১২তম পর্ব জান্নাত-৫
Power Point Presentation
১২। মৃত ব্যক্তি ও আমরা-১২তম পর্ব জান্নাত-৫
জান্নাতের সবচেয়ে বড় নেয়ামত
রাসুলল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “জান্নাতীরা যখন জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে, তখন মহান বৰ্কতময় আল্লাহ বলবেন, তোমরা কি চাও যে, আমি তোমাদের জন্য আরো কিছু বেশি দিই? তারা বলবে, ‘তুমি কি আমাদের মুখমন্ডল উজ্জ্বল করে দাওনি? আমাদেরকে তুমি জান্নাতে প্রবিষ্ট করনি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দাওনি?’ অতঃপর আল্লাহ (হঠাৎ গর্বের) পর্দা সরিয়ে দেবেন এবং তারা তার চেহারা দর্শন লাভ করবে)। সুতরাং জান্নাতের লব্ধ যাবতীয় সুখ-সামগ্রীর মধ্যে জান্নাতীদের নিকট তাদের প্রভুর দর্শন (দীদার)ই হবে সবচেয়ে বেশী প্রিয়। (মুসলিম)। মহান আল্লাহ বলেছেন,
لِّلَّذِينَ أَحْسَنُوا الْحُسْنَىٰ وَزِيَادَةٌ ۖ وَلَا يَرْهَقُ وُجُوهَهُمْ قَتَرٌ وَلَا ذِلَّةٌ ۚ أُولَٰئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
অর্থাৎ, যারা কল্যাণকর কাজ করে, তাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ (জান্নাত) এবং আরো অধিক (আল্লাহর দীদার)। তাদের মুখমন্ডলকে মলিনতা আচ্ছন্ন করবে না এবং লাঞ্ছনাও না; তারাই হচ্ছে জান্নাতের অধিবাসী, তারা ওর মধ্যে অনন্তকাল বাস করবে। (ইউনুসঃ ২৬)
وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَّاضِرَةٌ (22) إِلَىٰ رَبِّهَا نَاظِرَةٌ (23)
অর্থাৎ, সেদিন বহু মুখমন্ডল উজ্জ্বল হবে। তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে। (কিয়ামাহঃ ২২-২৩)
জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, এক রাতে আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে ছিলাম। হঠাৎ তিনি পূর্ণিমার রাতের চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “শোন! নিশ্চয় তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে তেমনি স্পষ্ট দেখতে পাবে, যেমন স্পষ্ট ঐ চাঁদকে দেখতে পাচ্ছ। তাঁকে দেখতে তোমরা কোন ভিড়ের সম্মুখীন হবে না।” (বুখারী-মুসলিম)
এ দীদার হবে জান্নাতে। জাহান্নামীরা সেই দীদার কোথায় পাবে? তারা তাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি বলেই তো তার চেহারা দর্শনেও বঞ্চিত হবে। তিনি বলেছেন,
كَلَّا إِنَّهُمْ عَن رَّبِّهِمْ يَوْمَئِذٍ لَّمَحْجُوبُونَ
অর্থাৎ, কক্ষনো না, অবশ্যই তারা সেদিন তাদের প্রতিপালক (দর্শন) থেকে পর্দাবৃত থাকবে। (মুত্বাফফিফীনঃ ১৫)
জান্নাত ও জাহান্নামের কলহ
নবী (ﷺ) বললেন, একদা জান্নাত ও জাহান্নামের বিবাদ হল। জাহান্নাম বলল, আমার মধ্যে উদ্ধত ও অহংকারী লোকেরা থাকবে। আর জান্নাত বলল, দুর্বল ও দরিদ্র ব্যক্তিরা আমার ভিতরে বসবাস করবে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাদের মধ্যে ফায়সালা করলেন যে, তুমি জান্নাত আমার রহমত, তোমার দ্বারা আমি যার প্রতি ইচ্ছা অনুগ্রহ করব। আর তুমি জাহান্নাম আমার শাস্তি, তোমার দ্বারা আমি যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেব। আর তোমাদের উভয়কেই পরিপূর্ণ করা আমার দায়িত্ব। (মুসলিম)।
জীবিত অবস্থায় জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত হয়েছিলেন যারাঃ
সকল আম্বিয়া (আলাইহিমুস সালাম) জান্নাতী।
মহানবী (ﷺ)কর্তৃক দশজন সাহাবী একত্রে জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন। (আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী প্রমুখ)। এঁদেরকে ‘আশারায়ে মুবাশশারাহ’ বলা হয়। এঁদের মধ্যে রয়েছেন চার খলীফা।
