১১। জান্নাত-৪র্থ পর্ব

১১তম পর্ব জান্নাত-৪

Power point Presentation

১১। মৃত ব‍্যক্তি ও আমরা-১১তম পর্ব জান্নাত-৪

দুনিয়ার সুখ সামগ্রীর সাথে জান্নাতের সুখ-সামগ্রীর তুলনা

দুনিয়ার সুখসামগ্রীর সাথে জান্নাতের সুখসামগ্রীর কোন তুলনাই হয় না। কিন্তু বহু বান্দার ঈমান বড় দুর্বল, বিশ্বাস বড় ক্ষীণ। তারা সামনে যেটা পায়, সেটাকেই শ্রেষ্ঠ মনে করে, হাতে হাতে নগদ যেটা পায়, সেটাই শেষ পাওয়া ভাবে। তাদের মন বলে,

‘নগদ যা পাও হাত পেতে নাও, বাকীর খাতা শূন্য থাক,

দূর আওয়াজের লাভ কী শুনে, মাঝখানে যে বেজায় ফাঁক।

অথচ মহান সৃষ্টিকর্তা বিশ্বাস সুদৃঢ় করার জন্য কত শতভাবে বয়ান দিয়েছেন। বারবার বলেছেন, পরলোকের সম্পদ ইহলোকের সম্পদ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।

নারী, সন্তান-সন্ততি, জমাকৃত সোনা-রূপার ভান্ডার, পছন্দসই (চিহ্নিত) ঘোড়া, চতুষ্পদ জন্তু ও ক্ষেত-খামারের প্রতি আসক্তি মানুষের নিকট লোভনীয় করা হয়েছে। এ সব ইহজীবনের ভোগ্য বস্তু। আর আল্লাহর নিকটেই উত্তম আশ্রয়স্থল রয়েছে। বল, আমি কি তোমাদেরকে এ সব বস্তু হতে উৎকৃষ্ট কোন কিছুর সংবাদ দেব? যারা সাবধান (পরহেযগার) হয়ে চলে তাদের জন্য রয়েছে উদ্যানসমূহ যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে, তাদের জন্য পবিত্র সঙ্গিনী এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি রয়েছে। বস্তুতঃ আল্লাহ তার দাসদের সম্বন্ধে সম্যক অবহিত। (আলে ইমরানঃ ১৪-১৫)

لَٰكِنِ الَّذِينَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا نُزُلًا مِّنْ عِندِ اللَّهِ ۗ وَمَا عِندَ اللَّهِ خَيْرٌ لِّلْأَبْرَارِ

অর্থাৎ, কিন্তু যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত; যার পাদদেশে নদীমালা প্রবাহিত, সেখানে তারা স্থায়ী হবে। এ হল আল্লাহর পক্ষ হতে আতিথ্য। আর আল্লাহর নিকট যা আছে তা পুণ্যবানদের জন্য উত্তম। (আলে ইমরানঃ ১৯৮)

فَمَا أُوتِيتُم مِّن شَيْءٍ فَمَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَمَا عِندَ اللَّهِ خَيْرٌ وَأَبْقَىٰ لِلَّذِينَ آمَنُوا وَعَلَىٰ رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ

বস্তুতঃ তোমাদেরকে যা কিছু দেওয়া হয়েছে, তা পার্থিব জীবনের ভোগ; কিন্তু আল্লাহর নিকট যা আছে, তা উত্তম ও চিরস্থায়ী তাদের জন্য, যারা বিশ্বাস করে ও তাদের প্রতিপালকের ওপর নির্ভর করে। (শুরাঃ ৩৬)

ক্ষণস্থায়ী জীবনকে প্রাধান্য দিয়ে চিরস্থায়ী জীবনকে বরবাদ করতে বারণ করেছেন।

وَلَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ إِلَىٰ مَا مَتَّعْنَا بِهِ أَزْوَاجًا مِّنْهُمْ زَهْرَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا لِنَفْتِنَهُمْ فِيهِ ۚ وَرِزْقُ رَبِّكَ خَيْرٌ وَأَبْقَىٰ

 

অর্থাৎ, আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে পরীক্ষা করার জন্য পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য-স্বরূপ ভোগ-বিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি, তার প্রতি তুমি কখনোও তোমার চক্ষুদ্বয় প্রসারিত করো না। তোমার প্রতিপালকের জীবিকাই উৎকৃষ্টতর ও স্থায়ী। (ত্বাহাঃ ১৩১)

بَلْ تُؤْثِرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا (16) وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ وَأَبْقَىٰ (17)

 

অর্থাৎ, বরং তোমরা পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দিয়ে থাক। অথচ পরকালের জীবনই উত্তম ও চিরস্থায়ী। (আলাঃ ১৬-১৭)

ভেবে দেখা যেতে পারে যে, পরকালের সম্পদ অধিক শ্রেষ্ঠ কেন?

১। পার্থিব সম্পদ ও ভোগবিলাস সীমিত, কিন্তু পারলৌকিক সম্পদ ও ভোগবিলাস অসীম। মহান আল্লাহ বলেন,

قُلْ مَتَاعُ الدُّنْيَا قَلِيلٌ وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ لِّمَنِ اتَّقَىٰ وَلَا تُظْلَمُونَ فَتِيلًا

অর্থাৎ, বল, পার্থিব ভোগ অতি সামান্য এবং যে ধর্মভীরু তার জন্য পরকালই উত্তম। আর তোমাদের প্রতি খেজুরের আঁটির ফাটলে সুতো বরাবর (সামান্য পরিমাণ)ও যুলুম করা হবে না।” (নিসাঃ ৭৭)।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “আখেরাতের মুকাবেলায় দুনিয়ার দৃষ্টান্ত ঐরূপ, যেরূপ তোমাদের কেউ সমুদ্রে আঙ্গুল ডুবায় এবং (তা বের করে) দেখে যে, আঙ্গুলটি সমুদ্রের কতটুকু পানি নিয়ে ফিরছে।” (মুসলিম)

যারা অসীম পরকালের উপর সসীম ইহকালকে প্রাধান্য দেয়, তাদেরকে উপদেশ দিয়ে বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَا لَكُمْ إِذَا قِيلَ لَكُمُ انفِرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ اثَّاقَلْتُمْ إِلَى الْأَرْضِ ۚ أَرَضِيتُم بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا مِنَ الْآخِرَةِ ۚ فَمَا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فِي الْآخِرَةِ إِلَّا قَلِيلٌ

অর্থাৎ, হে বিশ্বাসিগণ! তোমাদের কি হলো যে, যখন তোমাদেরকে আল্লাহর পথে (জিহাদে) বের হতে বলা হয়, তখন তোমরা ভারাক্রান্ত হয়ে মাটিতে বসে পড়। তবে কি তোমরা পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবন নিয়ে পরিতুষ্ট হয়ে গেলে? বস্তুতঃ পার্থিব জীবনের ভোগবিলাস তো পরকালের তুলনায় অতি সামান্য। (তাওবাহঃ ৩৮)।

 

২। দুনিয়ার বিলাসসামগ্রী আখেরাতের বিলাসসামগ্রী অপেক্ষা নিম্নতর। বরং উভয়ের মধ্যে কোন তুলনাই হয় না। জান্নাতের খাদ্য-পানীয়, লেবাস-পোশাক, বাসস্থান ইত্যাদি দুনিয়া থেকে সর্বৈবভাবে শ্রেষ্ঠ। বরং “জান্নাতের এক চাবুক (অথবা এক ধনুক) পরিমাণ জায়গা দুনিয়া ও তন্মধ্যস্থিত সবকিছু থেকে শ্রেষ্ঠ।” (বুখারী)

 

স্ত্রীর কথাই ভেবে দেখুন। কত পার্থক্য! মহানবী (ﷺ) বলেছেন, “যদি জান্নাতী কোন মহিলা পৃথিবীর দিকে উকি মারে, তাহলে আকাশ-পৃথিবীর মধ্যবর্তী সকল স্থান উজ্জ্বল করে দেবে! উভয়ের মাঝে সৌরভে পরিপূর্ণ করে দেবে! আর তার মাথায় ওড়নাখানি পৃথিবী ও তন্মধ্যস্থিত সকল বস্তু হতে শ্রেষ্ঠ।” (বুখারী)।

 

৩। জান্নাতের সুখ-সামগ্রী দুনিয়ার মলিনতা ও আবিলতা থেকে পবিত্র। দুনিয়ার খাদ্য ও পানীয় খাওয়ার পর প্রস্রাব-পায়খানার প্রয়োজন পড়ে। আর তাতে দুর্গন্ধও ছোটে। পক্ষান্তরে জান্নাতের পানাহারে তা হয় না। জান্নাতে প্রস্রাব-পায়খানাই নেই। এত এত খেয়েও হজম হয়ে কেবল সুগন্ধময় ঢেকুর অথবা ঘামের সাথে বের হয়ে যাবে।

দুনিয়ার শারাব পান করলে মানুষ জ্ঞানশূন্য হয়ে যায়। পক্ষান্তরে জান্নাতের শারাবে তা হবে না।

দুনিয়ার পানি খারাপ হয়, জান্নাতের পানি খারাপ হবে না।

দুনিয়ার দুধ খারাপ হয়ে যায়, জান্নাতের দুধ খারাপ হবে না।

দুনিয়ার স্ত্রী মাসিক, বীর্য, স্রাব ইত্যাদি থেকে পবিত্রা নয়। জান্নাতের স্ত্রী পবিত্রা।

দুনিয়ার প্রায় সকল মানুষের মন হিংসা-বিদ্বেষ ইত্যাদিতে ভরা। জান্নাতীদের মন সে রকম নয়।

দুনিয়াতে কত নোংরামি, অশান্তি, হানাহানি, খুনোখুনি, গালাগালি, রাগারাগি হয়। জান্নাতে তা হবে না। মহান আল্লাহ বলেন,

يَتَنَازَعُونَ فِيهَا كَأْسًا لَّا لَغْوٌ فِيهَا وَلَا تَأْثِيمٌ

সেখানে তারা একে অপরের নিকট হতে গ্রহণ করবে (মদ ভরা) পান-পাত্র, যা হতে পান করলে কেউ অসার কথা বলবে না এবং পাপ কর্মে লিপ্ত হবে না। (তুরঃ ২৩)

 

لَّا يَسْمَعُونَ فِيهَا لَغْوًا وَلَا كِذَّابًا

অর্থাৎ, সেখানে তারা শুনবে না কোন অসার ও মিথ্যা কথা। (নাবাঃ ৩৫)

لَّا يَسْمَعُونَ فِيهَا لَغْوًا إِلَّا سَلَامًا ۖ وَلَهُمْ رِزْقُهُمْ فِيهَا بُكْرَةً وَعَشِيًّا

