৯। জান্নাত ২য় পর্ব
Power point presentation
৯। মৃত ব্যক্তি ও আমরা-জান্নাত-২
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
মহান সৃষ্টিকর্তা জান্নাত-জাহান্নাম আগেই সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তার বাসিন্দা সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ, জান্নাত-জাহান্নাম বর্তমানে প্রস্তুত রয়েছে। মহান আল্লাহ জান্নাত সম্বন্ধে বলেছেন,
وَسَارِعُوا إِلَىٰ مَغْفِرَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ
তোমরা প্রতিযোগিতা (ত্বরা) কর, তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে ক্ষমা এবং বেহেস্তের জন্য, যার প্রস্থ আকাশ ও পৃথিবীর সমান, যা ধর্মভীরুদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। (আলে ইমরানঃ ১৩৩)
سَابِقُوا إِلَىٰ مَغْفِرَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا كَعَرْضِ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ أُعِدَّتْ لِلَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ ۚ ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ
তোমরা আগ্রণী হও তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে, যার প্রশস্ততা আকাশ ও পৃথিবীর প্রশস্ততার মত, যা প্রস্তুত করা হয়েছে আল্লাহ ও তাঁর রসূলগণে বিশ্বাসীদের জন্য। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি তাকে তা দান করেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। (সূরা হাদীদঃ ২১)
আর জাহান্নাম সম্বন্ধে বলেছেন,
فَإِن لَّمْ تَفْعَلُوا وَلَن تَفْعَلُوا فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ ۖ أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ
যদি তোমরা (সূরা আনয়ন) না কর, এবং কখনই তা করতে পারবে না, তাহলে সেই আগুনকে ভয় কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ এবং পাথর, অবিশ্বাসীদের জন্য যা প্রস্তুত রয়েছে। (বাক্বারাহঃ ২৪)
وَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ
তোমরা সেই আগুনকে ভয় কর, যা অবিশ্বাসীদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। (আলে ইমরানঃ ১৩১)
إِنَّ جَهَنَّمَ كَانَتْ مِرْصَادًا (21) لِّلطَّاغِينَ مَآبًا (22)
নিশ্চয়ই জাহান্নাম ওঁৎ পেতে রয়েছে—সীমালংঘনকারীদের প্রত্যাবর্তনস্থল রূপে। (নাবাঃ ২১–২২)
মহানবী (ﷺ) মিরাজের রাতে জান্নাত দর্শন করেছেন। মহান আল্লাহ বলেছেন,
নিশ্চয়ই সে তাকে আরেকবার দেখেছিল। সিদরাতুল মুনতাহার নিকট। যার নিকট অবস্থিত (জান্নাতুল মাওয়া) বাসােদ্যান। যখন (বদরী) বৃক্ষটিকে, যা আচ্ছাদিত করার ছিল তা আচ্ছাদিত করল, তার দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি, দৃষ্টি লক্ষ্যচ্যুতও হয়নি। নিঃসন্দেহে সে তার প্রতিপালকের মহান নিদর্শনাবলী দেখেছিল। (নাজমঃ ১৩-১৮)।
বরং মহানবী (ﷺ) সে রাত্রে জান্নাতে প্রবেশ করেছেন। (বুখারী-মুসলিম)
মহানবী (ﷺ) বলেন, “তোমাদের কেউ যখন মারা যায়, তখন সকালসন্ধ্যায় তার অবস্থানক্ষেত্র তাকে প্রদর্শন করা হয়। জান্নাতী হলে জান্নাতের এবং জাহান্নামী হলে জাহান্নামের। তাকে বলা হয়, এই হল তোমার থাকার জায়গা; যে পর্যন্ত না তোমাকে কিয়ামতে আল্লাহ পুনরুত্থিত করবেন।” (বুখারী ১৩৭৯, মুসলিম ২৮৬৬নং)
কবরের হিসাব ও প্রশ্ন সংক্রান্ত দীর্ঘ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, ‘…তখন আসমানের দিক হতে এক শব্দকারী শব্দ করেন, “আমার বান্দা সত্য বলেছে। সুতরাং তার জন্য বেহেস্তের একটি বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তাকে বেহেস্তের একটি লেবাস পরিয়ে দাও। এ ছাড়া তার জন্য বেহেস্তের দিকে একটি দরজা খুলে দাও।” তখন তার প্রতি বেহেস্তের সুখ-শান্তি ও বেহেস্তের খোশবু আসতে থাকে এবং তার জন্য তার কবর দৃষ্টিসীমা বরাবর প্রশস্ত করে দেওয়া হয়। (আহমাদ ৪/২৮৭-২৮৮, আবু দাউদ ৪৭৫৩নং)।
একদা সূর্যগ্রহণের নামায পড়তে পড়তে মহানবী জান্নাত দর্শন করে অগ্রসর হয়েছিলেন এবং জাহান্নাম দর্শন করে পিছু হটেছিলেন। (মুসলিম ৯০১নং)
তিনি বলেছেন, “আমি জান্নাতের দুয়ারে দাঁড়ালাম। অতঃপর দেখলাম, যারা জান্নাতে প্রবেশ করেছে, তাদের অধিকাংশ গরীব-মিসকীন মানুষ। আর ধনবানদেরকে (তখনও হিসাবের জন্য আটকে রাখা হয়েছে। পক্ষান্তরে (অন্যান্য) জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। আর আমি জাহান্নামের দুয়ারে দাঁড়িয়ে দেখলাম যে, যারা তাতে প্রবেশ করেছে, তাদের বেশীরভাগই নারীর দল।” (বুখারী ও মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে সাহাবীদের কোন কথা পৌছল। অতঃপর তিনি ভাষণ দিয়ে বললেন, “আমার নিকট জান্নাত ও জাহান্নাম পেশ করা হল। ফলে আমি আজকের মত ভাল ও মন্দ (একত্রে) কোন দিনই দেখিনি। যদি। তোমরা তা জানতে, যা আমি জানি, তাহলে কম হাসতে আর বেশি কাঁদতে।” সুতরাং সাহাবীদের জন্য সেদিনকার মত কঠিনতম দিন আর ছিল না। তাঁরা তাঁদের মাথা আবৃত করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। (বুখারী, মুসলিম)।
তিনি বলেছেন, “মুমিনদের রূহ জান্নাতের গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। পরিশেষে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দেহে ফিরিয়ে দেবেন।” (মালেক, নাসাঈ, বাইহাক্বী, সিঃ সহীহাহ ৯৯৫নং)
উক্ত হাদীস থেকে এ কথাও প্রমাণ হয় যে, কিয়ামত আসার পূর্বেও মুমিনদের রূহ জান্নাতে অবস্থান করে।
হাদীসগ্রন্থগুলিতে এই শ্রেণীর আরো হাদীস রয়েছে, যাতে প্রমাণ হয় যে, জান্নাত-জাহান্নাম সৃষ্টি করে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সুর ফুঁকার পরেও জান্নাত-জাহান্নাম অবশিষ্ট থাকবে, যেমন কিয়ামতে সূর্য থাকবে। অতএব এই সন্দেহে তা এখন সৃষ্ট নয় বলা যাবে না। বরং তা সৃষ্ট প্রস্তুত আছে। অবশ্য তার মধ্যে এমনও কিছু সাজ-সামগ্রী আছে, যা মহান আল্লাহ পরে সৃষ্টি করবেন।
সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন শ্রেণীর জান্নাতী