আশারায়ে মুবাশশারা নামে যে দশজন সাহাবী প্রসিদ্ধ, কেবল তাদেরকেই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন- বিষয়টি এমন নয়; বরং এ দশজন সাহাবীকে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মজলিশে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন এবং তাঁরা প্রথম সারির সাহাবী, ফলে তাঁদের বিষয়টি খুব বেশি প্রসিদ্ধ হয়েছে;
আবু মূসা আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা তিনি নিজ বাড়িতে ওযু করে বাইরে গেলেন এবং (মনে মনে) বললেন যে, আজ আমি অবশ্যই আল্লাহর রসূল (ﷺ)-এর সাহচর্যে থাকব। সুতরাং তিনি মসজিদে গিয়ে আল্লাহর রসূল (ﷺ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। সাহাবীগণ উত্তর দিলেন যে, তিনি এই দিকে গমন করেছেন। আবু মূসা (রাঃ) বলেন, আমি তাঁর পশ্চাতে চলতে থাকলাম এবং তাঁর সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করতে থাকলাম। শেষ পর্যন্ত তিনি ‘আরীস’ কুয়ার (সন্নিকটবর্তী একটি বাগানে) প্রবেশ করলেন। আমি (বাগানের) প্রবেশ দ্বারের পাশে বসে থাকলাম। শেষ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পেশাব-পায়খানা সমাধা করে ওযু করলেন। অতঃপর আমি উঠে তাঁর দিকে অগ্রসর হলাম। দেখলাম, তিনি আরীস’ কুয়ার পাড়ের মাঝখানে পায়ের নলা খুলে পা দুটো তাতে ঝুলিয়ে বসে আছেন। আমি তাঁকে সালাম দিয়ে আবার ফিরে এসে প্রবেশ পথে বসে রইলাম। আর মনে মনে বললাম যে, আজ আমি অবশ্যই আল্লাহর রসুলের দ্বার রক্ষক হব। সুতরাং আবু বাকর (রাঃ) এসে দরজায় ধাক্কা দিলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কে?” তিনি উত্তরে বললেন, ‘আবু বাকর। আমি বললাম, একটু থামুন। তারপর আমি আল্লাহর রসূল (ﷺ) এর নিকট গিয়ে নিবেদন করলাম, হে আল্লাহ রসূল! উনি আবু বাকর, প্রবেশ করার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বললেন, ‘ওকে অনুমতি দাও। আর তার সাথে জান্নাতের সুসংবাদ জানিয়ে দাও। সুতরাং আমি আবূ বাকর (রাঃ) এর নিকট এসে বললাম, “প্রবেশ করুন। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ জানাচ্ছেন। আবূ বাকর প্রবেশ করলেন এবং কুয়ার পাড়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ডান দিকে পায়ের নলার কাপড় তুলে পা দুখানি কুয়াতে ঝুলিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মত বসে পড়লেন।
আমি পুনরায় দ্বার প্রান্তে ফিরে এসে বসে গেলাম। আমি মনে মনে বললাম, আমার ভাইকে ওযু করা অবস্থায় ছেড়ে এসেছি; (ওযুর পরে) সে আমার পশ্চাতে আসবে। আল্লাহ যদি তার জন্য কল্যাণ চান, তাহলে তাকে (এখানে আনবেন। হঠাৎ একটি লোক এসে দরজা নড়াল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কে? সে বলল, উমার বিন খাত্তাব। আমি বললাম, একটু থামুন। অতঃপর আমি রসূল (ﷺ) এর কাছে এসে নিবেদন করলাম যে, উনি উমার। প্রবেশ অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বললেন, ওকে অনুমতি দাও এবং ওকেও জান্নাতের সুসংবাদ জানাও। সুতরাং আমি উমারের নিকট এসে বললাম, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আপনাকে প্রবেশ অনুমতি দিচ্ছেন এবং জান্নাতের শুভ সংবাদও জানাচ্ছেন। সুতরাং তিনি ভিতরে প্রবেশ করলেন এবং কুয়ার পাড়ে আল্লাহর রসূল (ﷺ) এর বাম পাশে কুয়ায় পা ঝুলিয়ে বসে পড়লেন।
