তাগুত কে জানি ইমানকে পরিচ্ছন্ন করি

আসসালামু’আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ

দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে

  • তাগুতের পরিচয়

লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।

 অর্থ : আল্লাহ এক আর কোন মাবুদ নেই। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর প্রেরিত রাসূল

আমরা প্রায় সকলেই দেখা যায় কলেমার ইল্লাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া বা আল্লাহ আমাদের রব পালনকর্তা, মা’বুদ বলে এইঅংশটুকুই জোরালোভাবে গ্রহন করা, বা  বলা হয়।

অথচ কলেমার প্রথমেই কিন্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ রয়েছে যা না করে পরবর্তী অংশটি করা যায় না। আর সেটা হলো লা ইলাহা অর্থাৎ অন্য কোন ইলাহ নেই। অন্তর চিন্তা চেতনা বিশ্বাস থেকে প্রথমে সকল ইলাহ বা মা’বুদকে ঝেড়ে ফেলে পরিস্কার করে নিতে হবে এবং পরিচ্ছন্ন সেই স্থানে প্রবেশ করবে ইল্লাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহকে মাবুদ বা ইলাহ হিসেবে মেনে নেয়া ধারন করা।

এর মাধ্যমেই তাগুতকে বাতিল করে ইমান আনা হলো। লা ইলাহা প্রথমে আনতে হবে ইমান আনার ক্ষেত্রে, এটাই হলো তাগুদকে অস্বীকার করা।

ইমানকে পূর্ন করতে বা অন্তরে ঢুকাতে প্রথমেই তাগুদকে বাদ দিতে হবে।

“লা ইলাহা”—“নেই কোন ইলাহ” বাক্যটি নেতিবাচক; অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া অন্য সবকিছুর উপাসনা (ইবাদত) বাতিল বলে বিশ্বাস করা, তা ত্যাগ করা, ঘৃণা ও অপছন্দ করা, এবং যারা তা (আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনকিছুর উপাসনা) করবে তাদের অস্বীকার করা, তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করা।

যেমন আল্লাহ জানিয়েছেন

فَمَن يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِن بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىٰ لَا انفِصَامَ لَهَا ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ﴾

এখন যে কেউ তাগুতকে অস্বীকার করে আল্লাহর ওপর ঈমান আনে , সে এমন একটি মজবুত অবলম্বন আঁকড়ে ধরে , যা কখনো ছিন্ন হয় না ৷ আর আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও জানেন ৷সূরা বাকারাঃ২৫৬

“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর রুকন বা ভিত্তি দুটো যা নিম্নে উপস্থাপন করা হলোঃ-

১। কুফর বিত্ তাগুত

২। ঈমান বিল্লাহ

সহীহ মুসলিম শরীফে বর্ণিত হাদীসে রাসল (সঃ) ইরশাদ করেছেনঃ “যে ব্যক্তি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বললো আর আল্লাহ ছাড়া অন্য সকল উপাস্যকে অস্বীকার করলো তার জান ও মাল পবিত্র “(অর্থাৎ কাফেরদের জান ও মালের মতো গনিমতের মাল নয়।) এবং তার হিসাবের ভার আল্লাহর ওপরই ন্যস্ত (অর্থাৎ মনের কুফরীর বিচার আল্লাহই করবেন।)

পবিত্র কোরআনে মোট আট স্থানে ‘তাগুত’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।

তাগুত শব্দটি আরবী (তুগইয়ান) শব্দ থেকে উৎসারিত, যার অর্থ সীমালংঘন করা, বাড়াবাড়ি করা, স্বেচ্ছাচারিতা।

অধিকন্তু আরও বলা যায় যে, তাগুত শব্দ এসেছে “তাগা” যার অর্থ “সীমা লংঘন করা, আল্লাহ ছাড়া যা কিছুর উপাসনা করা হয় এবং যে এতে রাজি-খুশি থাকে, তাকে তাগুত বলা হয়।

সব সীমালংঘনই তাগুত নয়।যে সীমালংঘন আল্লাহর দাসত্ব থেকে সরিয়ে নেয় সেটাই তাগুত।

সূরা আনকবূতের প্রথম আয়াতেই আল্লাহ তাআলা বলেন –

মানুষ কি মনে করে যে আল্লাহর প্রতি ঈমন এনেছি বললেই তাদেরকে বিনা পরীক্ষায় ছেড়ে দেওয়া হবে?