অর্থাৎ, সেখানে তারা শান্তি’ ছাড়া কোন অসার বাক্য শুনবে না এবংসেথায় সকাল-সন্ধ্যায় তাদের জন্য থাকবে জীবনোপকরণ। (মারয়ামঃ ৬২)

لَّا تَسْمَعُ فِيهَا لَاغِيَةً

অর্থাৎ, সেখানে তারা কোন অসার বাক্য শুনবে না। (গাশিয়াহঃ ১১)

لَا يَسْمَعُونَ فِيهَا لَغْوًا وَلَا تَأْثِيمًا (25) إِلَّا قِيلًا سَلَامًا سَلَامًا (26)

অর্থাৎ, তারা শুনবে না কোন অসার অথবা পাপবাক্য। সালাম-সালাম (শান্তি) বাণী ব্যতীত। (ওয়াকৃিআহ ঃ ২৬)

দুনিয়ার মনোমালিন্যের যে জের অবশিষ্ট থাকবে, তা পুলসিরাত পার হওয়ার আগেই প্রতিশোধ বা ক্ষমা হয়ে যাবে। পুলসিরাত পার হওয়ার পরে তাদের হৃদয়ে আর কোন আবিলতা থাকবে না।

মহানবী (ﷺ) বলেছেন, “..তাদের মধ্যে কোন মতভেদ থাকবে না। পারস্পরিক বিদ্বেষ থাকবে না। তাদের সকলের অন্তর একটি অন্তরের মত হবে। তারা সকাল-সন্ধ্যায় তাসবীহ পাঠে রত থাকবে।” (বুখারী-মুসলিম)। আর মহান আল্লাহ বলেছেন,

وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِم مِّنْ غِلٍّ إِخْوَانًا عَلَىٰ سُرُرٍ مُّتَقَابِلِينَ

অর্থাৎ, আমি তাদের অন্তরে যে ঈর্ষা থাকবে তা দূর করে দেব; তারা ভ্ৰাতৃভাবে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে আসনে অবস্থান করবে। (হিজরঃ ৪৭)

৪। দুনিয়ার সুখ-সম্পদ ক্ষণস্থায়ী। পক্ষান্তরে জান্নাতের সুখ-সম্পদ চিরস্থায়ী। মহান আল্লাহ বলেন,

مَا عِندَكُمْ يَنفَدُ ۖ وَمَا عِندَ اللَّهِ بَاقٍ

অর্থাৎ, তোমাদের কাছে যা আছে তা নিঃশেষ হবে এবং আল্লাহর কাছে যা আছে তা চিরস্থায়ী থাকবে। (নাহলঃ ৯৬)।

إِنَّ هَٰذَا لَرِزْقُنَا مَا لَهُ مِن نَّفَادٍ

অর্থাৎ, নিশ্চয় এটি আমার (দেওয়া) রুযী; যার কোন শেষ নেই। (স্বাদঃ ৫৪)

أُكُلُهَا دَائِمٌ وَظِلُّهَا

অর্থাৎ, ওর ফলমূলসমূহ ও ছায়া চিরস্থায়ী। (রা’দঃ ৩৫)

স্থায়ী-অস্থায়ীর উদাহরণ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন,

 

وَاضْرِبْ لَهُم مَّثَلَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاءٍ أَنزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَاءِ فَاخْتَلَطَ بِهِ نَبَاتُ الْأَرْضِ فَأَصْبَحَ هَشِيمًا تَذْرُوهُ الرِّيَاحُ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ مُّقْتَدِرًا (45) الْمَالُ وَالْبَنُونَ زِينَةُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَالْبَاقِيَاتُ الصَّالِحَاتُ خَيْرٌ عِندَ رَبِّكَ ثَوَابًا وَخَيْرٌ أَمَلًا (46)

 

অর্থাৎ, তাদের কাছে পেশ কর উপমা পার্থিব জীবনের; এটা পানির ন্যায় যা আমি বর্ষণ করি আকাশ হতে, যার দ্বারা ভূমির উদ্ভিদ ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে উদ্গত হয়। অতঃপর তা বিশুষ্ক হয়ে এমন চুর্ণ-বিচূর্ণ হয় যে, বাতাস ওকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। আর আল্লাহ সর্ব বিষয়ে শক্তিমান। ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের শোভা। আর সৎকার্য, যার ফল স্থায়ী ওটা তোমার প্রতিপালকের নিকট পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য শ্রেষ্ঠ এবং আশা প্রাপ্তির ব্যাপারেও উৎকৃষ্ট। (কাহফঃ ৪৫-৪৬)

মাঠের ফসল ও বাগানের ফুল-ফল মানুষের চোখে সুশোভিত হয়ে ওঠে। তারপর ধীরে ধীরে পেকে যায়, নষ্ট হয়ে যায়। মানুষের যৌবন ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে যায়। সুস্থতা চলে গিয়ে অসুস্থতা আসে। সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দূরীভূত হয়ে অসুখ-অশান্তি আসে। ধন-সম্পদ আসে যায়। আত্মীয়-পরিজনও সঙ্গ ছেড়ে চলে যায়। আখেরাতের জগতে তা হবার নয়।

 

৫। পরকাল ভুলে ইহকালের আমল করলে অনুতাপ ও লাঞ্ছনা আসে। দুনিয়া আসলে ধোকা ও প্রবঞ্চনার জায়গা। আখেরাত তা নয়। দুনিয়ার সাফল্য মোটেই সাফল্য নয়, আখেরাতের সাফল্যই প্রকৃত সাফল্য। মহান আল্লাহ বলেন,

كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ۗ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۖ فَمَن زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ ۗ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ

অর্থাৎ, জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর কিয়ামতের দিনই তোমাদের কর্মফল পূর্ণমাত্রায় প্রদান করা হবে। সুতরাং যাকে আগুন (দোযখ) থেকে দূরে রাখা হবে এবং (যে) বেহেশে প্রবেশলাভ করবে, সেই হবে সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয়। (আলে ইমরানঃ ১৮৫)

জান্নাত কোন আমলের মূল্য নয়

জান্নাত বিশাল অমূল্য জিনিস। জান্নাত কোন আমলের বিনিময় নয়। কোন আমল দ্বারা ক্রয় করা সম্ভব নয়। আমল হল জান্নাত লাভ করার কারণ বা অসীলা মাত্র। জান্নাত আল্লাহর অনুগ্রহ, যা তিনি তার অনুগত বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে পুরস্কার স্বরূপ দান করবেন।

মহানবী (ﷺ) বলেন, “তোমরা (আমলে) অতিরঞ্জন ও অবজ্ঞা প্রদর্শন করো না। তোমরা সুসংবাদ নাও ও জেনে রাখ যে, তোমাদের মধ্যে কেউই আর না আমি (আল্লাহর রহমত ছাড়া) নিজ আমলের বলে পরিত্রাণ পেতে পারব। যদি না আল্লাহ আমাকে তার করুণা ও অনুগ্রহ দ্বারা আচ্ছাদিত করেন।” (আহমাদ, মুসলিম, ইবনে মাজাহ)

“যদি কোন ব্যক্তিকে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে তার জন্মদিন থেকে নিয়ে বৃদ্ধ হয়ে মৃত্যুদিন পর্যন্ত মাটির উপর উবুড় করে টেনে নিয়ে বেড়ানো হয়, তবুও কিয়ামতের দিন সে তা তুচ্ছ মনে করবে!” (আহমাদ প্রমুখ, সহীহুল জামে ৫২৪৯নং)

মহান আল্লাহ বলেন,

فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَّا أُخْفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

অর্থাৎ, কেউই জানে না তার জন্য তার কৃতকর্মের বিনিময় স্বরূপ নয়ন প্রীতিকর কি পুরস্কার লুকিয়ে রাখা হয়েছে। (সাজদাহঃ ১৭)।

تِلْكُمُ الْجَنَّةُ أُورِثْتُمُوهَا بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ

অর্থাৎ, (তাদেরকে আহবান করে বলা হবে যে,) তোমরা যা করতে তারই প্রতিদানে তোমাদেরকে এ জান্নাতের উত্তরাধিকারী করা হয়েছে। (আ’রাফঃ ৪৩)।

 

এর মানে এই নয় যে, জান্নাত কৃত আমলের বিনিময়। বরং কৃত আমলের কারণে অথবা কৃত আমলের পুরস্কার স্বরূপ জান্নাতীরা জান্নাত লাভ করবে।

জান্নাতীদের আকৃতি-প্রকৃতি

মহান আল্লাহ বলেন,

إِنَّ الْأَبْرَارَ لَفِي نَعِيمٍ (22) عَلَى الْأَرَائِكِ يَنظُرُونَ (23) تَعْرِفُ فِي وُجُوهِهِمْ نَضْرَةَ النَّعِيمِ (24)

অর্থাৎ, পুণ্যবানগণ তো থাকবে পরম স্বাচ্ছন্দ্যে। তারা সুসজ্জিত আসনে বসে দেখতে থাকবে। তুমি তাদের মুখমন্ডলে স্বাচ্ছন্দ্যের সজীবতা দেখতে পাবে। (মুতাফফিফীনঃ ২২-২৪)।

জান্নাতীগণ জান্নাতে পরিপূর্ণ নেয়ামত লাভ করবে। নিজ দেহ ও আকৃতি-প্রকৃতিতেও পরিপূর্ণ শক্তি ও সৌন্দর্য লাভ করবে। সকলেই আদি পিতা আদম (আঃ)-এর মত দীর্ঘ দেহী হবে ষাট হাত। তাদের হৃদয়ও হবে একটি মানুষের হৃদয়ের মতো, পবিত্র ও নির্মল।

জান্নাতে জান্নাতীরা অসীম রূপবান ও রূপবতী হবে। তাদের অপ্রয়োজনীয় কোন লোম থাকবে না। পুরুষদের গোঁফ-দাড়িও থাকবে না। চক্ষুযুগল হবে কাজলবরণ। সকলেই হবে ৩৩ বছরের যুবক।

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “জান্নাতের প্রথম প্রবেশকারী দলটির আকৃতি পূর্ণিমা রাতের চাঁদের মত হবে। অতঃপর তাদের পরবর্তী দলটি আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায় জ্যোতির্ময় হবে। তারা (জান্নাতে) পেশাব করবে না, পায়খানা করবে না, থুথু ফেলবে না, নাক ঝাড়বে না। তাদের চিরুণী হবে স্বর্ণের। তাদের ঘাম হবে কস্তুরীর ন্যায় সুগন্ধময়। তাদের ধুনুচিতে থাকবে সুগন্ধ কাঠ। তাদের স্ত্রী হবে আয়তলোচনা হুরগণ। তারা সকলেই একটি মানব কাঠামো, আদি পিতা আদমের আকৃতিতে হবে (যাদের উচ্চতা হবে) ষাট হাত পর্যন্ত।” (বুখারী-মুসলিম)

