১১।لعَفُو (আল আফুউ) ক্ষমাকারী
অর্থঃ পরম-উদার, শাস্তি মউকুফকারী, গুনাহ ক্ষমাকারী, পাপ মোচনকারী
তিনি বান্দার গুনাহ মিটিয়ে দেন তাকে ক্ষমা করে দেন, অপরাধ করে
শাস্তিযোগ্য হওয়া সত্বেও তিনি শাস্তি দেন না। গুনাহ আমলনামা থেকে মুছে দেন।
আল-‘আফুউ (শাস্তি মউকুফকারী, গুনাহ ক্ষমাকারী, পাপ মোচনকারী), সকলেই তাঁর ক্ষমা ও মার্জনার প্রতি মুখাপেক্ষী ও নিরুপায়; যেমনিভাবে সবাই তাঁর রহমত ও দানের প্রতি অভাবী ও নিরুপায়। যারা ক্ষমা ও মার্জনার কাজ করবে তাদেরকে তিনি ক্ষমা ও মার্জনা করবেন বলে ওয়াদা করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
إِنَّ ٱللَّهَ لَعَفُوٌّ غَفُورٞ
“নিশ্চয় আল্লাহ পাপ মোচনকারী, অতীব ক্ষমাশীল।” [সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ৬০]
ভাষাগত বিচারে আফুউ শব্দের অর্থ হলো মুছে ফেলা।
ধরুন আপনি চক দিয়ে ব্লাকবোর্ড এ লিখছেন। এমন সময় আপনার লেখার মাঝে কিছু ভুল শব্দ লিখে ফেলেছেন, আপনি তখন কি করবেন? নিশ্চয়ই ডাস্টার দিয়ে ভুল লেখাগুলো মুছে ফেলবেন?
আরবিয়ানরা ঠিক এই মুছে ফেলা অর্থে “আফুউ” শব্দটি ব্যবহার করে থাকেন। যেমন- মরুভূমি থেকে পায়ের চিহ্ন চলে গেলে তারা বলে “আফাত আসারাল ক্বাওম” মানে এটা তো মুছে গেছে! এ থেকেই আমরা “আফুউ” শব্দের অর্থ সহজভাবে বুঝতে সক্ষম।
আফুউ হল মাগফিরাহ এর চাইতেও অধিক মর্যাদা সম্পন্ন ক্ষমা। “আফুউ” হল যখন আল্লাহ পাক আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেওয়ার পর তা পুরোপুরি মুছে ফেলেন। এমনকি বিচার দিবসেও আমাদেরকে সেই গুনাহ সম্পর্ক জিজ্ঞেস করা হবে নাহ। আল্লাহ তায়ালা তার বান্দা এবং ফেরেশতাদেরকে এই গুনাহগুলোর কথা ভুলিয়ে দিবেন। যেন বিচার দিবসে এই গুনাহ গুলোর জন্য আমাদেরকে অপমানিত হতে না হয়।
আফুউ শব্দের আরেক অর্থ হলো “আল কাসরা ওয়ায যায়েদা” আল কাসরা ওয়ায যায়েদা অর্থ হলো “মাত্রাতিরিক্ত এবং প্রচুর।”
আল্লাহ, আল আফুউ তখনঃ
১) আপনার পাপসমূহ এমনভাবে মুছে গায়েব করে দেন যার মাধ্যমে আপনার পাপের কোন চিহ্নও আপনার আমলনামায় বাকি থাকেনা। আল্লাহ আপনাকে এসব পাপগুলো সম্পর্কে ভুলিয়ে দেন যাতে আপনি যখন আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবেন তখন আপনি কখনো বিব্রতবোধ না করেন। এমনকি আল্লাহও কেয়ামতের মাঠে আপনাকে এসব পাপ স্মরন করিয়ে দিবেননা এবং আপনাকে শাস্তি দিবেননা।
২) এবং আপনি আল্লাহর কাছে যেটাই চান সেটাই দেন এবং সেটা এতবেশি পরিমাণে দেন যা আপনি কল্পনাও করতে পারবেননা। তিনিই জানেন কোন জিনিসটা আপনার জন্য সবচেয়ে উত্তম।
আফুউ’ শব্দটি কুরআনে অনেকবার এসেছে, এর মধ্যে পাঁচবার শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে আল্লাহ সর্বশক্তিমান কথাটির সাথে। আল্লাহ চাইলেই শাস্তি দিতে পারেন, কিন্তু তবুও তিনি ক্ষমা করে দেন।
“
إِن تُبْدُوا خَيْرًا أَوْ تُخْفُوهُ أَوْ تَعْفُوا عَن سُوءٍ فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ عَفُوًّا قَدِيرًا
ভালো কাজ তোমরা প্রকাশ্যে করো কিংবা গোপনে করো, অথবা কোনো মন্দ কাজের জন্য যদি তোমরা ক্ষমা করে দাও, তাহলে (তোমরাও দেখতে পাবে,) আল্লাহ তাআলা অতি ক্ষমাশীল ও প্রবল শক্তিমান।” (সূরাহ আন নিসা: আয়াত ১৪৯)
১২।الغَفُوْرُ (আল গাফূরু) মহাক্ষমাশীল, (ক্ষমা করেন সব কিছুর উর্ধ্বে)
