একজন মুমিনের অবসরকালীন দিনলিপি (বর্তমান করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে)

দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে

১।   আত্মউপলব্ধি

বর্তমান সারাবিশ্বে করোনার মত ছোট একটি ভাইরাস যেভাবে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা থেকে সরিয়ে নিয়ে এসেছে, মানুষ আতংকগ্রস্থ হয়ে গিয়েছে, নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য, মৃত্যু থেকে বাঁচার জন্য অদম্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একটু জ্বর, সর্দি কাশি হলে নিজের খুব আপন কাছের মানুষটিও দূরে থাকছে বাস্তবতায়, আত্মীয় বা প্রতিবেশী বা খুব কাছের বন্ধু যাদের সাথে দিনের অধিকাংশ সময় পার করেছে সেই বন্ধুটিও যেনো অচেনা হয়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে বাইরে যেয়ে শ্বাস নেয়া বা ফেলাও যেনো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মৃত ব্যক্তি কাছের বা দূরের যেই হোক যেনো আপদ মনে করে, কোনভাবে মাটির নীচে কাউকে দিয়ে দিয়ে আসতে পারলেই যেনো শংকামুক্ত হয় জীবিত ব্যক্তিটি। খুঁজে বেড়াচ্ছে  ভাইরাস এর থেকে বাঁচার ব্যবস্থাপনা পত্র, তাকিয়ে আছে যদি উন্নত দেশ থেকে কোন চিকিৎসা আবিস্কার হয়, যে যেভাবে বলছে সেইভাবেই চলার অদম্য চেষ্টা যেনো ভাইরাস আক্রমন না করে বা আক্রান্ত হলেও যেনো সুস্থ হতে পারে।

একবারও কি আমরা ভেবেছি- মহান আল্লাহ যিনি আমাদের রব, তিঁনি আমাদের কত নিরাপদ পরিবেশ, কত সহজ জীবন যাত্রায়, কত আপন সম্পর্ক, সুখে আনন্দের বা দুঃখের সময়ে পরিবার, আত্মীয় , প্রতিবেশী বা বন্ধুত্বের বন্ধনে মিলেমিশে এক হয়ে থাকা, বাইরের মৃদু বায়ুতে শ্বাস-প্রশ্বাসের যে ভালো লাগা দিয়ে রেখেছেন, আমরা কি এখন উপলব্ধিতে আনতে পারছি!!! বর্তমান বিশ্বে এতো উন্নত প্রযুক্তি এতো  জ্ঞান বুদ্ধি সম্পন্ন জনবল-কিন্তু কেনো আজ পরিবেশের বেহাল অবস্থ!! কেনো মানুষ অক্ষম, দূর্বল অসহায়!!!!

তাহলে আখেরাতের ময়দানে কি অবস্থা হবে যখন জানতে পারবো এটাই চূড়ান্ত পরিনতি, আর দুনিয়াতে ফেরার বা ২য় বার কোন সুযোগ পাওয়া যাবে না!!!

তোমরা সেই দিনকে ভয় কর, যেদিন কেউ কারোর কোন কাজে আসবে না, কারোও সুপারিশ সবীকৃত হবে না, কারোও নিকট হতে ক্ষতিপূরণ গৃহীত হবে না এবং তারা কোন প্রকার সাহায্যও পাবে না। সূরা বাকারাঃ৪৮

হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর এবং সেদিনকে ভয় কর, যেদিন পিতা সন্তানের কোন উপকারে আসবে না, সন্তানও তার পিতার কোন উপকারে আসবে না।আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। সুতরাং পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রতারিত না করে এবং শয়তান যেন কিছুতেই আল্লাহ সম্পর্কে তোমাদেরকে ধোঁকায় না ফেলে। (সূরা  লুকমান: ৩৩)

সেদিন পলায়ন করবে মানুষ তার ভ্রাতার কাছ থেকে, তার মাতা, তার পিতা, তার পত্নী ও তার সন্তানদের কাছ থেকে। সেদিন প্রত্যেকেরই নিজের এক চিন্তা থাকবে, যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে।” (সূরা আবাসা:৩৪-৩৭)