আমি আবার সেখানে ফিরে এসে বসে পড়লাম। আর মনে মনে বলতে থাকলাম, আল্লাহ যদি আমার ভায়ের মঙ্গল চান, তাহলে অবশ্যই তাকে নিয়ে আসবেন। (ইত্যবসরে) হঠাৎ একটি লোক দরজা নড়াল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কে? সে বলল, আমি উসমান ইবনে আফফান। আমি বললাম, একটু থামুন। তারপর আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট এসে তাঁর সম্পর্কে অবহিত করলাম। তিনি বললেন, ওকে অনুমতি দাও। আর জান্নাতের সুসংবাদ জানাও। তবে ওর জীবনে বিপর্যয় আছে। আমি ফিরে এসে তাঁকে বললাম, ‘প্রবেশ করুন। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ জানাচ্ছেন। তবে আপনার বিপর্যয় আছে। সুতরাং তিনি সেখানে প্রবেশ করে দেখলেন যে, কুয়ার এক পাড় পূর্ণ হয়েছে। ফলে তিনি তাঁদের সামনের অপর পাড়ে গিয়ে বসে গেলেন। (বুখারী-মুসলিম)।
চতুর্থ খলীফা আলী বিন আবী তালেব। আর অবশিষ্ট হলেনঃ
তালহা, যুবাইর, আব্দুর রহমান বিন আওফ, সা’দ বিন আবী অক্কাস, সাঈদ বিন যায়দ ও আবু উবাইদাহ (রাঃ)।
এ ছাড়াও যারা পৃথিবীতেই ‘জান্নাতী’ বলে ঘোষিত হয়েছেন, তারা হলেনঃ
১। শহীদগণের সর্দার হামযাহ বিন আব্দিল মুত্তালিব। (সঃ জামে ৩৫৬৯নং)
২। জাফর বিন আবী তালেব । (তিরমিযী, আবু য়্যালা, হাকেম)
৩। আব্দুল্লাহ বিন সালাম। (আহমাদ, তাবারানী, হাকেম)
৪৷ যায়দ বিন হারেসাহ (রাঃ)। (সঃ জামে’ ৩৩৬ ১নং)
৫। যায়দ বিন আমর বিন নুফাইল (রাঃ)। (ঐ ৩৩৬২নং)
৬। হারেসাহ বিন নুমান (রাঃ)। (তিরমিযী, হাকেম)
৭। বিলাল বিন রাবাহ (রাঃ)। একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বিলাল (রাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বললেন, “হে বিলাল! আমাকে সর্বাধিক আশাপ্রদ আমল বল, যা তুমি ইসলাম গ্রহণের পর বাস্তবায়িত করেছ। কেননা, আমি (মিরাজের রাতে) জান্নাতের মধ্যে আমার সম্মুখে তোমার জুতার শব্দ শুনেছি।” বিলাল (রাঃ) বললেন, ‘আমার দৃষ্টিতে এর চাইতে বেশী আশাপ্রদ এমন কোন আমল করিনি যে, আমি যখনই রাত-দিনের মধ্যে যে কোন সময় পবিত্রতা অর্জন (ওযু, গোসল বা তায়াম্মুম) করেছি, তখনই ততটুকু নামায পড়ি, যতটুকু নামায পড়া আমার ভাগ্যে লিপিবদ্ধ থাকে। (বুখারী ও মুসলিম)
৮। আবুদ দাহদাহ (রাঃ)। ইনি খেজুরের গোটা বাগান দান করেছিলেন। তার জন্য মহানবী (ﷺ) তাকে বলেছিলেন, “আবু দাহদার নিমিত্তে জান্নাতে কত বিশাল খেজুর গাছ (ও খেজুর) রয়েছে!” (আহমদ ৩/ ১৪৬, হাকেম ৩/২০)
৯। অরাাহ বিন নাওফাল (রাঃ)। (হাকেম, সঃ জামে ৭১৯৭নং)
দুনিয়াতে থাকাবস্থায় জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত নারী
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওহির মারফতে কতিপয় পুরুষ সাহাবীর পাশাপাশি কতিপয় মহিলার ব্যাপারে জান্নাতবাসী হওয়ার সুসংবাদ প্রদান করেছেন।
তাই নিম্নে জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত সৌভাগ্যবতী মহিলাদের মধ্যে ১২ জনের নামের একটি তালিকা তুলে ধরা হল: (যদিও তাদের সংখ্যা আরও বেশি):
১) আসিয়া আ. (ফেরআউনের স্ত্রী)
২) মরিয়ম বিনতে ইমরান আ. (আল্লাহর রাসূল ঈসা আলাইহিস সালাম এর মা)
৩) খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ রা. (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম এর স্ত্রী)
৪) আয়েশা রা. (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রী এবং আবু বকর সিদ্দীক রা. এর কন্যা)
৫) ফাতিমা রা. (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কন্যা ও আলী রা. এর স্ত্রী)
৬) হাফসা রা. (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রী এবং উমর রা. এর কন্যা)
৭) উম্মে সুলাইম রা. (আবু তালহা রা. এর স্ত্রী)
৮) গুমায়সা বিনতে মিলহান রা.
