ছবি ব্লগ (জুমআ বারের আসর)-৮

 

 

 

 

জুমআর দিনের নিষিদ্ধ কার্যাদি:–১

১. দ্বিতীয় আযানের পরে বেচা-কেনা:

‘হে ঈমানদারগণ! জুমুআর দিনে যখন সালাতের আযান দেওয়া হয়, তখন আল্লাহর যিকিরের দিকে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ছেড়ে দাও। এটিই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা তা জানো।”  (সূরা আল-জুমআ, আয়াত: ৯)

রাসূল স.এর সময়ে আরবে জুম’আর দিনে রাসূল স. খুতবা দিচ্ছিলেন তখন একজন ব্যবসায়ী যিনি তখনো মুসলিম হননি, তিনি ব্যবসায়িক মালসহ মদিনায় আগমন করেন এবং এই পন্যের খবর প্রচারের জন্য ঢোল বাজাতে শুরু করেন। ঢোলের শব্দ শুনে মসজিদ থেকে অনেকেই বেড়িয়ে চলে আসেন, এই অবস্থায় আয়াত নাযিল হয়। মহান আল্লাহ বলেছেন-

অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। তারা যখন কোন ব্যবসায়ের সুযোগ অথবা ক্রীড়াকৌতুক দেখে তখন আপনাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে তারা সেদিকে ছুটে যায়। বলুনঃ আল্লাহর কাছে যা আছে, তা ক্রীড়াকৌতুক ও ব্যবসায় অপেক্ষা উৎকৃষ্ট। আল্লাহ সর্বোত্তম রিযিকদাতা। সূরা জুম’আঃ ১০-১১

আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন রিযিকের মালিক মহান আল্লাহ, তিনি যাকে চান রিযিক বাড়িয়ে বা কমিয়ে দিতে পারেন। মানুষ নিজ ক্ষমতা বা যোগ্যতা দিয়ে চাইলেই সব লাভ করতে পারবে না যদি না মহান আল্লাহ সাহায্য করেন। মহান আল্লাহই এই দিনকে এতো মূল্যায়ন করে দিয়েছেন আমাদের জন্য যে, সালাতের আযান হয়ে গেলে সকল বেচা কেনা তথা ব্যবসায়িক কাজকে হারাম ঘোষনা করে দেয়া হয়েছে। এতে অবশ্যই মহান রব বরকত দান করবেন। সুতরাং যে ব্যক্তি মহান রবের স্মরনে আনুগত্যের দিকে ধাবিত হবে মহান আল্লাহ অবশ্যই তার কল্যান দান করবেন।

কিন্তু আমাদের সমাজে এখনো দেখা যায় এই দিনে আরো বেশী করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের/ শপিং/বেড়ানো/দাওয়াত ইত্যাদির আয়োজন করা হয় এমনভাবে যে কোনরকম সালাত আদায় করে নেন অনেকে বা অনেকে করেন না, খুতবা শুনতেও পায় না । অথচ মহান আল্লাহ সুন্দরভাবে ধীরে মসজিদে যেয়ে শান্তভাবে খুতবা শুনে সালাত আদায় করে আবার রিযিকের পিছনে বেড়িয়ে যেতে বলেছেন, এতেই তিনি রিযিক বাড়িয়ে দিবেন ইন শা আল্লাহ।

পুরুষ ব্যক্তিটি যেন জুম’আ সালাত খুতবাসহ সুন্দর করে আদায় করতে পারেন সেই ব্যপারে সকলের সচেষ্ট থাকা অত্যাবশ্যক। এই ক্ষেত্রে পুরুষ ব্যক্তি যেমন নিজে বিশেষ লক্ষ্য রাখবেন তেমনি পরিবারের নারী সদস্যাও এই ব্যাপারে সহযোগীতা রাখবেন। মহান আল্লাহ আমাদের পুরুষ সমাজকে তাওফিক দান করুন ও আমাদের সহযোগীতা করার তাওফিক দান করুন।