বুখারী-মুসলিমের আর এক বর্ণনায় আছে, “(জান্নাতে) তাদের পাত্র হবে স্বর্ণের, তাদের গায়ের ঘাম হবে কস্তুরীর ন্যায় সুগন্ধময়। তাদের প্রত্যেকের জন্য এমন দু’জন স্ত্রী থাকবে, যাদের সৌন্দর্যের দরুন মাংস ভেদ করে পায়ের নলার হাড়ের মজ্জা দেখা যাবে। তাদের মধ্যে কোন মতভেদ থাকবে না। পারস্পরিক বিদ্বেষ থাকবে না। তাদের সকলের অন্তর একটি অন্তরের মত হবে। তারা সকাল-সন্ধ্যায় তাসবীহ পাঠে রত থাকবে।”

রাসুলল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “জান্নাতবাসীরা জান্নাতের মধ্যে পানাহার করবে; কিন্তু পায়খানা করবে না, তারা নাক ঝাড়বে না, পেশাবও করবে না। বরং তাদের ঐ খাবার ঢেকুর ও কস্তুরীবৎ সুগন্ধময় ঘাম (হয়ে দেহ থেকে বের হয়ে যাবে)। তাদের মধ্যে তাসবীহ ও তাকবীর পড়ার স্বয়ংক্রিয় শক্তি প্রক্ষিপ্ত হবে, যেমন শ্বাসক্রিয়ার শক্তি স্বয়ংক্রিয় করা হয়েছে।” (মুসলিম)

তিনি আরো বলেন, “জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তখন তারা লোম ও শুশ্রুবিহীন হবে। যেন তাদের চোখে সুরমা লাগানো হয়েছে। তাদের বয়স হবে (ত্রিশ অথবা) তেত্রিশ।” (আহমাদ, তিরমিযী)

দুনিয়াতে বিশ্রাম গ্রহণকারীরা বিশ্রাম নেয়। কোন ক্লান্তি থেকে আরাম নেয় ও গভীরভাবে নিদ্রা যায়। জান্নাতে কোন ক্লান্তি নেই, নিদ্রা নেই। নিদ্রা হলে যে আরাম ও আনন্দ চলে যাবে। তাছাড়া নিদ্রা হল এক প্রকার মৃত্যু। জান্নাতে কোন প্রকার মৃত্যু নেই। (সিঃ সহীহাহ ১০৮৭নং)

জান্নাতীদের খাদ্য

জান্নাতের সর্বপ্রথম আতিথ্য হবে তিমি মাছ ও বলদের কলিজার অতিরিক্ত অংশ দ্বারা। পৃথিবীর মাটি হবে রুটিরূপ খাদ্য। (বুখারী ৩৩২৯, মুসলিম ৩১৫নং)

বেহেস্তের খাবার পর্যাপ্ত পছন্দমত ফল-মূল, ইঙ্গিত পাখির মাংস। মহান আল্লাহ বলেছেন,

وَفَاكِهَةٍ مِّمَّا يَتَخَيَّرُونَ (20) وَلَحْمِ طَيْرٍ مِّمَّا يَشْتَهُونَ

অর্থাৎ, তাদের পছন্দ মত ফলমূল। আর তাদের পছন্দমত পাখীর মাংস নিয়ে। (ওয়াক্বিআহঃ ২০-২১)

وَأَمْدَدْنَاهُم بِفَاكِهَةٍ وَلَحْمٍ مِّمَّا يَشْتَهُونَ

অর্থাৎ, আমি তাদেরকে ঢের দেব ফল-মূল এবং গোশত, যা তারা পছন্দ করে। (তুরঃ ২২)।

বরং যে খাবার খেতে মনে বাসনা হবে, সেই খাবারই জান্নাতীরা জান্নাতে খেতে পাবে। মহান আল্লাহ বলেন,

وَفِيهَا مَا تَشْتَهِيهِ الْأَنفُسُ وَتَلَذُّ الْأَعْيُنُ ۖ وَأَنتُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

অর্থাৎ, সেখানে রয়েছে এমন সমস্ত কিছু, যা মন চায় এবং যাতে নয়ন তৃপ্ত হয়। সেখানে তোমরা চিরকাল থাকবে। (যুখরুফঃ ৭১)

দুনিয়াতে কষ্ট বরণ করে যে আমল তারা করত, তারই অসীলায় পাবে ইচ্ছামত পান-ভোজনের ব্যবস্থা। মহান আল্লাহ তাদেরকে বলবেন,

كُلُوا وَاشْرَبُوا هَنِيئًا بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ

অর্থাৎ, তোমরা যা করতে তার প্রতিফল স্বরূপ তোমরা তৃপ্তির সাথে পানাহার করতে থাক। (তুরঃ ১৯)

সেখানে প্রত্যেক ফল দু’-প্রকার থাকবে। মহান আল্লাহ বলেন,

فِيهِمَا مِن كُلِّ فَاكِهَةٍ زَوْجَانِ

অর্থাৎ, উভয় (বাগানে) রয়েছে প্রত্যেক ফল দুই প্রকার। (রাহমানঃ ৫২)

রকমারি ফলের বৃক্ষে ফল ঝুলে থাকবে। যা সম্পূর্ণরূপে জান্নাতীদের আয়ত্তাধীন করা হবে। জান্নাতীগণ বসে বা শয়ন করেও ফল তুলে খেতে পারবে। মহান আল্লাহ বলেন,

مُتَّكِئِينَ عَلَىٰ فُرُشٍ بَطَائِنُهَا مِنْ إِسْتَبْرَقٍ ۚ وَجَنَى الْجَنَّتَيْنِ دَانٍ

অর্থাৎ, সেখানে তারা হেলান দিয়ে বসবে পুরু রেশমের আস্তরবিশিষ্ট বিছানায়, দুই বাগানের ফল হবে তাদের নিকটবর্তী। (রাহমানঃ ৫৪)

قُطُوفُهَا دَانِيَةٌ

অর্থাৎ, যার ফলরাশি ঝুলে থাকবে নাগালের মধ্যে। (হা-ক্বাহঃ ২৩)।

وَدَانِيَةً عَلَيْهِمْ ظِلَالُهَا وَذُلِّلَتْ قُطُوفُهَا تَذْلِيلًا

অর্থাৎ, সন্নিহিত বৃক্ষছায়া তাদের উপর থাকবে এবং ওর ফলমূল সম্পূর্ণরূপে তাদের আয়ত্তাধীন করা হবে। (দাহরঃ ১৪)

জান্নাতে আছে খেজুর, বেদানা ও আরো অজানা কত রকমের ফল।

মহান আল্লাহ বলেন,

فِيهِمَا فَاكِهَةٌ وَنَخْلٌ وَرُمَّانٌ

অর্থাৎ, সেখানে রয়েছে ফলমূল খেজুর ও ডালিম। (রাহমানঃ ৬৮)

সেখানে থাকবে কুল (বরই), কাদি কাদি কলা। মহান আল্লাহ বলেন,

وَأَصْحَابُ الْيَمِينِ مَا أَصْحَابُ الْيَمِينِ (27) فِي سِدْرٍ مَّخْضُودٍ (28) وَطَلْحٍ مَّنضُودٍ (29)

অর্থাৎ, আর ডান হাত-ওয়ালারা, কত ভাগ্যবান ডান হাত-ওয়ালারা! (যাদেরকে ডান হাতে আমলনামা দেওয়া হবে। তারা থাকবে এক বাগানে) সেখানে আছে কাটাহীন কুলগাছ। কাঁদি ভরা কলাগাছ। (ওয়াক্আিহঃ ২৭-২৯)

জান্নাতীরা থাকবে বাঞ্ছিত ফলমূলের প্রাচুর্যের মধ্যে। (আল্লাহ বলবেন,) ‘তোমরা তোমাদের কর্মের পুরস্কার স্বরূপ তৃপ্তির সাথে পানাহার কর। এভাবে আমি সৎকর্মপরায়ণদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি।’ (মুরসালাতঃ ৪২-৪৪)

জান্নাতীদের পানীয়

জান্নাতে আছে পানির সমুদ্র ও নদী, শারাবের সমুদ্র ও নদী, মধুর সমুদ্র ও নদী, দুধের সমুদ্র ও নদী। তাছাড়া ঝরনাও রয়েছে সেখানে। সেখান হতে জান্নাতীরা ইচ্ছামত পান করতে পারবে। খাদেমদের মাধ্যমেও পান করানো হবে। এক ঝরনা থেকে কপূর-মিশ্রিত পানি পান করবে। (দাহরঃ ৫-৬) সালসাবীল ঝরনা থেকে আদা-মিশ্রিত পানি পান করবে। (ঐঃ ১৭-১৮) তাসনীম ঝরনা থেকেও পান করবে বেহেশ্তী পানি। (মুত্বাফফিফীন ২৭-২৮)

জান্নাতীরা জান্নাতে পবিত্র শারাব পান করবে। মহান আল্লাহ বলেন,

عَالِيَهُمْ ثِيَابُ سُندُسٍ خُضْرٌ وَإِسْتَبْرَقٌ ۖ وَحُلُّوا أَسَاوِرَ مِن فِضَّةٍ وَسَقَاهُمْ رَبُّهُمْ شَرَابًا طَهُورًا

অর্থাৎ, তাদের দেহে হবে মিহি সবুজ এবং মোটা রেশমী কাপড়, তারা অলঙ্কৃত হবে রৌপ্য-নির্মিত কঙ্কনে, আর তাদের প্রতিপালক তাদেরকে পান করাবেন বিশুদ্ধ পানীয়। (দাহরঃ ২১)

বেহেশতের সে শারাব কিন্তু কোনভাবেই দুনিয়ার মদের মত নয়। দুনিয়ার মদে নেশা হয়, মাথা ঘোড়ে, পেটে ব্যথা হয়, বমি হয়, রোগ সৃষ্টি হয়। তাতে মানুষ জ্ঞানশূন্য হয়, ভুল বকে, মাতলামি করে। কিন্তু জান্নাতের শারাব এ সবকিছু থেকে পবিত্র।

মহান আল্লাহ বলেন,

يُطَافُ عَلَيْهِم بِكَأْسٍ مِّن مَّعِينٍ (45) بَيْضَاءَ لَذَّةٍ لِّلشَّارِبِينَ (46) لَا فِيهَا غَوْلٌ وَلَا هُمْ عَنْهَا يُنزَفُونَ (47)

