মহান আল্লাহ আরশে আ’যীমে সমাসীন
আউযুবিল্লাহি মিনাস শাইতোয়ানির রজীম
তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত
সমগ্র জাহানের প্রতিপালক ও সংরক্ষক মহান আল্লাহ্ তা’আলা সপ্তাকাশের উপর অবস্থিত সুমহান আরশের উপর সমুন্নত, তিনি সর্বস্থানে বিরাজিত নন। তাঁর ক্ষমতা অসীম ও সর্বব্যাপী। তিনি সব কিছু দেখেন ও শোনেন। কোন কিছুই তাঁর জ্ঞানের বাইরে নয়। তিনি আরশে আ’যীমে থেকেই সব কিছু সুচারুরূপে পরিচালিত করেন।
اِنَّ رَبَّکُمُ اللّٰہُ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ فِیۡ سِتَّۃِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ ۟ یُغۡشِی الَّیۡلَ النَّہَارَ یَطۡلُبُہٗ حَثِیۡثًا ۙ وَّ الشَّمۡسَ وَ الۡقَمَرَ وَ النُّجُوۡمَ مُسَخَّرٰتٍۭ بِاَمۡرِہٖ ؕ اَلَا لَہُ الۡخَلۡقُ وَ الۡاَمۡرُ ؕ تَبٰرَکَ اللّٰہُ رَبُّ الۡعٰلَمِیۡنَ
১।নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেন,অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন।তিনিই দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন; ওদের একে অন্যকে দ্রুতগতিতে অনুসরণ করে।আর (সৃষ্টি করেছেন) সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজিকে, যা তাঁরই আজ্ঞাধীন। জেনে রাখ, সৃষ্টি করা এবং নির্দেশদান তাঁরই কাজ। তিনি মহিমময় বিশ্ব প্রতিপালক। সূরা আন’আমঃ৫৪
اِنَّ رَبَّکُمُ اللّٰہُ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ فِیۡ سِتَّۃِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ یُدَبِّرُ الۡاَمۡرَ ؕ مَا مِنۡ شَفِیۡعٍ اِلَّا مِنۡۢ بَعۡدِ اِذۡنِہٖ ؕ ذٰلِکُمُ اللّٰہُ رَبُّکُمۡ فَاعۡبُدُوۡہُ ؕ اَفَلَا تَذَکَّرُوۡنَ.
২। নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেন, অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন, তিনি প্রত্যেক কাজ পরিচালনা করে থাকেন। তাঁর অনুমতি ছাড়া সুপারিশকারী কেউ নেই। ঐ (স্রষ্টা ও পরিচালক) আল্লাহ, তোমাদের প্রতিপালক। অতএব তোমরা তাঁর ইবাদত কর। তোমরা কি উপদেশ গ্রহণ করবে না? সূরা ইউনুসঃ৩
اَللّٰہُ الَّذِیۡ رَفَعَ السَّمٰوٰتِ بِغَیۡرِ عَمَدٍ تَرَوۡنَہَا ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ وَ سَخَّرَ الشَّمۡسَ وَ الۡقَمَرَ ؕ کُلٌّ یَّجۡرِیۡ لِاَجَلٍ مُّسَمًّی ؕ یُدَبِّرُ الۡاَمۡرَ یُفَصِّلُ الۡاٰیٰتِ لَعَلَّکُمۡ بِلِقَآءِ رَبِّکُمۡ تُوۡقِنُوۡنَ
৩। আল্লাহই স্তম্ভ ছাড়া আকাশমন্ডলীকে ঊর্ধ্বে স্থাপন করেছেন; তোমরা তা দেখছ। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হয়েছেন[1] এবং সূর্য ও চন্দ্রকে বশীভূত করেছেন; প্রত্যেকে নির্দিষ্ট মিয়াদে আবর্তন করে।[2] তিনি সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন এবং নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাস করতে পার। সূরা আর রাদঃ২
اَلرَّحۡمٰنُ عَلَی الۡعَرۡشِ اسۡتَوٰی
৪। পরম দয়াময় আরশে সমাসীন। সূরা ত্বহাঃ৫
ۣالَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ وَ مَا بَیۡنَہُمَا فِیۡ سِتَّۃِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ ۚۛ اَلرَّحۡمٰنُ فَسۡـَٔلۡ بِہٖ خَبِیۡرًا