৯) রবী বিনতে মুআওয়ায (মদীনার আনসারী মহিলা সাহাবী- যিনি হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট যুদ্ধের বাইআত নিয়েছিলেন। বাইআত গ্রহণকারী সর্বমোট দু জন মহিলার মধ্যে তিনি একজন)
১০) সুমাইয়া রা. (ইসলামের ইতিহাসে প্রথম শহিদ)
১১) সুয়াইরা আল আসাদিয়া রা.
১২) উম্মে হারাম বিনতে মিলহান (আনাস রা. এর খালা)
উল্লেখ্য যে, উল্লেখিত ১২ জন ছাড়াও জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত মহিলার সংখ্যা আরও রয়েছে।
১। হযরত খাদিজা রা
হযরত আবু হুরাইরা রা. বলেন, একদিন জিবরীল আ. নবীজীর কাছে আসলেন এবং বললেন-
يَا رَسُولَ اللهِ! هَذِهِ خَدِيجَةُ قَدْ أَتَتْ، مَعَهَا إِنَاءٌ فِيهِ إِدَامٌ، أَوْ طَعَامٌ أَوْ شَرَابٌ، فَإِذَا هِيَ أَتَتْكَ فَاقْرَأْ عَلَيْهَا السَّلاَمَ مِنْ رَبِّهَا وَمِنِّي، وَبَشِّرْهَا بِبَيْتٍ فِي الجَنّةِ مِنْ قَصَبٍ، لاَ صَخَبَ فِيهِ، وَلاَ نَصَبَ.
আল্লাহ রাসূল! ওই যে খাদিজা একটি পাত্রে তরকারি অথবা খাবার বা পানি নিয়ে আপনার কাছে আসছে। যখন সে আপনার কাছে আসবে আপনি তাঁকে তাঁর রবের পক্ষ থেকে এবং আমার পক্ষ থেকে সালাম বলবেন এবং তাঁকে জান্নাতে একটি মুক্তা-প্রাসাদের সুসংবাদ দেবেন; যেখানে না আছে কোনো শোরগোল, না আছে কষ্ট-ক্লান্তি। সহীহ বুখারীঃ ৩৮২০
২। হযরত আয়েশা রা
আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, জিবরীল (আঃ) একখানা সবুজ রংয়ের রেশমী কাপড়ে তার (‘আয়িশাহর) প্রতিচ্ছবি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে নিয়ে এসে বলেন, ইনি দুনিয়া ও আখিরাতে আপনার স্ত্রী। সহীহঃ বুখারী (৫১২৫, ৭০১১, ৭০১২), মুসলিম (৭/১৩৪) তিরমিজি ৩৮৩৮
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আয়িশাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তুমি দুনিয়া ও আখিরাতে আমার স্ত্রী হবে? আমি বললাম, আল্লাহর কসম! অবশ্যই। তিনি বললেন, তুমি দুনিয়া ও আখিরাতে আমার স্ত্রী।
মুসতাদরাকে হাকিম গ্রন্থে উক্ত হাদীসকে ছহীহ বলা হয়েছে।
ইমাম যাহাবী রহঃ, শায়েখ আলবানী রহঃ, শুয়াইব আল আরনাউত রহঃ ছহীহ বলেছন।
৩। হযরত হাফসা রা
নবী (সা.) তাঁকে একবার (এক) তালাক দিয়েছিলেন। বাবা ওমর ইবনে খাত্তাব জানতে পেরে মাথার ওপর মাটি নিক্ষেপ করে আক্ষেপ করতে করতে বললেন, আজকের পর নিজের জীবন এবং কন্যা থেকে আল্লাহর কি পরওয়া! কায়েস ইবনে যায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) হাফসা বিনতে ওমরকে (রা.) তালাক (রজঈ) দিলেন। অতঃপর তার মামা মাজউন পুত্রদ্বয় কোদামা ও ওসমান এলেন। হাফসা (রা.) কেঁদে কেঁদে বললেন, আল্লাহর কসম! তিনি আমাকে বিদ্বেষবশত তালাক দেননি। তারপর নবী (সা.) এসে বললেন, জিবরাইল (আ.) আমাকে বললেন, হাফসাকে ফিরিয়ে নেন। কেননা তিনি অনেক রোজাদার ও অনেক দীর্ঘ নামাজ আদায়কারী। আর তিনি জান্নাতে আপনার স্ত্রী হিসেবে থাকবেন।’ (আল আসানিদুল আশারা : ৭/২৫১)
