দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে
নারীর জীবনে কুরবানী বুঝতে আমাদের যেতে হবে ইতিহাসের পাতায় যেখানে কুরবানীর ঘটনা ঘটেছিলো।
পারিবারিক জীবনে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের এক মত, এক লক্ষ্যের দিকে ধাবিত হয়ে কাজ করার নমুনা আজকের সমাজে খুব দূর্লব হয়ে দাড়িয়েছে। খুব কম সময়েই দেখা যায় একটি সিদ্ধান্তে সবাই সহমতে আসতে পেরেছে। অথচ ইব্রাহীম আ. এর পারিবারিক জীবনের দিকে তাকিয়ে দেখুন- যখন ইব্রাহিম আ. স্ত্রী ও শিশু পুত্র ইসমাঈল আ. কে মক্কার এমন একটা উপত্যকায় রেখে চলে আসছিলেন, যেখানে কোন জনপ্রাণীর সাড়াশব্দ ছিল না, কোন মানুষজন ছিল না, কোন বৃক্ষরাজি ছিল না এবং কোন পাখ-পাখালী বা পশুও ছিল না, তখন বিবি হাযেরা প্রশ্ন করেছিলেন যে, এটা কি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ? তখন ইব্রাহিম আ. হ্যা-সূচক জবাব দিলে, তিনি বলেছিলেন, তাহলে আল্লাহ আমাদের বঞ্ছিত করবেন না (বুখারী ৩১৮৪ হাদীসের আলোকে)।
এই মুমিনা নারীও সেই একই চিন্তা চেতনায় দিক্ষিত ছিলেন, যা ছিল ইব্রাহিম আ. এর। সেই কারণেই তিনি কোন অস্থিরতা বা না-শোকরীমূলক কথা না বলে, মহান আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করেছিলেন এবং স্বামীকে আল্লাহর পথে আনুগত্য ও ত্যাগের নমুনা রাখার জন্য সাহায্য করেছিলেন। আজ তাই হজ্জের একটি ওয়াজিব কাজ সাঈ করা (সাফা মারওয়া পাহাড়ে ৭বার চক্কর দেয়া)। সেই মহীয়সী মুহসিনা নারীর ত্যাগের ও তাওয়াক্কুলের চিত্র স্মরন করিয়ে দেয়। মহান আল্লাহ বলেছেন-
নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তরভূক্ত। সূরা আল বাকারা: ১৫৮
একটু ভেবে দেখুন- আর নিজেকে সেই কঠিন পরিবেশে রেখে কল্পনা করুন, নিজের ঈমানের অবস্থান কোথায়!!
বিবি হাযেরা কোন ঈমানী শক্তিতে মহান রবের উপর পূর্ন তাওয়াক্কুল করেছিলেন?
কোন শিক্ষায় স্বামী ইবরাহিম আ কে বিব্রত করা থেকে বিরত থেকেছেন?
কোন জিনিষ পাওয়ার আশায় শিশু সন্তানকে নিয়ে একাকী মরুভূমিতে রয়ে গিয়েছিলেন?