তাদেরকে ঘুরে ঘুরে পরিবেশন করা হবে প্রবাহিত শারাবের পানপাত্র, যা হবে শুভ্র উজ্জ্বল, পানকারীদের জন্য সুস্বাদু। ওতে ক্ষতিকর কিছুই থাকবে না এবং এতে তারা নেশাগ্রস্তও হবে না। (স্বা-ফফাতঃ ৪৫-৪৭)

সুতরাং জান্নাতের শারাব হবে সাদা, সুস্বাদু। যা পান করে মন আমেজের সাথে পরিতৃপ্ত হবে। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছে,

وَأَنْهَارٌ مِّنْ خَمْرٍ لَّذَّةٍ لِّلشَّارِبِينَ

অর্থাৎ, পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নদীমালা আছে। (মুহাম্মাদঃ ১৫

সবচেয়ে বড় পার্থক্য হল, তাতে নেশা হবে না, মাথা-ব্যথাও হবে না। মহান আল্লাহ বলেন,

يَطُوفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَانٌ مُّخَلَّدُونَ (17) بِأَكْوَابٍ وَأَبَارِيقَ وَكَأْسٍ مِّن مَّعِينٍ (18) لَّا يُصَدَّعُونَ عَنْهَا وَلَا يُنزِفُونَ (19)

অর্থাৎ, তাদের সেবায় ঘোরাফেরা করবে চির কিশোররা—পানপাত্র, কুঁজা ও প্রস্রবণ নিঃসৃত সুরাপূর্ণ পেয়ালা নিয়ে। সেই সুরা পানে তাদের মাথাব্যথা হবে না, তারা জ্ঞান-হারাও হবে না। (ওয়াক্বিআহঃ ১৭-১৯)।

তা পান করে কেউ আবোল-তাবোল বকবে না, কোন অস্বাভাবিক আচরণও করবে না। মহান আল্লাহ বলেন,

يَتَنَازَعُونَ فِيهَا كَأْسًا لَّا لَغْوٌ فِيهَا وَلَا تَأْثِيمٌ

অর্থাৎ, সেখানে তারা একে অপরের নিকট হতে গ্রহণ করবে (মদ ভরা) পান-পাত্র, যা হতে পান করলে কেউ অসার কথা বলবে না এবং পাপ কর্মে লিপ্ত হবে না। (তুরঃ ২৩)

সে এক অন্য শ্রেণীর বিশুদ্ধ মদিরা। যাতে থাকবে কস্তুরীর মিশ্রণ। যা থাকবে সীল করা, মোহর আঁটা। মহান আল্লাহ বলেন,

يُسْقَوْنَ مِن رَّحِيقٍ مَّخْتُومٍ (25) خِتَامُهُ مِسْكٌ ۚ وَفِي ذَٰلِكَ فَلْيَتَنَافَسِ الْمُتَنَافِسُونَ (26)

অর্থাৎ, তাদেরকে মোহর আঁটা বিশুদ্ধ মদিরা হতে পান করানো হবে। এর মোহর হচ্ছে কস্তুরীর। আর তা লাভের জন্যই প্রতিযোগীরা প্রতিযোগিতা করুক। (মুত্বাফফিফীনঃ ২৫-২৬)।

জান্নাতীরা ইচ্ছামত খাবে ও পান করবে; কিন্তু মলমূত্র হবে না। সব কিছু হজমে গন্ধহীন হাওয়া হয়ে ঢেকুরের সাথে অথবা কস্তুরীর মত সুগন্ধময় ঘাম হয়ে নির্গত হয়ে যাবে। (মুসলিম ২৮৩৫নং)

প্রশ্ন হতে পারে, জান্নাতীরা যদি চিরসুখী, চিরবিলাসী, জান্নাতে যদি ক্ষুধা নেই, পিপাসা নেই, প্রস্রাব নেই, পায়খানা নেই, তাহলে জান্নাতীরা পানাহার করবে কেন? মহান আল্লাহ তো বলেছেন,

إِنَّ لَكَ أَلَّا تَجُوعَ فِيهَا وَلَا تَعْرَىٰ (118) وَأَنَّكَ لَا تَظْمَأُ فِيهَا وَلَا تَضْحَىٰ (119)

অর্থাৎ, তোমার জন্য এটাই থাকল যে, তুমি জান্নাতে ক্ষুধার্ত হবে না এবং নগ্নও হবে না। সেখানে পিপাসার্ত হবে না এবং রোদ্র-ক্লিষ্টও হবে না। (ত্বাহাঃ ১১৮-১১৯)

আসলে পানাহার ক্ষুধা অনুভব করার পর নয়, ক্ষুধা নিবারণের জন্যও নয়। বরং তা অতিরিক্ত সুখ ও তৃপ্তি দান করার জন্য

জান্নাতীদের সাজ-সজ্জা

জান্নাতে তার বাসিন্দাদেরকে স্বর্ণকঙ্কন ও মুক্তা দ্বারা অলঙ্কৃত করা হবে এবং তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ হবে রেশমের। মহান আল্লাহ বলেন,

كُلَّمَا أَرَادُوا أَن يَخْرُجُوا مِنْهَا مِنْ غَمٍّ أُعِيدُوا فِيهَا وَذُوقُوا عَذَابَ الْحَرِيقِ

অর্থাৎ, যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে, নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতে; যার নিম্নদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত, সেথায়। তাদেরকে অলংকৃত করা হবে স্বর্ণ-কঙ্কণ ও মুক্তা দ্বারা এবং সেথায় তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ হবে রেশমের। (হাজ্জঃ ২৩)

جَنَّاتُ عَدْنٍ يَدْخُلُونَهَا يُحَلَّوْنَ فِيهَا مِنْ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٍ وَلُؤْلُؤًا ۖ وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌ

অর্থাৎ, তারা প্রবেশ করবে স্থায়ী জান্নাতে, যেখানে তাদের স্বর্ণ-নির্মিত কঙ্কণ ও মুক্তা দ্বারা অলংকৃত করা হবে এবং যেখানে তাদের পোশাকপরিচ্ছদ হবে রেশমের। (ফাত্বিরঃ ৩৩)।

তাদের বসন হবে সূক্ষ্ম সবুজ রেশম ও স্থূল রেশম। তারা অলঙ্কৃত হবে। রৌপ্য নির্মিত কঙ্কনে। মহান আল্লাহ বলেন,

أُولَٰئِكَ لَهُمْ جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهِمُ الْأَنْهَارُ يُحَلَّوْنَ فِيهَا مِنْ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٍ وَيَلْبَسُونَ ثِيَابًا خُضْرًا مِّن سُندُسٍ وَإِسْتَبْرَقٍ

অর্থাৎ, তাদেরই জন্য আছে স্থায়ী জান্নাত; যার নিম্নদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত। সেথায় তাদেরকে স্বর্ণ-কঙ্কণে অলঙ্কৃত করা হবে, তারা পরিধান করবে সূক্ষ্ম ও স্থূল রেশমের সবুজ বস্ত্র। (কাহফঃ ৩১)।

عَالِيَهُمْ ثِيَابُ سُندُسٍ خُضْرٌ وَإِسْتَبْرَقٌ ۖ وَحُلُّوا أَسَاوِرَ مِن فِضَّةٍ

তাদের দেহে হবে মিহি সবুজ এবং মোটা রেশমী কাপড়, তারা অলক্ত হবে রৌপ্য-নির্মিত কনে। (দাহরঃ ২১)

জান্নাতে জান্নাতীরা রেশমের রুমাল ব্যবহার করবে। (বুখারী)

শহীদ জান্নাতীর মাথায় মুকুট শোভা পাবে। যার একটি চুনির মূল্য দুনিয়া ও তন্মধ্যস্থিত সকল বস্তু অপেক্ষা বেশি। (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)

জান্নাতে রয়েছে হেলান দিয়ে উপবেশনের জন্য রেশমের আস্তরবিশিষ্ট পুরু ফরাশ, স্বর্ণখচিত আসন। মহান আল্লাহ বলেন

مُتَّكِئِينَ عَلَىٰ فُرُشٍ بَطَائِنُهَا مِنْ إِسْتَبْرَقٍ ۚ وَجَنَى الْجَنَّتَيْنِ دَانٍ

অর্থাৎ, সেখানে তারা হেলান দিয়ে বসবে পুরু রেশমের আস্তরবিশিষ্ট বিছানায়। (রাহমানঃ ৫৪)

مُتَّكِئِينَ عَلَىٰ رَفْرَفٍ خُضْرٍ وَعَبْقَرِيٍّ حِسَانٍ

অর্থাৎ, তারা হেলান দিয়ে বসবে সবুজ বালিশে ও সুন্দর গালিচার উপরে। (রাহমানঃ ৭৬)

مُتَّكِئِينَ عَلَىٰ سُرُرٍ مَّصْفُوفَةٍ ۖ وَزَوَّجْنَاهُم بِحُورٍ عِينٍ

অর্থাৎ, তারা বসবে সারিবদ্ধভাবে সজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে। (তুরঃ ২০)।

عَلَىٰ سُرُرٍ مَّوْضُونَةٍ (15) مُّتَّكِئِينَ عَلَيْهَا مُتَقَابِلِينَ (16)

অর্থাৎ, স্বর্ণখচিত আসনে। তারা আসনে হেলান দিয়ে বসবে, পরস্পর মুখোমুখি হয়ে। (ওয়াক্বিআহঃ ১৫-১৬)

আভিজাত্যসম্পন্ন বিলাসিতার জন্য জান্নাতে উন্নত মর্যাদাসম্পন্ন শয্যা রয়েছে শয়নের জন্য এবং রয়েছে সারি সারি উপাধান, বিছানা, গালিচা। মহান আল্লাহ বলেন,

সেখানে রয়েছে সমুচ্চ বহু খাট-পালঙ্ক এবং সদা প্রস্তুত পান পাত্রসমূহ ও সারি সারি বালিশসমূহ এবং বিছানো গালিচাসমূহ। (গাশিয়াহঃ ১৩-১৬)

জান্নাতের ব্যবহার্য সকল জিনিসই সোনা অথবা রূপার। সেখানে খাদ্য ও পানীয় পরিবেশন করা হবে সোনার থালা ও পান-পাত্রে। (যুখরুফঃ ৭১)

রৌপ্য নির্মিত স্ফটিকের মত স্বচ্ছ পান-পাত্র। (দাহরঃ ১৫) তাদের চিরুনীও হবে স্বর্ণ-নির্মিত। (বুখারী-মুসলিম)

জান্নাতীদের খাদেম

জান্নাতীদের অতিরিক্ত সুখ-সুবিধায় রাখার জন্য মহান আল্লাহ তাদের খিদমত ও সেবার ব্যবস্থা রেখেছেন। তাদের জন্য চিরকিশোর গিলমান’ সৃষ্টি করে রেখেছেন জান্নাতে। তারাই ঘুরে-ফিরে তাদের প্রয়োজনীয় খিদমত করবে।