ঈমানের পরীক্ষা আসে তাগূতের মাধ্যমে। তাগূতকে অমান্য করার সিদ্ধান্ত না থাকলে পরীক্ষায় অবশ্যই ফেল করবে।

ইসলামের পরিভাষায় আল্লাহ ছাড়া যাদেরকেই অনুসরণ করা হয়, যারাই নিজেদেরকে অনুসরণ করতে বলে, আল্লাহর  আইনের উপর নিজের আইন চাপিয়ে দেয়, আল্লাহর  দাবি থেকে নিজেদের দাবিকে প্রাধান্য দেয়, তারাই তাগুত। তাগুত হচ্ছে যাবতীয় অপশক্তি, যা আমাদেরকে আল্লাহর অবাধ্যতার দিকে নিয়ে যায়।

আল্লাহর সাথে বিদ্রোহ করার তিনটি পর্যায় রয়েছে।

 প্রথম পর্যায়ঃ  

ব্যক্তি ইসলামের আইন স্বীকার করে, জানে যে আল্লাহকে মানতে হবে, কুরআন, হাদিস অনুসরণ করতে হবে, কিন্তু তারপরেও সে বার বার নিষেধ অমান্য করে, আদেশ মানে না। এদেরকে ফাসিক বলা হয়।

দ্বিতীয় পর্যায়ঃ

 ব্যক্তি আল্লাহকে  একমাত্র ইলাহ মানে না, সে অন্য কারো বা কিছুর উপাসনা করে। এদেরকে বলা হয় কাফির বা মুশরিক।

তৃতীয় পর্যায়

ব্যক্তি মালিক বা প্রভুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে, তার রাজ্যে এবং তার অনুসারীদের মধ্যে নিজের হুকুম চালাতে থাকে। এই শেষ পর্যায়কে বলা হয় তাগুত।

 

ইবনে আল-কাইয়্যিম তার রচিত গ্রন্থ ই’লাম আল-মুয়াক্কিঈন এ বলেন, “বান্দা যখন কোনকিছুর ইবাদত, কাউকে অনুসরণ কিংবা মান্য করার ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম করে তখন এইরকম প্রতিটি কর্মকান্ডই তাগুতের মধ্যে পড়ে। সুতরাং প্রত্যেকের জন্য তাগুত সেটাই যার নিকট সে আল্লাহ্ ও রাসূলকে বাদ দিয়ে বিচারের শরণাপন্ন হয়, অথবা আল্লাহ্ বাদ দিয়ে যার উপাসনা করা হয়, অথবা আল্লাহ্’র কাছ থেকে প্রাপ্ত সুস্পষ্ট প্রমাণ ব্যতিরেকে যার অনুসরণ করা হয়, অথবা এমন কিছুকে মান্য করা যা আল্লাহ্’র প্রতি আনুগত্য থেকে উৎপত্তি হয়নি।”

সাইয়্যেদ কুতুব (রহ:) বলেন, “তাগুত বলতে সেইসব ব্যক্তি ও ব্যবস্থাকে বোঝায় যেগুলো ঐশী দ্বীন এবং নৈতিক, সামাজিক ও আইন-শৃঙ্খলাকে অবমাননা করে এবং আল্লাহ নির্দেশিত বা তার দেয়া দিক-নির্দেশনা থেকে উদ্ভুত নয় এমন সব মূল্যবোধ ও রীতিনীতির ভিত্তিতে এই জীবন ব্যবস্থা পরিচালনা করে।” (তাফসীরে ফি যিলালিল কোরআন)

ইমাম মালেক (রহ:) তাগুতের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেনঃ “এমন প্রত্যেক জিনিসকেই তাগুত বলা হয়, আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে যার ইবাদত করা হয়।” (ফতহুল ক্বাদীর, আল্লামা শওক্বানী) এ সংজ্ঞাটি উত্তম এবং ব্যাপক অর্থজ্ঞাপক।

 

প্রধানত তাগুত ৫ প্রকার।

১) শয়তান —(জীন শয়তান ও মানুষ শয়তান)

হযরত উমর রা বলেন, “জিবত শব্দের অর্থ হচ্ছে যাদু এবং তাগুত শব্দের অর্থ হচ্ছে শয়তান।” (তাফসীরে ইবন কাসির-২/৪৪৪, সূরা নিসা: ৫১ এর তাফসীর)

মুজাহিদ র বলেন, “তারা হচ্ছে মানুষরূপী শয়তান। তাদের কাছে মানুষ তাদের বিবাদ নিয়ে উপস্থিত হয় এবং তাদেরকে বিচারক মেনে নেয়।” (তাফসীরে ইবন কাসির-২/৪৪৪, সূরা নিসা: ৫১ এর তাফসীর)

শয়তান বা ইবলিস আল্লাহর  সাথে বিদ্রোহ করে মানুষকে আল্লাহর বিরুদ্ধে কাজ করায়। শয়তান নিজের ইবাদাতের জন্য মানুষকে ওয়াসওয়াসা দিতে থাকে।

মহান আল্লাহ জানিয়েছেন-

“হে বনী-আদম! আমি কি তোমাদেরকে বলে রাখিনি যে, শয়তানের এবাদত করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? এবং আমার এবাদত কর। এটাই সরল পথ।” সুরা ইয়াসিনঃ ৬০-৬১।