৫। তিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও ওদের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন; অতঃপর তিনি আরশে আরোহণ করেন। তিনিই দয়াময়, তাঁর সম্বন্ধে যে অবগত আছে তাকে জিজ্ঞাসা করে দেখ। সূরা ফোরকানঃ৫৯
ہُوَ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ فِیۡ سِتَّۃِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ ؕ یَعۡلَمُ مَا یَلِجُ فِی الۡاَرۡضِ وَ مَا یَخۡرُجُ مِنۡہَا وَ مَا یَنۡزِلُ مِنَ السَّمَآءِ وَ مَا یَعۡرُجُ فِیۡہَا ؕ وَ ہُوَ مَعَکُمۡ اَیۡنَ مَا کُنۡتُمۡ ؕ وَ اللّٰہُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ بَصِیۡرٌ
৬। তিনিই ছয় দিনে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর আরশে সমাসীন হয়েছেন।তিনি জানেন যা কিছু ভূমিতে প্রবেশ করেও যা কিছু তা হতে বের হয় এবং আকাশ হতে যা কিছু নামে[4] ও আকাশে যা কিছু উত্থিত হয়। তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন, তোমরা যা কিছু কর, আল্লাহ তা দেখেন।সূরা হাদীদঃ৪
اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ ۖ مَا لَكُم مِّن دُونِهِ مِن وَلِيٍّ وَلَا شَفِيعٍ ۚ أَفَلَا تَتَذَكَّرُونَ
আল্লাহই আকাশ মণ্ডলী ও পৃথিবী এবং এদের মাঝখানে যা কিছু আছে সব সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে এবং এরপর আরশে সমাসীন হয়েছেন ৷ তিনি ছাড়া তোমাদের কোন সাহায্যকারী নেই এবং নেই তার সামনে সুপারিশকারী, তারপরও কি তোমরা সচেতন হবে না ? সূরা সাজদাঃ৪
কুরআনের উক্ত সাতটি স্থানে আল্লাহ তা‘আলা উল্লেখ করেছেন যে, তিনি ‘আরশের উপরে উঠেছেন।
প্রত্যেক স্থানেই ‘ইসতাওয়া’ (استوى) আর প্রত্যেক স্থানেই (على العرش) “আলাল ‘আরশি” শব্দদ্বয় ব্যবহার করেছেন।
আমরা যদি আরবী ভাষায় ইসতিওয়া শব্দটি অনুসন্ধান করতে যাই তবে দেখতে পাই যে, (استوى) শব্দটি যখনই (على) অব্যয়ের মাধ্যমে ব্যবহার হয়েছে তখনই তার অর্থ হয়েছে ‘(الارتفاع) বা (العلو) অর্থাৎ ‘উপরে উঠা’। এটা ব্যতীত অন্য কোনো অর্থে তখন তার ব্যবহার হয় না।
সুতরাং الرَّحْمَنُ على العَرْشِ استوى এবং এর মতো অন্যান্য আয়াতের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা তিনি তাঁর আরশের উপর রয়েছেন বিশেষ একপ্রকার উপরে থাকা, যা তার সৃষ্টি জগতের উপরে সাধারণভাবে উপরে থাকার চেয়ে ভিন্নতর। আর এ উপরে থাকার বিষয়টি হান আল্লাহর জন্য প্রকৃত অর্থেই সাব্যস্ত।
সুতরাং আল্লাহ তা‘আলার জন্য যেমনভাবে উপযুক্ত, সেভাবেই তিনি ‘আরশের উপরে উঠেছেন। আল্লাহর ‘আরশের উপরে হওয়া এবং মানুষের খাট-পালং ও নৌকায় আরোহনের সাথে কোনো সামঞ্জস্যতা নেই। যে আরোহনের কথা আল্লাহ তা‘আলা উল্লেখ করে বলেন,
﴿وَجَعَلَ لَكُم مِّنَ ٱلۡفُلۡكِ وَٱلۡأَنۡعَٰمِ مَا تَرۡكَبُونَ ١٢ لِتَسۡتَوُۥاْ عَلَىٰ ظُهُورِهِۦ ثُمَّ تَذۡكُرُواْ نِعۡمَةَ رَبِّكُمۡ إِذَا ٱسۡتَوَيۡتُمۡ عَلَيۡهِ وَتَقُولُواْ سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَٰذَا وَمَا كُنَّا لَهُۥ مُقۡرِنِينَ ١٣ وَإِنَّآ إِلَىٰ رَبِّنَا لَمُنقَلِبُونَ ١٤﴾ [الزخرف: ١٢، ١٤]
