব এক পরিবেশে যখন গুরুত্বপূর্ণ সকল কর্ম থেকে অবসর হোন, সেই সময়ে একান্তে কথা বলার জন্য আহবান করেছেন।
আল্লাহ সুবহানাহু-তায়ালা সূরা মুযযাম্মিলে রাসূলুল্লাহ সা:-কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘নিশ্চই রাতের এবাদত প্রবৃত্তি দমনে এবং স্পষ্ট উচ্চারণের অনুকূল’ (সূরা মুযযাম্মিল: ২)
নাশিয়াতাল লাইল-সম্পর্কে আয়েশা রা: বলেন, ‘এর অর্থ রাতের নিদ্রার পরে নামাজের জন্য গাত্রোথান করা।’ নবুয়্যতের প্রাথমিক সময়ে রাসূলুল্লাহ সা: ও তাঁর সাহাবা রা:-দের ওপর তাহাজ্জুদ সালাত ফরজ ছিল। নফল ছিল না। তাহাজ্জুদের সালাত সম্পর্কে হারিস ইবনে হিশাম রা:-আয়েশা রা:-কে নবী সা:-এর তাহাজ্জুদ সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। আয়েশা রা: বলেন, ‘তুমি কি সূরা মুযযাম্মিল পড়নি?’ হারিস ইবনে হিশাম রা: ‘হ্যাঁ পড়েছি।’ আয়েশা রা: বলেন, ‘তাহলে শোন নবুওয়তের প্রাথমিক সময়ে নবী সা: এবং তাঁর সাহাবা রা:-গণ তাহাজ্জুদের সালাত ফরজ হিসেবে আদায় করতেন। এমন কি তাদের পা পর্যন্ত ফুলে যেত। বারো মাস পরে এ সূরার শেষের আয়াতগুলো নাজিল হয় এবং মহান আল্লাহ ভার লাঘব করে দেন। তাহাজ্জুদ সালাতকে তিনি ফরজ হিসেবে না রেখে নফল হিসেবে রেখে দেন।’ (মুসনাদে আহমদ : সূত্র-তাফসিরে ইবন কাসির)
রাসূলুল্লাহ সা: ও সাহাবা রা:-দের পা ফুলে যাওয়ার কারণ হচ্ছে আল্লাহ সুবানাহু-তায়ালা সূরা মুযযাম্মিলের প্রথমে নবী সা:-কে বলেন, ‘রাত্রিতে (নামাজের জন্য) দণ্ডায়মান হও রাতের কিছু অংশ বাদ দিয়ে অর্ধ-রাত কিংবা তার চেয়ে কিছু কম। অথবা তার চেয়ে কিছু বাড়িয়ে নাও।’
রাতের এই সালাতে দীর্ঘক্ষণ কিয়াম করার কারণে (দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা) রাসূলুল্লাহ সা: ও তাঁর সাহাবিদের পা ফুলে যেত। মিরাজের রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার পরে তাহাজ্জুদ সালাত ফরজ রহিত হয়ে নফল হিসেবে থেকে যায়। আর এ জন্যই আয়েশা রা: বলেছেন, মহান আল্লাহ তায়ালা ভার লাঘব করে তাহাজ্জুদ সালাতকে ফরজ রহিত করেন এবং নফল হিসেবে তা রেখে দেন।
আল্লাহ সুবহানু-তায়ালার বাণী, ‘আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ কায়েম কর, এটা তোমার জন্য নফল (অতিরিক্ত) আশা করা যায় তোমার রব তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে’ (সূরা বনি ইসরাইল : ৭৯)
নফল অর্থ অতিরিক্ত। অতিরিক্ত ইবাদত দ্বারা নবী সা:-এর উম্মতের এবাদতের ঘাটতি পূরণ হতে পারে। কিন্তু নবী করিম সা:-এর তো এবাদতের কোনো ঘাটতি ছিল না।