অর্থঃ পরম ক্ষমাশীল, মার্জনাকারী, অতীব ক্ষমাশীল
তিনি বান্দার অন্যায় গোপন রাখেন, তাকে লাঞ্ছিত করেন না এবং শাস্তিও দেন না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
وَإِنِّي لَغَفَّارٞ لِّمَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ صَٰلِحٗا ثُمَّ ٱهۡتَدَىٰ
“আর অবশ্যই আমি তার প্রতি ক্ষমাশীল, যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে অতঃপর সৎ পথে চলতে থাকে।” [সূরা ত্বা-হা: ৮২]
১৩।الْغَفَّارُ (আল গাফফার) অত্যধিক ক্ষমাকারী,(পূনঃপূনঃ ক্ষমা করেন)
অর্থঃ পরম ক্ষমাশীল, অতি ক্ষমাশীল
১৪। গাফিরুয যাম্ব غَافِرُ الذَّنبِ
পাপ মোচন কারী, পাপ মার্জনা কারী,গুনাহ মাফ কারী
গুনাহগার বান্দা ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন।
আল-গাফূর তিনিই যিনি সর্বদা গুনাহ মাফ করেন এবং যারাই তাওবা করেন তাদের তাওবা কবুল করেন।
হাদীসে এসেছে, আল্লাহ বলবেন,
«يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ لَوْ أَتَيْتَنِي بِقُرَابِ الأَرْضِ خَطَايَا ثُمَّ لَقِيتَنِي لَا تُشْرِكُ بِي شَيْئًا لَأَتَيْتُكَ بِقُرَابِهَا مَغْفِرَةً».
“হে আদম সন্তান, যদি তোমরা কেউ পৃথিবী সমপরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে আস অত:পর আমার সাথে কাউকে শরীক না করে মিলিত হও তাহলে আমি পৃথিবী সমপরিমাণ গুনাহও ক্ষমা করে দিব।” মুসনাদ আহমাদ, ৫/১৪৭; তিরমিযী, ৫/৫৪৮ আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, দেখুন, সিলসিলাতুল সহীহাহ, ১/২০০।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿إِنَّ رَبَّكَ وَٰسِعُ ٱلۡمَغۡفِرَةِ٣٢﴾ [النجم : ٣٢]
“নিশ্চয় তোমার রব ক্ষমার ব্যাপারে উদার।” [সূরা আন-নাজম: ৩২]
আল্লাহ তাওবা, ইসতিগফার, ঈমান, ভালো আমল, তাঁর ইবাদতে ইহসান, তাঁর কাছে ক্ষমা চাওয়া, তাঁর দয়া কামনায় শক্তিশালী আশা করা ও আল্লাহর ব্যাপারে ভালো ধারণা করা ইত্যাদি যেগুলোকে আল্লাহর মাগফিরাত লাভের মাধ্যম বানিয়েছেন সেগুলো মাধ্যমে তাঁর ক্ষমা পাওয়ার উপায় তিনি বর্ণনা করেছেন।আল-হাক্কুল ওয়াদিহ আল-মুবীন, পৃ. ৭৩-৭৪।
যারা পাপ করে আল্লাহর নিকট তওবা করে তিনি তাদের ক্ষমা করে দেন এবং দয়া ও মমতার চাদরে বান্দাদের পাপরাশী ঢেকে রাখেন।
‘গাফির যার অর্থ হচ্ছে ক্ষমাকারী। যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, ‘তিনি গুনাহ ক্ষমাকারী। (সুরা মোমিন: ৩)।
‘জেনে রেখো, তিনি পরাক্রমশালী পরম ক্ষমাশীল।(সুরা জুমার: ৫)।
বিশেষভাবে উল্লেখ হয়েছে, ‘হে নবী (সা.) আপনি আমার বান্দাদের বলে দিন, আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সুরা-১৫ হিজর, আয়াত: ৪৯)।
হাদিসে কুদসিতে বলা হয়েছে, বান্দা যদি দৈনিক সত্তরবার অপরাধ করে এবং সত্তরবার ক্ষমা চায় আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।
গাফফার অর্থ যিনি প্রচুর ক্ষমা করেন। বারবার ক্ষমা করেন। ছোট-বড় সব ধরণের অপরাধ মার্জনা করেন।
কুরআনে আল গাফূর নামটি ৯১ বার, আল গাফফার নামটি পাঁচবার এবং গাফিরুয যাম্বি নামটি একবার উল্লেখিত হয়েছে।
যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন,
إِنَّ اللَّـهَ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
