আল্লাহর নাম সমূহের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাঃ(৭। আল হাই الْحَيُّ   ৮। আল কাইউম  الْقَيُّومُ)

 

দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে 

৭। আল হাই الْحَيُّ   ৮। আল কাইউম  الْقَيُّومُ

 

৭। আল হাই      الْحَيُّ

চিরঞ্জীব, অমর (আল-হাইয়্যু হলো তাঁর যাতের গুণাবলীর সমষ্টি)

তিনি চিরঞ্জীব ও অমর। তাঁর জীবন সকল দিক দিয়ে পরিপূর্ণ। যার মধ্যে সামান্যতম ত্রুটি নাই। তিনি সকল অপূর্ণতার ঊর্ধ্বে। তাঁকে ঘুম ও তন্দ্রা স্পর্শ করে না। তিঁনি ক্লান্ত হোন না, তাঁর কোন কিছুর প্রয়োজন নেই।

তিঁনি সৃষ্টিকে জীবন, রিযিক দিয়ে থাকেন, তাদের মৃত্যুও দিয়ে থাকেন। কিন্তু আল্লাহ চিরঞ্জীব,তাঁর শেষ শুরু নাই।

আল-হাইয়্যু হলেন যার রয়েছে পূর্ণ জীবন, চিরঞ্জীব, যার কোন শেষ নেই.

অত:এব, আল-হাইয়্যু হলো তাঁর যাতের গুণাবলীর সমষ্টি আর আল-কাইয়্যূম হলো তাঁর কর্মসমূহের গুণের সমষ্টি। এদুটি নাম একত্রে বিশেষ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে উল্লেখ করা। যেমন আল্লাহ তাঁর কিতাবের বিভিন্ন জায়গায় উক্ত নাম দুটি একত্রিত করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন,

اللَّـهُ لَا إِلَـه إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ

৮। আল কাইউম  الْقَيُّومُ

ধারক ও বাহক,শাশ্বত (তাঁর কর্মসমূহের গুণের সমষ্টি)

আল-কাইয়্যূম হলেন পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত, সুপ্রতিষ্ঠিত ধারক, যিনি নিজে নিজেই প্রতিষ্ঠিত, তাঁর সিফাতসমূহ মহান, তিনি সমস্ত সৃষ্টি থেকে অমুখাপেক্ষী।

আল-কাইয়্যূম হলেন যিনি নিজে প্রতিষ্ঠিত, চিরপ্রতিষ্ঠিত ধারক। তিনি আসমান ও জমিনের সব কিছুকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তাদের পরিচালনা, রিযিক দান এবং যাবতীয় দেখা-শুনা তিনি করে থাকেন। সৃষ্টির জন্য আ দরকার তা করে দেন।

তিনিই এসব সৃষ্টি করেছেন, এগুলোকে বৃদ্ধি করেছেন এবং এগুলো বেঁচে থাকার জন্য তিনি সব কিছু প্রস্তুত করেছেন। তিনি সব দিক থেকে তাদের থেকে মুখাপেক্ষীহীন; কিন্তু সৃষ্টিকুল সব দিক থেকে তাঁর মুখাপেক্ষী।

অত:এব,  আল-হাইয়্যু ও আল-কাইয়্যূম তিনিই যার রয়েছে পূর্ণাঙ্গ গুণ। তিনি তা-ই করেন যা চান। আল-হাক্কুল ওয়াদিহ আল-মুবীন, পৃ. ৮৭-৮৮।

তিনি কিছু ইচ্ছা করলে তাকে সৃষ্টি হতে বললেই হয়ে যায়। কর্মের যাবতীয় গুণাবলী, সম্মান, মর্যাদা ও বড়ত্বের গুণাবলী তাঁর আল-কাইয়্যূম নামের সাথে সম্পৃক্ত। যাবতীয় পূর্ণতার গুণাবলী এ সম্মানিত নাম দুটির দিকে ফিরে।