এ দৃশ্য দেখে সাহাবা রা:-গণ প্রশ্ন করতেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ সা: আপনার তো আগের পেছনের কোনো গুনাহ নেই তাহলে আপনি কেন এত কষ্ট করছেন?’ রাসূলুল্লাহ সা:-এর উত্তর ছিল, ‘আমি কি শোকর গুজার বান্দা হবো না!!!’ তাফসির সমূহে এ বিষয়ে বর্ণনা এসেছে যে, আল্লাহ সুবহানাহু-তায়ালা রাসূলুল্লাহ সা:-কে নবুওতের গুরুভার দায়িত্ব পালন করার মতো যোগ্যতা অর্জনের উদ্দেশ্যেই এক বছর সময়কাল ধরে ফরজ বা অবশ্য পালনীয় এবাদত হিসেবে তাহাজ্জুদ সালাতের বিশেষ ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে ছিলেন। উদ্দেশ্য অর্জিত হয়ে যাওয়ার পরে ফরজ রহিত হয়ে তাহাজ্জুদ সালাত রাসূল সা:-এর জন্য নফল বা অতিরিক্ত হিসেবে থেকে যায়।
মহান আল্লাহ জানিয়েছেন-
রাত্রিতে দন্ডায়মান হোন কিছু অংশ বাদ দিয়ে; অর্ধরাত্রি অথবা তদপেক্ষা কিছু কম অথবা তদপেক্ষা বেশী এবং কোরআন আবৃত্তি করুন সুবিন্যস্ত ভাবে ও স্পষ্টভাবে। আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি গুরুত্বপূর্ণ বাণী। নিশ্চয় এবাদতের জন্যে রাত্রিতে উঠা প্রবৃত্তি দমনে সহায়ক এবং স্পষ্ট উচ্চারণের অনুকূল। নিশ্চয় দিবাভাগে রয়েছে আপনার দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা। সূরা মুযযাম্মীলঃ ২-৭
আবার রাসূল স. তাঁর স্রষ্টার, মালিকের প্রতিপালকের প্রতি শুকরিয়া আদায়ের জন্য রাতের অনেকাংশই ইবাদাতে দাঁড়িয়ে থাকতেন।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রির একাংশে (নামাযে) এত দীর্ঘক্ষণ কিয়াম করতেন যে, তাঁর পা ফুলে ফাঁটার উপক্রম হয়ে পড়ত। একদা আমি তাঁকে বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি এত কষ্ট সহ্য করছেন কেন? অথচ আপনার তো পূর্ব ও পরের গুনাহসমূহকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বললেন, “আমি কি শুকরগুযার বান্দা হব না?”
সহীহ বুখারিঃ ৪৮৩৭, ১১১৮, মুসলিমঃ ৭৩১, ২৮২০
আর তাই মহান আল্লাহ তাঁর হাবীবকে উচ্চ মর্যাদা দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেছেন-
রাত্রির কিছু অংশ কোরআন পাঠ সহ জাগ্রত থাকুন। এটা আপনার জন্যে অতিরিক্ত। হয়ত বা আপনার পালনকর্তা আপনাকে মাকামে মাহমুদে পৌঁছাবেন। সূরা বনী ইসরাইলঃ ৭৯
তাহাজ্জুদ সালাতের মাধ্যমে যা লাভ হতে পারে-
মহান রবের সাথে একান্তে কথা বলা কুর’আনকে সুস্পষ্ট ও স্থিরভাবে সুবিন্যস্থ তেলাওয়াতের মাধ্যমে।
সারাদিনের কর্মব্যস্থতার অবসাদ কাটাতেও ভূমিকা রাখবে।
নিজের নফস বা প্রবৃত্তিকে নিজের বিবেকের অনুগত করতে সহায়ক হবে।
মহান প্রতিপালকের শুকরিয়া আদায়ের উপযুক্ত সময় এবং মহান রব সন্তুষ্ট হয়ে সম্মানিত করবেন।
তাহলে ভেবে দেখার বিষয় আমরা উম্মতে মুহাম্মদ হয়ে নিজেদের প্রবৃত্তিকে কিভাবে লাগামহীন করে দিয়ে রেখেছি? আরামের বিছানা ও সুখকর নিদ্রা থেকে সেই উঠে যেতে পারে যে মহান রবের ভালোবাসায় উজ্জীবিত হয়ে প্রবৃত্তির লাগাম ধরার সাহস করে। মহান আল্লাহ বলেছেন-