“তিনি তোমাদের আরোহনের জন্য সৃষ্টি করেন নৌযান ও চতুষ্পদ জন্তু; যাতে তোমরা তার উপর আরোহণ করতে পার, তারপর তোমাদের রবের অনুগ্রহ স্মরণ কর যখন তোমরা এর উপর স্থির হয়ে বস এবং বল, পবিত্র ও মহান তিনি, যিনি এদেরকে আমাদের জন্য বশীভূত করেছেন, যদিও আমরা সমর্থ ছিলাম না এদেরকে বশীভূত করতে। আর আমরা আমাদের রবের নিকট প্রত্যাবর্তন করবো।” [সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ১২-১৪]
সুতরাং মানুষের কোনো জিনিসের উপরে উঠা কোনো ক্রমেই আল্লাহর ‘আরশের উপরে হওয়ার সদৃশ হতে পারে না। কেননা আল্লাহর মতো কোনো কিছু নেই।
ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে ছিলাম। এমন সময় তাঁর কাছে বনূ তামীম-এর গোত্রটি আসল, নবী (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ হে বনূ তামীম। তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর। উত্তরে তারা বলল, আপনি আমাদেরকে শুভ সংবাদ যখন দিচ্ছেন, তাহলে কিছু দান করুন। এ সময় ইয়ামানবাসী কতিপয় লোক নবী (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সেখানে উপস্থিত হল। নবী (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে বললেনঃ হে ইয়ামানবাসী! তোমাদের জন্য সুসংবাদ। বনূ তামীম তা গ্রহণ করল না। তারা বলল, আমরা গ্রহণ করলাম শুভ সংবাদ। যেহেতু আমরা আপনার কাছে এসেছি দীনী জ্ঞান লাভের উদ্দেশ্যে এবং জিজ্ঞেস করার জন্য এসেছি যে, এ দুনিয়া সৃষ্টির আগে কী ছিল? নবী (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ্ তখন ছিলেন, তাঁর আগে আর কিছুই ছিল না। তাঁর আরশ তখন পানির ওপর ছিল। অতঃপর তিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করলেন। এবং লাওহে মাহফুযে সব বস্তু সম্পর্কে লিখে রাখলেন। রাবী বলেন, এরপর আমার কাছে এক লোক এসে বলল, হে ‘ইমরান! তোমার উটনী পালিয়ে গিয়েছে, তার খবর লও। আমি উটনীর খোঁজে চললাম। দেখলাম, উটনী মরীচিকার আড়ালে আছে। আমি আল্লাহ্র কসম খেয়ে বলছি! আমার মন চাচ্ছিল উটনী চলে যাক তবুও আমি মজলিস ছেড়ে যেন না উঠি।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৯০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯১৩)
কিয়ামতের বর্ণনা দিতে গিয়ে মহান আল্লাহ আরও বলেন,
وَانشَقَّتِ السَّمَاءُ فَهِيَ يَوْمَئِذٍ وَاهِيَةٌ [٦٩:١٦] وَالْمَلَكُ عَلَىٰ أَرْجَائِهَا ۚ وَيَحْمِلُ عَرْشَ رَبِّكَ فَوْقَهُمْ يَوْمَئِذٍ ثَمَانِيَةٌ – ٦٩:١٧
“সেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে ও বিক্ষিপ্ত হবে। এবং ফেরেশতাগণ আকাশের প্রান্তদেশে থাকবে ও আট জন ফেরেশতা আপনার পালনকর্তার আরশকে তাদের উর্ধ্বে বহন করবে।” [সূরা আল-হাক্বক্বাহ (৬৯): ১৬-১৭]
আল্লাহ তা‘আলা আরশের উপরে আছেন, এর প্রমাণে আল্লাহর রাসূল (সা)-এর হাদীস
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا قَضَى اللهُ الْخَلْقَ كَتَبَ فِيْ كِتَابِهِ، فَهُوَ عِنْدَهُ فَوْقَ الْعَرْشِ : إِنَّ رَحْمَتِيْ غَلَبَتْ غَضَبِيْ–
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন আল্লাহ মাখলূক সৃষ্টির ইচ্ছা পোষণ করলেন, তখন তাঁর কাছে আরশের উপর রক্ষিত এক কিতাবে লিপিবদ্ধ করেন- অবশ্যই আমার করুণা আমার ক্রোধের উপর জয়লাভ করেছে’। বুখারী হা/৩১৯৪ ‘সৃষ্টির সূচনা’ অধ্যায়,