এ কারণেই হাদীসে এসেছে, আল্লাহর ঐ ইসমে আযম দ্বারা দোআ করলে তিনি তা কবুল করেন, আর তা দ্বারা কিছু চাওয়া হলে তিনি তা দান করেন।”

আবু দাউদ, কিতাব: সালাত, বাব: আদ-দোআ, হাদীস নং ১৪৯৫; তিরমিযী, কিতাব: দাওয়াত, হাদীস নং ৩৫৪৪,

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلۡحَيُّ ٱلۡقَيُّومُ: ٢٥٥

“আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সুপ্রতিষ্ঠিত ধারক।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৫৫]

এ নামদ্বয়ে সমস্ত পূর্ণতার গুণাবলী সন্নিবেশিত হয়েছে। সুতরাং যাতী সিফাতসমূহ আল-হাইয়্যু নামের দিকে আর যাবতীয় কর্মের গুণাবলী আল-কাইয়্যূম নামের দিকে প্রত্যাবর্তীত হয়।

দু’আঃ

হযরত আনাস (রা.) বলেন, ‘যখন রাসুলুল্লাহ (সা.)- এর ওপর কোনো কাজ কঠিন হয়ে দেখা দিত, তখন তিনি ‘ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুমু বিরাহমাতিকা আসতাগিছ’ দোয়াটি পড়তেন।’ (তিরমিযি, মিশকাত: ২৪৫৪)।

অর্থ: হে চিরঞ্জীব! হে বিশ্ব চরাচরে ধারক! আমি তোমার রহমতের আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোনো দুঃখ-কষ্ট বা চিন্তা ও অস্থিরতা পড়তেন তখন বলতেন-

يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ

উচ্চারণ : ইয়া- হাইয়ু ইয়া- ক্বাইয়ূ-মু বিরাহমাতিকা আস্তাগিছ।

অর্থ : ‘হে চিরঞ্জীব! হে চিরস্থায়ী! আপনার রহমতের মাধ্যমে আপনার নিকটে সাহায্য চাই।’ (তিরমিযি, মুসতাদরেকে হাকেম, মিশকাত

ياَ حَيُّ ياَ قَيُّومُ بِكَ أسْتَغِيْثُ فَأصْلِحْ لِيْ شَأنِيْ وَلاَ تَكِلْنِيْ إلَى نَفْسِيْ طَرْفَةَ عَيْنٍ

উচ্চারণঃ ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুমু বিরাহমাতিকা আস্তাগীছ, ফা আসলেহ্ লী শা’নী, ওয়ালা তাকেলনী ইলা নাফসী ত্বারফাতা আইন্। (নাসাঈ)

অর্থঃ হে মহান ও সকল কিছুর মালিক! তোমার কাছে আমি সাহায্য প্রর্থনা করছি, সুতরাং আমার সকল অবস্থা সংশোধন করে দাও, এবং এক পলকের জন্য হলেও আমাকে আমার নিজের উপর ছেড়ে দিও না।

يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغيثُ أَصْلِحْ لِي شَأْنِيَ كُلَّهُ وَلاَ تَكِلْنِي إِلَى نَفْسِي طَرْفَةَ  عَيْنٍ».

(ইয়া হাইয়্যু ইয়া ক্বাইয়্যূমু বিরহ্‌মাতিকা আস্তাগীসু, আসলিহ্‌ লী শা’নী কুল্লাহু, ওয়ালা তাকিলনী ইলা নাফসী ত্বারফাতা ‘আইন)।

“হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী! আমি আপনার রহমতের অসীলায় আপনার কাছে উদ্ধার কামনা করি, আপনি আমার সার্বিক অবস্থা সংশোধন করে দিন, আর আমাকে আমার নিজের কাছে নিমেষের জন্যও সোপর্দ করবেন না।” সহীহ আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব ১/২৭৩।