যে ব্যক্তি রাত্রিকালে সেজদার মাধ্যমে অথবা দাঁড়িয়ে এবাদত করে, পরকালের আশংকা রাখে এবং তার পালনকর্তার রহমত প্রত্যাশা করে, সে কি তার সমান, যে এরূপ করে না; বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে? চিন্তা-ভাবনা কেবল তারাই করে, যারা বুদ্ধিমান। সূরা যুমারঃ ৯
বান্দার কল্যান লাভের তাগাদায় কতসুন্দর করে মহান আল্লাহ তাঁর রাসূলের স. মাধ্যমে রাতে উঠে সালাত না আদায় করলে কি হতে পারে তা তুলে ধরেছেন। মানুষের স্বভাবই হলো কোনটাতে লাভ আর ক্ষতি আছে তা যাচাই করা। সেইদিকটিকে সামনে রেখেই শিক্ষাগুলো তুলে ধরেছেন রাসূল স.।
এছাড়া সারারাত ঘুমিয়ে কাটানো স্বাস্থের জন্যও অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিকর হয়, বয়সের একটি পর্যায়ে কোমড় ব্যাথা বা বিভিন্ন রকমের ব্যাথার অভিযোগ এসে থাকে। দেখা যায় রাতের কিছু সময় সালাত আদায় করলে এই ধরনের অভিযোগগুলো অনেক ক্ষেত্রেই থাকে না। মহান আল্লাহ আমাদের জন্য কত নিয়ামতপূর্ণ বিধান রেখে দিয়েছেন অথচ আমরা তা আদায় করে কল্যান লাভ করতে সক্ষম হচ্ছি না। মহান আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন যেন, কোন কোন রাতকে নিয়মিত না পারলেও সালাতে মগ্ন থেকে কাটাতে পারি।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এমন একটি লোকের কথা নবী সা-এর নিকট উল্লেখ করা হল, যে সকাল পর্যন্ত ঘুমিয়ে রাত্রি যাপন করে। তিনি বললেন, “এ এমন এক মানুষ, যার দু’কানে শয়তান প্রস্রাব করে দিয়েছে।” অথবা বললেন, “যার কানে প্রস্রাব করে দিয়েছে।” সহীহ বুখারী ১১৪৪, মুসলিম ৭৭৪,
আবূ হুরাইরা রা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ নিদ্রা যায় তখন) তার গ্রীবাদেশে শয়তান তিনটি করে গাঁট বেঁধে দেয়; প্রত্যেক গাঁটে সে এই বলে মন্ত্র পড়ে যে, ‘তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি ঘুমাও।’ অতঃপর যদি সে জেগে উঠে আল্লাহর যিকির করে, তাহলে একটি গাঁট খুলে যায়। তারপর যদি অযু করে, তবে তার আর একটি গাঁট খুলে যায়। তারপর যদি নামায পড়ে, তাহলে সমস্ত গাঁট খুলে যায়। আর তার প্রভাত হয় স্ফূর্তি ও ভালো মনে। নচেৎ সে সকালে ওঠে কলুষিত মনে ও অলসতা নিয়ে।” মুওয়াত্তা মালিক ৪২৬
১৯/১১৮৫। ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম নামায, দাউদ عليه السلام -এর নামায এবং আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম রোযা, দাউদ عليه السلام -এর রোযা; তিনি অর্ধরাত নিদ্রা যেতেন এবং রাতের তৃতীয় ভাগে ইবাদত করার জন্য উঠতেন। অতঃপর রাতের ষষ্ঠাংশে আবার নিদ্রা যেতেন। (অনুরূপভাবে) তিনি একদিন রোযা রাখতেন ও একদিন রোযা ত্যাগ করতেন।” সহীহ বুখারী ১১৩১, মুসলিম ১১৫০৯
মহান রবের দরবারে যিকিরকারীদের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হতে আমরা কতটুকু প্রচেষ্টা চালাই?