অনেকে বলেন, সেই চিরকিশোরেরা হবে মুসলিমদের শিশুরা, যারা শিশু অবস্থায় মারা গেছে। অনেকের মতে, তারা হবে কাফেরদের শিশুরা।

সেই সেবক কিশোরেরা আকারে-পোশাকে বড় সুন্দর হবে। তাদের কথা কুরআনে বলা হয়েছে,

وَيَطُوفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَانٌ مُّخَلَّدُونَ إِذَا رَأَيْتَهُمْ حَسِبْتَهُمْ لُؤْلُؤًا مَّنثُورًا

অর্থাৎ, চির কিশোরগণ (গেলমান) তাদের কাছে (সেবার জন্য) ঘুরাঘুরি করবে, তুমি তাদেরকে দেখলে তোমার মনে হবে, তারা যেন বিক্ষিপ্ত মুক্তা। (দাহরঃ ১৯)

وَيَطُوفُ عَلَيْهِمْ غِلْمَانٌ لَّهُمْ كَأَنَّهُمْ لُؤْلُؤٌ مَّكْنُونٌ

অর্থাৎ, তাদের (সেবায়) তাদের কিশোরেরা তাদের আশেপাশে ঘোরাফেরা করবে; যেন তারা সুরক্ষিত মুক্তা সদৃশ। (তুরঃ ২৪)।

কী খিদমত করবে তারা? সে কথা মহান আল্লাহ বলেন,

يَطُوفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَانٌ مُّخَلَّدُونَ (17) بِأَكْوَابٍ وَأَبَارِيقَ وَكَأْسٍ مِّن مَّعِينٍ (18)

অর্থাৎ, তাদের সেবায় ঘোরাফেরা করবে চির কিশোররা—পানপাত্র, কুঁজা ও প্রস্রবণ নিঃসৃত সুরাপূর্ণ পেয়ালা নিয়ে। (ওয়াক্বিআহঃ ১৭-১৮)

يُطَافُ عَلَيْهِم بِصِحَافٍ مِّن ذَهَبٍ وَأَكْوَابٍ ۖ وَفِيهَا مَا تَشْتَهِيهِ الْأَنفُسُ وَتَلَذُّ الْأَعْيُنُ ۖ وَأَنتُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

অর্থাৎ, স্বর্ণের থালা ও পান পাত্র নিয়ে ওদের মাঝে ফিরানো হবে, সেখানে রয়েছে এমন সমস্ত কিছু, যা মন চায় এবং যাতে নয়ন তৃপ্ত হয়। সেখানে। তোমরা চিরকাল থাকবে। (যুখরুফঃ ৭১)।

وَيُطَافُ عَلَيْهِم بِآنِيَةٍ مِّن فِضَّةٍ وَأَكْوَابٍ كَانَتْ قَوَارِيرَا

অর্থাৎ, তাদের উপর ঘুরানো করা হবে রৌপ্যপাত্র এবং স্ফটিকের মত স্বচ্ছ পান-পাত্র। (দাহরঃ ১৫)

এই কিশোররা সর্বদা কিশোরই থাকবে। তাদের মধ্যে বয়সের কোন তারতম্য দেখা দেবে না। হূরদের ন্যায় এই কিশোরগণও জান্নাতেই পয়দা হবে এবং তারা জন্নাতীদের খেদমতগার হবে। কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে, একজন জান্নাতীর কাছে হাজারো খাদেম থাকবে। [বাইহাকী আব্দুল্লাহ ইবনে আমরা থেকে] এই কিশোররা খুবই সুন্দর হবে।

আয়াতগুলোয় জান্নাতবাসীদের সেবায় লিপ্ত কিশোরদের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এ জন্য আয়াতগুলোতে দুটি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, ‘গিলমান’ ও ‘বিলদান। আরবিতে ‘গিলমান’ শব্দটি ‘গোলাম’-এর বহুবচন এবং ‘বিলদান’ শব্দটি ‘ওয়ালাদ’-এর বহুবচন, দুটির অর্থই হলো বালক।

জান্নাতের বাজার

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “জান্নাতে একটি বাজার হবে, যেখানে জান্নাতীগণ প্রত্যেক শুক্রবার আসবে। তখন উত্তর দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হবে, যা তাদের চেহারায় ও কাপড়ে সুগন্ধ ছড়িয়ে দেবে। ফলে তাদের শোভা-সৌন্দর্য আরো বেড়ে যাবে। অতঃপর তারা রূপ-সৌন্দর্যের বৃদ্ধি নিয়ে তাদের স্ত্রীগণের কাছে ফিরবে। তখন তারা তাদেরকে দেখে বলবে, ‘আল্লাহর কসম! আপনাদের রূপ-সৌন্দর্য বেড়ে গেছে!’ তারাও বলে উঠবে, আল্লাহর শপথ! আমাদের যাবার পর তোমাদেরও রূপ-সৌন্দর্য বেড়ে গেছে!” (মুসলিম)

জান্নাতে কোন দিন, সপ্তাহ, মাস বা বছর নেই। শুক্রবার অর্থাৎ, সপ্তাহকাল সময় অতিবাহিত হলে জান্নাতীরা সেই বাজারে জমায়েত হবে। বিলাসের স্বাদ পরিবর্তনের জন্য এক প্রকার হাওয়া বদলের মত ব্যবস্থা আর কি?

জান্নাতীদের পরস্পর সাক্ষাৎ

জান্নাতীরা জান্নাতে একে অপরের সাথে পরিচিত হয়ে সাক্ষাৎ করবে, মুখোমুখি বসে দুনিয়ার কথা আলোচনা করবে। জান্নাতে প্রবেশাধিকার দেওয়ার জন্য মহান আল্লাহর প্রশংসা করবে। মহান আল্লাহ বলেন,

وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِم مِّنْ غِلٍّ إِخْوَانًا عَلَىٰ سُرُرٍ مُّتَقَابِلِينَ

অর্থাৎ, আমি তাদের অন্তরে যে ঈর্ষা থাকবে তা দূর করে দিব; তারা ভ্ৰাতৃভাবে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে আসনে অবস্থান করবে। (হিজর : ৪৭)।

وَأَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ يَتَسَاءَلُونَ (25) قَالُوا إِنَّا كُنَّا قَبْلُ فِي أَهْلِنَا مُشْفِقِينَ (26) فَمَنَّ اللَّهُ عَلَيْنَا وَوَقَانَا عَذَابَ السَّمُومِ (27) إِنَّا كُنَّا مِن قَبْلُ نَدْعُوهُ ۖ إِنَّهُ هُوَ الْبَرُّ الرَّحِيمُ (28)

অর্থাৎ, তারা একে অপরের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করবে এবং বলবে, নিশ্চয় আমরা পূর্বে পরিবার-পরিজনের মধ্যে শংকিত অবস্থায় ছিলাম। অতঃপর আমাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন এবং আমাদেরকে উত্তপ্ত ঝড়ো হাওয়ার শাস্তি হতে রক্ষা করেছেন। নিশ্চয় আমরা পূর্বেও আল্লাহকে আহবান করতাম। নিশ্চয় তিনি কৃপাময়, পরম দয়ালু।’ (তুর ও ২৫-২৮)।

তারা একে অপরের দিকে ফিরে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। তাদের কেউ বলবে, আমার এক সঙ্গী ছিল; সে বলত, “তুমি কি এতে বিশ্বাসী যে, আমাদের মৃত্যু হলে এবং আমরা মাটি ও হাড়ে পরিণত হলেও আমাদেরকে প্রতিফল দেওয়া হবে?’ (আল্লাহ) বলবেন, তোমরা কি তাকে উকি মেরে দেখতে চাও?’ অতঃপর সে উঁকি মেরে দেখবে এবং ওকে জাহান্নামের মধ্যস্থলে দেখতে পাবে; বলবে, আল্লাহর কসম! তুমি তো আমাকে প্রায় ধ্বংসই করেছিলে, আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ না থাকলে আমাকেও (তোমাদের মাঝে) উপস্থিত করা হত। (সত্যই) কি আমাদের আর মৃত্যু হবে না, প্রথম মৃত্যুর পর এবং আমাদেরকে শাস্তিও দেওয়া হবে না? নিশ্চয়ই এ মহাসাফল্য। এরূপ সাফল্যের জন্য সাধকদের সাধনা করা উচিত। (স্বা-ফুফাতঃ ৫০-৬১)

জান্নাতীরা চুনির দু’টি ডানাবিশিষ্ট ঘোড়ায় চড়ে যেথা খুশী উড়ে বেড়াতে পারবে। (ত্বাবারানী, সিঃ সহীহাহ ৩০০১নং)

জান্নাত যার যার ইচ্ছা মতই এক রাজ্যঃ

يُطَافُ عَلَيْهِم بِصِحَافٍ مِّن ذَهَبٍ وَأَكْوَابٍ ۖ وَفِيهَا مَا تَشْتَهِيهِ الْأَنفُسُ وَتَلَذُّ الْأَعْيُنُ ۖ وَأَنتُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

অর্থাৎ, স্বর্ণের থালা ও পান পাত্র নিয়ে ওদের মাঝে ফিরানো হবে, সেখানে রয়েছে এমন সমস্ত কিছু, যা মন চায় এবং যাতে নয়ন তৃপ্ত হয়। সেখানে তোমরা চিরকাল থাকবে। (যুখরুফঃ ৭১)।

وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَشْتَهِي أَنفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَدَّعُونَ

অর্থাৎ, সেখানে তোমাদের জন্য সমস্ত কিছু রয়েছে যা তোমাদের মন চায়, যা তোমরা আকাঙ্ক্ষা কর। (হা-মীম সাজদাহঃ ৩১)

জান্নাতে সকল ইচ্ছা পূরণ হবে বলেই এক এক জান্নাতী এক এক আজব ইচ্ছাও প্রকাশ করবে। তার কতিপয় নমুনা নিম্নরূপঃ

একদা নবী (ﷺ) কথা বলছিলেন। তাঁর কাছে এক বেদুঈনও ছিল। তিনি বলতে লাগলেন, “জান্নাতে এক ব্যক্তি নিজ প্রতিপালকের নিকট চাষ করার অনুমতি চাইবে। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি ইচ্ছাসুখে বাস করছ না? (ইচ্ছামত পানাহার করছ না?)’ সে বলবে, ‘অবশ্যই। তবে আমি চাষ করতে ভালবাসি। সুতরাং সে বীজ বপন করবে। আর নিমেষের মধ্যে চারা অঙ্কুরিত হবে, ফসল পেকে যাবে এবং পাহাড়ের মত জমাও হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলবেন, নাও হে আদম সন্তান! তুমি কিছুতেই পরিতৃপ্ত হবে না।”