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “মূসা (আঃ) স্বীয় প্রভুকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘জান্নাতীদের মধ্যে সবচেয়ে নিম্নমানের জান্নাতী কে হবে? আল্লাহ তাআলা উত্তর দিলেন, সে হবে এমন একটি লোক, যে সমস্ত জান্নাতীগণ জান্নাতে প্রবেশ করার পর (সর্বশেষে) আসবে। তখন তাকে বলা হবে, তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর। সে বলবে, হে প্রভু! আমি কিভাবে (কোথায়) প্রবেশ করব? অথচ সমস্ত লোক নিজ নিজ জায়গা দখল করেছে এবং নিজ নিজ অংশ নিয়ে ফেলেছে। তখন তাকে বলা হবে, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট যে, পৃথিবীর রাজাদের মধ্যে কোন রাজার মত তোমার রাজত্ব হবে? সে বলবে, প্রভু! আমি এতেই সন্তুষ্ট। তারপর আল্লাহ বলবেন, তোমার জন্য তাই দেওয়া হল। আর ওর সমতুল্য, ওর সমতুল্য, ওর সমতুল্য, ওর সমতুল্য (অর্থাৎ, ওর চার গুণ রাজত্ব দেওয়া হল)। সে পঞ্চমবারে বলবে, হে আমার প্রভু! আমি (ওতেই) সন্তুষ্ট। তখন আল্লাহ বলবেন, তোমার জন্য এটা এবং এর দশগুণ (রাজত্ব তোমাকে দেওয়া হল)। এ ছাড়াও তোমার জন্য রইল সে সব বস্তু, যা তোমার অন্তর কামনা করবে এবং তোমার চক্ষু তৃপ্তি উপভোগ করবে। তখন সে বলবে, আমি ওতেই সন্তুষ্ট, হে প্রভু।
(মূসা (আঃ) বললেন, হে আমার প্রতিপালক! আর সর্বোচ্চ স্তরের জান্নাতী কারা হবে? আল্লাহ তাআলা বললেন, তারা হবে সেই সব বান্দা, যাদেরকে আমি চাই। আমি স্বহস্তে যাদের জন্য সম্মান-বৃক্ষ রোপণ করেছি এবং তার উপর সীলমোহর অংকিত করে দিয়েছি (যাতে তারা ব্যতিরেকে অন্য কেউ তা দেখতে না পায়)। সুতরাং কোন চক্ষু তা দর্শন করেনি, কোন কর্ণ তা শ্রবণ করেনি এবং কোন মানুষের মনে তা কল্পিতও হয়নি।” (মুসলিম)।
জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান ‘অসীলাহ’
জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানের নাম অসীলাহ। যে স্থান সর্বোচ্চ মানুষের প্রাপ্য। আর তিনি হলেন আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)। তিনি বলেন, “মুআযযিনকে আযান দিতে শুনলে তোমরাও ওর মতই বল। অতঃপর আমার উপর দরূদ পাঠ কর; কেন না, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করে, আল্লাহ এর বিনিময়ে তার উপর দশবার রহমত বর্ষণ করেন। অতঃপর তোমরা আমার জন্য আল্লাহর নিকট ‘অসীলাহ’ প্রার্থনা কর; কারণ, অসীলাহ’ হল জান্নাতের এমন এক সুউচ্চ স্থান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে একটি বান্দার জন্য উপযুক্ত। আর আমি আশা রাখি যে, সেই বান্দা আমিই। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার জন্য ঐ ‘অসীলাহ’ প্রার্থনা করবে, তার জন্য আমার শাফাআত (সুপারিশ) অবধার্য হয়ে যাবে।” (আহমাদ, মুসলিম ৩৮৪নং প্রমুখ, মিশকাত ৬৫৭নং)
উচ্চ স্থানসমূহ কাদের জন্য?
জান্নাতের উচ্চ স্থানসমূহ শহীদদের জন্য। সেই শহীদদের জন্য, যারা প্রথম কাতারে থেকে যুদ্ধ করেন। যারা শহীদ হওয়া পর্যন্ত পিছন ফিরে তাকান না। এঁদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়ে হাসেন। এঁরাই হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ শহীদ। এঁদের কোন হিসাব নেই। এঁদের জন্যই রয়েছে জান্নাতের উচ্চ উচ্চ স্থান। (আহমাদ, সঃ জামে’ ১১১৮নং)
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, রাতে দু’জন লোক আমার কাছে এসে আমাকে গাছের উপর চড়ালো এবং আমাকে একটি সুন্দর ও উত্তম ঘরে প্রবেশ করালো, ওর চাইতে সুন্দর (ঘর) আমি কখনো দেখিনি। তারা (দু’জনে) বলল, — এই ঘরটি হচ্ছে শহীদদের ঘর। (বুখারী)
এমন কিছু কাজ আছে, যা করলে নবী (ﷺ)-এর কাছাকাছি দরজা পাওয়া যাবে। যেমনঃ
মহানবী (ﷺ) বলেন “আমি এবং নিজের অথবা অপরের অনাথ (এতীমের) তত্ত্বাবধায়ক জান্নাতে (পাশাপাশি) থাকব। আর বিধবা ও দুঃস্থ মানুষকে দেখাশুনাকারী ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর সমতুল্য।” (ত্বাবারানীর আওসাত্ব, সহীহুল জামে’ ১৪৭৬নং)।
আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেন, “আমি ও অনাথ (এতীমের) তত্ত্বাবধায়ক জান্নাতে এরূপ (পাশাপাশি) বাস করব।” এর সাথে তিনি তাঁর তর্জনী ও মধ্যমা অঙ্গুলি দ্বারা ইঙ্গিত করলেন এবং দুটির মাঝে একটু ফাঁক করলেন।” (বুখারী ৫৩০৪নং)।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর খাদেম ও আহলে সুফফার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব রাবীআহ ইবনে কাব আসলামী বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে রাত কাটাতাম। আমি তাঁর কাছে ওযুর পানি এবং প্রয়োজনীয় বস্তু এনে দিতাম। (একদিন তিনি খুশী হয়ে) বললেন, “তুমি আমার কাছে কিছু চাও।” আমি বললাম, আমি আপনার কাছে জান্নাতে আপনার সাহচর্য চাই। তিনি বললেন, “এ ছাড়া আর কিছু?” আমি বললাম, বাস ওটাই। তিনি বললেন, “তাহলে তুমি, অধিকাধিক সিজদা করে (অর্থাৎ প্রচুর নফল নামায পড়ে) তোমার (এ আশা পূরণের) জন্য আমাকে সাহায্য কর।” (মুসলিম)
তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি দুটি অথবা তিনটি কন্যা, কিংবা দুটি অথবা তিনটি বােন তাদের মৃত্যু অথবা বিবাহ, অথবা সাবালিকা হওয়া পর্যন্ত, কিংবা ঐ ব্যক্তির মৃত্যু পর্যন্ত যথার্থ প্রতিপালন করে, সে ব্যক্তি আর আমি (পরকালে) তর্জনী ও মধ্যমা অঙ্গুলিদ্বয়ের মত পাশাপাশি অবস্থান করব।” (আহমদ ৩/ ১৪৭ ১৪৮, ইবনে হিব্বান ২০ ৪৫ নং সিলসিলাহ সহীহাহ ২৯৬ নং)
যারা শহীদদের দরজা পান, তারাও তাদের কাছাকাছি উচ্চ স্থান পাবেন জান্নাতে। যেমনঃ
১৷ বিধবা ও মিসকীনদের অভাব দূরকরণে চেষ্টারত ব্যক্তি।
নবী (ﷺ) বলেছেন, “বিধবা ও মিসকীনদের অভাব দূর করার চেষ্টারত ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর সমতুল্য।” (হাদীসের বর্ণনাকারী বলেন) আমি ধারণা করছি যে, তিনি এ কথাও বললেন, “সে ঐ নফল নামায আদায়কারীর মত যে ক্লান্ত হয় না এবং ঐ রোযা পালনকারীর মত যে রোযা ছাড়ে না।” (বুখারী)।
২। আরো কতিপয় লোক।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “(পারলৌকিক পুরস্কারে পুরস্কৃত হওয়ার দিক দিয়ে) শহীদ পাঁচ ধরনের; (১) প্লেগরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত, (২) পেটের রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত, (৩) পানিতে ডুবে মৃত, (৪) মাটি চাপা পড়ে মৃত এবং (৫) আল্লাহর পথে থাকা অবস্থায় মৃত।” (বুখারী-মুসলিম)