আল্লাহর রাসূল স. যিকিরকারীদের দলভূক্ত করতে স্বামী স্ত্রী দুজনকেই সুন্দর টিপস দিয়েছেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীকে রাতে জাগিয়ে উভয়ে নামায পড়ে অথবা তারা উভয়ে দু’ রাকআত করে নামায আদায় করে, তবে তাদেরকে (অতীব) যিকিরকারী ও যিকিরকারিনীদের দলে লিপিবদ্ধ করা হয়।” আবূ দাউদ ১৩০৯, ইবনু মাজাহ ১৩৩৫
কোন কারনে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় না করতে পারলে সকালে নফল সালাত আদায় করেও সেই সওয়াব পেতে পারেন যেমন-
‘দৈহিক ব্যথা-বেদনা বা অন্য কোন অসুবিধার কারণে যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাতের নামায ছুটে যেত, তাহলে তিনি দিনের বেলায় ১২ রাকআত নামায পড়তেন।”
মুসলিম ৭৪৬, তিরমিযী ৪৪৫
উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি স্বীয় অযীফা (দৈনিক যথা নিয়মে তাহাজ্জুদের নামায) অথবা তার কিছু অংশ না পড়ে ঘুমিয়ে পড়ে, অতঃপর যদি সে ফজর ও যোহরের মধ্যবর্তী সময়ে তা পড়ে নেয়, তাহলে তার জন্য তা এমনভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়, যেন সে তা রাতেই পড়েছে।” মুসলিম ৭৪৭, মুওয়াত্তা মালিক ৪৭০
ঘুমের ঘোর না কাটাতে পারলে সেই অবস্থায়ও সালাত আদায় না করে ঘুমিয়ে পড়ার জন্য বলা হয়েছে কারন এই ঘোর যেন অবচেতন অবস্থা যার দরুন ভুল তেলাওয়াত বা যিকির হতে পারে।
আসলে শুধুমাত্র রাতে ঘুম থেকে উঠাই তাহাজ্জুদের উদ্দেশ্য নয় বরং সচেতন ও সুস্থ্যতার সাথে মহান রবের দরবারে ইবাদাত ও নিজের চাওয়ার পূর্ণতার আবদারের জন্য সালাতে ও যিকিরে সময় দেয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহর সাথে কথোপকথনই উদ্দেশ্য।
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ রাতে উঠবে ও (ঘুমের চাপের কারণে) জিহ্বায় কুরআন পড়তে এমন অসুবিধা বোধ করবে যে, সে কি বলছে তা বুঝতে পারবে না, তখন সে যেন শুয়ে পড়ে।” মুসলিম ৭৮৭, আবূ দাউদ ১৩১১
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ নামাযের মধ্যে তন্দ্রাভিভূত হবে, তখন সে যেন নিদ্রা যায়, যতক্ষণ না তার নিদ্রার চাপ দূর হয়ে যায়। কারণ, যখন কেউ তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে নামায পড়বে, তখন সে খুব সম্ভবত: ক্ষমা প্রার্থনা করতে গিয়ে নিজেকে গালি দিতে লাগবে।” সহীহ বুখারী ২১২, মুসলিম ৭৮৬, মুওয়াত্তা মালিক ২৫৯
আর তাই আমাদের জীবন যাত্রার সময়কে একটি নিয়মতান্ত্রিক রুটিনে পরিনত করতে হবে। তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ে রাতে উঠে সালাত আদায়ের সুযোগ করে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে। আবার অনেকে বিভিন্ন কারনে সারারাত সজাগ থেকে ফযর পড়ে ঘুমিয়ে বেলা দুপুর পর্যন্ত ঘুমিয়ে কাটান যা শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে এবং ফযরের কল্যান থেকে বঞ্চিত হন। আবার রাতের ঘুম কখনোই দিনের ঘুম দিয়ে পূরন বা কার্যকারিতা আনা কখনোই সম্ভব নয় কারন মহান আল্লাহই রাতকে বিশ্রামের উপযোগী করে আমাদের শারীরিক কাঠামো সেই সময়ের সাথে সেট করে দিয়েছেন এবং কিছু অংশ জাগাটাও এরই অংশ কিন্তু পুরু রাত জাগাটা নিয়ম বিরুদ্ধ।
আমাদের প্রিয় নবী সা. যিনি মহান রবের প্রিয় বন্ধু ছিলেন, তিনি কিভাবে রাতের সালাত আদায় করে প্রিয় রবের সাথে কথা বলতেন তা পড়লে বুঝা যায় ভালোবাসার গভীরতা কি রকম হতে পারে। রাসূল স. মহান আল্লাহকে এত্তো ভালোবাসতেন যে সালাতে সেজদাতে দাঁড়িয়ে থাকা কষ্ট মনে হতো না বা কষ্ট স্বীকার আনন্দের ছিল। আমরা নিজেদের অবস্থান নিয়ে একটু যাচাই করি!