এখানে শয়তান এর জন্য সালাত বা সাওম এই ধরনের উপাসনা আদায় করা হয় তা নয় বরং শয়তানের ইবাদাত বলে সকল ধরনের শয়তানী নির্দেশনার আনুগত্যকে বুঝানো হয়েছে।

এই জীন শয়তানরা নিজের ইবাদাত করতে বা আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদাত করতেও  ওয়াসওয়াসা দিতে থাকে, ভয় দেখায় তুমি যদি ইসলামের দিকে যাও তাহলে সমাজ  কি বলবে, জংগি বলবে, দাঁড়ী  রাখলে পর্দা করলে- তুমি নিজেকে উন্নতির দিকে নিতে পারবে না, নিজের যোগ্যতাগুলোকে নারী পুরুষ নির্বিশেষে উন্মোচন করতে পারবে না, অধিক সন্তান নিও না-আনন্দ স্ফূর্তি করতে পারবে না বা সন্তানদের খাওয়াতে গেলে দরিদ্র হয়ে যাবে, দান করো না,অভাবী হয়ে যাবে ইত্যাদি আরো।

মানুষের মাঝেও আছে যারা বলে চলো পুজাতে যাই -দেখে আসি, সেখানে মেলা আছে, বাহারি কেনাকাটা করি, সুন্দর জিনিষ আছে-আমরাতো আর পূজা করছি না, আর ওদের সাথে বন্ধুত্ব না রাখলে চলবে? বন্ধুত্ব রক্ষার জন্য ওদের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হবেতো বা বিদয়াতী অনুষ্ঠানে জয়েন করতে পরামর্শ দেয়- কি হয়েছে আমিও নামাজ পড়ি একটু মিলাদ, কুর’আনখানিতে অংশ নিলে অসুবিধা নেই ইত্যাদি।

অথচ মহান আল্লাহ এই শয়তানকে প্রকাশ্য শত্রু হিসেবেই নিতে বলেছেন। হাদীসে আছে-রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “মানুষ তার বন্ধুর দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়, সুতরাং প্রত্যেক ব্যক্তির চিন্তা করা দরকার, সে কার সাথে বন্ধুত্ব করছে।(মুসনাদে আহমদ, মেশকাত)

আর মহান আল্লাহ জানিয়েছেন-

আর সেদিন অপরাধী নিজের দুই হাত কামড়িয়ে বলবে, ‘হায় আমার আফসোস! যদি আমি রাসূলের পথ ধরতাম। হায়! আমার দুর্ভোগ! আমার আফসোস! যদি আমি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম’। অবশ্যই সে আমাকে বিভ্রান্ত করেছিল আমার নিকট উপদেশ বাণী (কুরআন) পৌঁছার পর; আর শয়তান হল মানুষের জন্যে মহাপ্রতারক। আর রসূল বলবে, ‘হে আমার রব, অবশ্যই আমার জাতির লোকেরা এই কুরআনকে পরিত্যাজ্য গণ্য করেছিল। ফুরকান, ২৫/২৭-৩০

২) যাকে মানুষ ইবাদাত করে এবং সে তাতে খুশি থাকে।

যেমন ভন্ড পির। কিন্তু যে ব্যক্তি খুশি নন সে তাগুত নয়। যেমন ইসা আ কে এখন খৃষ্টানরা যেভাবে ইবাদাত করে তাতে ইসা আ কিন্তু খুশি নন।

হযরত শাহ জালাল কিন্তু বলে যান নি তার মাজার করতে এইভাবে ইবাদাত করতে, তিনি খুশি নন। তাহলে ওনারা তাগুত নয়। কিন্তু কাজটি তাগুতি যারা করছে, তারা তাগু্ত।

জীবিত ব্যক্তি পীর কে সাজদাহ করে, তাতে সেই পীর খুশি হয়, সে তাগুত।

যেমন আল্লাহ বলেনঃ “তাদের মধ্যে যে বলে যে, তিনি (আল্লাহ) ব্যতীত আমিই উপাস্য, তাকে আমি জাহান্নামের শাস্তি দেব। আমি জালেমদেরকে এভাবেই প্রতিফল দিয়ে থাকি”। সুরা আল-আম্বিয়াঃ ২৯।

৩) যে মানুষকে নিজের বানানো ইবাদতের দিকে আহ্বান জানায়।

সাধারনত এই ধরনের তাগুতী শক্তি প্রথমেই নিজেকে রব বলে কাজ শুরু করে না, মানুষের শুভাকাংখী হয়েই কাজ শুরু করে।সংস্কারক হয়েই কাজ করে, আস্তে আস্তে পদমর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করে। আস্তে আস্তে ব্যক্তির অন্তরে ভালোবাসা পদমর্যাদা অন্ধ ভক্তির জায়গাটা প্রস্তুত করে তারপর মহান রবের দাসত্ব থেকে সরিয়ে নেয়।

