দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে
মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন-
এবং তিনি তাদেরকে যেসব পশু দান করেছেন তার উপর কয়েকটি নির্ধারিত দিনে আল্লাহর নাম নেয় নিজেরাও খাও এবং দুর্দশাগ্রস্ত অভাবীকেও খাওয়াও৷
সূরা হজ্জঃ২৮
রাসূলুল্লাহ সা. কুরবানীর গোশত সম্পর্কে বলেছেন-
তোমরা নিজেরা খাও ও অন্যকে আহার করাও এবং সংরক্ষণ কর।সহিহ বুখারী: ৫৫৬৯, সহিহ মুসলিম: ১৯৭১
‘আহার করাও’ বাক্য দ্বারা অভাবগ্রস্থকে দান করা ও ধনীদের উপহার হিসেবে দেয়াকে বুঝায়। কতটুকু নিজেরা খাবে, কতটুকু দান করবে আর কতটুকু উপহার হিসেবে প্রদান করবে এব পরিমাণ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত ও হাদিসে কিছু বলা হয়নি। তাই উলামায়ে কেরাম বলেছেন, কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করে একভাগ নিজেরা খাওয়া, এক ভাগ দরিদ্রদের দান করা ও এক ভাগ উপহার হিসেবে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের দান করা মুস্তাহাব (উত্তম) ।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিন ভাগ কথাটা চলে এসেছে, এবং সমাজে আরেকটু বাড়িয়ে সমান করা হয়েছে। মূলত এখানে কোন কোন জায়গাতে কুরবানী পশুর গোস্ত দেয়া দেয়া যেতে পারে তার একটি নমুনা উলামায়ে কেরাম দিয়েছেন। কেউ ইচ্ছে করলে অল্প গোস্ত রেখে পুরুটাই বিলি করে দিতে পারেন । তবে ইসলামের শিক্ষায় অনুসরনীয় হলে অন্যকে হাদিয়া দেয়াটাই দাবি রাখে। সমান ভাগ করতে দাঁড়ি পাল্লা দিয়ে মেপে করতে হবে এমন কোন নির্দেশনা জানা যায় নি।
কুরবানীর গোশত যতদিন ইচ্ছা ততদিন সংরক্ষণ করে খাওয়া যাবে। কুরবানীর গোশত তিন দিনের বেশি সংরক্ষণ করা যাবে না-বলে যে হাদিস রয়েছে তার হুকুম রহিত হয়ে গেছে।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. এ বিষয়ে একটা সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সংরক্ষণ নিষেধ হওয়ার কারণ হলো দুর্ভিক্ষ। দুর্ভিক্ষের সময় তিন দিনের বেশি কুরবানীর গোশত সংরক্ষণ জায়েয হবে না। তখন সংরক্ষণ নিষেধ সম্পর্কিত হাদিস অনুযায়ী আমল করতে হবে। আর যদি দুর্ভিক্ষ না থাকে তবে যতদিন ইচ্ছা কুরবানী দাতা কুরবানীর গোশত সংরক্ষণ করে খেতে পারেন। তখন সংরক্ষণ নিষেধ রহিত হওয়া সম্পর্কিত হাদিস অনুযায়ী আমল করা হবে। (ফাতহুল বারী, ১০/২৮; ইনসাফ, ৪/১০৭)।
কুরবানীর মাংস যতদিন ইচ্ছা ততদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায়। এমনকি এক যিলহজ্জ থেকে আরেক যিলহজ্জ পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখা যাবে।
আহমাদ: ২৬৪৫৮, সনদ হাসান, তাফসীরে কুরতুবী: ৪৪১৩
কেউ চাইলে সে তার কুরবানীর সম্পূর্ণ গোশতকে বিতরণ করে দিতে পাবে। আর তা করলে উপরোক্ত আয়াতের বিরোধিতা হবে না। কারণ, ঐ আয়াতে খাওয়ার আদেশ হলো মুস্তাহাব বা সুন্নাত। সে যুগের মুশরিকরা তাদের কুরবানীর গোশত খেত না বলে মহান আল্লাহ উক্ত আদেশ দিয়ে মুসলিমদেরকে তা খাবার অনুমতি দিয়েছেন। অবশ্য কেউ কেউ খাওয়া ওয়াজিবও বলেছেন। (তাফসীর ইবনু কাসীর, ৩/২৯২, ৩০০; মুগনী, ১৩/৩৮০; মুমতে, ৫২৫) সুতরাং কিছু খাওয়া হলো উত্তম।
কুরবানীর গোশত হতে কাফেরকে তার অভাব, আত্মীয়তা, প্রতিবেশী অথবা তাকে ইসলামের প্রতি অনুরাগী করার জন্য দেওয়া বৈধ। আর তা ইসলামের এক মহানুভবতা। (মুগনী, ১৩/৩৮১; ফাতহুল বারী, ১০/৪৪২)
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস রা. তার ইহুদী প্রতিবেশীকে দিয়ে গোশত বণ্টন শুরু করেছিলেন।বুখারী, আদাবুল মুফরাদঃ ১২৮, সনদ সহিহ
তোমরা মুসলিমদের কুরবানী থেকে মুশরিকদের আহার করিও না- মর্মে যে হাদীস এসেছে সেটা যঈফ। (বায়হাকী, শুআবুল ঈমান: ৯১১৩)।
কুরবানীর পশুর গোশত, চামড়া, চর্বি বা অন্য কোন কিছু বিক্রি করা জায়েয নয়। কসাই বা অন্য কাউকে পারিশ্রমিক হিসেবে কুরবানীর গোশত দেয়া জায়েয নয়। হাদিসে এসেছে-
তার প্রস্তুত করণে তার থেকে কিছু দেয়া হবে না (বুখারী: ১৭১৬, সহিহ মুসলিম: ১৩১৭)
তবে দান বা উপহার হিসেবে কসাইকে কিছু দিলে তা নাজায়েয হবে না।