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগার রাকআত নামায পড়তেন, অর্থাৎ রাতে। তিনি মাথা তোলার পূর্বে এত দীর্ঘ সেজদা করতেন যে, ততক্ষণে তোমাদের কেউ পঞ্চাশ আয়াত পড়তে পারবে। আর ফরয নামাযের পূর্বে দু’ রাকআত সুন্নত নামায পড়ে ডান পাশে শুয়ে আরাম করতেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর নিকট নামাযের ঘোষণাকারী এসে হাযির হত।’
সহীহ বুখারী ৬২৬, ৯৯৪,
হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সা-এর সঙ্গে এক রাতে নামায পড়লাম। তিনি সূরা বাকারাহ আরম্ভ করলেন। আমি (মনে মনে) বললাম, ‘একশত আয়াতের মাথায় তিনি রুকু করবেন।’ (কিন্তু) তিনি তারপরও কিরাত চালু রাখলেন। আমি (মনে মনে) বললাম, ‘তিনি এরই দ্বারা (সূরা শেষ করে) রুকু করবেন।’ কিন্তু তিনি সূরা নিসা পড়তে আরম্ভ করলেন এবং সম্পূর্ণ পড়লেন। তারপর তিনি সূরা আলে ইমরান আরম্ভ করলেন এবং সম্পূর্ণ করলেন। তিনি স্পষ্ট ও ধীরে ধীরে তেলাওয়াত করতেন। যখন এমন আয়াত আসত, যাতে তাসবীহ পাঠ করার উল্লেখ আছে, তখন (আল্লাহর) তাসবীহ পাঠ করতেন। যখন কোন প্রার্থনা সম্বলিত আয়াত অতিক্রম করতেন, তখন তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন। যখন কোন আশ্রয় প্রার্থনার আয়াত অতিক্রম করতেন, তখন তিনি আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। (অতঃপর) তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু করলেন। সুতরাং তিনি রুকুতে ‘সুবহানা রাবিবয়াল আযীম’ পড়তে আরম্ভ করলেন। আর তাঁর রুকু ও কিয়াম (দাঁড়িয়ে কিরাত পড়া অবস্থা) এক সমান ছিল। তারপর তিনি রুকু থেকে মাথা তুলে ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ, রাববানা অলাকাল হামদ’ (অর্থাৎ আল্লাহ সেই ব্যক্তির প্রশংসা শুনলেন, যে তা তাঁর জন্য করল। হে আমাদের পালনকর্তা তোমার সমস্ত প্রশংসা) পড়লেন। অতঃপর বেশ কিছুক্ষণ (কওমায়) দাঁড়িয়ে থাকলেন রুকুর কাছাকাছি সময় জুড়ে। তারপর সেজদা করলেন এবং তাতে তিনি পড়লেন, ‘সুবহানাল্লা রাবিবয়াল আ‘লা’ (অর্থাৎ আমার মহান প্রভুর পবিত্রতা বর্ণনা করছি)। আর তাঁর সেজদা দীর্ঘ ছিল তার কিয়াম (দাঁড়িয়ে কিরাত পড়া অবস্থা)র কাছাকাছি। মুসলিম: ৭৭২, তিরমিযী: ২৬২
জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সর্বোত্তম নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল, তিনি বললেন, “দীর্ঘ কিয়াম-যুক্ত নামায।” মুসলিম: ৭৫৬, তিরমিযী: ৩৮৭
মহান রবের দেয়া নিয়ম সবগুলোই আমাদের জন্যই কল্যানকর।