যেমন বিভিন্ন ফেরকার গ্রুপ।

কোন কোন ব্যক্তি বিভিন্নরুপ দরুদ/যিকির বানিয়ে অন্যকে আমল করতে বলে। কুর’আন সুন্নাহ উল্লেখিত দু’আ দরুদের দিকে যেতে মানা করে নিজের বানানোগুলো আমল করতে দাওয়া দেয়। আমি তোমার নেতা আমার কথাই মানতে হবে, কুর’আন হাদীসের কথা আরেকদিকে রাখো-এইভাবে কর্তৃত্ব খাটায়।

সূরা তওবার ৩১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন-

اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللَّهِ

‘তারা তাদের ওলামা ও পীরদেরকে আল্লাহর বদলে তাদের রব হিসেবে গ্রহণ করেছে।

মহান আল্লাহ সুস্পষ্ট জানিয়েছেন-

এসব লোক কি আল্লাহর এমন কোন শরীকে বিশ্বাস করে যে এদের জন্য দীনের মত এমন একটি পদ্ধতি নির্ধারিত করে দিয়েছে আল্লাহ যার অনুমোদন দেননি? যদি ফায়সালার বিষয়টি পূর্বেই মীমাংসিত হয়ে না থাকতো তাহলে তাদের বিবাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিয়ে দেয়া হতো৷এ জালেমদের জন্য নিশ্চিত কষ্টদায়ক শাস্তি রয়েছে৷শূরাঃ২১

আল্লাহ তা’আলা বলেন-

– ‘সেদিন তাদের মুখমণ্ডল আগুনে উলটপালট করা হবে, তারা বলতে থাকবে, হায়! আমরা যদি আল্লাহ এবং (আল্লাহর) রাসূলের অনুসরণ করতাম। ‘তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আমাদের নেতাও বড় লোকদের আনুগত্য করেছিলাম এবং তারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে। ‘হে আমাদের প্রতিপালক!তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দাও এবং তাদেরকে দাও মহাঅভিসম্পাত।[সূরা আহযাব : ৬৬-৬৮]

প্রতিটি ব্যক্তির নিজ দায়িত্ব হক ও বাতিল জানা, সচেতন থাকা আর তা না হলে দাজ্জালের ফিতনায় পড়ে যাবে। যতটুকু জ্ঞান থাকলে ইমান সঠিকভাবে রাখা আমল করা ও জীবন রবের পথে পরিচালিত করা যাবে ততটুকু জ্ঞান রাখা প্রত্যেকের দায়িত্ব।

কুর’আনের প্রথম নাযিল করা শব্দ হলো ইক্বরা, পড়ো। আর এই পড়ার কথা বলেই বলা হয়েছে যিনি সৃষ্টি করেছেন তাঁর নামে। অর্থাৎ যত জ্ঞান অর্জন করা হোক না কেনো সকল কিছুর মাঝে এটাই প্রতিষ্ঠিত থাকতে হবে যে আল্লাহ সৃষ্টিকর্তা, আমরা তাঁরই সৃষ্ট।

৪) তারা অদৃশ্যের জ্ঞান আছে বলে দাবি করে।

যেমন- গণক, জ্যোতিষ,পীর

মানুষের অন্তরের ভিতরে কি আছে তা বলতে পারে বলে দাবী করে। ভাগ্য বলে দিবো। বিভিন্ন রঙের পাথর দিয়ে ভাগ্য পরিবর্তন করে। ব্যক্তির হাতে দেখা যায় কয়েকটি আংটি, জিজ্ঞেস করলে বলবে  বলে অমুক বাবা, অমুক খাজা দিয়েছে কোনটা ব্যবসায় উন্নতি, জীবনে সফলতা ইত্যাদি।

অনেকে মুখে বলে থাকেন, তোর ভবিষ্যত অন্ধকার বা ভবিষ্যতে কিছুই করতে পারবি না, এই ধরনের কথা বলাটাও ঠিক নয়।

অথচ আল্লাহ বলেনঃ

 “তাঁর কাছেই অদৃশ্য জগতের চাবি রয়েছে। এ গুলো তিনি ব্যতীত কেউ জানেনা। স্থলে ও জলে যা আছে, একমাত্র তিনিই জানেন। কোন পাতা ঝরে না, কিন্তু তিনি তা জানেন। কোন শস্য কণা মৃত্তিকার অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন আর্দ্র ও শুস্ক দ্রব্য পতিত হয় না, কিন্তু তা সব প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে”। সুরা আন-আমঃ ৫৯।

৫)  যে আল্লাহর আইন অনুযায়ী বিচার করে না, মানব রচিত আইনকে আল্লাহর  আইনের থেকে উত্তম মনে করে।