২. মানুষের কাঁধের পর দিয়ে অতিক্রম করা এবং দুই জনকে বিচ্ছিন্ন করা।
রাসূলুল্লাহ সা-এর খুৎবারত অবস্থায় এক ব্যক্তি এসে লোকদের কাঁধের ওপর দিয়ে অতিক্রম করছিল, রাসূলুল্লাহ সা তাকে বললেন, ‘‘তুমি আসতে দেরীও করলে এবং (মানুষকে) কষ্টও দিলে।” সুনান নাসাঈ

৩. কাউকে উঠিয়ে দিয়ে তার স্থানে বসা।
ইবন উমার রা বলেন: রাসূলুল্লাহ সা কাউকে উঠিয়ে দিয়ে তার স্থানে বসতে নিষেধ করেছেন। ইবন উমার রা ছাত্র নাফে কে জিজ্ঞাসা করা হলো- এটা কি জুমুআর সালাতের ব্যাপারে? তিনি উত্তরে বললেন: জুমুআ হোক বা অন্য কিছু হোক। সহীহ বুখারী

লক্ষ্য করুন, ইসলামের কত সুন্দর আদব কায়দা শিখিয়ে একজন মানুষকে সমাজে ভদ্র মানুষে পরিনত করতে চায়।

কিন্তু সমাজে আজ যা দেখা যায় তা সংশোধন করে ইসলামের সুন্দর শিক্ষা উপস্থাপন করা প্রয়োজন।

আমাদের মুসলিম পরিবারগুলোতে দেখা যায় বিভিন্ন অযুহাতে নিজেকে ব্যস্থ রেখে শেষ সময়ে তাড়াহুড়ো করে মসজিদের পানে ছুটে যান এবং এলাকার খুব প্রসিদ্ধ লোক বিধায় অন্যদের ডিংগিয়ে সামনে কাতারে যেয়ে বসেন, যা অত্যন্ত খারাপ একটি আচরন।
আবার অনেকে মসজিদে জায়গা রাখার জন্য কোন গৃহকর্মীকে পাঠিয়ে জায়নামাজ বিছিয়ে রাখেন, ব্যক্তি পরে ধীরে ধীরে আসবে ও সামনের কাতারে দাঁড়াবে। কিন্তু এটা কি মনে হয়না যে হায়াত থাকলে সেই স্থানটিতে তিনি যেতে পারবেন, তা না হলে কাতার ফাঁক থেকে যাবে যা মোটেও সমীচিন নয়। আবার পরে আসলেতো সেই অন্যদের ডিংগিয়ে সামনে যেতে হবে। এর কোনটি ঠিক নয়। প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর সওয়াবতো নিজের উপস্থিতি ছাড়া জায়নামাজ পাঠিয়ে দিলে হবে না। মহান আল্লাহ দেখবেন, কে আল্লাহর মহব্বতে আগে মসজিদে পৌছে গিয়েছেন।
আবার অনেকে ছোট বালক একটি জায়গা নিয়ে আগে বসেছেন, পরে এক মুরুব্বী যেয়ে তাকে পিছনে পাঠিয়ে দিলেন বা অন্য কোন ব্যক্তিকে উঠিয়ে নিজে সেখানে দাঁড়ালেন। এর কোনটি অনুমতি নেই। বালকটিও ইসলামের সুন্দর আদব শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হলো এবং অন্য ব্যক্তিটিও অনেক মনের কষ্ট পেলেন যা কোনভাবেই ইসলামের শিক্ষা নয়।

এই আদব শুধু মাত্র মসজিদের জন্য নয়, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ভাবেও বিভিন্ন অবস্থায় আদব রক্ষা করার শিক্ষা ইসলাম দিয়ে থাকে। মূলত জুম’আর সালাত এলাকার সকলের সাথে একটি উত্তম সম্পর্ক স্থাপনের শিক্ষা দেয় যা সমগ্র জাতির উপর প্রতিফলন ঘটার কথা। মহান আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।