এ হাদীস শুনে বেদুঈন বলে উঠল, ‘আল্লাহর কসম! ঐ লোক কুরাশী হবে, নচেৎ আনসারী। কারণ চাষী ওরাই। আমরা চাষী নই। এ কথা শুনে আল্লাহর রসূল (ﷺ) হেসে ফেললেন। (বুখারী)

মহানবী (ﷺ) বলেন, “জান্নাতে মু’মিন সন্তান কামনা করলে, কিছু সময়ের মধ্যে গর্ভধারণ, জন্মদান ও বয়ঃপ্রাপ্তি হবে—যেমন তার কামনা হবে।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)

এক ব্যক্তি নবী (ﷺ)-কে জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রসূল! জান্নাতে কি উট আছে? উত্তরে তিনি বললেন, “আল্লাহ যদি তোমাকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করেন, তাহলে সেখানে তোমার মন যা চাইবে এবং তোমার চোখ যাতে তৃপ্ত হবে, তোমার জন্য তাই হবে।” (তিরমিযী, সিঃ সহীহাহ ৩০০১নং)

জান্নাতীদের দাম্পত্য

দুনিয়ার স্ত্রী বেহেশতে গেলে, সেও স্বামীর সাথে বাস করবে। মহান আল্লাহ বলেন,

رَبَّنَا وَأَدْخِلْهُمْ جَنَّاتِ عَدْنٍ الَّتِي وَعَدتَّهُمْ وَمَن صَلَحَ مِنْ آبَائِهِمْ وَأَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْ ۚ إِنَّكَ أَنتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

অর্থাৎ, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তাদেরকে স্থায়ী জান্নাতে প্রবেশ দান কর; যার প্রতিশ্রুতি তুমি তাদের দিয়েছ (এবং তাদের) পিতা-মাতা, পতি-পত্নী ও সন্তান সন্ততিদের মধ্যে (যারা) সৎকাজ করেছে, তাদেরকেও (জান্নাত প্রবেশের অধিকার দাও)। নিশ্চয়ই তুমি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (মু’মিনঃ ৮)।

অর্থাৎ, স্থায়ী জান্নাত, তাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতা-মাতা, পতিপত্নী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তারাও। আর ফিরিশ্তাগণ তাদের কাছে প্রবেশ করবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে। (রা’দঃ ২৩)

ادْخُلُوا الْجَنَّةَ أَنتُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ تُحْبَرُونَ

অর্থাৎ, তোমরা এবং তোমাদের সহধর্মিণীগণ সানন্দে জান্নাতে প্রবেশ কর। (যুখরুফঃ ৭০)

هُمْ وَأَزْوَاجُهُمْ فِي ظِلَالٍ عَلَى الْأَرَائِكِ مُتَّكِئُونَ

, তারা এবং তাদের স্ত্রীগণ সুশীতল ছায়ায় থাকবে এবং হেলান দিয়ে বসবে সুসজ্জিত আসনে। (ইয়াসীনঃ ৫৬

পার্থিব স্ত্রীর রূপ-গুণ বেহেশ্তী স্ত্রীদের তুলনায় অধিক হবে। বেহেশতী হুরগণ তাদের পার্থিব সপত্নীর খিদমত করবে।

উম্মে সালামা কর্তৃক বর্ণিত হাদীস থেকে এ ধারণা আরো দৃঢ় ভিত্তি লাভ করে৷ তিনি বলেছেন “আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রসূল পৃথিবীর নারীরাই উত্তম না হুরেরা?রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাব দিলেনঃ হুরদের তুলনায় পৃথিবীর নারীদের মর্যাদা ঠিক ততটা বেশী যতটা বেশী মর্যাদা আবরণের চেয়ে তার ভিতরের বস্তুর৷ আমি জিজ্ঞেস করলাম এর কারণ কি? তিনি বললেনঃ কারণ, পৃথিবীর নারী নামায পড়েছে, রোযা রেখেছে এবং ইবাদত -বন্দেগী করেছে৷ ” ( তাবারানী)

অবিবাহিত নারী এবং যার স্বামী দোযখবাসী হবে, তাদের ইচ্ছামত জান্নাতী কোন পুরুষের সাথে বিবাহ দেওয়া হবে।

পৃথিবীতে যে নারীর একাধিক বার একাধিক পুরুষের সাথে বিবাহ হয়েছিল তারা সকলেই জান্নাতে গেলে তার পছন্দমত একজন স্বামীর সাথে বাস করবে। যেহেতু সেখানে মনমতো সবকিছু পাওয়া যাবে। নচেৎ শেষ স্বামীর স্ত্রী হয়ে থাকবে। (সঃ জামে’ ৬৬৯ ১নং)

একদা হুযাইফা (রাঃ) তার স্ত্রীকে বললেন, তুমি যদি জান্নাতে আমার স্ত্রী থাকতে চাও, তাহলে আমার পরে আর কাউকে বিয়ে করো না। কারণ, মহিলা তার পার্থিব শেষ স্বামীর অধিকারে থাকবে। (বাইহাকী, সিঃ সহীহাহ ১২৮১নং)

আর সম্ভবতঃ এই জন্যই মহানবী (ﷺ) এর ইন্তিকালের পর তার স্ত্রীদের বিবাহ হারাম ছিল। কারণ, তারা জান্নাতেও তার বেহেশতী পত্নী।

সকল স্ত্রীগণই সদা পবিত্রা থাকবে। সেখানে তাদের কোন প্রকারের স্রাব, মল, কফ, থুথু, ঋতু ইত্যাদি কিছুই থাকবে না। (বুখারী ৩৩২৭, মসলিম ২৮৩৫নং) স্বামী সহবাসেও চিরকুমারী এবং অনন্ত যৌবনা থাকবে। বীর্যপাত বা কোন অপবিত্রতাও থাকবে না। কেউ কোনদিন গর্ভবতীও হবে না। অবশ্য কোন জান্নাতীর শখ হলে তার ইচ্ছামত ক্ষণেকে তার স্ত্রী গর্ভবতী হবে এবং সন্তান প্রসব করবে ও বয়ঃপ্রাপ্ত হবে। (তিরমিযী ২৫৬৩, আহমাদ ৩/৮০ দারেমী)।

হুরঃ

সেখানে জান্নাতীদের জন্য রয়েছে পবিত্র সঙ্গিনী। মহান আল্লাহ বলেন,

وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَنُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ۖ لَّهُمْ فِيهَا أَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ ۖ وَنُدْخِلُهُمْ ظِلًّا ظَلِيلًا

অর্থাৎ, আর যারা বিশ্বাস করে ও ভাল কাজ করে, তাদেরকে বেহেস্তে প্রবেশ করাব; যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, সেখানে তাদের জন্য পবিত্র সঙ্গিনী আছে এবং তাদেরকে চিরস্নিগ্ধ ঘন ছায়ায় স্থান দান করব। (নিসাঃ ৫৭, আরো দ্রঃ বাকারাহঃ ২৫, আলে ইমরানঃ ১৫)

বেহেশ্তী পত্নী, হুর বা অপসরা। তাঁদের সাথে জান্নাতীদের বিবাহ হবে। মহান আল্লাহ বলেন,

كَذَٰلِكَ وَزَوَّجْنَاهُم بِحُورٍ عِينٍ

এরূপই ঘটবে ওদের; আর আয়তলোচনা হুরদের সাথে তাদের বিবাহ দেব। (দুখানঃ ৫৪)।

আল্লাহভীরুদের সাথে অবশ্যই এই ধরনের আচরণ করা হবে।

حُوْرٌ(হুরুন) হল حَوْرَآءُ (হাউরাও) এর বহুবচন। এর উৎপত্তি حَوَرٌ(হাউয়ারুন) থেকে। যার অর্থ, চোখের সাদা অংশের অত্যধিক সাদা এবং কালো অংশের অত্যধিক কালো হওয়া।

حَوْرَآءُ (হুর) এই জন্য বলা হয় যে, দৃষ্টি তাদের রূপ ও সৌন্দর্যকে দেখে হয়রান (মুগ্ধ) হয়ে যাবে। عَيْنٌ হল, عَيْنَآءُ এর বহুবচন। আয়তলোচনঃ প্রশস্ত বা ডাগর চোখ; যেমন হয় হরিণের চোখ। পূর্বেই আলোচনা হয়েছে যে, প্রত্যেক জান্নাতী কমসে কম দু’টি হুর অবশ্যই পাবে। যারা রূপ ও সৌন্দর্যের দিক দিয়ে যেন চাঁদ ও সূর্যের মত উজ্জ্বল হবে। অবশ্য তিরমিযীর একটি সহীহ বর্ণনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, প্রত্যেক শহীদ বিশেষ করে ৭২টি করে হুর পাবেন। (জিহাদের ফযীলতের পরিচ্ছেদসমূহ)

مُتَّكِئِينَ عَلَىٰ سُرُرٍ مَّصْفُوفَةٍ ۖ وَزَوَّجْنَاهُم بِحُورٍ عِينٍ

অর্থাৎ, তারা বসবে সারিবদ্ধভাবে সজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে; আমি তাদের বিবাহ দেব আয়তলোচনা হুরদের সঙ্গে। (তুরঃ ২০)।

প্রতি জান্নাতী স্বীয় আমল অনুযায়ী দুই বা ততোধিক বেহেস্তী স্ত্রী পাবে। শহীদের হবে বাহাত্তরটি স্ত্রী।

হুর সেই মহিলাদেরকে বলা হয়, যাদের চোখের তারা খুব কালো এবং বাকী অংশ খুব সাদা। এদের চোখের অন্য এক সৌন্দর্য বর্ণনায় বলা হয়, ঈন। তার মানে ডাগর ডাগর চোখবিশিষ্ট মহিলা।

তারা লজ্জা-নম্র, আয়তলোচনা তন্বী—সুরক্ষিত ডিম্বের মত উজ্জ্বল গৌরবর্ণ। মহান আল্লাহ বলেন,

كَأَنَّهُنَّ بَيْضٌ مَّكْنُونٌ

অর্থাৎ, যেন তারা গৌরবর্ণ সুরক্ষিত ডিম। (স্বা-ফফাতঃ ৪৯)

وَحُورٌ عِينٌ (22) كَأَمْثَالِ اللُّؤْلُؤِ الْمَكْنُونِ (23)

অর্থাৎ, আর (তাদের জন্য থাকবে) আয়তলোচনা হুর; সুরক্ষিত মুক্তা সদৃশ। (ওয়াক্বিআহঃ ২২-২৩)