একদা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, “তোমরা তোমাদের মাঝে কোন কোন ব্যক্তিকে শহীদ বলে গণ্য কর?” সকলেই সমস্বরে বলে উঠল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর পথে যে নিহত হয়, সেই শহীদ। তিনি বললেন, “তাহলে তো আমার উম্মতের মধ্যে শহীদ বড় অল্প।” লোকেরা বলল, ‘তাহলে তারা কে কে হে আল্লাহর রসূল? তিনি বললেন, “যে আল্লাহর পথে নিহত হয় সে শহীদ, যে আল্লাহর পথে মারা যায় সে শহীদ, যে প্লেগ রোগে মারা যায় সে শহীদ, যে পেটের রোগে প্রাণ হারায়, সে শহীদ এবং যে পানিতে ডুবে মারা যায় সেও শহীদ।” (মুসলিম)।
তিনি আরো বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার মাল-ধন রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ হারায় সে শহীদ। যে ব্যক্তি নিজ রক্ত (প্রাণ) রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয় সে শহীদ। যে তার দ্বীন রক্ষা করতে গিয়ে মারা যায় সে শহীদ এবং যে তার পরিবার রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ হারায় সেও শহীদ।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, হাসান সহীহ)
কম দরজার জান্নাতীর নেক সন্তানের দুআতে জান্নাতে তার দরজা উঁচু হতে থাকে। মহানবী (ﷺ) বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ জান্নাতে নেক বান্দার দরজা উঁচু করেন। সে তখন বলে, হে আমার প্রতিপালক! এ উন্নতি কীভাবে? আল্লাহ বলেন, তোমার জন্য তোমার ছেলের ক্ষমা প্রার্থনার ফলে।” (আহমাদ) আর তিনি বলেছেন, “আদম সন্তান মারা গেলে তার সমস্ত আমল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, অবশ্য তিনটি আমল বিচ্ছিন্ন হয় না; সাদকাহ জা-রিয়াহ (ইষ্টাপূর্ত কর্ম), লাভদায়ক ইলম, অথবা নেক সন্তান যে তার জন্য দুআ করে থাকে।” (মুসলিম ১৬৩ ১নং প্রমুখ)
ক্বিয়ামতের দিন কুরআন তেলাওয়াতকারীকে বলা হবে কুরআন তেলাওয়াত করতে থাক এবং উপরে উঠতে থাক। অক্ষর অক্ষর ও শব্দ শব্দ স্পষ্টভাবে পাঠ করতে থাক, যেভাবে দুনিয়াতে স্পষ্টভাবে পাঠ করছিলে। কেননা তোমার জন্য জান্নাতে বসবাসের স্থান হচ্ছে তোমার তেলাওয়াতের শেষ আয়াতের নিকট’। আহমাদ, মিশকাত হা/২১৩৪, হাদীছ ছাহীহ।
রাসূল (সা) বলেছেন,الْمَاهِرُ بِالْقُرْآنِ مَعَ السَّفَرَةِ الْكِرَامِ الْبَرَرَةِ وَالَّذِيْ يَقْرَؤُهُ يَتَتَعْتَعُ فِيْهِ وَهُوَ عَلَيْهِ شَاقٌّ لَهُ أَجْرَانِ- ‘কুরআন পাঠে দক্ষ ব্যক্তি সম্মানিত লেখক ফেরেশতাদের সাথে থাকবেন। আর যে কুরআন পড়ে কিন্তু আটকায় এবং কুরআন পড়া তার পক্ষে খুব কষ্টদায়ক হয় তার জন্য দুইগুণ নেকী রয়েছে। বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২১১২।
যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা স্থায়ী হবে। এ হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে আতিথেয়তা; আর আল্লাহর কাছে যা আছে তা সৎকর্মপরায়ণদের জন্য উত্তম।আলে ইমরানঃ১৯৮
জান্নাতের আবহাওয়া
জান্নাতে থাকবে নিরবচ্ছিন্ন আলো। সূর্যের তাপ নেই। মহান আল্লাহ বলেন,
وَأَنَّكَ لَا تَظْمَأُ فِيهَا وَلَا تَضْحَىٰ
অর্থাৎ, সেখানে তুমি পিপাসার্ত হবে না এবং রোদ্র-ক্লিষ্টও হবে না। (ত্বাহাঃ ১১৯)।
مُّتَّكِئِينَ فِيهَا عَلَى الْأَرَائِكِ ۖ لَا يَرَوْنَ فِيهَا شَمْسًا وَلَا زَمْهَرِيرًا
অর্থাৎ, সেখানে তারা সুসজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে বসবে, তারা সেখানে রৌদ্রতাপ অথবা অতিশয় শীত বোধ করবে না। (দাহরঃ ১৩)
জান্নাতের সুগন্ধি
জান্নাত সুগন্ধময় জায়গা। তার সুগন্ধ কেবল ভিতরেই নয়, বরং তার বাইরে বহু দুরবর্তী স্থান থেকে পাওয়া যাবে। কত দূরবর্তী জায়গা থেকে পাওয়া যাবে, তার উল্লেখ কতিপয় হাদীসে এসেছে।
আহমাদের এক বর্ণনায় আছে ৭০ বছরের দূরবর্তী স্থান থেকেও পাওয়া যাবে। (সঃ তারগীব ১৯৮৮নং)
এক বর্ণনায় ৭০ ও ১০০ বছরে অতিক্রম্য দূরবর্তী স্থানের কথা আছে। (সঃ তারগীব ২০৪৪নং)
জান্নাতে থাকবে নানান ধরনের খোশবু। কস্তুরী, জাফরান, কপূর ইত্যাদি। খোশবুর কথা মহান আল্লাহ বলেন,
فَأَمَّا إِن كَانَ مِنَ الْمُقَرَّبِينَ (88) فَرَوْحٌ وَرَيْحَانٌ وَجَنَّتُ نَعِيمٍ (89
অর্থাৎ, সুতরাং যদি সে নৈকট্যপ্রাপ্তদের একজন হয়, তাহলে (তার জন্য রয়েছে) আরাম, খোশবু ও সুখময় জান্নাত। (ওয়াক্বিআহঃ ৮৮-৮৯)
মহানবী (ﷺ) বলেন, “জান্নাতের সর্বশ্রেষ্ঠ খোশবু হল মেহেন্দি (ফুল)।” (ত্বাবারানী, সিঃ সহীহাহ ১৪২০নং)
জান্নাতের এমন সুগন্ধ আছে, যার ঘ্রাণ বহু বছরের দুরবর্তী পথ থেকেও পাওয়া যায়। তবুও জান্নাতে জান্নাতীরা সুগন্ধি কাঠের খোশবু ব্যবহার করবে। তাদের শরীর থেকে যে ঘাম বের হবে, তাতেও হবে কস্তুরীর সুগন্ধ। (বুখারী)
কারা সুগন্ধও পাবে না————
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, দুই প্রকার জাহান্নামী আমি (এখন পর্যন্ত) প্রত্যক্ষ করিনি (অর্থাৎ, পরে তাদের আবির্ভাব ঘটবে) : (১) এক সম্প্রদায় যাদের কাছে গরুর লেজের মত চাবুক থাকবে, যা দিয়ে তারা জনগণকে প্রহার করবে। (২) এক শ্রেণীর মহিলা, যারা (এমন নগ্ন) পোশাক পরবে যে, (বাস্তবে) উলঙ্গ থাকবে, (পর পুরুষকে) নিজেদের প্রতি আকর্ষণ করবে ও নিজেরাও (পর পুরুষের প্রতি) আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা হবে উটের হিলে যাওয়া কুঁজের মত। এ ধরনের মহিলারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার সুগন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধ এত এত দূরত্বের পথ থেকে পাওয়া যাবে। (মুসলিম)
আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি পরের বাপকে নিজের বাপ বলে দাবী করে, সে ব্যক্তি জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। অথচ তার সুগন্ধি ৫০০ বছরের দূরবর্তী স্থান থেকেও পাওয়া যাবে।” (আহমাদ ২/১৭ ১, ইবনে মাজাহ ২৬১১, সহীহুল জামে ৫৯৮৮নং)
আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি কোন সন্ধি অথবা চুক্তিবদ্ধ (যিম্মী) মানুষকে হত্যা করবে, সে ব্যক্তি জান্নাতের সুবাসও পাবে না। অথচ তার সুবাস ৪০ বছরে অতিক্রম্য দূরবর্তী স্থান থেকেও পাওয়া যাবে।” (আহমাদ, বুখারী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, সহীহুল জামে’ ৬৪৫৭নং)
জান্নাতের দরজা আটটি
মহানবী (ﷺ) বলেছেন, পরিপূর্ণরূপে ওযু করে যে ব্যক্তি এই দুআ বলবে, ‘আশহাদু আল লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু অহদাহু লা শারীকা লাহ, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু অরাসুলুহ। তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে, যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা তাতে প্রবেশ করবে। মুসলিম
