কুরবানীর বিধি বিধান-২(কুরবানীর উদ্দেশ্য )

 দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে

 

১। খালেস ইবাদাত:

পশু নিবেদন (বা যবেহ) করা হবে এক আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে যার কোন শরিক নেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদত করার জন্য। যেমন তিনি বলেছেন-

আমি জিন ও মানুষকে এ জন্য সৃষ্টি করেছি যে তারা শুধু আমার ইবাদত করবে।

সূরা আয-যারিয়াত:৫৬

অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্য মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন।

ইবাদত বলা হয়, যে সকল কথা ও কাজ আল্লাহ রাববুল আলামীন ভালোবাসেন ও পছন্দ করেন; হোক সে কাজ প্রকাশ্যে বা গোপনে। (ফতহুল মজিদ: ১৭)

আর এ ইবাদতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তার উদ্দেশ্যে পশু যবেহ করা। এ কাজটি তিনি শুধু তাঁর উদ্দেশ্যে করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

২। শর্তহীন আনুগত্য:

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন-

বল, আমার সালাত, আমার কুরবাণী, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তার কোন শরিক নাই এবং আমি এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম। সূরা আনআম: ১৬২-১৬৩

৩। নিষ্ঠাপূর্ণ ইবাদাত

কুরআন মজীদে যেমন এসেছে,তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কুরবানী কর। সূরা আল কাওসার: ২

অর্থাৎ তোমার সালাত ও কুরবানী তাঁরই জন্য আদায় কর। কেননা, মুশরিকরা প্রতিমার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করে ও পশু যবেহ করে। আর সকল কাজে ইখলাস অবলম্বন করতে হবে। ইখলাসের আদর্শে অবিচল থাকতে হবে।

যে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে পশু উৎসর্গ বা যবেহ করবে তার ব্যাপারে কঠোর শাস্তির কথা হাদিসে এসেছে-

আবু তোফায়েল থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আলী ইবনে আবি তালেবের কাছে উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি তার কাছে এসে বলল, নবী কারীম সা. গোপনে আপনাকে কি বলেছিলে ? বর্ণনাকারী বলেন, আলী রা. এ কথা শুনে রেগে গেলেন এবং বললেন, নবী করীম সা. মানুষের কাছে গোপন রেখে আমার কাছে একান্তে কিছু বলেননি। তবে তিনি আমাকে চারটি কথা বলেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর লোকটি বলল, হে আমিরুল মুমিনীন, সে চারটি কথা কি? তিনি বললেন,

১. যে ব্যক্তি তার পিতামাতাকে অভিশাপ দেয় আল্লাহ তাকে অভিশাপ দেন।

২. যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে পশু যবেহ করে আল্লাহ তার উপর লা‘নত করেন।

৩. ঐ ব্যক্তির উপর আল্লাহ লা‘নত করেন যে ব্যক্তি কোন বিদ’আতীকে প্রশ্রয় দেয়।

৪. যে ব্যক্তি জমির সীমানা পরিবর্তন করে আল্লাহ তাকে লা‘নত করেন। সহিহ মুসলিম

যা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে যবেহ করা হয় তা হারাম ঘোষনা করা হয়েছে। আল কুরআনে এসেছে-

তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তুর রক্ত, শুকরের মাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, শৃংগাঘাতে মৃত জন্তু এবং হিংস্র পশুতে খাওয়া জন্তুও, তবে যা তোমরা যবেহ করতে পেরেছ তা ব্যতীত। আর যা মূর্তি পূজার বেদীর উপর বলি দেয়া হয় তা এবং জুয়ার তীর দ্বারা ভাগ্য নির্ণয় করা, এ সব হলো পাপ-কার্য। সূরা আল মায়িদাহ:৩

ইবনে কাসীর রহ. বলেছেন, যা কিছু আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে যবেহ করা হয় তা যে হারাম এ ব্যাপারে মুসলিমদের ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত।

৪। তাকওয়া অর্জন:

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

আল্লাহর নিকট পৌছায় না উহার গোশত এবং রক্ত, বরং পৌছায় তোমাদের তাক্বওয়া। এ ভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এজন্য যে, তিনি তোমাদের পথ-প্রদর্শন করেছেন, সুতরাং আপনি সুসংবাদ দিন সৎকর্মপরায়নদেরকে। সূরা আল হজ্জ্ব: ৩৭

৫।  মহান আল্লাহর স্মরণ ও বড়ত্ব ঘোষনা:

আল কুর’আনে এসেছে,

প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি কুরবানীর বিধান রেখেছিলাম, যাতে তারা উক্ত পশু যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে এ জন্য যে, তিনি চতুষ্পদ জন্তু থেকে তাদের জন্য রিযিক নির্ধারণ করেছেন। সূরা আল হাজ্জ: ৩৪

৬। ঈমানের পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়া ও উত্তীর্ণ হওয়া:

মহান আল্লাহ জানিয়েছেন,

তোমরা কি মনে করে নিয়েছো, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে, অথচ এখনো আল্লাহ দেখেননি যে, তোমাদের মধ্য থেকে কে আল্লাহর পথে প্রাণ উৎসর্গকারী এবং কে সবরকারী ৷ আলে ইমরান: ১৪২

৭। নেতৃত্বের যোগ্যতা দান:  মহান আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:

এবং যখন ইবরাহীমকে তার ‘রব’ কয়েকটি ব্যাপারে পরীক্ষা করলেন এবং সে সেই পরীক্ষায় ঠিকভাবে উত্তীর্ণ হলো তখন তাকে জানিয়ে দেয়া হলো যে, আমি তোমাকে সমগ্র মানুষের ইমাম (অগ্রবর্তী নেতা) নিযুক্ত করেছি। তিনি বললেন, আমার বংশধরদের প্রতিও কি এ হুকুম ? আল্লাহ তায়ালা বললেন: যালেমদের জন্য আমার ওয়াদা প্রযোজ্য নয়। সূরা আল বাকারা: ১২৪