নবী (ﷺ) বলেন, “আল্লাহর নিকট শহীদের জন্য রয়েছে সাতটি মর্যাদা; রক্তক্ষরণের শুরুতেই তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়, বেহেশ্তে সে তার নিজ স্থান দেখতে পায়, তাকে ঈমানের জুব্বা পরিধান করানো হয়, (বেহেশ্তে) ৭২টি সুনয়না হুরীর সাথে তার বিবাহ হবে, কবরের আযাব থেকে নিরাপত্তা লাভ করবে, (কিয়ামতে দিন) মহাত্রাস থেকে নিরাপদে থাকবে, তার মস্তকে গৌরবের মুকুট পরানো হবে, যার একটি মাত্র মণি (চুনি) পৃথিবী ও তন্মধ্যস্থিত সকল বস্তু অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ, আর নিজ পরিবারের ৭০ জন লোকের জন্য (আল্লাহর দরবারে) তার সুপারিশ মঞ্জুর করা হবে।” (আহমাদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, বাইহাকী, সহীহুল জামে’ ৫ ১৮২ নং

সে সুনয়না তরুণীগণ—যাদেরকে পূর্বে কোন মানুষ অথবা জিন স্পর্শ করেনি। তারা তাদের স্বামী ছাড়া অন্য পুরুষকে তাকিয়েও দেখবে না। প্রবাল ও পদ্মরাগ-সদৃশ এ সকল তরুণীদের স্বচ্ছ কাচ সদৃশ দেহকান্তি হবে। মহান আল্লাহ বলেন,

فِيهِنَّ قَاصِرَاتُ الطَّرْفِ لَمْ يَطْمِثْهُنَّ إِنسٌ قَبْلَهُمْ وَلَا جَانٌّ (56) فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (57) كَأَنَّهُنَّ الْيَاقُوتُ وَالْمَرْجَانُ (58

অর্থাৎ, সে সবের মাঝে রয়েছে বহু আনত নয়না; যাদেরকে তাদের পূর্বে কোন মানুষ অথবা জ্বিন স্পর্শ করেনি। অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে? তারা (সৌন্দর্যে) যেন পদ্মরাগ ও প্রবালসদৃশ। (রাহমানঃ ৫৬-৫৮)।

বাহির হতে তাদের অস্থি-মধ্যস্থিত মজ্জা পরিদৃষ্ট হবে। (মুসলিম ২৮৩৪)

তারা হবে শতরূপে অপরূপা সুন্দরী বধূ। মহান আল্লাহ বলেন,

فِيهِنَّ خَيْرَاتٌ حِسَانٌ (70) فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (71) حُورٌ مَّقْصُورَاتٌ فِي الْخِيَامِ (72) فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (73) لَمْ يَطْمِثْهُنَّ إِنسٌ قَبْلَهُمْ وَلَا جَانٌّ (74)

অর্থাৎ, সে সকলের মাঝে রয়েছে উত্তম চরিত্রের সুন্দরীগণ। অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে? তারা তাঁবুতে সুরক্ষিত হুর। অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে? তাদেরকে তাদের পূর্বে কোন মানুষ অথবা জ্বিন স্পর্শ করেনি। (রাহমানঃ ৭০-৭৪)

সম্ভ্রান্ত শয্যাসঙ্গিনী, যাদেরকে আল্লাহপাক জান্নাতীদিগের জন্য বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছেন। তারা চিরকুমারী, সোহাগিনী ও সমবয়স্কা এবং উদ্ভিন্ন-যৌবনা তরুণী। মহান আল্লাহ বলেন,

অর্থাৎ, তাদেরকে (হুরীগণকে) আমি সৃষ্টি করেছি বিশেষরূপে। তাদেরকে করেছি কুমারী। প্রেমময়ী ও সমবয়স্কা। ডান হাত-ওয়ালাদের জন্য। (যাদেরকে ডান হাতে আমলনামা দেওয়া হবে। সেখানে আছে কঁাটাহীন। কুলগাছ। কাঁদি ভরা কলাগাছ। (ওয়াক্বিআহঃ ৩৫-৩৭)।

إِنَّ لِلْمُتَّقِينَ مَفَازًا (31) حَدَائِقَ وَأَعْنَابًا (32) وَكَوَاعِبَ أَتْرَابًا (33)

অর্থাৎ, নিশ্চয়ই আল্লাহভীরুদের জন্যই রয়েছে সফলতা; উদ্যানসমূহ ও নানাবিধ আঙ্গুর এবং উদ্ভিন্ন-যৌবনা সমবয়স্কা তরুণীগণ। (নাবাঃ ৩১-৩৩)

দুনিয়ার বৃদ্ধাগণও সেদিন যুবতীতে পরিণত হবে।

একদা এক বৃদ্ধা এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি দুআ করে দিন, যাতে আল্লাহ আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। তিনি মস্করা করে বললেন, ‘বৃদ্ধারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” তা শুনে বৃদ্ধা কঁদতে কাঁদতে প্রস্থান করল। তিনি সাহাবাদেরকে বললেন, “ওকে বলে দাও যে, বৃদ্ধাবস্থায় ও জান্নাতে যাবে না।” (বরং সে যুবতী হয়ে যাবে।) (শামায়েলুত তিরমিযী, রাযীন, গায়াতুল মারাম, মিশকাত ৪৮৮৮নং)

যৌবন-পরিপক্বতায় সকল স্ত্রীর বয়স হবে তেত্রিশ বছর। সকলের দেহ হবে ষােড়শীর মত, যাদের বুকের উঁচু উঁচু সুডৌল স্তনযুগল নতমুখী হয়ে ঢলে যাবে না।

সেই বেহেশ্তবাসিনী, রূপের ডালি, ঝলমলে লাবণ্যময়ী, সুবাসিনী কোন যুবতী যদি পৃথিবীর তমসাচ্ছন্ন আকাশে উকি মারে, তাহলে তার রূপালোকে ও সৌরভে সারা জগৎ আলোকিত ও সুরভিত হয়ে উঠবে। অনন্ত যৌবনা—এমন সুরমার কেবলমাত্র শীর্ষস্থিত উত্তরীয় খানি পৃথিবী ও তন্মধ্যস্থিত সব কিছু হতে উত্তম ও মূল্যবান। (বুখারী ৬৫৬৮নং)

হুরীদের গান

বেহেশ্তে সীমাহীন আনন্দময় স্থান। মনের আনন্দে গান বের হয়। গান শুনতে ভাল লাগে। স্বামীর মনে আনন্দ পরিপূর্ণ করার জন্য মধুর কণ্ঠে তারা গান করবে জান্নাতে। সেই গানের নমুনা নিম্নরূপঃ

نحن الخيرات الحسان

أزواج قوم کرام

ينظرن بقرة أعيان

অর্থাৎ, আমরা সচ্চরিত্র সুন্দরী দল, সম্মানিত সম্প্রদায়ের স্ত্রী। যে স্ত্রীরা শীতল নজরে দৃষ্টিপাত করবে। অন্য শব্দে –

نحن الحور الحسان

خبئنا لأزواج کرام

نحن الحور الحسان

هدينا لأزواج کرام

অর্থাৎ, আমরা হুরী সুন্দরী, সম্মানিত স্বামীদের জন্য গুপ্ত আছি। আমরা হুরী (সুনয়না) সুন্দরী, সম্মানিত স্বামীদের জন্য উপহার।

نحن الخالدات فلا يمتنه

نحن الآمنات فلا يخفنه

نحن المقيمات فلا يظعته

অর্থাৎ, আমরা সেই চিরস্থায়ী রমণী, যারা কখনই মারা যাবে না, আমরা সেই নিরাপদ রমণী, যারা কখনই ভয় পাবে না, আমরা সেই স্থায়ী বসবাসকারিণী, যারা কখনই চলে যাবে না। (সঃ জামে ১৫৫৭, ১৫৯৮নং)

জান্নাতের এই হুরীরা বড় প্রেমময়ী, পৃথিবীতে স্বামীর কষ্ট দেখে কষ্ট পায়। নবী (ﷺ) বলেন, যখনই কোন মহিলা দুনিয়াতে নিজ স্বামীকে কষ্ট দেয়, তখনই তার সুনয়না হুর (বেহেশ্তী) স্ত্রী (অদৃশ্যভাবে) ঐ মহিলার উদ্দেশ্যে বলে, আল্লাহ তোকে ধ্বংস করুন। ওকে কষ্ট দিস না। ও তো তোর নিকট সাময়িক মেহমান মাত্র। অচিরেই সে তোকে ছেড়ে আমাদের কাছে। এসে যাবে। (তিরমিযী)

অনন্তকাল ধরে তারা এই বয়স নিয়েই চিরসুন্দর যুবক-যুবতী হয়ে থাকবে। (মুসলিম ২৮৩৬) সেখানে যৌন-মিলনে অধিক তৃপ্তিলাভ করবে। প্রত্যেক জান্নাতীকে একশ জন পুরুষের সমান যৌনশক্তি ও সঙ্গম ক্ষমতা প্রদান করা হবে। (তিরমিযী ২৫৩৬)।

যেহেতু পান-ভোজন, বসনভূষণ, বাসভবন এবং নারী-সংসর্গ ও যৌনসম্ভােগ ইত্যাদিতেই মানুষের প্রকৃতিগত সুখ ও পরম আনন্দ, তাই তাদেরকে তাদের প্রকৃতির উপযোগী অভীষ্ট প্রতিদান দেওয়া হবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, জান্নাতীরা যখন জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে, তখন একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করবে যে, তোমাদের জন্য এখন অনন্ত জীবন; তোমরা আর কখনো মরবে না। তোমাদের জন্য এখন চির সুস্বাস্থ্য; তোমরা আর কখনো অসুস্থ হবে না। তোমাদের জন্য এখন চির যৌবন; তোমরা আর কখনো বৃদ্ধ হবে না। তোমাদের জন্য এখন চির সুখ ও পরমানন্দ; তোমরা আর কখনো দুঃখ-কষ্ট পাবে না। (মুসলিম)

وَقَالُوا الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَذْهَبَ عَنَّا الْحَزَنَ ۖ إِنَّ رَبَّنَا لَغَفُورٌ شَكُورٌ (34) الَّذِي أَحَلَّنَا دَارَ الْمُقَامَةِ مِن فَضْلِهِ لَا يَمَسُّنَا فِيهَا نَصَبٌ وَلَا يَمَسُّنَا فِيهَا لُغُوبٌ (35)

অর্থাৎ, তারা বলবে, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর; যিনি আমাদের দুঃখ-দুর্দশা দুরীভূত করেছেন; নিশ্চয়ই আমাদের প্রতিপালক বড় ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী, যিনি নিজ অনুগ্রহে, আমাদেরকে স্থায়ী আবাস দান করেছেন; যেখানে আমাদেরকে কোন প্রকার ক্লেশ স্পর্শ করে না এবং স্পর্শ করে না কোন প্রকার ক্লান্তি। (ফাত্বিরঃ ৩৪-৩৫)