নবী (ﷺ) বলেন, “যার হাতে আমার প্রাণ আছে, তাঁর কসম! জান্নাতের একটি দরজার প্রশস্ততা হচ্ছে মক্কা ও (বাহরাইনের) হাজারের মধ্যবর্তী দূরত্ব অথবা মক্কা ও (সিরিয়ার) বুসরার মধ্যবর্তী দূরত্বের সমান। বুখারী-মুসলিম।
দরজার দুই বাজুর মধ্যে ব্যবধানের দূরত্ব বলা হয়েছে চল্লিশ বছরের পথ। জান্নাত প্রবেশকালে তা ভিড়ে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে। (মুসলিম, আহমাদ)
মু’মিনগণ যখন জান্নাতের কাছে পৌছবে, তখন সেই দরজাসমূহ খোলা হবে। ফিরিশতাগণ তাদেরকে অভ্যর্থনা জানাবে। মহান আল্লাহ বলেন,
وَسِيقَ الَّذِينَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ إِلَى الْجَنَّةِ زُمَرًا ۖ حَتَّىٰ إِذَا جَاءُوهَا وَفُتِحَتْ أَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا سَلَامٌ عَلَيْكُمْ طِبْتُمْ فَادْخُلُوهَا خَالِدِينَ
অর্থাৎ, যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করত, তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা জান্নাতের নিকট উপস্থিত হবে এবং জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হবে এবং তার রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম (শান্তি), তোমরা সুখী হও এবং স্থায়ীভাবে বাস করার জন্য জান্নাতে প্রবেশ কর। (যুমারঃ ৭৩)
চিরস্থায়ী জান্নাত, তাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতামাতা, পতিপত্নী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তারাও। আর ফিরিশতাগণ তাদের কাছে প্রবেশ করবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে। (তারা বলবে,) ‘তোমরা ধৈর্যধারণ করেছ বলে তোমাদের প্রতি শান্তি! কতই না ভাল এই পরিণাম।’ (রা’দঃ ২৩-২৪)
চিরস্থায়ী জান্নাত, যার দ্বার উন্মুক্ত থাকবে তাদের জন্য। (স্বাদঃ ৫০)
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “জান্নাতের (আটটি দরজার) মধ্যে এমন একটি দরজা আছে, যার নাম হল ‘রাইয়ান’; সেখান দিয়ে কেবল রোযাদারগণই কিয়ামতের দিনে প্রবেশ করবে। তারা ছাড়া আর কেউ সেদিক দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা করা হবে রোযাদাররা কোথায়? তখন তারা দন্ডায়মান হবে। (ঐ দরজা দিয়ে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে) তারপর যখন তাদের সর্বশেষ ব্যক্তি প্রবেশ করবে, তখন দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। আর সেখান দিয়ে অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।” (বুখারী ও মুসলিম)
মহানবী (ﷺ) জানিয়েছেন যে, জান্নাতের দরজাসমূহ প্রত্যেক বছর রমযান মাসে খুলে দেওয়া হয়। নবী (ﷺ) বলেছেন, মাহে রমযানের আগমন ঘটলে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদেরকে শৃঙ্খলিত করা হয়। (বুখারী ও মুসলিম)
“মহিলা যখন তার পাঁচ ওয়াক্তের নামায আদায় করে, তার রমাদান মাসের রোযা পালন করে, (অবৈধ যৌনাচার থেকে) তার যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে এবং তার স্বামীর কথা ও আদেশমত চলে, তখন তাকে বলা হয়, জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা তুমি সেই দরজা দিয়েই জান্নাতে প্রবেশ কর।” (ইবনে হিব্বান, সহীহুল জামে’ ৬৬০ নং)
জান্নাতের মাটি
জান্নাতের মাটি বিভিন্ন ধরনের হবে। কোথাও কস্তুরীর মত সুগন্ধময়। (বুখারী-মুসলিম)। আবার কোথাও জাফরানের মত। (আহমাদ, তিরমিযী, দারেমী)। আবার কোথাও হবে সাদা ধবধবে মিহি আটার মত। (মুসলিম, আহমাদ)
জান্নাতের বৃক্ষরাজি ও ফলমূল
জান্নাতের আছে, সারি সারি নানা রকম বৃক্ষরাজি। আছে নানা রকমের ফলমূল। কিছু বৃক্ষ ও ফলমূলের কথা উল্লেখ করে মহান আল্লাহ বলেছেন,
নিশ্চয়ই আল্লাহভীরুদের জন্যই রয়েছে সফলতা; উদ্যানসমূহ ও নানাবিধ আঙ্গুর। (নাব ৩১-৩২) ।
উভয় (বাগানে) রয়েছে প্রত্যেক ফল দুই প্রকার। (রাহমানঃ ৫২)
فِيهِمَا فَاكِهَةٌ وَنَخْلٌ وَرُمَّانٌ
সেখানে রয়েছে ফলমূল খেজুর ও ডালিম। (রাহমানঃ ৬৮)
وَأَصْحَابُ الْيَمِينِ مَا أَصْحَابُ الْيَمِينِ (27) فِي سِدْرٍ مَّخْضُودٍ (28) وَطَلْحٍ مَّنضُودٍ (29)
আর ডান হাত-ওয়ালারা, কত ভাগ্যবান ডান হাত-ওয়ালারা! (যাদেরকে ডান হাতে আমলনামা দেওয়া হবে। তারা থাকবে এক বাগানে সেখানে আছে কাটাহীন কুলগাছ। কাঁদি ভরা কলাগাছ। (ওয়াক্বিআহঃ ২৭-২৯)
وَفَاكِهَةٍ مِّمَّا يَتَخَيَّرُونَ
তাদের পছন্দ মত ফলমূল। (ওয়াক্বিআহঃ ২০)।
مُتَّكِئِينَ فِيهَا يَدْعُونَ فِيهَا بِفَاكِهَةٍ كَثِيرَةٍ وَشَرَابٍ
অর্থাৎ, সেখানে তারা আসীন হবে হেলান দিয়ে, সেখানে তারা যত খুশী ফলমূল ও পানীয়ের জন্য আদেশ দেবে। (স্বাদঃ ৫১)
يَدْعُونَ فِيهَا بِكُلِّ فَاكِهَةٍ آمِنِينَ
অর্থাৎ, সেখানে তারা নিশ্চিন্তে বিবিধ ফলমূল আনতে বলবে। (দুখনঃ ৫৫)
إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي ظِلَالٍ وَعُيُونٍ (41) وَفَوَاكِهَ مِمَّا يَشْتَهُونَ (42) كُلُوا وَاشْرَبُوا هَنِيئًا بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ (43) إِنَّا كَذَٰلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ (44)
অর্থাৎ, আল্লাহ-ভীরুরা থাকবে ছায়া ও ঝরনাসমূহে। তাদের বাঞ্ছিত ফলমুলের প্রাচুর্যের মধ্যে। তোমরা তোমাদের কর্মের পুরস্কার স্বরূপ তৃপ্তির সাথে পানাহার কর। এভাবে আমি সৎকর্মপরায়ণদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি। (মুরসালাতঃ ৪১-৪৪)
জান্নাতের ফলসমূহের নাম দুনিয়ার ফলের মত হলেও, সে সবের স্বাদ কিন্তু এক নয়। যেহেতু জান্নাতের সবকিছুই অতুলনীয়, বেনযীর।
وَبَشِّرِ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ۖ كُلَّمَا رُزِقُوا مِنْهَا مِن ثَمَرَةٍ رِّزْقًا ۙ قَالُوا هَٰذَا الَّذِي رُزِقْنَا مِن قَبْلُ ۖ وَأُتُوا بِهِ مُتَشَابِهًا
অর্থাৎ, যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে তাদের শুভ সংবাদ দাও যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত; যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, যখনই তাদের ফলমূল খেতে দেওয়া হবে, তখনই তারা বলবে, আমাদেরকে (পৃথিবীতে অথবা জান্নাতে) পূর্বে জীবিকারূপে যা দেওয়া হত, এ তো তাই। তাদেরকে পরস্পর একই সদৃশ ফল দান করা হবে। (বাক্বারাহঃ ২৫)