 যেমন ইসলাম বিদ্বেষী শাসক বা সমাজ নেতা।

“আপনি কি তাদেরকে প্রত্যক্ষ করেননি যারা দাবী করে যা আপনার উপর নাযিল হয়েছে, এবং যা আপনার পূর্বে নাযিল হয়েছে, তার উপর তারা ঈমান এনেছে, এবং তারা বিবাদমান বিষয়গুলোর মিমাংসার জন্য তাগুতের শরণাপন্ন হতে চায় অথচ তা প্রত্যাখ্যানের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু শয়তান তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়।” [সূরা আন নিসা: ৬০]

অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম! সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে (নবী সাঃ কে) ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা হূষ্টচিত্তে তা কবুল করে নেবে। সুরা আন-নিসাঃ ৬৫।

 আল্লাহ বলেছেনঃ “যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুযায়ী ফয়সালা করে না তারাই কাফের”। সুরা আল-মায়িদাহঃ ৪৪।

যে ব্যক্তি এটা মনে করে আল্লাহর বিধান মসজিদ মাদরাসায় কিন্তু সমাজ বা রাষ্ট্রের বিধান আলাদা তাহলে এটাই তাগুত। অনেকেই ব্যক্তি পরিসরে কিছু উপাসনা করাটাই ইসলাম দাবী করে লেন দেনে মানব রচিত নিয়ম বিধানের অনুসরন করে থাকে।

আবার দেখা যায় উত্তরাধীকার আইন কুর’আন সুন্নাহ থেকে পরিস্কার বলে দেয়া আছে, কিন্তু এই তাগুত সুযোগ বুঝে পরিবর্তন করে অন্য আইন প্রতিষ্ঠিত করে নেয়।

প্রযুক্তির উন্নয়ন যুক্তি দিয়ে আল্লাহর বিধান মানা সম্ভব নয় বলে মানব রচিত বিধানের দিকেই ছুটে চলে। যেমন এখন সুদকে যেভাবে বিলীন করে দিচ্ছে বিভিন্ন লেন দেনে।ইসলামের বিধান প্রকাশ্য। গোপন বলে কিছুই নাই। এই বিধান কিয়ামত পর্যন্তই উপযোগী। আল্লাহ কি জানেন না যে কিয়ামত পর্যন্ত মানব প্রযুক্তির উন্নতি কত প্রসার হবে! তিঁনিই কি বিধান কে সম্পূর্ন করে দেননি!

৬। এছাড়াও আর কিছু তাগুত আছে যা জানা  অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন এবং বেশীরভাগ মানুষ এতে যুক্ত হয়ে আছেন। আর তা হলো নফস বা হাওয়াকে রব বলে মেনে নেয়া।

মানুষ যখন নিজের কামনা বাসনাকে আল্লাহর  ইচ্ছার উপরে প্রাধান্য দেয়, নিজের কামনা বাসনা মেটানোর জন্য আল্লাহর  আইন অস্বীকার করে, তখন সে নিজেই তাগুত হয়ে যায়।

নাফস মানে প্রবৃত্তি, আর হাওয়া মানে কুপ্রবৃত্তি। দেহের যাবতীয় দাবিকে একসাথে নাফস বলা হয়। যে দাবি মন্দ তাকেই হওয়া বলে।

দেহের ভালো ও মন্দের কোনো ধারণা নেই। এ ধারণা আছে বিবেকের।রূহের সিদ্ধান্তই বিবেক। নাফস বা দেহের দাবি মন্দ বলেই ধরে নিতে হবে। বিবেক যাচাই করে বলে দেয় কোন দাবিটা ভালো বা মন্দ।

 সূরা ইউসূফের ৫৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে

আমি নিজের নফ্‌সকে দোষমুক্ত করছি না৷ নফ্‌স তো খারাপ কাজ করতে প্ররোচিত করে, তবে যদি কারোর প্রতি আমার রবের অনুগ্রহ হয় সে ছাড়া৷ অবশ্যি আমার রব বড়ই ক্ষমাশীল ও মেহেরবান৷”

 নিশ্চয়ই নাফস মন্দেরই হুকুম দেয়। আল্লাহর নাফরমানীয় জন্য তাগিদ দেয় বলেই নাফস তাগূত।

যদি কেউ সত্যিই আল্লাহর অনুগত বান্দাহ হতে চায়, তাহলে তাকে অবশ্যই নাফসের কাফির হতে হবে। কেউ যদি উন্নত চরিত্রের অধিকারী হতে চায় তাহলে প্রথমেই তাকে দৃঢ় সিদ্ধান্ত দিতে হবে, আমি নাফসের কথা মেনে চলব না-না-না। অর্থাৎ আমি বিবেকের বিরুদ্ধে চলব না-না-না।