“আল্লাহই ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়।” (সূরা শুরা: ৫)
هُوَ الْعَزِيزُ الْغَفَّارُ
“তিনি মহা পরাক্রমশালী,অতি ক্ষমাশীল।” (সূরা যুমার: ৫)
غَافِرِ الذَّنبِ وَقَابِلِ التَّوْبِ
“তিনি) পাপ ক্ষমাকারী,তওবা কবুল কারী।” (সূরা গাফির:৩
১৫। আত তাওয়াব التَوَّابٌ তওবা কবুল কারী,ক্ষমাশীল
ব্যাখ্যা: আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের যাকে খুশি তাকে গুনাহ করার পরে তওবা করার তৌফীক দেন অত:পর তা কবুল করেন। তওবার মাধ্যমে তিনি বান্দার যাবতীয় পাপ মোচন করে দেন।
কুরআনে এ নামটি এগারো বার উল্লেখিত হয়েছে।
যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন,
إِنَّ اللَّـهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ
“নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুল কারী,পরম দয়ালু।” (সূরা হুজুরাত: ১২)
মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়াঃ
وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ بِالْعَشِيِّ وَالإبْكَارِ
আর তুমি তোমার ভুল-ত্রুটির জন্যে ক্ষমা চাও এবং সকাল-সন্ধ্যায় তোমার রবের প্রশংসাসহ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর। (আল-মুমিন, ৪০/৫৫)
فَاعْلَمْ أَنَّهُ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَاكُمْ
অতএব জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ ছাড়া কোন (সত্য) উপাস্য নেই আর তোমার জন্য এবং মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের ভুলত্রুটির জন্যে তুমি ক্ষমা চাও আর আল্লাহ তোমাদের গতিবিধি ও অবস্থান সম্পর্কে ভালভাবে অবগত আছেন। (মুহাম্মদ, ৪৭/১৯)
আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার দু‘আঃ
رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ
রাব্বিগ্ ফির্ ওয়ার্ হাম্ ওয়াআন্তা খায়রুর্ রা-হিমি—ন্
হে আমার রব! ক্ষমা করুন ও রহমত করুন আর আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। (মুমিনুন, ২৩/১১৮)
رَبَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ
রাব্বানা— আ-মান্না- ফাগ্ ফির্ লানা- ওয়ার্ হামনা- ওয়া আন্তা খায়রুর্ রা-হিমি—ন্
হে আমাদের রব! আমরা ঈমান এনেছি তাই আমাদেরকে ক্ষমা করুন ও আমাদের প্রতি রহমত করুন, আর আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। (আল-মুমিনুন, ২৩/১০৯ )
رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
রাব্বানা— ইন্নানা— আ-মান্না- ফাগ্ ফির্ লানা- যুনূবানা- ওয়াক্বিনা- ‘আযা-বান্ না-র্
হে আমাদের রব! আমরা অবশ্যই ঈমান এনেছি, তাই আমাদের গুণাহসমূহকে ক্ষমা করুন আর আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করুন।
(আলে ইমরান, ৩/১৬)
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দু‘আ শিক্ষা দিয়েছেন;
اللَّهُمَّ إنَّكَ عَفُوٌ تُحِبُّ العَفْوَ فَاعْفُ عَنّي
আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিবুববুল আফওয়া ফা’ফু আন্নী।
হে আল্লাহ! নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতেই আপনি ভালবাসেন তাই আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। (তিরমিযি: ৩৫১৩; ইবনে মাযাহ; ৩৮৫০; সহীহ)