(সদৃশ) এর অর্থ হয়তোবা জান্নাতের সমস্ত ফলের আকার-আকৃতি এক রকম হবে অথবা তা দুনিয়ার ফলের মত দেখতে হবে। তবে এ সাদৃশ্য কেবল আকার ও নাম পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। নচেৎ জান্নাতের ফলের স্বাদের সাথে দুনিয়ার ফলের স্বাদের কোন তুলনাই নেই। জান্নাতের নিয়ামতের ব্যাপারে হাদীসে এসেছে, “(এমন নিয়ামত) যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শোনেনি এবং কোন মানুষের অন্তরে তার সঠিক ধারণা উদয় হয়নি।”
জান্নাতের সমস্ত ফল-গাছই বারোমেসে। জান্নাতের ফল এমন মৌসমী ফল হবে না যে, মৌসম শেষ হয়ে গেলেই সেই ফল আগামী মৌসম পর্যন্ত বিলুপ্ত হয়ে যাবে। জান্নাতের ফল এ ধরনের ফুল-মুকুলের ঋতুর অধীনস্থ হবে না। বরং তা সদা-সর্বদা পাওয়া যাবে। যেমন মহান আল্লাহ বলেছেন,
وَفَاكِهَةٍ كَثِيرَةٍ (32) لَّا مَقْطُوعَةٍ وَلَا مَمْنُوعَةٍ (33)
অর্থাৎ, প্রচুর ফলমূল; যা শেষ হবে না ও নিষিদ্ধও হবে না। (ওয়াক্বিআহঃ ৩২-৩৩)।
مَّثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِي وُعِدَ الْمُتَّقُونَ ۖ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ۖ أُكُلُهَا دَائِمٌ وَظِلُّهَا ۚ تِلْكَ عُقْبَى الَّذِينَ اتَّقَوا ۖ وَّعُقْبَى الْكَافِرِينَ النَّارُ
অর্থাৎ, সাবধানীদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে তার বিবরণ এইরূপ ও ওর পাদদেশে নদী প্রবাহিত, ওর ফলমূলসমূহ ও ছায়া চিরস্থায়ী; যারা সাবধানী এটা তাদের পরিণাম। আর অবিশ্বাসীদের পরিণাম হল জাহান্নাম। (রা’দঃ ৩৫)
জান্নাতের ফল গাছের ডালে ঝুলে থাকলেও তা জান্নাতীর হাতের নাগালের মধ্যে থাকবে। তা পেড়ে খেতে কোন প্রকারের কষ্টবরণ বা শ্রমব্যয় করতে হবে না। মহান আল্লাহ বলেন,
قُطُوفُهَا دَانِيَةٌ
অর্থাৎ, যার ফলরাশি ঝুলে থাকবে নাগালের মধ্যে। (হা-ক্বাহঃ ২৩)
وَدَانِيَةً عَلَيْهِمْ ظِلَالُهَا وَذُلِّلَتْ قُطُوفُهَا تَذْلِيلًا
অর্থাৎ, সন্নিহিত বৃক্ষছায়া তাদের উপর থাকবে এবং ওর ফলমূল সম্পূর্ণরূপে তাদের আয়ত্তাধীন করা হবে। (দাহরঃ ১৪)
مُتَّكِئِينَ عَلَىٰ فُرُشٍ بَطَائِنُهَا مِنْ إِسْتَبْرَقٍ ۚ وَجَنَى الْجَنَّتَيْنِ دَانٍ
অর্থাৎ, সেখানে তারা হেলান দিয়ে বসবে পুরু রেশমের আস্তরবিশিষ্ট বিছানায়, দুই বাগানের ফল হবে তাদের নিকটবর্তী। (রাহমানঃ ৫৪)
জান্নাতের বৃক্ষের শাখা-প্রশাখা ও পত্র-পল্লবের কথাও মহান আল্লাহর আল-কুরআনে উল্লেখ করেছেন। এক স্থানে বলেছেন,
ذَوَاتَا أَفْنَانٍ
অর্থাৎ, উভয়ই বহু ডালপালাবিশিষ্ট (গাছে পরিপূর্ণ)। (রাহমানঃ ৪৮)
অন্য স্থানে বলেছেন,
مُدْهَامَّتَانِ
অর্থাৎ, ঘন সবুজ এ (জান্নাতের) বাগান দু’টি। (রাহমানঃ ৬৪)
আর তার জন্যই তার ছায়া হবে ঘন। ছায়ার কথা উল্লেখ করে মহান আল্লাহ বলেছেন,
وَنُدْخِلُهُمْ ظِلًّا ظَلِيلًا
অর্থাৎ, তাদেরকে চিরস্নিগ্ধ ঘন ছায়ায় স্থান দান করব। (নিসাঃ ৫৭)
জান্নাতে সূর্য নেই। সুতরাং সেখানে সর্বদা সর্বস্থানে ছায়া আর ছায়া। মহান আল্লাহ বলেন,
وَظِلٍّ مَّمْدُودٍ অর্থাৎ, সম্প্রসারিত ছায়া। (ওয়াক্বিআহঃ ৩০)
إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي ظِلَالٍ وَعُيُونٍ
অর্থাৎ, আল্লাহ-ভীরুরা থাকবে ছায়া ও ঝরনাসমূহে। (মুরসালাতঃ ৪১)।
هُمْ وَأَزْوَاجُهُمْ فِي ظِلَالٍ عَلَى الْأَرَائِكِ مُتَّكِئُونَ
অর্থাৎ, তারা এবং তাদের স্ত্রীগণ সুশীতল ছায়ায় থাকবে এবং হেলান দিয়ে বসবে সুসজ্জিত আসনে। (ইয়াসীনঃ ৫৬)
জান্নাতে আছে বিশাল বিশাল গাছ। একটি গাছের কথা উল্লেখ করে নবী (ﷺ) বলেছেন, “জান্নাতের মধ্যে এমন একটি বৃক্ষ আছে, যার ছায়ায় কোন আরোহী উৎকৃষ্ট, বিশেষভাবে প্রতিপালিত হালকা দেহের দ্রুতগামী ঘোড়ায় চড়ে একশো বছর চললেও তা অতিক্রম করতে সক্ষম হবে না।” (বুখারী-মুসলিম)।
জান্নাতে ‘তুবা’ নামের একটি গাছ আছে। এ গাছটি ১০০ বছরের অতিক্রম্য জায়গা জুড়ে অবস্থিত। এর মোছা থেকে জান্নাতীদের বস্ত্র নির্মিত হবে। (আহমাদ, সিঃ সহীহাহ ১৯৮৫নং)।
জান্নাতুল মাওয়ার কাছে ‘সিদরাতুল মুন্তাহা’র কথা কুরআনে এসেছে,
وَلَقَدْ رَآهُ نَزْلَةً أُخْرَىٰ (13) عِندَ سِدْرَةِ الْمُنتَهَىٰ (14) عِندَهَا جَنَّةُ الْمَأْوَىٰ (15) إِذْ يَغْشَى السِّدْرَةَ مَا يَغْشَىٰ (16) مَا زَاغَ الْبَصَرُ وَمَا طَغَىٰ (17) لَقَدْ رَأَىٰ مِنْ آيَاتِ رَبِّهِ الْكُبْرَىٰ (18)
অর্থাৎ, নিশ্চয়ই সে তাকে আরেকবার দেখেছিল। সিদরাতুল মুনতাহার নিকট। যার নিকট অবস্থিত (জান্নাতুল মাওয়া) বাসােদ্যান। যখন (বদরী) বৃক্ষটিকে, যা আচ্ছাদিত করার ছিল তা আচ্ছাদিত করল, তার দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি, দৃষ্টি লক্ষ্যচ্যুতও হয়নি। নিঃসন্দেহে সে তার প্রতিপালকের মহান নিদর্শনাবলী দেখেছিল। (নাজমঃ ১৩-১৮)
মিরাজের রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ফিরে এসে সিদরাতুল মুনতাহা সম্পর্কে বলেছিলেন, “আমি সিদরাতুল মুনতাহা দেখলাম। এর ফল (বড়ই) যেন ‘হাজার’ নামক স্থানের (বড়) মটকার ন্যায়। আর তার পাতা যেন হাতীর কানের মতো বড়। সিদরাতুল মুনতাহার মূল থেকে চারটি ঝরনা প্রবাহিত হয়েছে। দুইটি ঝরণা ভেতরে, আর দুইটি ঝরণা বাইরে। এই (চারটি ঝরণা) সম্পর্কে আমি জিবরাঈলকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, ভেতরের দুইটি ঝরণা জান্নাতে অবস্থিত। আর বাইরের ঝরণা দুইটির একটি হল (ইরাকের) ফুরাত, আর অপরটি হল (মিশরের) নীল নদ। (হিলিয়াতুল আওলিয়া, ৩/৭২ এর সমার্থ বোধক হাদীসকে জামে সাহীহ গ্রন্থে ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন)
‘সিদরাহ’ শব্দের অর্থ বদরিকা বৃক্ষ। মুন্তাহা শব্দের অর্থ শেষপ্রান্ত। সপ্তম আকাশে আরশের নিচে এই বদরিকা বৃক্ষ অবস্থিত।
জান্নাতের প্রত্যেক গাছের কাণ্ড হবে সোনার। (তিরমিযী)
জান্নাতে বৃক্ষ-সংখ্যা বৃদ্ধি করার উপায়
পরিবেশ রক্ষা ও সুন্দর করার জন্য গাছ লাগানো একটি উত্তম কাজ। দুনিয়ায় গাছ লাগিয়ে আমরা পরিবেশকে মনোরম করতে পারি। আমরা গাছ থেকে অক্সিজেন পাই, ছায়া পাই, খাদ্য পাই, সুগন্ধ পাই। আমরা বলে থাকি, গাছ লাগান, গাছ বাঁচান। একটি গাছ, একটি প্রাণ। গাছ লাগিয়ে আমরা আমাদের বাড়ির বাগানকে সুন্দর করি। কিন্তু পরকালের বাড়িকে সুন্দর করার কথা কি ভাবি?