এ সিদ্ধান্ত না নিলে যে আল্লাহর প্রতি ইমান আনা সত্তেও নাফসের গোলামী থেকে যাবে। সে আল্লাহকে ইলাহ বা হুকুমকর্তা স্বীকার করা সত্তেও নাফস বা হাওয়াকে ইলাহ হিসেবেই মেনে চলবে।

 মহান আল্লাহ বলেন,

কখনো কি তুমি সেই ব্যক্তির অবস্থা ভেবে দেখেছো, যে তার নিজের প্রবৃত্তির কামনাকে প্রভু রূপে গ্রহণ করেছে? তুমি কি এহেন ব্যক্তিকে সঠিক পথে নিয়ে আসার দায়িত্ব নিতে পার৷ তুমি কি মনে করো তাদের অধিকাংশ লোক শোনে ও বোঝে? তারা পশুর মতো বরং তারও অধম৷ফুরকানঃ৪৩-৪৪

সুরা জাসিয়ার ২৩নং আয়াতে আছে,

তুমি কি তাকে দেখেছ, যে তার কুপ্রবৃত্তিকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করেছে? কুরআনের অনুবাদে অনেকেই তাগূত অর্থ লিখেছেন শয়তান। শয়তান আল্লাহর নাফরমানী করার জন্য উসকে দেয় বলে শয়তান অবশ্যই তাগূত।

৭। শরীয়াত বিরোধী প্রচলিত কু-প্রথা ও সামাজিক কু-সংস্কার ও তাগুত

সূরা বাকারায় আল্লাহ বলেন-

‘যখন তাদেরকে বলা হলো যে, আল্লাহ যা (ওহী যোগে) নাযিল করেছেন তা মেনে চল, তখন তারা বলল, আমাদের বাপ-দাদাকে যা মেনে চলতে দেখেছি আমরা তাই মেনে চলব।‘ (সূরা বাকারা : ১৭০)

সমাজে বহু কুপ্রথা প্রচলিত যা শরীয়াত বিরোধী। ধর্মের নামেও বহু শরীয়াত বিরোধী প্রথা চালু আছে। বিয়ে- শাদিতে তো কুপ্রথার ব্যাপক প্রচলন আছে। কুপ্রথাগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী। এসবকে অমান্য করতে গেলে বিরাট বাধার সম্মুখীন হতে হয়। কুপ্রথাগুলো আইনের চেয়েও বেশি শক্তিশালী। আইন চালু করতে হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার(Law Enforcing Agency) প্রয়োজন হয়। কুপ্রথা নিজের শক্তি বলেই চালু থাকে। আইন করে ও তা দূর করা সহজ নয়।

মূর্তি, কবর, স্মৃতিস্তম্ভ বা কাল্পনিক কোন শক্তি, আলেম, মুজাহিদ, পন্ডিত, বুদ্ধিজীবী, গণক, ভবিষ্যত বক্তা, নেতা-নেত্রী যাদেরকে কোরআন ও সুন্নাহর দেওয়া সীমানার বাইরে অনুসরণ করা হয়, যাদের কথা ও কাজকে কোরআন ও সুন্নাহর দলিলের মত মনে করা হয় তারাও তাগুত।

 

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা তাগুত সম্বন্ধে বলতে গিয়ে বলেছেন যা নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ-

১। ‘নিশ্চয়ই সত্য পথ মিথ্যা পথ থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে। অতএব, যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করে ও আল্লাহর ওপর ঈমান আনে, অবশ্যই সে দৃঢ়তর রজ্জু আঁকড়ে ধরল, যা কখনো ছিন্ন হওয়ার নয়…।’ (সুরা বাকারা: ২৫৬)।

২। ‘যারা ঈমান আনে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তিনি তাদের অন্ধকার থেকে বের করে আলোর পথে নিয়ে যান। আর যারা কুফরি করে, তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। এরা তাদের আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো জাহান্নামের অধিবাসী…।(সুরা বাকারা : ২৫৭)।

৩। ‘আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যে এ মর্মে রাসুল পাঠিয়েছি যে তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো ও তাগুত বর্জন করো…।(সুরা নাহল : ৩৬)।

৪। ‘বলে দাও, আমি কি তোমাদের এর চেয়েও নিকৃষ্ট পরিণামের সংবাদ দেব, যা আল্লাহর কাছে আছে? যাদের আল্লাহ লানত করেছেন ও যাদের ওপর তিনি ক্রোধান্বিত, আর যাদের মধ্য থেকে বাঁদর ও শূকর বানিয়েছেন এবং যারা তাগুতের উপাসনা করে। তারা মর্যাদার দিক থেকে নিকৃষ্টতর ও সরল পথ থেকে সর্বাধিক বিচ্যুত।’ (সুরা মায়েদা : ৬০)।

৫। ‘যারা তাগুতের উপাসনা বর্জন করে আল্লাহর অভিমুখী হয়, তাদের জন্য আছে সুসংবাদ। কাজেই আমার বান্দাদের সুসংবাদ দাও।(সুরা যুমার: ১৭)।