তিনি যখন জানতে পারলেন যে, এই নির্জন মরুভূমিতে আল্লাহর নির্দেশেই তাঁকে রেখে যাওয়া হচ্ছে, তখন তিনি চিন্তামুক্ত হয়ে গেলেন এবং সম্পূর্ণ আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে সেখানে থাকতে লাগলেন।
আর আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা, বিশ্বাস ও ভরসার কারণেই আল্লাহ তাআলা অতি দ্রুত তাকে ঝমঝমের বরকত এবং উত্তম লোকের বসতি স্থাপনসহ সারা দুনিয়ার মানুষের এ পবিত্র ভূমিকে হৃদয়ের আকর্ষণে পরিণত করলেন।
আল্লাহর উপর কত বড় নির্ভরতার উদাহরন, ত্যাগের নমুনা, পারিবারিক সম্পর্কের কি সুন্দর চিত্র,পারস্পরিক আস্থা, ভালোবাসা, বিশ্বাস কত জোড়ালো তা এই ঘটনা থেকেই উপলব্ধি করা যায়। আর এটা সম্ভব হয়েছে ,শুধুমাত্র একটি মূল লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য সকলের চিন্তা চেতনা চর্চা, শিক্ষা ও বাস্তবায়ন এক হওয়া। আর তা হলো মহান আল্লাহর আনুগত্যে সর্বদা প্রস্তুত থেকে সমর্পন করে দেয়া। আর এর জন্য প্রয়োজন অনেক ত্যাগ, পরিশ্রম ও সবর।
আর আজ সেই সাফা মারওয়ার শিক্ষাকে উপলব্ধি করার সা’য়ীকে হজ্জের ওয়াজীব করে দেয়া হয়েছে যা সারা বিশ্বের নর নারী সকলেই হজ্জ ও ওমরাতে করে থাকেন। সুবহান’আল্লাহ।
যুগে যুগে মহান রবের আনুগত্যে নিজেকে পূর্ন সমর্পন করার চিত্র এমন আরো অনেক মহিয়সী নারীদের জীবনে দেখতে পাই।হযরত খাদীজা রা, হযরত আয়েশা রা, হযরত সুমাইয়্যা রা সহ আরো অনেক।
সেই পুত্র সন্তান যখন সাবালক অবস্থায় এসেছে ,সেই অনল মায়ের ঈমানী চেতনায় দিক্ষিত সন্তানও পিতার আদেশ শুনে একটুও সময়ক্ষেপন না করে বলেছেন, “ধৈর্যশীল ছেলেটি সাথে সাথেই জবাব দিল, সে বলল, হে আমার পিতা! আপনাকে যে আদেশ করা হয়েছে, আপনি তা-ই করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন’।
এখানেও সেই নারী যিনি মাতৃত্বের আবেগ ভালোবাসা দাবীকে সমর্পন করেছেন রবের নির্দেশে আনুগত্যে।
তাহলে নারী জীবনের কুরবানীর শিক্ষা বা স্পিরিট এটাই যা পুরুষের জন্যও। কুরবানীর এই স্পিরিট একটি পুরু পরিবারের জন্যই। যেখানে সকলের এক চিন্তা চেতনা কাজ করবে আর তা হলো প্রত্যেকেই রবের কাছে প্রতিটি সময়ের জন্য সমর্পিত থাকবে।
একজন নারী পিতার পরিবারে বা নিজ পরিবারে বা যেকোন স্থানে যখনই রবের সন্তুষ্টি ও নির্দেশের কাছে নিজের নফস,আমিত্ব,শয়তানী ওয়াসওয়াসা ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতাকে বিসর্জন দিতে পারবে, রবের নির্দেশনায় ও রাসূল স দেখানো পথে অটল থাকবে সেটাই হবে কুরবানির স্পিরিট।
আর তাই অহির জ্ঞানে আলোকিত হতে হবে নারীকে,যা দিয়ে সে বুঝতে পারবে শয়তানী পথ কোনটি ও হকের পথ কোনটি। আর এই জ্ঞান থাকার ফলে নিজের ইগো, ক্যারিয়ার দুনিয়াবী চাওয়া পাওয়াকেই বড় করে না দেখে, আখেরাতের চাওয়া বা সফলতাকেই মূল লক্ষ্য করে নিতে পারবে, আর তখনই সম্ভব ত্যাগের, সবরের,স্থিরতার প্রতিফলন ঘটানো। আর প্রতিটি কাজের ফল মহান আল্লাহ লিখে রাখছেন। দুনিয়াতেও অনেক নি’আমত দিচ্ছেন আর আখেরাতে ও রয়েছে পূর্ণ প্রতিদান-জান্নাত ইন শা আল্লাহ।
পরিবারের সকলেই যেনো তাই একভাবে এই কথাই বলতে পারি-
বল, আমার সালাত, আমার কুরবাণী, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তার কোন শরিক নাই এবং আমি এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম”।সূরা আনআম: ১৬২-১৬৩