আমরা কি জানি যে, সেখানেও গাছ লাগানো যাবে এই দুনিয়া থেকেই, গাছ থাকলেও গাছ আরো বৃদ্ধি করা যাবে?
ইবনু মাসউদ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মি’রাজের রাতে আমি ইবরাহীম (আঃ)-এর সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি বললেনঃ হে মুহাম্মাদ” আপনার উম্মাতকে আমার সালাম পৌছিয়ে দিন এবং তাদেরকে জানান যে, জান্নাতের যমীন অতীব সুগন্ধি সমৃদ্ধ এবং সেখানকার পানি অত্যন্ত সুস্বাদু। তা একটি সমতল ভূমি এবং তার গাছপালা হল “সুবহানাল্লাহ ওয়ালহামদু লিল্লাহ ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার”। (তিরমিজি- ৩৪৬২)
– আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি একটি চারাগাছ রোপণরত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট দিয়ে যেতে জিজ্ঞেস করলেনঃ আবূ হুরায়রা! কী রোপণ করছো? আমি বললাম, আমার একটি চারা রোপণ করছি। তিনি বলেনঃ আমি কি তোমাকে এমন কিছু রোপণের কথা বলে দিবো না, যা তোমার জন্য এর চেয়েও উত্তম? তিনি বলেন, অবশ্যই, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বলেনঃ তুমি বলো, ‘‘সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদু লিল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’’ (সমস্ত পবিত্রতা আল্লাহর, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর এবং আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নাই, আল্লাহ মহান)। এর প্রত্যেকটার বিনিময়ে তোমার জন্য জান্নাতে একটি করে গাছ রোপিত হবে। (ইবনে মাযাহ- ৩৮০৭)
আমর ইবনে শুয়াইব (রাঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সুত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি “সুবহানাল্লহি ওয়া বিহামদিহি” পাঠ করে তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছ লাগানো হয়। (বাযযার- ২৪৬৮, হাদিস সহিহ)
যদি রাসূল (সাঃ) এর নিম্নে বর্ণিত হাদিসটি লক্ষ্য করেন–
রাসূল (সাঃ) বলেন, কোন ব্যক্তি যদি প্রত্যেক ফরয স্বলাতের পর-
“সুবহা-নাল্লাহ” (আল্লাহ কতই না পবিত্র-মহান)”«سُبْحَانَ اللَّه (৩৩ বার)
“আলহামদুলিল্লাহ” (সকল প্রশংসা আল্লাহ্র জন্য) الْحَمْدُ لِلَّهِ، (৩৩ বার)
“আল্লা-হু আকবার” (আল্লাহ সবচেয়ে বড়)” اللَّهُ أَكْبَرُ (৩৩ বার)
তারপর ১ বার নিম্নোক্ত দোয়া বলে
« لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ».
(লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন কাদীর)।
“একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, সকল প্রশংসা তাঁরই এবং তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।”
তাহলে ঐ ব্যক্তির সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা সমতুল্যও হয়। (সহিহ মুসলিম হাদিস-১২৩৯, হাদিস একাডেমী)
১. সুবহানাল্লাহ, ২. আলহামদুলিল্লাহ্, ৩. আল্লাহু আকবার, ৪. লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ৫. সুবহানাল্লহি ওয়া বিহামদিহি, ৬. সুবহানাল্লাহিল আযিম ওয়া বিহামদিহি এগুলো যে কোনটা বললেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আপনার জন্য জান্নাতে একটি করে বৃক্ষ রোপণ করে দিবেন।
জান্নাতের নদী ও ঝর্ণাসমূহ
জান্নাত মানে বাগান। আর বাগানে অবশ্যই নদী প্রবাহিত থাকবে।
প্রথমতঃ তার পানি পান করা যাবে।
আর দ্বিতীয়তঃ তাতে বাগানের শোভা-সৌন্দর্য চিত্তাকর্ষী হবে।
জান্নাতে মোট চার ধরনের নদী প্রবাহিত হবে।
(১) পানি (২) দু্ধ (৩) মধু (৪) শরাব।
মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« إن في الجنة بحر الماء , وبحر العسل , وبحر اللبن , وبحر الخمر , ثم تشقق الأنهار بعد » . ( رواه الترمذي ) .
“নিশ্চয়ই জান্নাতের মধ্যে থাকবে পানির সমুদ্র, মধুর সমুদ্র, দুধের সমুদ্র এবং শুরার সমুদ্র; অতঃপর নদী-নালার ব্যবস্থা করা হবে।” [তিরিমিযী, ২৫৭১]
মহানবী (ﷺ) মিরাজে গিয়ে জান্নাতের চারটি নদী দর্শন করেছিলেন। দু’টি বাহ্যিক ও দু’টি আভ্যন্তরিক। বাহ্যিক নদী দু’টি দুনিয়ায় প্রবহমান, নীল ও ফুরাত। (মুসলিম ১৬৪নং)
অন্য এক বর্ণনায় আছে, রাসুলল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “(শামের) সাইহান ও জাইহান, (ইরাকের) ফুরাত এবং (মিসরের) নীল প্রত্যেক নদীই জান্নাতের নদ-নদীসমূহের অন্যতম। (মুসলিম ২৮৩৯নং)।
উক্ত নদীগুলি জান্নাতের মানে হল, সেগুলির মূল জান্নাতের; যেমন মানুষের মূল হল জান্নাত। অথবা উক্ত নদীগুলির বিশেষ বরকতের জন্য জান্নাতের নদী বলা হয়েছে। আর আল্লাহই ভাল জানেন।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (শামের)-সাইহান, জাইহান (দু’টি নদ) এবং ফুরাত(ইরাক) ও নীল(মিসর) (দু’টি নদ) এসবের প্রত্যেকটিই জান্নাতের নহরসমূহেরই অন্তর্ভুক্ত হবে। (ই.ফা. ৬৮৯৮, ই.সে. ৬৯৫৫) সহিহ মুসলিম, নবী (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু‘টি প্রবহমান নদী দুনিয়ার আসমানে দেখলেন। জিজ্ঞেস করলেন, এ নদী দু‘টি কোন নদী হে জিব্রীল! জিব্রীল (আঃ) বললেন, এ দু‘টি হলো নীল ও ফুরাতের মূল। এরপর জিব্রীল (আঃ) নবী (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে সঙ্গে নিয়ে এ আসমানে ঘুরে বেড়ালেন। তিনি আরো একটি নদী দেখলেন। এর ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল মোতি ও জাবারজাদের তৈরী একটি প্রাসাদ। নবী (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নদীতে হাত মারলেন। সেটা ছিল অতি উন্নতমানের মিস্ক। তিনি বললেন, হে জিব্রীল! এটি কী? জিব্রীল (আঃ) বললেন, হাউযে কাউসার। যা আপনার রব আপনার জন্য সংরক্ষিত রেখেছেন। [৩৫৭০; মুসলিম ১/৭৪, হাঃ ১৬২, আহমাদ ১২৫০৭] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৯৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭০০৯
জান্নাতের একটি নদীর নাম ‘বা-রিক্ব’। এটি জান্নাতের দ্বারপ্রান্তে অবস্থিত। এরই নিকটে শহীদগণের আত্মা অবস্থান করবে। (আহমাদ, হাকেম, ইবনে হিব্বান)
তন্মধ্যে পানি, তার ঝর্ণাসমূহ হচ্ছে,
- ‘কাফুর’ নামক ঝর্ণা। এর পানি সুঘ্রাণ এবং সুশীতল।
পবিত্র কোরআন মাজীদে বর্ণিত ‘আবরার’ খ্যাতি লাভ কারী পূণ্যবান জান্নাতীদের জন্য বিশেষায়ীত পানীয় হলো কাফুর মিশ্রিত পানীয়। এ পানির বৈশিষ্ট্য হলো ইহা অত্যন্ত সুগন্ধযুক্ত। মুফাসসিরদের মতে, এ পানির গুনাগুণ বর্ণনাতীত। এ পানি পানের পর জান্নাতীদের মুখ থেকে এমন এক ধরণের সুঘ্রাণ ছড়াবে যাতে অপরাপর জান্নাতীগণ বিমোহিত হয়ে যাবে। এ ধরণের আবহ সকল নেককার জান্নাতীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
2) সালসাবিল ঝর্ণা। এর পানি ফুটন্ত চা ও কফির ন্যায় সুগন্ধি ও উত্তপ্ত থাকবে।
3) তাছনীম নাম ঝর্ণা। এর পানি থাকবে নাতিশীতোষ্ণ।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَبَشِّرِ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ أَنَّ لَهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُۖ ﴾ [البقرة: ٢٥]
“আর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদেরকে শুভ সংবাদ দিন যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত।” (আল বাকারা: ২৫)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ مَّثَلُ ٱلۡجَنَّةِ ٱلَّتِي وُعِدَ ٱلۡمُتَّقُونَۖ فِيهَآ أَنۡهَٰرٞ مّن مَّآءٍ غَيۡرِ ءَاسِنٖ وَأَنۡهَٰرٞ مِّن لَّبَنٖ لَّمۡ يَتَغَيَّرۡ طَعۡمُهُۥ وَأَنۡهَٰرٞ مِّنۡ خَمۡرٖ لَّذَّةٖ لِّلشَّٰرِبِينَ وَأَنۡهَٰرٞ مِّنۡ عَسَلٖ مُّصَفّٗىۖ وَلَهُمۡ فِيهَا مِن كُلِّ ٱلثَّمَرَٰتِ ﴾ [محمد: ١٥]
“মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত: তাতে আছে নির্মল পানির নহরসমূহ, আছে দুধের নহরসমূহ যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়, আছে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নহরসমূহ, আছে পরিশোধিত মধুর নহরসমূহ এবং সেখানে তাদের জন্য থাকবে প্রত্যেক প্রকারের ফলমূল।”(মুহাম্মদ: ১৫)
জান্নাতের পানি, দুধ, শারাব, মধু প্রভৃতি দুনিয়ার মত নয়। এসব কিছুরই স্বাদ ভিন্ন এবং অপরিবর্তনীয়, বিনষ্ট হয় না, শারাবে জ্ঞান শূন্য হয় না, কোন শিরঃপীড়ায় ধরে না। ইরশাদ হয়েছে—–
বহমান ঝর্ণার সূরায় ভরা পান পাত্র, হাতল বিশিষ্ট সূরা পাত্র এবং হাতলবিহীন বড় সূরা পাত্র নিয়ে সদা ব্যস্ত থাকবে।যা পান করে মাথা ঘুরবে না৷ কিংবা বুদ্ধিবিবেক লোপ পাবে না। সূরা ওয়াকিয়াঃ ১৮-১৯
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي مَقَامٍ أَمِينٖ ٥١ فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٖ ٥٢ ﴾ [الدخان: ٥١، ٥٢]
“নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে নিরাপদ স্থানে— উদ্যান ও ঝর্ণার মাঝে।”(আদ দুখান: ৫১-৫২)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ فِيهِمَا عَيۡنَانِ تَجۡرِيَانِ ٥٠ ﴾ [الرحمن: ٥٠]
“উভয় উদ্যানে রয়েছে প্রবাহমান দুই প্রস্রবণ।”(আর রাহমান:৫০)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ فِيهِمَا عَيۡنَانِ نَضَّاخَتَانِ ٦٦ ﴾ [الرحمن: ٦٦]
“উভয় উদ্যানে আছে উচ্ছলিত দুই প্রস্রবণ।” (আর রাহমান:২২)
সূরা যারিয়াতে বলা হয়েছে:
﴿ إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٍ ١٥ ءَاخِذِينَ مَآ ءَاتَىٰهُمۡ رَبُّهُمۡۚ إِنَّهُمۡ كَانُواْ قَبۡلَ ذَٰلِكَ مُحۡسِنِينَ ١٦ ﴾ [الذاريات: ١٥، ١٦]
‘‘অবশ্য মুক্তাকী লোকেরা সেদিন বাগ-বাগিচা ও ঝর্ণাধারাসমূহের পরিবেষ্টনে অবস্থান থাকবে। তাদের রব তাদেরকে যা দেবে সানন্দে তারা তা গ্রহণ করতে থাকবে। (এটা এজন্য যে) তারা এর আগে মুহসিন (সদাচারী) বান্দা হিসেবে পরিচিত ছিলো।’’ (সূরা যারিয়াত: ১৫-১৬)
বাগানসমূহের নিচ দিয়ে প্রবাহের অর্থ হচ্ছে, বাগানসমূহের পাশ দিয়ে নদী নালা প্রবাহমান থাকবে। কেননা- বাগ-বাগিচা যদিও নদীর কিনারে হয় তবু তা নদী থেকে একটু উচু জায়গাই হয়ে থাকে এবং নদী ও বাগান থেকে সামান্য নিচু নিয়েই প্রবাহিত হয়।
জান্নাতের অট্টালিকা ও তাবুর বিবরণ
জান্নাতীরা জান্নাতে বড় বড় অট্টালিকায় বসবাস করবে। তা হবে একাধিক কক্ষবিশিষ্ট ও বহুতল। তা হবে সুখের বাসা ও সৌন্দর্যময়।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَعَدَ اللَّهُ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ ۚ وَرِضْوَانٌ مِّنَ اللَّهِ أَكْبَرُ ۚ ذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
অর্থাৎ, আল্লাহ বিশ্বাসী পুরুষ ও বিশ্বাসী নারীদেরকে এমন উদ্যানসমূহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন, যেগুলোর নিম্নদেশে বইতে থাকবে নদীমালা, সেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে। আরও (প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন) চিরস্থায়ী উদ্যানসমূহে (জান্নাতে আদনে) পবিত্র বাসস্থানসমুহের। আর আল্লাহর সন্তুষ্টি হচ্ছে সর্বাপেক্ষা বড় (নিয়ামত)। এটাই হচ্ছে অতি বড় সফলতা। (তওবাহঃ ৭২)।
وَمَا أَمْوَالُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُم بِالَّتِي تُقَرِّبُكُمْ عِندَنَا زُلْفَىٰ إِلَّا مَنْ آمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَأُولَٰئِكَ لَهُمْ جَزَاءُ الضِّعْفِ بِمَا عَمِلُوا وَهُمْ فِي الْغُرُفَاتِ آمِنُونَ
অর্থাৎ, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি আমার নৈকট্য লাভের সহায়ক হবে না। তবে (নৈকট্য লাভ করবে) তারাই যারা বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে এবং তারা তাদের কাজের জন্য পাবে বহুগুণ পুরস্কার। আর তারা কক্ষসমূহে নিরাপদে বসবাস করবে। (সাবা’ : ৩৭)
أُولَٰئِكَ يُجْزَوْنَ الْغُرْفَةَ بِمَا صَبَرُوا وَيُلَقَّوْنَ فِيهَا تَحِيَّةً وَسَلَامًا
অর্থাৎ, তাদেরকে ধৈর্যাবলম্বনের প্রতিদান স্বরূপ (বেহেস্তের) কক্ষ দেওয়া হবে এবং তাদেরকে সেখানে অভিবাদন ও সালাম সহকারে অভ্যর্থনা জানানো হবে। (ফুরক্বানঃ ৭৫)
لَٰكِنِ الَّذِينَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ لَهُمْ غُرَفٌ مِّن فَوْقِهَا غُرَفٌ مَّبْنِيَّةٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ۖ وَعْدَ اللَّهِ ۖ لَا يُخْلِفُ اللَّهُ الْمِيعَادَ
অর্থাৎ, তবে যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, তাদের জন্য বহুতলবিশিষ্ট নির্মিত প্রাসাদ রয়েছে; যার নিম্নদেশে নদীমালা প্রবাহিত। (এটি) আল্লাহর প্রতিশ্রুতি, আল্লাহ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না। (যুমারঃ ২০)
জান্নাতে এমন কক্ষ থাকবে, যা স্বচ্ছ স্ফটিক-নির্মিত।
মহানবী (ﷺ) বলেন, “জান্নাতের মধ্যে এমন কক্ষ আছে, যার বাহিরের অংশ ভিতর থেকে এবং ভিতরের অংশ বাহির থেকে দেখা যাবে।” তা শুনে আবু মালেক আশআরী (রাঃ) বললেন, ‘সে কক্ষ কার জন্য হবে, হে আল্লাহর রসুল?’ তিনি বললেন, “যে ব্যক্তি উত্তম কথা বলে, অন্নদান করে ও লোকেরা যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামাযে রত হয়; তার জন্য।” (ত্বাবারানী, হাকেম, সহীহ তারগীব ৬১১নং)
জান্নাতে রয়েছে বড় বড় তাবু। জান্নাতীরা সস্ত্রীক সেই তাঁবুতে বাস করবে। মহান আল্লাহ বলেন,
حُورٌ مَّقْصُورَاتٌ فِي الْخِيَامِ
অর্থাৎ, তারা তাবুতে সুরক্ষিত হুর। (রাহমানঃ ৭২)।
মহানবী (ﷺ) বলেছেন, নিশ্চয় জান্নাতে মুমিনদের জন্য একটি শূন্যগর্ভ মোতির তাঁবু থাকবে, যার দৈর্ঘ্য হবে ষাট মাইল। এর মধ্যে মুমিনদের জন্য একাধিক স্ত্রী থাকবে। যাদের সকলের সাথে মু’মিন সহবাস করবে। কিন্তু তাদের কেউ কাউকে দেখতে পাবে না। (বুখারী-মুসলিম)
৭০৫০. আবদুল্লাহ ইবনি কায়স [রাদি.]-এর সূত্রে নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, মুমিনদের জন্য জান্নাতে মধ্যস্থলে ফাঁকা এমন একটি মুক্তার তাঁবু নির্মাণ করা হইবে যার দৈর্ঘ্য হইবে ষাট মাইল। মুমিনদের সহধর্মিণীগণও এতে থাকিবে। তারা তাদের সকলের নিকট গমন করিবে। তবে স্ত্রীগণ পরস্পর একে অন্যকে দেখিতে পাবে না।[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৯৫, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৫২]
৭০৫১. আবদুল্লাহ ইবনি কায়স [রাদি.] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জান্নাতে [মুমিনদের জন্য] মাঝে ফাঁকা এরূপ মুক্তার একটি বিশাল তাঁবু থাকিবে, যার বিস্তৃতি হইবে ষাট মাইল। এর প্রত্যেক প্রান্তেই স্ত্রীগণ থাকিবে। তারা পরস্পর একে অপরকে দেখিতে পাবে না। মুমিনেরা ঘুরে ঘুরে সকল রমণীর নিকট যাবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৯৬, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৫৩]
৭০৫২. আবু মূসা [রাদি.]-এর সূত্রে নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, জান্নাতের তাঁবুগুলো মণি-মুক্তার তৈরি হইবে। এর দৈর্ঘ্য হইবে ঊর্ধাকাশের দিকে ষাট মাইল। এর প্রত্যেক কোণে মুমিনদের সহধর্মিণীগণ থাকিবে। তবে পরস্পর একে অপরকে দেখিতে পাবে না।[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৯৭, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৫৪]
এই তাবু হবে একটি মোতির। সে মোতি কত বিশাল যে, তার ভিতরের জায়গা হবে ষাট মাইল!
