জুমআ বারে করনীয়
সপ্তাহে একটি দিন এতো গুরুত্ব দিয়েছেন মহান আল্লাহ, শেষ্ঠ দিনে হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং এটাকে ঈদের দিনের সাথে তুলনা করেছেন, তাহলে আমরা কি এইদিনটিকে সেইভাবে গ্রহন করে থাকি?
আমাদের সন্তানদের কি সেইভাবে ছোট থেকে দেখে অভ্যস্থ্য করছি?
বাস্তবতায় তা বলে না কারন আমরা অধিকাংশ পরিবারের মুসলিমরা এইদিনটিকে ছুটির দিন বিধায় ঘুমানো বা শুধুমাত্র আমোদ স্ফূর্তিতে পার করে দিতেই ব্যস্থ থাকি, আর তাই এই দিনের আমল দিয়ে নিজেদের দুনিয়া ও আখেরাতের লাভসমূহ থেকে বঞ্চিত হতে হয়।
আমাদের সন্তানেরা তাই প্রশ্ন করে যায় ইসলামে উৎসবের দিন নাই আর তাই তারা অন্য সংস্কৃতিতে নিজেদের মত্ত রাখতে উৎসাহিত হয়। এটা আমাদের দূর্বলতা, আমাদের সন্তানদের সামনে বাস্তবধর্মী ইসলামের শিক্ষাকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করছি না। এখনো সময় আছে আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
বিজাতীয় দিনগুলোর অনুসরনে ভোর ১২.০১ মি ভোর হতে না হতেই দেখা যায় জন্মদিন বা মা দিবস বা ভালোবাসা দিবস ইত্যাদি তথাকথিত মানুষের বানানো দিবসগুলো নিয়ে কত উত্তেজনা ও পরিকল্পনার অন্ত থাকে না। কিন্তু এইগুলো হলো শয়তানদের সহযোগীতা করার জন্য উৎসব। তাই মহান রবের দেয়া উৎসবগুলোকে আমরা জেনে আমল করি এবং সন্তানদের বুঝতে ও অভ্যস্থ হতে দেই। তাহলে পরিবার ও সমাজে পবিত্র ভাবধারা বজায় থাকবে ইন শা আল্লাহ।
জুমু‘আর দিনের আদবসমূহঃ
১। জুমু‘আর দিনে ফজরের সালাতে বিশেষ কিরাআত পাঠ করা:
জুমুআর দিনে রাসূলুল্লাহ সা. ফজরের সালাতে প্রথম রাকাতে সূরা আস-সাজদাহ ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা আদ-দাহার (ইনসান) পড়তেন।” সহীহ বুখারী ও মুসলিম
২। বেশি বেশী দরূদ শরীফ পাঠ করা:
“তোমাদের দিনগুলির মধ্যে সর্বোত্তম একটি দিন হচ্ছে জুমার দিন। সুতরাং ঐ দিনে তোমরা আমার উপর বেশী বেশী দরূদ পাঠ কর। কেননা, তোমাদের পাঠ করা দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়।” (আবূ দাউদ বিশুদ্ধ সূত্রে)
৩। সূরা কাহাফ পাঠ করা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি জুমুআর দিন সূরা কাহাফ পাঠ করবে অপর জুমুআ পর্যন্ত একটি নূর তাকে আলোকিত করবে।”
হাকেম, শাইখ আলবানী ইরওয়াতে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
৪। গোসল করা:
রাসূলুল্লাহ সা বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিনে অযু করল তাহলে তা যথেষ্ট ও উত্তম। আর যে গোসল করল, (তার) গোসল হল সর্বোত্তম।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান
৫। মেসওয়াক করা ও সুগন্ধি ব্যবহার করা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘জুমুআর দিন প্রত্যেক বালেগ (বয়সপ্রাপ্ত) ব্যক্তি গোসল ও মেসওয়াক করবে এবং সামর্থ্য অনুসারে সুগন্ধি লাগাবে।” সহীহ মুসলিম
৬. সামর্থ্য অনুসারে সবচেয়ে সুন্দর পোষাক পরিধান করা
রাসূলুল্লাহ সা. আরো বলেন, ‘‘তোমাদের কারো যদি সামর্থ্য থাকে তাহলে সে কাজের দুটি পোশাক ব্যতীত জুমুআর জন্য দুটো আলাদা পোশাক রাখতে পারে, তাতে কোনো অসুবিধা নেই। সুনান আবু দাঊদ
৭. সকাল সকাল সালাতের জন্য যাওয়া:
৮. ইমাম সাহেব খুৎবার জন্য বের হওয়ার আগ পর্যন্ত (নফল) সালাত ও যিকিরে লিপ্ত থাকা:
৯. দ্বিপ্রহরের সঙ্গে সঙ্গে যতদূর সম্ভব তাড়াতাড়ি জুমু‘আর সালাত কায়েম করা:
১০. জুমুআর সালাতের দুই রাকআতে সূরা আল-আলা ও সূরা আল-গাশিয়া পাঠ করা অথবা সূরা আল-জুমআ ও সূরা আল-মুনাফিকূন পাঠ করা:
নুমান ইবন বশীর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সা. দুই ঈদের এবং জুমআর সালাতে সূরা আল-আলা ও সূরা আল-গাশিয়াহ পড়তেন। সহীহ মুসলিম
ইবন ‘আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সা জুমুআর সালাতে সূরা আল-জুমআ ও সূরা আল-মুনাফিকূন পাঠ করতেন। সহীহ মুসলিম
১১. জুমআর পরে বাড়ীতে দুই রাকাত অথবা মসজিদে চার রাকাত সালাত আদায় করা:
রাসূলুল্লাহ সা. জুমআর পরে (বাড়ীতে) না ফিরা পর্যন্ত কোনো সালাত পড়তেন না। (বাড়ী ফিরার) পরে দুই রাকাত সালাত আদায় করতেন। সহীহ বুখারী
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, ‘‘তোমরা যখন জুমআর সালাত আদায় করবে তখন জুমআর পর চার রাকাত সালাত পড়বে। সহীহ মুসলিম
(সুন্নাত হল, ফরয সালাত শেষ করার সাথে সাথে কোন প্রকার কথা-বার্তা বলা ও স্থান পরিবর্তন করা ছাড়া সুন্নাত সালাত আদায়ের জন্য না দাঁড়ানো। ফরয ও সুন্নাতের মাঝখানে স্থান পরিবর্তন বা কথা-বার্তা বলে বিরত নেয়া সুন্নাত)