তোমরা কি আমাকে আমিন (বিশ্বাসী) বলে স্বীকার কর না? আমি তো ঐ সত্ত্বার নিকট আমিন বলে পরিগণিত যিনি আসমানের উপর আছেন।” [বুখারী, ৪৩৫১, মুসলিম, ১০৬৪]
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে মহান আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন, কে আছ যে আমাকে ডাকবে আর আমি তার ডাকে সাড়া দিব? কে আছ যে আমার কাছে কিছু চাইবে আর আমি তাকে তা দান করব। কে আছ যে আমার কাছে ক্ষমা চাবে আর আমি তাকে ক্ষমা করে দিব’।বুখারী হা/১১৪৫; মুসলিম হা/৭৫৮; আবুদাঊদ হা/১৩১৫
“নিশ্চয়ই জান্নাতের একশটি স্তর আছে, যা আল্লাহ মুজাহিদীনের জন্য সংরক্ষন করেছেন এবং দুইটি স্তরের মধ্যে আসমান জমিন ব্যবধান। সুতরাং যখন তোমরা আল্লাহর নিকট জান্নাত প্রার্থনা করবে তখন ফিরদাউস প্রার্থনা করবে। কারণ তা সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম জান্নাত। আর তার উপরে হলো দয়াময়ের আরশ।” [বুখারী, ২৭৯০]
ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) বলেন, ‘উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যা হচ্ছে, আল্লাহর জ্ঞান তাদের সঙ্গে’। তিনি আরো বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা আরশের উপর এবং তাঁর জ্ঞান তাদের সব কিছু অবহিত’। মাজমূঊ ফাতাওয়া ৫/১৮৮-৮৯।
তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাতের ক্ষেত্রে সারকথা এই যে, আল্লাহ নিজের জন্য যে সমস্ত নাম ও গুণাবলী সাব্যস্ত করেছেন, কোনো পরিবর্তন, বাতিল বা ধরণ-গঠন কিংবা দৃষ্টান্ত পেশ করা ছাড়াই তার প্রকৃত অর্থের ওপর ঈমান আনয়ন করা আমাদের ওপর ওয়াজিব।
ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) বলেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ্ আরশে আছেন একথা বিশ্বাস করে, কিন্তু সন্দেহ করে যে আর্মস আসমানে আছে না জমিনে তবে সে কাফের বলে গণ্য হবে। (দ্র: আল্ ফিকহুল আবসাত)
ইমাম আওযায়ী বলেন: আমরা তাবেয়ীগণের উপস্থিতে বলতাম, নিশ্চয় মহান আল্লাহ্ তাঁর আরশের উপর রয়েছেন। তাঁর গুণাগুণ সম্পর্কে যে বর্ণনা এসেছে আমরা সবই তা বিশ্বাস করি। (ইমাম যাহাবী প্রণীত মুখতাছার উলু দ্রষ্টব্য)
ইমাম মালিক (রহঃ) বলেন:
( الله في السماء وعلمه في كل مكان لا يخلو منه شيء )
‘আল্লাহ্ রয়েছেন আসমানে এবং তাঁর ইলম সর্বাস্থানে পরিব্যপ্ত , তার জ্ঞান থেকে কোন স্থান খালি নেই।
ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) বলেন: আমি যে তরিকার উপর প্রতিষ্ঠিত ও যাদেরকে ঐ তরিকার উপর পেয়েছি যেমন সুফিয়ান সাওরী, মালিক প্রমুখগণ তা হল- এ কথার স্বীকৃত দেয়া যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন হক মা’বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্র রাসূল আর আল্লাহ্ তিনি আসমানে আরশের উপর রয়েছেন। তিনি তার বান্দার নিকটবর্তী হন যে ভাবে ইচ্ছা করেন এবং যে ভাবে চান ঠিক সেভাবেই দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন …।
ইমাম আহমাদ (রাহ) কে জিজ্ঞেস করা হল: আল্লাহ্ সপ্তাকাশে আরশের উপর রয়েছেন। সৃষ্টিকুল থেকে পৃথক আছেন এবং তার কুদরত ও ইলম সকল স্থানে পরিব্যাপ্ত। উত্তরে তিনি বললেন: হ্যাঁ, তিনি স্বীয় আরশে রয়েছেন এবং কোন বস্তু তার ইলমের বাইরে নয়।