জান্নাতে বিশেষ কিছু লোকের জন্য বিশেষ ধরনের অট্টালিকা থাকবে। যেমন মা খাদীজা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)র জন্য থাকবে বংশ-নির্মিত প্রাসাদ। অবশ্য সে বংশ বা বাশ হবে মনি-মুক্তার। আল্লাহর রসূল (ﷺ) জিবরীলের পক্ষ থেকে খাদীজা (রাদ্বিয়াল্লাহু আহা)কে জান্নাতে (তার জন্য মুক্তার বাঁশ বা) ফাঁপা মুক্তা নির্মিত একটি অট্টালিকার সুসংবাদ দান করেছেন; যেখানে কোন হট্টগোল ও ক্লান্তি থাকবে না। (বুখারী ও মুসলিম)
জান্নাতে উমার (রাঃ)-এর প্রাসাদ মহানবী (ﷺ) দর্শন করেছেন। (বুখারী-মুসলিম)।
জান্নাতে অতিরিক্ত ঘর নির্মাণ করার জন্য কিছু অতিরিক্ত কাজ করতে হয়।
১। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, “যে কোন মুসলিম ব্যক্তি আল্লাহর (সন্তুষ্টি অর্জনের) জন্য প্রত্যহ ফরয নামায ছাড়া বারো রাকআত সুন্নত নামায পড়ে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি গৃহ নির্মাণ করেন অথবা তার জন্য জান্নাতে একটি গৃহ নির্মাণ করা হয়।” (মুসলিম)।
২। আল্লাহর রসুল (ﷺ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি (কাতারের মাঝে) কোন ফাঁক বন্ধ করে, আল্লাহ তার বিনিময়ে তাকে একটি মর্যাদায় উন্নীত করেন এবং তার জন্য জান্নাতে এক গৃহ নির্মাণ করেন।” (ত্বাবারানীর আওসাত্ব, সহীহ তারগীব ৫০২নং)।.
৩। নবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি কুল হুঅল্লা-হু আহাদ’ শেষ পর্যন্ত ১০ বার পাঠ করবে, আল্লাহ সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতে একটি মহল নির্মাণ করবেন।” (আহমাদ, প্রমুখ, সিসিলাহ সহীহাহ ৫৮৯নং)।
৪। নবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর (সন্তুষ্টি লাভের) উদ্দেশ্যে একটি মসজিদ নির্মাণ করে দেয়, আল্লাহ তার জন্য বেহেশ্যে একটি ঘর বানিয়ে দেন।” (বুখারী, মুসলিম, মিঃ ৬৯৭নং)
৫। কোন বাজার প্রবেশ করলে প্রচুর সওয়াবের আশায় নিম্নের দু‘আ পাঠ করুনঃ
لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ، وَهُوَ حَيٌّ لاَّ يَمُوْتُ، بِيَدِهِ الْخَيْرُ، وَهُوَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু অহদাহু লা শারীকা লাহ, লাহুল মুলকু অলাহুল হামদু য়্যুহয়ী অ য়্যুমীতু অহুয়া হাইয়্যুল লা য়্যামূত, বিয়্যাদিহিল খাইরু অহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।
আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই। তিনি একক, তাঁর কোন অংশী নেই। তাঁরই নিমিত্তে সারা রাজত্ব ও সকল প্রশংসা। তিনি জীবিত করেন ও মৃত্যু দান করেন। তিনি চিরঞ্জীব, তাঁর মৃত্যু নেই। তাঁরই হাতে যাবতীয় মঙ্গল এবং তিনি সর্ব বস্ত্তর উপর সর্বশক্তিমান।
বাজার প্রবেশ করে এই দু‘আটি যে পাঠ করবে আল্লাহ তাআলা তার জন্য ১০ লক্ষ পুণ্য লিপিবদ্ধ করবেন, তার ১০ লক্ষ পাপ মোচন করে দেবেন, তাকে ১০ লক্ষ মর্যাদায় উন্নীত করবেন এবং জান্নাতে তার জন্য একটি গৃহ নির্মাণ করবেন।
সহীহ তিরমিযী হা/৩৪২৯, ইবনে মাজাহ তাওহীদ পাবঃ হা/২২৩৫, হাকেম ১/৫৩৮, মিশকাত হাদীস একাডেমী হা/২৪৩১
৬। রাসূলল্লাহ (ﷺ) বলেন, “যখন কোন বান্দার সন্তান মারা যায়, তখন মহান আল্লাহ স্বীয় ফিরিশাদেরকে বলেন, তোমরা আমার বান্দার সন্তানের জীবন হনন করেছ কি? তারা বলেন, হ্যাঁ। তিনি বলেন, তোমরা তার হৃদয়ের ফলকে হনন করেছ কি? তারা বলেন, হ্যাঁ। তিনি বলেন, সে সময় আমার বান্দা কি বলেছে? তারা বলে, সে আপনার হামদ (প্রশংসা) করেছে ও ‘ইন্না লিল্লাহি অইন্না ইলাইহি রাজিউন’ (অর্থাৎ, আমরা তোমার এবং তোমার কাছেই অবশ্যই ফিরে যাব) পাঠ করেছে। মহান আল্লাহ বলেন, আমার (সন্তানহারা) বান্দার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি গৃহ নির্মাণ কর, আর তার নাম রাখ, বায়তুল হামদ’ (প্রশংসাভবন)।” (তিরমিযী হাসান)।
৭। আল্লাহর রসুল (ﷺ) বলেছেন, “অন্যায়ের সপক্ষে থেকে যে ব্যক্তি তর্ক পরিহার করে তার জন্য জান্নাতের পার্শ্বদেশে এক গৃহ নির্মাণ করা হয়। ন্যায়ের সপক্ষে থেকেও যে ব্যক্তি তর্ক পরিহার করে তার জন্য জান্নাতের মধ্যস্থলে এক গৃহ নির্মাণ করা হয়। আর যে ব্যক্তি তার চরিত্রকে সুন্দর করে তার জন্য জান্নাতের উপরিভাগে এক গৃহ নির্মাণ করা হয়।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, বাইহাকী, সহীহ তারগীব ১৩৩নং)।