৬। ‘তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ করোনি, যাদের কিতাবের এক অংশ দেওয়া হয়েছে, তারা প্রতিমা ও তাগুতের প্রতি ঈমান আনে। তারা কাফিরদের বলে, এদের পথ ঈমানদারদের চেয়ে প্রকৃষ্টতর।’ (সুরা নিসা : ৫১)।

৭। ‘তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ করোনি, যারা দাবি করে যে তারা ঈমান এনেছে ওই বিষয়ে, যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং তোমার আগে যা অবতীর্ণ হয়েছিল তার প্রতি। অথচ তারা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়, যদিও তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা (তাগুত) প্রত্যাখ্যান করার জন্য। কিন্তু শয়তান তাদের ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়। (সুরা নিসা: ৬০)।

৮। ‘যারা ঈমান আনে তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে। আর যারা কুফরি করে তারা তাগুতের পথে লড়াই করে। সুতরাং তোমরা লড়াই করো শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে। নিশ্চয় শয়তানের চক্রান্ত দুর্বল।(সুরা নিসা : ৭৬)

আল কুরআন তাগুত সম্পর্কিত আয়াতসমূহ থেকে যে মূলনীতি ঘোষণা করেছে –

১. ঈমান আনার অপরিহার্য শর্ত তাগুতকে অস্বীকার করা।

২. কুফরী পথের সাহায্যকারী ও পৃষ্ঠপোষক তাগুত।

৩. তাগুত আল্লাহর বান্দাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারের পথে নিয়ে যায়।

৪. তাগুতকে সম্পূর্ণ অস্বীকার ও অমান্য করার আদেশ দেওয়া হয়েছে তথাপি মানুষ বিচার ফয়সালার জন্য তাগুতের কাছে যেতে চায়।

৫. তাগুতের পথ অবলম্বনকারীরা আল্লাহর নাযিলকৃত পদ্ধতির এবং রাসূলের নীতির দিকে আহ্বান জানালে ইতস্ততঃ করে এবং পাশ কাটিয়ে চলে যায়।

৬. ঈমানদার লড়াই করে আল্লাহর পথে আর কাফের লড়াই করে তাগুতের পথে।

৭. তাগুত অবলম্বনকারীরা বলে তারা ঈমানদারদের থেকে অধিকতর সঠিক পথে রয়েছে।

৮. তাগুত অবলম্বনকারীদের প্রতি আল্লাহ লা’নত বর্ষণ করেছেন। তারা কোন সাহায্যকারী পাবে না।

৯.আল্লাহর দাসত্ব করা এবং তাগুত থেকে দূরে থাকার নির্দেশনা দেওয়ার জন্যই আল্লাহ রাসূল প্রেরণ করেছেন।

তাগুতের  বৈশিষ্ট্য ৪টিঃ

১। তাগুতের উপাসনা বা ইবাদাত করা- এখানে গায়রুল্লাহর আনুগত্য করে জীবনের অন্যান্য দিকে কিন্তু ব্যক্তিগত উপাসনা আল্লাহর জন্য করে।

যারা তাগুতের উপাসনা বর্জন করে আল্লাহর অভিমুখী হয়, তাদের জন্য আছে সুসংবাদ। কাজেই আমার বান্দাদের সুসংবাদ দাও। (সুরা জুমার : ১৭)।

( যেমনঃ সালাত হলো উপাসনা যা আদায় করে কিন্তু লেন দেন বা অন্যান্য জীবন যাপন পদ্ধতি হলো ইবাদাত।)

২। তাগুতের উপর বিশ্বাস বা আস্থা রাখা হয়

তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ করোনি, যাদের কিতাবের এক অংশ দেওয়া হয়েছে, তারা প্রতিমা ও তাগুতের প্রতি ঈমান আনে। তারা কাফিরদের বলে, এদের পথ ঈমানদারদের চেয়ে প্রকৃষ্টতর।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৫১)।

৩। বিচার ব্যবস্থার জন্য তাগুতের ফয়সালাই মানে।

আপনি কি তাদেরকে প্রত্যক্ষ করেননি যারা দাবী করে যা আপনার উপর নাযিল হয়েছে, এবং যা আপনার পূর্বে নাযিল হয়েছে, তার উপর তারা ঈমান এনেছে, এবং তারা বিবাদমান বিষয়গুলোর মিমাংসার জন্য তাগুতের শরণাপন্ন হতে চায় অথচ তা প্রত্যাখ্যানের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু শয়তান তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়।” [সূরা আন নিসা: ৬০]

অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম! সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে (নবী সাঃ কে) ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা হূষ্টচিত্তে তা কবুল করে নেবে”। সুরা আন-নিসাঃ ৬৫।

