দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে
২। আর রাহমান الرَّحْمنُ পরম করুণাময়
Ar-Rahman
পরম করুণাময়। অর্থাৎ তিনি মানব,জিন ফিরিশতা,পশু-পাখি ইত্যাদি সকল সৃষ্টির প্রতি করুণা করেন।
মুসলিম,অমুসলিম,ভালো,মন্দ,নেককার,পরহেজগার নির্বিশেষে সকলকে খাদ্যপানীয়,আলোবাতাস সহ জীবন ধারণের নানা উপকরণ দান করে থাকেন।
আর রহমান শব্দে ৩টি অর্থ নিহিত-
১। চরম পরিমাণ এবং ধারণার বাইরে।
২। এখনই
৩। এটা অস্থায়ী।
الرَّحْمنُ عَلَّمَ الْقُرْآنَ ,“পরম করুণাময় আল্লাহ। শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন।”
(সূরা আর রাহমান: ১২)
মা তার সন্তানের উপর যতটুকু দয়ালু, আল্লাহ তার বান্দার উপর তদাপেক্ষা অধিক দয়ালু।”সহীহ বুখারী, ৭/৭৫
আর রাহমান ৩টি জিনিস করেন। আর রহমানের মধ্যে থাকা এই ৩টা মূলভাব যা এর বানানের কারণে প্রকাশিত হচ্ছে।
প্রথমটা হচ্ছে, এটা চরম পরিমাণ। এটা ধারণার বাইরে। চরম পরিমাণ এবং ধারণার বাইরে। এর অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ শুধু প্রেমময়ই নন, তিনি চরম পরিমাণ স্নেহশীল, যা ধারণার বাইরে। তাই, আল্লাহর কাছে যাই আশা করবেন, তাঁর ভালোবাসা আর দয়া থেকে, মনে রাখবেন (তাঁর ভালোবাসা ও দয়া) আপনার ধারণার চেয়েও অনেক বেশি। এটাই প্রথম অর্থ।
আর-রহমানের দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে এখনই, এমন কিছু যা সাথে খুব তাড়াতাড়ি ঘটে। এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। এটা সাথে সাথেই ঘটে।
আর রাহমান এর মাধ্যমে আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহর ভালোবাসা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে না। কিংবা তাঁর যত্ন, অথবা দয়া। এটা আসলে এখনই প্রকাশ পাচ্ছে এর চূড়ান্ত রুপে।
অর্থের তৃতীয় অংশ, এটা অস্থায়ী। আরবি ভাষায় এই ঘরানার প্রতিটি শব্দ অস্থায়ী। আল্লাহর ভালোবাসা প্রচণ্ড, এটা প্রত্যাশাতীত। আল্লাহর ভালোবাসা এবং দয়া ঠিক এই মুহূর্তেও আসছে, কিন্তু কোন কারণ ব্যক্তি যদি খুবই খারাপ একটা কিছু করেন, তবে এই ভালোবাসা থেকে বিচ্যুতও হয়ে যেতে পারেন।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لَلَّهُ أَرْحَمُ بِعِبَادِهِ مِنْ الوالدة بِوَلَدِهَا».
“মা তার সন্তানের উপর যতটুকু দয়ালু, আল্লাহ তার বান্দার উপর তদাপেক্ষা অধিক দয়ালু।”সহীহ বুখারী, ৭/৭৫, কিতাবুল আদাব, বাব, রহমাতুল ওয়ালাদি ওয়াতাকবীলিহি ওয়া মু‘আনাকাতিহি, হাদীস নং ৫৯৯৯; হাদীসটি উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত।
«إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ كِتَابًا قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ الخَلْقَ: إِنَّ رَحْمَتِي سَبَقَتْ غَضَبِي».
“আল্লাহ তা‘আলা সমস্ত সৃষ্টিজগতকে সৃষ্টি করার পূর্বে একটি লেখা লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। তা হলো “আমার ক্রোধের উপর আমার রহমত অগ্রগামী রয়েছে। সহীহ বুখারী, ৮/১৭৬, কিতাবুত তাওহীদ, বাব, ওয়াকানা ‘আরশুহু ‘আলাল মাই, হাদীস নং ৭৫৫৪; সহীহ মুসলিম, ৪/২১০৭,
الرَّحْمنُ عَلَّمَ الْقُرْآنَ ,“পরম করুণাময় আল্লাহ। শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন।” (সূরা আর রাহমান: ১২)
قَالَ عَذَابِيٓ أُصِيبُ بِهِۦ مَنۡ أَشَآءُۖ وَرَحۡمَتِي وَسِعَتۡ كُلَّ شَيۡءٖ١٥٦
“তিনি বললেন, ‘আমি যাকে চাই তাকে আমার আযাব দেই। আর আমার রহমত সব বস্তুকে পরিব্যাপ্ত করেছে।” [সূরা আল-আ‘রাফ: ১৫]
إِنَّ رَحۡمَتَ ٱللَّهِ قَرِيبٞ مِّنَ ٱلۡمُحۡسِنِينَ٥٦﴾
“নিশ্চয় আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।” [সূরা আল-আ’রাফ: ৫৬]
৩। আর রাহীম الرَّحِيْمُ অসীম দয়ালু,
Ar-Rahim
আর রাহীম অর্থ, অসীম দয়ালু এবং পরম অনুগ্রহশীল।
আর-রহীমের দুটো গুণ আছে।
১: এটা স্থায়ী ২: ঠিক এই মুহূর্তেই হতে হবে তা আবশ্যকীয় নয়।
إِنَّ اللَّـهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ “নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, অসীম দয়ালু।” (সূরা মুযাম্মিল: ২০)
أَنْتِ رَحْمَتِي أَرْحَمُ بِكِ مَنْ أَشَاءُ مِنْ عِبَادِي».
“তুমি আমার রহমত, তোমার মাধ্যমে আমি আমার বান্দাদের থেকে যাকে ইচ্ছা রহমত করব।”সহীহ বুখারী
যিনি ঈমানদারদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে বিশেষভাবে দয়া করেন। অর্থাৎ দুনিয়াতে তাদেরকে হকের পথ দেখান,হকের পথে প্রতিষ্ঠিত রাখেন,নেক কাজ করার শক্তি ও সামর্থ্য দান করেন,আখিরাতে তাদের হিসাব-নিকাশ সহজ করেন, পুলসিরাত পার করেন,জাহান্নামের শাস্তি থেকে হেফাজত করেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করান
إِنَّ ٱللَّهَ بِٱلنَّاسِ لَرَءُوفٞ رَّحِيمٞ١٤٣
“নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আল-বাকারা: ১৪৩]
وَأَمَّا ٱلَّذِينَ ٱبۡيَضَّتۡ وُجُوهُهُمۡ فَفِي رَحۡمَةِ ٱللَّهِۖ هُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ١٠٧
“আর যাদের চেহারা সাদা হবে, তারা তো আল্লাহর রহমতে থাকবে। তারা সেখানে স্থায়ী হবে।” [সূরা আলে ইমরান: ১০৭]
আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতকে বলবেন,
«أَنْتِ رَحْمَتِي أَرْحَمُ بِكِ مَنْ أَشَاءُ مِنْ عِبَادِي».
“তুমি আমার রহমত, তোমার মাধ্যমে আমি আমার বান্দাদের থেকে যাকে ইচ্ছা রহমত করব।”সহীহ বুখারী, কিতাবুত তাফসীর, বাব, কাওলুহু ‘ওয়াতাকূলু হাল মিম মাযীদ’ ৬/৪৮, হাদীস নং ৪৮৫০; এটি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসের অংশ বিশেষ।