৪। হযরত ফাতিমা রা, ৫। হযরত মারিয়াম আ, ৬। হযরত আসিয়া আ
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বললেন, আজ রাতে একজন ফেরেশতা অবতরণ করেছে, যে আর কখনো আসে নাই।… সে আমাকে সুসংবাদ শুনিয়েছে-
…فَاطِمَة سَيِّدَةُ نِسَاءِ أَهْلِ الجَنّةِ، وَأَنّ الحَسَنَ وَالحُسَيْنَ سَيِّدَا شَبَابِ أَهْلِ الجَنّةِ.
ফাতেমা হবে, জান্নাতী নারীদের সরদার আর হাসান-হুসাইন হবে, জান্নাতের যুবকদের সরদার। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৭৮১
আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) জমিনে চারটি রেখা টেনে বলেন, ‘তোমরা কি জানো এটা কী?’ সাহাবারা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল জানেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘জান্নাতবাসীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নারী হলেন খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতেমা বিনতে মুহাম্মদ, মারিয়াম বিনতে ইমরান ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া বিনতে মুজাহিম।(মুসনাদে আহমাদ : ২৯০৩)
আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সৃষ্টিজগতের মধ্যে চারজন নারী শ্রেষ্ঠ। তাঁরা হলেন, মারইয়াম বিনতে ইমরান, ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া, খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ ও ফাতেমা বিনতে মুহাম্মাদ।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৮৭৪, আহমাদ, হাদিস : ১২৪১৪)
৭। উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু আনহা-
হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত- রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত এক সাহাবীয়া উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু আনহা- উনার অনুপম চরিত্রের যে মাধুর্য তা অনন্য ও বেমেছাল। উনার জীবনের একটি ঘটনার পড়লেই বোঝা যাবে আল্লাহ পাকের উপর উনার সন্তুষ্টি ও বিশ্বাসের স্তর এবং অতুলনীয় ধৈর্য সম্পর্কে।উনার আসল নাম ছিলো রুমাইছা বিনতে মিলহান আল-আনসারিয়্যা আর উপনাম উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু আনহা এবং এ নামেই তিনি প্রসিদ্ধ।
“স্বপ্নে আমি জান্নাতে প্রবেশ করি। হঠাৎ কারো নড়াচড়ার শব্দ শুনতে পাই। ফেরেশতাদের জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে?