دَعْوَاهُمْ فِيهَا سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَتَحِيَّتُهُمْ فِيهَا سَلَامٌ ۚ وَآخِرُ دَعْوَاهُمْ أَنِ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ

অর্থাৎ, সেখানে তাদের বাক্য হবে, সুবহানাকাল্লাহুম্মা’ (হে আল্লাহ! তুমি মহান পবিত্র)! এবং পরস্পরের অভিবাদন হবে সালাম। আর তাদের শেষ বাক্য হবে, আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ (সমস্ত প্রশংসা সারা জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য)। (ইউনুসঃ ১০)

জান্নাতীদের আমল বা কর্ম

জান্নাত আমলের জায়গা নয়, জান্নাত হল আমলের বিনিময় পাওয়ার জায়গা। তাই সেখানে কোন কর্মব্যস্ততা কিংবা কোন পালনীয় ইবাদতবন্দেগী থাকবে না। শ্বাসক্রিয়ার ন্যায় সদা তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) ও তাহমীদ (আলহামদুলিল্লাহ) তাদের মুখ থেকে স্বতঃস্ফূর্ত হবে। এতে তাদের কোন অসুবিধা হবে না। (বুখারী)।

জান্নাতীদের একটি ব্যস্ততার কথা মহান আল্লাহ বলেছেন

إِنَّ أَصْحَابَ الْجَنَّةِ الْيَوْمَ فِي شُغُلٍ فَاكِهُونَ

অর্থাৎ, এ দিন বেহেশতিগণ আনন্দে মগ্ন থাকবে। (ইয়াসীনঃ ৫৫)

সুতরাং সে মত্ততা, ব্যস্ততা ও মগ্নতা হল স্ত্রী নিয়ে আনন্দ করাতে।

শতরূপা চিরকুমারী স্ত্রীদের সাথে মিলনের আনন্দে মগ্ন থাকবে চিরকাল। এটাকে যদি কর্ম’ বলা যায়, তাহলে বেহেশতে সেটাই তাদের কর্ম।

জান্নাত ও জাহান্নামীদের মাঝে কথোপকথন

বেহেশ্তীগণ দোযখীদেরকে সম্বােধন করে বলবে,

قَدْ وَجَدْنَا مَا وَعَدَنَا رَبُّنَا حَقًّا فَهَلْ وَجَدتُّم مَّا وَعَدَ رَبُّكُمْ حَقًّا

‘আমাদের প্রতিপালক আমাদের ঈমান ও সৎকার্যের উপর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আমরা তা সত্য পেয়েছি (জান্নাত পেয়েছি) তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের (কুফরী ও অধর্মের উপর) যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা সত্য পেয়েছ কি? ওরা বলবে, হ্যাঁ।

অতঃপর জনৈক ঘোষণাকারী তাদের নিকট ঘোষণা করবে, পাপিষ্ঠদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত। যারা আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করেছিল এবং তাতে বক্রতা (ও দোষ-ত্রুটি) অন্বেষণ করেছিল এবং তারাই ছিল পরকালে অবিশ্বাসী। (আল-কুরআন ৭/৪৪-৪৫)

কতুক জান্নাতবাসী কতক জাহান্নাম (সাক্বার)বাসীকে জিজ্ঞাসা করবে,

مَا سَلَكَكُمْ فِي سَقَرَ (42) قَالُوا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّينَ (43) وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِينَ (44) وَكُنَّا نَخُوضُ مَعَ الْخَائِضِينَ (45) وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوْمِ الدِّينِ (46) حَتَّىٰ أَتَانَا الْيَقِينُ (47)

‘তোমাদেরকে কিসে সাক্বারে নিক্ষেপ করেছে? ওরা উত্তরে বলবে, ‘আমরা নামায পড়তাম না, অভাবগ্রস্তকে আহার্য দান করতাম না, যারা অন্যায় আলোচনা করত আমরা তাদের আলোচনায় যোগ দিতাম এবং আমরা (এই) কর্মফল দিবসকে অস্বীকার করেছি। (আল-কুরআন ৭৪/ ৪২-৪৭)

জাহান্নামবাসীরা জান্নাতবাসীদেরকে সম্বােধন করে বলবে, আমাদের উপর কিছু পানি ঢেলে দাও, অথবা আল্লাহ জীবিকারূপে তোমাদেরকে যা দান করেছেন, তা হতে আমাদেরকে কিছু দাও। জান্নাতীরা উত্তরে বলবে,

إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَهُمَا عَلَى الْكَافِرِينَ

‘আল্লাহ এ দু’টিকে অবিশ্বাসীদের (কাফেরদের) জন্য হারাম (নিষিদ্ধ) করেছেন। যারা তাদের ধর্মকে ক্রীড়া-কৌতুকরূপে গ্রহণ করেছিল এবং পার্থিব জীবন যাদেরকে প্রতারিত করেছিল। (আল-কুরআন ৭/৫০-৫১)

জাহান্নামীদেরকে নিয়ে জান্নাতীদের হাসি

পৃথিবীতে কত অসৎ মানুষ সৎ মানুষদেরকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে, তাদেরকে বেওকুফ ভাবে, তাদেরকে নিয়ে হাসাহাসি করে, কত টিস্ মারে, কত কুমন্তব্য করে। কিন্তু পরকালে তারাই হবে হাসির পাত্র। আজ যাদেরকে পাগল ভাবা হয়, কাল তারাই হবে রাজা।

মহান আল্লাহ বলেন, যারা অপরাধী তারা মুমিনদেরকে নিয়ে উপহাস করত এবং তারা যখন মুমিনদের নিকট দিয়ে যেত, তখন চোখ টিপে ইশারা করত এবং যখন তারা আপনজনের নিকট ফিরে আসত, তখন তারা ফিরত উৎফুল্ল হয়ে এবং যখন তাদেরকে দেখত, তখন বলত,

إِنَّ هَٰؤُلَاءِ لَضَالُّونَ

এরাই তো পথভ্রষ্ট। অথচ তাদেরকে তো এদের সংরক্ষকরূপে পাঠানো হয়নি! আজ তাই মুমিনগণ উপহাস করবে কাফেরদেরকে নিয়ে। সুসজ্জিত আসনে বসে তারা দেখতে থাকবে। কাফেররা যা করত, তার ফল তারা পেল তো? (মুত্বাফফিফীনঃ ২৯-৩৬)

জান্নাতের শ্রেষ্ঠ পাওয়া

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “মহান প্রভু জান্নাতীদেরকে সম্বােধন করে বলবেন, হে জান্নাতের অধিবাসিগণ!’ তারা উত্তরে বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা হাযির আছি, যাবতীয় সুখ ও কল্যাণ তোমার হাতে আছে। তখন আল্লাহ পাক বললেন, তোমরা কি সন্তুষ্ট হয়েছ? তারা বলবে, আমাদের কী হয়েছে যে, সন্তুষ্ট হব না? হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তো আমাদেরকে সেই জিনিস দান করেছ, যা তোমার কোন সৃষ্টিকে দান করনি। তখন তিনি বলবেন, এর চেয়েও উত্তম কিছু তোমাদেরকে দান করব না কি? তারা বলবে, এর চেয়েও উত্তম বস্তু আর কি হতে পারে?’ মহান প্রভু জবাবে বলবেন, তোমাদের উপর আমার সন্তুষ্টি অনিবার্য করব। অতঃপর আমি তোমাদের প্রতি কখনো অসন্তুষ্ট হব না।” (বুখারী-মুসলিম)

জান্নাতের সবচেয়ে বড় নেয়ামত

রাসুলল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “জান্নাতীরা যখন জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে, তখন মহান বৰ্কতময় আল্লাহ বলবেন, তোমরা কি চাও যে, আমি তোমাদের জন্য আরো কিছু বেশি দিই? তারা বলবে, ‘তুমি কি আমাদের মুখমন্ডল উজ্জ্বল করে দাওনি? আমাদেরকে তুমি জান্নাতে প্রবিষ্ট করনি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দাওনি?’ অতঃপর আল্লাহ (হঠাৎ গর্বের) পর্দা সরিয়ে দেবেন এবং তারা তার চেহারা দর্শন লাভ করবে)। সুতরাং জান্নাতের লব্ধ যাবতীয় সুখ-সামগ্রীর মধ্যে জান্নাতীদের নিকট তাদের প্রভুর দর্শন (দীদার)ই হবে সবচেয়ে বেশী প্রিয়। (মুসলিম)। মহান আল্লাহ বলেছেন,

لِّلَّذِينَ أَحْسَنُوا الْحُسْنَىٰ وَزِيَادَةٌ ۖ وَلَا يَرْهَقُ وُجُوهَهُمْ قَتَرٌ وَلَا ذِلَّةٌ ۚ أُولَٰئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

অর্থাৎ, যারা কল্যাণকর কাজ করে, তাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ (জান্নাত) এবং আরো অধিক (আল্লাহর দীদার)। তাদের মুখমন্ডলকে মলিনতা আচ্ছন্ন করবে না এবং লাঞ্ছনাও না; তারাই হচ্ছে জান্নাতের অধিবাসী, তারা ওর মধ্যে অনন্তকাল বাস করবে। (ইউনুসঃ ২৬)

وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَّاضِرَةٌ (22) إِلَىٰ رَبِّهَا نَاظِرَةٌ (23)

অর্থাৎ, সেদিন বহু মুখমন্ডল উজ্জ্বল হবে। তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে। (কিয়ামাহঃ ২২-২৩)

জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, এক রাতে আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে ছিলাম। হঠাৎ তিনি পূর্ণিমার রাতের চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “শোন! নিশ্চয় তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে তেমনি স্পষ্ট দেখতে পাবে, যেমন স্পষ্ট ঐ চাঁদকে দেখতে পাচ্ছ। তাঁকে দেখতে তোমরা কোন ভিড়ের সম্মুখীন হবে না।” (বুখারী-মুসলিম)

এ দীদার হবে জান্নাতে। জাহান্নামীরা সেই দীদার কোথায় পাবে? তারা তাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি বলেই তো তার চেহারা দর্শনেও বঞ্চিত হবে। তিনি বলেছেন,

كَلَّا إِنَّهُمْ عَن رَّبِّهِمْ يَوْمَئِذٍ لَّمَحْجُوبُونَ

অর্থাৎ, কক্ষনো না, অবশ্যই তারা সেদিন তাদের প্রতিপালক (দর্শন) থেকে পর্দাবৃত থাকবে। (মুত্বাফফিফীনঃ ১৫)