স্বাভাবিক অবস্থায় আমরা যখন দাড়িয়ে থাকি বা বসে থাকি তখন আমাদের ব্রেইনে রক্ত পৌছায় ঠিকই, কিন্তু তা একটা স্বাস্থ্যকর ব্রেইনের জন্য পর্যাপ্ত নয়। কিন্তু আমরা যখন সিজদায় যাই তখন মস্তিষ্কে/ব্রেইনে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রক্ত সঞ্চালিত হয়, যা একটা স্বাস্থ্যকর ব্রেইনের জন্য খুবই জরুরী। ফলে মুসলমানদের মাঝে যারা নিয়মিত সালাত আদায় করেন দীর্ঘ সাজদাহ সহকারে তাদের এলজেইমারস অসুখ কম হয়। আল্লাহু আকবার।
অনেকে হজ্জ থেকে এসে বা কোন বিশেষ সমস্যায় পড়ে রাতের সালাত অর্থাৎ তাহাজ্জুদ পড়ার অভ্যাস করেছিলেন, প্রতিদিন না হলেও মাঝে মাঝে কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এই মাঝে মাঝে তাহাজ্জুদ আদায়টা এক সময় বন্ধ করে ফেলেন। গল্পে গল্পে অনেকে বলেন, হ্যা একসময় তাহাজ্জুদ পড়েছি, এখন আর পড়ি না বা পড়ার সময় হয় না। এই অবস্থাটা গল্পে না বলে নিজেকে প্রশ্ন করে আত্মশুদ্ধি হওয়া প্রয়োজন যে এর অর্থ দাঁড়ায় এখন শয়তান বিজয়ীর বেশে ব্যক্তিকে এই সুন্দর একটি আমল থেকে গাফেল করে ফেলেছে। তাই পুনরায় নিজেকে মহান আল্লাহর সাহায্য চেয়ে আবার সেই আমলে ফিরে যাওয়াটাই উত্তম মুমিনের কাজ।
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রা.হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, “হে আব্দুল্লাহ! তুমি অমুক ব্যক্তির মত হইয়ো না। সে রাতে উঠে নামায পড়ত, তারপর রাতে উঠা ছেড়ে দিল।” সহীহ বুখারী ১১৫২, মুসলিম ১১৫৯,
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “রাতের নামায দু’ দু’ রাকআত করে। অতঃপর যখন ফজর হওয়ার আশংকা করবে, তখন এক রাকআত বিতির পড়ে নেবে।” সহীহ বুখারী ৪৭২, মুসলিম ৭৪৯
উক্ত রাবী রা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের বেলায় দু’ দু’ রাকআত করে নামায পড়তেন এবং এক রাকআত বিতির পড়তেন।’ সহীহ বুখারী ৪৭২, ৪৭৩, ৯৯১, ৯৯৩, ৯৯৫, ৯৯৮, ১১৩৭,
উক্ত রাবী রা হতে আরও বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের প্রথম দিকে ঘুমাতেন ও শেষের দিকে উঠে নামায পড়তেন। সহীহ বুখারী ১১৪৬, মুসলিম ৭৩৯,
তাহাজ্জুদের সালাত গুনগত মান সুন্দর ও গভীর মনোনিবেশ সহ হতে হবে, চাই তা দুই রাক’আত বা চার রাক’আত সালাত হলেও। সংখ্যা বেশীর চেয়ে ও অতিরিক্ত সূরা পড়ার চেয়ে এখানে মহান রবের সাথে অন্তরের গভীর ভালোবাসার আদান প্রদানই বড় লক্ষ্য হওয়া প্রয়োজন।
মহান আল্লাহ আমাদের তাঁর ভালোবাসার দিকে পরিচালিত করুন।