তারা বললেন, রুমাইছা বিনতে মিলহান, আনাস ইবনে মালিকের মা।
(মুসলিম: ২৪৫৬; মুসনাদে আহমদ: ১১৯৫৫; তাবাকাতে ইবনে সাদ: ৮/৪২৯)
অন্য এক হাদীছ শরীফে হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত- নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“আমি স্বপ্নে দেখলাম জান্নাতে প্রবেশ করেছি। হঠাৎ দেখি আমার সামনে আবু তলহার স্ত্রী রুমাইছা।
(বুখারী: ৩৬৭৯; মুসনাদে আহমদ: ১৫০০২; ইবনে হিববান: ৭০৮৪; সুনানে নাসায়ি: ৮১২৪)
৮। রবী‘ বিনতে মুয়াওয়ায রাদিয়াল্লাহু আনহা :
রবী‘ বিনতে মুয়াওয়ায তিনি একজন আনসারী মহিলা। বাই‘য়াতে যে দুই মহিলা অংশ গ্রহণ করেন, তাদের মধ্যে তিনি একজন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জান্নাতী বলে সু-সংবাদ দেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لا يدخل النار احد ممن بايع تحت الشجرة»
গাছের নিচে বাইয়াতে অংশ গ্রহণকারী কেউ জাহান্নামে যাবে না। তিরমিযি, হাদিস: ৩৮৬০, আবু দাউদ, হাদিস: ৪৬৫৩, আহমদ, হাদিস: ১৪৭৭৮
৯। উম্মে হারাম বিনতে মিলহান রাদিয়াল্লাহু আনহা :
উম্মে হারাম বিনতে মিলহান রাদিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন, আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর খালা। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জান্নাতের সু-সংবাদ দেন। তিনি একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেন, তিনি বলেন,
«أَوَّلُ جَيْشٍ مِنْ أُمَّتِي يَغْزُونَ البَحْرَ قَدْ أَوْجَبُوا»، قَالَتْ أُمُّ حَرَامٍ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنَا فِيهِمْ؟ قَالَ: «أَنْتِ فِيهِمْ»، ثُمَّ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَوَّلُ جَيْشٍ مِنْ أُمَّتِي يَغْزُونَ مَدِينَةَ قَيْصَرَ مَغْفُورٌ لَهُمْ»، فَقُلْتُ: أَنَا فِيهِمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «لاَ»
আমার উম্মতের সর্ব প্রথম যে সৈন্য দলটি সমুদ্রে যুদ্ধ পরিচালনা করবে, তারা তাদের জন্য জান্নাতকে অবধারিত করে নেবে। এ কথা শোনে উম্মে হারাম রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল আমি তাদের মধ্যে থাকতে চাই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তাদের তাদের মধ্য হতে। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার মধ্য যে সৈন্য দলটি রোম সম্রাট সীজারের শহরে যুদ্ধ করবে, তারা সবাই ক্ষমা প্রাপ্ত হবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হতে চাই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না। বুখারি, হাদিস: ২৯২৪
১০। ইসলামের মধ্যে সর্ব প্রথম শাহাদাতের গৌরব অর্জনকারী নারী সুমাইয়া বিনতে খাইয়াত :
সুমাইয়া বিনতে খাইয়াত ইসলামে সর্বপ্রথম নারী শহীদ। তিনি অপর ধৈর্যশীল ঈমানদার শহীদ ইয়াসের ইবন আমের এর স্ত্রী এবং আম্মার ইবন ইয়াসের রাদিয়াল্লাহু আনহুর মাতা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে এ বলে জান্নাতের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, صبرًا آل ياسر فإن موعدكم الجنة“ইয়াসের পরিবার ধৈর্য ধারণ কর, অবশ্যই জান্নাত তোমাদের জন্য অবধারিত।”
এ বিষয়ে অপর একটি শব্দ জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, اصبر اللهم اغفر لآل ياسرধৈর্য ধারণ কর, হে আল্লাহ তুমি ইয়াসের পরিবারকে ক্ষমা কর’। অপর একটি বর্ণনায় জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আম্মার ও তার পরিবারকে যখন শাস্তি দেয়া হচ্ছিল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামতাদের নিকট দিয়ে অতিক্রম করেন এবং তাদের উপর অকথ্যনির্যাতনের দৃশ্য দেখে বলেন,أبشروا آل عمار وآل ياسر فإن موعدكم الجنة তোমরা আম্মার ও ইয়াসের পরিবারকে সু-সংবাদ দাও- তাদের জন্য জান্নাত অবধারিত। হাকেম, হাদিস: ৩৮৮/৩, আল-মাজমা: ২৯৩/৯