৪।তাগুতের পক্ষে যুদ্ধ করে।

‘যারা ঈমান আনে তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে। আর যারা কুফরি করে তারা তাগুতের পথে লড়াই করে। সুতরাং তোমরা লড়াই করো শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে। নিশ্চয় শয়তানের চক্রান্ত দুর্বল। (সুরা নিসা : ৭৬)

 

সুস্পষ্ট ভাবে তাগুত এর অর্থ হচ্ছে,

কোন মাখলুক (সৃষ্টি) নিন্মোক্ত তিনটি বিষয়ের যে কোন একটি বিষয়কে (আল্লাহর স্থলে) নিজের দিকে সম্পর্কযুক্ত করাঃ-

কোন মাখলুক (সৃষ্টি) কর্তৃক আল্লাহতা’য়ালার কার্যাবলীর যে কোন কার্য সম্পাদনের বিষয়টি নিজের দিকে সম্পর্কযুক্ত করা। যেমন সৃষ্টি করা, রিজিক দান অথবা শরীয়ত (বিধান) রচনা। এসব বিষয়গুলো সম্পাদনের ব্যাপারকে যে ব্যক্তি নিজের দিকে সম্পর্কযুক্ত করবে (অর্থাৎ কেউ যদি বলে, আমি সৃষ্টি করি,আমি বিধান দেই) সেই তাগুত ।

কোন মাখলুক (সৃষ্টি) আল্লাহতা’য়ালার কোন সিফাত বা গুন কে নিজের দিকে সম্পর্কযুক্ত করা। যেমন ইলমে গায়েব জানা। যদি কেউ তা করে (অর্থাৎ বলে আমি এলমে গায়েব জানি) তাহলে তাকে তাগুত হিসেবে গন্য করা হবে।

যে কোন ইবাদত মাখলুক কর্তৃক (বা সৃষ্টির) এর উদ্দেশ্যে সম্পাদন করা । যেমনঃ দোয়া, মানত, নৈকট্য লাভের জন্য পশু জবাই অথবা বিচার ফায়সালা চাওয়া। যদি (কোন মাখলুক) এসব ইবাদত গ্রহন করে, দাবীকরে, আকাঙ্খা করে অথবা (নিজের জন্য) সম্পাদন করে, তাহলে সেই তাগুত।

এমনকি কেউ তার জন্য ইবাদত নিবেদন করলে যদি সে নীরব থাকে তাহলেও সে ত্বাগুত বলে গন্য হবে, যতক্ষন পর্যন্ত না সে নিজেকে এ থেকে পবিত্র ও মুক্ত করে নেয় এবং এ হক্ আল্লাহর একথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়।

 

তাগুতকে অস্বীকার করার ব্যাখ্যা হচ্ছে আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারও বিধান তথা মানব রচিত বিধান পালন পরিহার করা আমাদের সকল আত্নসমর্পনকারী মুসলিমদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। শুধু তাই নয়, সকল মুশরিকদের ঘৃণা করাই হচ্ছে ইবরা-হীমের সারমর্ম। যারা তা থেকে বিমুখ হয়েছে তারা নিজেদের বোকা বানিয়েছে। আল্লাহ তা’আলা এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে বলেছেন,

قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَآءُ مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاءُ أَبَدًا حَتَّىٰ تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ إِلَّا قَوْلَ إِبْرَاهِيمَ لِأَبِيهِ لَأَسْتَغْفِرَنَّ لَكَ وَمَا أَمْلِكُ لَكَ مِنَ اللَّهِ مِنْ شَيْءٍ ۖ رَبَّنَا عَلَيْكَ تَوَكَّلْنَا وَإِلَيْكَ أَنَبْنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ

ইবরাহীম ও তার সাথে যারা ছিল তাদের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। তারা যখন স্বীয় সম্প্রদায়কে বলছিল, ‘তোমাদের সাথে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যা কিছুর উপাসনা কর তা হতে আমরা সম্পর্কমুক্ত। আমরা তোমাদেরকে অস্বীকার করি; এবং উদ্রেক হল আমাদের- তোমাদের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ চিরকালের জন্য; যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আন। তবে স্বীয় পিতার প্রতি ইবরাহীমের উক্তিটি ব্যতিক্রম: ‘আমি অবশ্যই তোমার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করব আর তোমার ব্যাপারে আল্লাহর কাছে আমি কোন অধিকার রাখি না। হে আমাদের প্রতিপালক, আমরা আপনার ওপরই ভরসা করি, আপনারই অভিমুখী হই আর প্রত্যাবর্তন তো আপনারই কাছে। মুমতাহিনাঃ৪

মহান আল্লাহ আমাদের সঠিক সুস্পষ্ট জ্ঞান দান করুন যা তাগুতমুক্ত করে এবং খালেস ইমানের ভিতর প্রবেশ করে থাকতে পেরে আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব পালন করে যেতে পারি।