১১। সুয়াইরা আল-আসা‘দিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহা :
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
আমি তোমাকে একজন জান্নাতী নারী দেখাব না? আমি বললাম হ্যাঁ; তিনি বললেন, এ কালো মহিলা। মহিলাটি একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে বললেন, আমি মৃগী রোগের কারণে বেঁহুস হয়ে পড়ি এবং কাপড়-চোপড় খুলে ফেলি। আপনি আমার জন্য দো‘আ করেন আমি যাতে ভালো হয়ে যাই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি তুমি চাও ধৈর্য ধারণ কর এবং তার বিনিময়ে তুমি জান্নাতে যাবে। আর যদি চাও আমি তোমার জন্য আল্লাহর কাছে দো‘আ করি তাতে তুমি ভালো হয়ে যাবে। তখন মহিলাটি বলল, আমি ধৈর্য ধারণ করব। তারপর সে বলল, আমি উলঙ্গ হয়ে যাই, আপনি আল্লাহর নিকট দো‘আ করেন, আমি যাতে উলঙ্গ না হই। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য দো‘আ করেন।বুখারী, হাদিস: ৫৬৫২, মুসলিম, হাদিস: ২৫৭৬ মহিলাটির নাম সুয়াইরা আল-আসা‘দিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহুা।
১২। গুমাইসা বিনতে মিলহান রাদিয়াল্লাহু আনহুা
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رضي الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولَ اللهُ صلى الله عليه وسلم «دَخَلْتُ الْجَنَّةَ فَسَمِعْتُ خَشَفَةً فَقُلْتُ مَا هَذِهِ الْخَشَفَةَ فَقِيلَ هَذِهِ الغُّمَيْصَاءُ بِنْتُ مِلْحَانَ »
“আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন: আমি জান্নাতে প্রবেশ করে আমার সামনে কারো চলার আওয়াজ পেলাম। আমি (জিবরীলকে) জিজ্ঞেস করলাম এ কিসের আওয়াজ? আমাকে বলা হল যে এটা গুমাইসা বিনতে মিলহানের চলার আওয়াজ।মুসলিম, হাদিস: ২৪৫৬
উল্লেখ্য যে গুমাইসা বিনতে মিলহানের শ্বশুর ও ছেলে ওহুদ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিল। আর তার ভাই হারাম ইবন মিলহান বি’র মা‘উনার ঘটনায় শহীদ হয়েছিল। আর সে নিজে কুবরুস দ্বীপে আক্রমণ করে প্রত্যাবর্তনকারী সৈন্যদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। আর ঐ সফরেই তিনি আল্লাহর প্রিয় হয়ে গিয়েছিলেন। (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)
উম্মে হারাম বিনতে মিলহান এবং উম্মে সুলাইম-এর সাথে রাসূল (ছাঃ) কিরূপ সম্পর্ক ছিল?
উত্তর : উপরোক্ত দু’জন আনছার মহিলা পরস্পরে দু’বোন ছিলেন। তারা রাসূল (ছাঃ)-এর ‘মাহরাম’ ছিলেন (বুখারী হা/২৭৮৯; মুসলিম হা/২৩৩১)। ইমাম নববী বলেন, রাসূল (ছাঃ) যে তাদের উভয়ের মাহরাম ছিলেন, সে ব্যাপারে সকল বিদ্বান একমত। কিন্তু কি সম্পর্কের কারণে মাহরাম ছিলেন তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন তারা দু’বোন রাসূল (ছাঃ)-এর দুগ্ধসম্পর্কীয় (রেযা‘ঈ) খালা ছিলেন। কেউ বলেছেন, তাঁর পিতা অথবা দাদার খালা ছিলেন। কেননা রাসূল (ছাঃ)-এর দাদা আব্দুল মুত্ত্বালিবের মা ছিলেন মদীনার বনু নাজ্জার গোত্র’ (নববী, শরহ মুসলিম ১৩/৫৭, ৫৮, ১৯১২ নং হাদীছের ব্যাখ্যা দ্রঃ)। সে হিসাবে তারা ছিলেন রাসূল (ছাঃ)-এর মাতুল গোষ্ঠী। সেকারণ হিজরতের পরে তিনি তাদের কাছেই আশ্রয় নিয়েছিলেন।
আনাস রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মে হারাম বিনতে মিলহানের কাছে গেলেন এবং সেখানে বিশ্রাম করলেন। অতঃপর তিনি হেসে উঠলেন। উম্মে হারাম বিনতে মিলহান তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আপনি কেন হাসছেন?’ তিনি বললেন, আমার উম্মাতের মধ্যে কয়েক ব্যক্তি আল্লাহ্র পথে জিহাদের উদ্দেশে এই সবুজ সমুদ্রে সফর করবে। তাদের উপমা সিংহাসনে উপবিষ্ট বাদশাহদের মতো।
নারীদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় আমল তুলে ধরা হল:
১). যথাসময়ে একান্ত ভয়-ভীতি ও বিনয়-নম্রতা সহকারে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা।
২) ফরজ সালাতের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের নফল সালাত আদায় করা। যেমন: তাহাজ্জুদ, সালাতুল ইশরাক, সালাতুয যোহা (চাশত/আওয়াবিন), তাহিয়াতুল ওযু ইত্যাদি।
৩) রমজান মাসের ফরজ রোজা পালন করা।
৪) যথাসাধ্য নফল রোজা রাখা। যেমন: প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার, আইয়ামে বীয তথা প্রতি আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ অথবা মাসের যে কোনও সময় তিনটি রোযা, আরাফা, আশুরা ইত্যাদি।
৫) যাকাত ফরজ হলে যাকাত দেওয়ার পাশাপাশি যথাসম্ভব বেশি পরিমাণে নফল দান-সদকা করা। (হাদিসে নারীদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার জন্য দান-সদকা করার ব্যাপারে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে।)
৬) হজ্জ ফরজ হলে তা আদায় করা এবং যথাসম্ভব উমরা আদায় করা।
৭) কুরআন তিলাওয়াত করা, কুরআনের তরজমা ও তাফসির পাঠ করা, হাদিস পাঠ করা এবং ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা।
৮) তওবা-ইস্তিগফার ও দুআ, জিকির, তাসবিহ ইত্যাদি পাঠ করার মাধ্যমে সদাসর্বদা জিহ্বা তরতাজা রাখা
৯) সব ধরণের পাপাচার থেকে বেঁচে থাকা। বিশেষ করে গিবত, চোগলখোরি, পরনিন্দা, মিথ্যা সাক্ষ্য, অশ্লীল কথা, মানুষকে গালাগালি, অভিশাপ দেয়া, বিভিন্ন প্রকার গোপন পাপ ইত্যাদি।
১০) শিরকি কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকা। বিশেষ করে তাবিজ-কবজ, রিং, বালা, সুতা, জিন ও গণকের আশ্রয় নেওয়া ইত্যাদি।
১১) স্বামীর আনুগত্য করা এবং তার কৃতজ্ঞতা আদায় করা।
১২) স্বামীর অনুপস্থিতে নিজের লজ্জা স্থান হেফাজত করা।
১৩) আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করা।
১৪) গরিব-অসহায় মানুষকে খাদ্য দান করা ইত্যাদি।
এগুলোর অধিকাংশই নারী-পুরুষের উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে জাহান্নাম থেকে বাঁচার এবং জান্নাতে প্রবেশের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণের তাওফিক দান করুন। আমিন।
▬▬▬✪🌐✪▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।
জান্নাতের শ্রেষ্ঠ পাওয়া
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “মহান প্রভু জান্নাতীদেরকে সম্বােধন করে বলবেন, হে জান্নাতের অধিবাসিগণ!’ তারা উত্তরে বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা হাযির আছি, যাবতীয় সুখ ও কল্যাণ তোমার হাতে আছে। তখন আল্লাহ পাক বললেন, তোমরা কি সন্তুষ্ট হয়েছ? তারা বলবে, আমাদের কী হয়েছে যে, সন্তুষ্ট হব না? হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তো আমাদেরকে সেই জিনিস দান করেছ, যা তোমার কোন সৃষ্টিকে দান করনি। তখন তিনি বলবেন, এর চেয়েও উত্তম কিছু তোমাদেরকে দান করব না কি? তারা বলবে, এর চেয়েও উত্তম বস্তু আর কি হতে পারে?’ মহান প্রভু জবাবে বলবেন, তোমাদের উপর আমার সন্তুষ্টি অনিবার্য করব। অতঃপর আমি তোমাদের প্রতি কখনো অসন্তুষ্ট হব না।” (বুখারী-মুসলিম)
জাযাকুমুল্লাহি খাইরান