মহান আল্লাহ আমাদের অনেক যত্ন করে সুন্দর করে সৃষ্টি করে দুনিয়াকে উপভোগ করার জন্য দুনিয়ার সবকিছু নির্দিষ্ট মাত্রায় দিয়ে রেখেছেন, উদ্দেশ্য যেনো আমরা সুস্থভাবে মহান রবের কৃতজ্ঞতায় তাঁরই ইবাদাত করে যাই।

আমি সৃষ্টি করেছি জিন এবং মানুষকে এ জন্য যে, তারা আমারই ইবাদত করবে। সূরা যারিয়াতঃ ৫৬

“যিনি করেছেন মরণ ও জীবন যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন- আমলের দিক দিয়ে তোমাদের মধ্যে কোন্‌ ব্যক্তি সর্বোত্তম? তিনি মহা শক্তিধর, অতি ক্ষমাশীল।”[সূরা আল-মুল্‌ক, আয়াত: ২]

‘আমার সালাত, আমার ইবাদত, আমার জীবন ও মৃত্যু আল্লাহর জন্য যিনি সমগ্র বিশ্বজাহানের মালিক।’সূরা আন’আমঃ১৬২

আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমরা কি মনে কর আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি। তোমরা আমার নিকট প্রর্ত্যাবর্তন করবে না। সত্যিকার বাদশা আল্লাহ মহান হোন। তিনি ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই; যিনি মহান আরশের অধিপতি।”[সূরা মুমিনূন, আয়াত: ১১৫, ১১৬]

আল্লাহ তাআলা বলেন: “আসমান-জমিন এবং এ দুইটির মাঝে যা কিছু আছে সে সব আমি তামাশা করে সৃষ্টি করিনি।”[সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ১৬]

আল্লাহ আরও বলেন: “আমি আসমান-জমিন আর এ দুটির মাঝে যা আছে সে সব তামাশা করে সৃষ্টি করিনি। আমি ও দুটিকে যথাযথ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।”[সূরা দুখান, আয়াত: ৩৮, ৩৯]

নিশ্চয় যমীনের উপর যা কিছু আছে আমরা সেগুলোকে তার শোভা করেছি, মানুষকে এ পরীক্ষা করার জন্য যে, তাদের মধ্যে কর্মে কে শ্রেষ্ঠ।”[সূরা কাহাফ,৭]

 “হা-মীম। এই কিতাব পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। নভোমন্ডল, ভূ-মন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু আমি যথাযথভাবেই এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্যেই সৃষ্টি করেছি। কাফেরদেরকে যে বিষয়ে সাবধান করা হয়েছে তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।”[সূরা আহকাফ, আয়াত: ১-৩]

 (ক)  তাওহীদের শিক্ষাকে এখন বাস্তবে উপলব্ধি করার আরেকবার সুযোগ করে দিয়েছেন আমাদের রব। এখনো কি আমরা জাগ্রত হবো না!! এখনো আমরা পূর্ণ সমর্পন করে দিবোনা রবের কাছে!! তাহলে কি মৃত্যুর ফেরেশতা চলে আসলে বোধোদয় আসবে! কিন্তু তখনতো লাভ নেই, তাওবার সকল রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। এখনই সময়  সকল প্রভুত্ব থেকে(বিশেষ করে নফসের) নিজেকে মুক্ত করে এক ও একমাত্র আল্লাহর প্রভুত্বকে মেনে আমল করা।

দ্বীনের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি বা বাধ্য বাধকতা নেই। অবশ্যই হেদায়াত গোমরাহী থেকে পৃথক হয়ে গিয়েছে, অতএব, যে ব্যক্তি তাগুতের সাথে কুফরি করল এবং আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন করল সে দৃঢ়তর রজ্জুকে আঁকড়িয়ে ধরল যা কখনো ছিন্ন হবার নয়। এবং আল্লাহ শ্রবনকারী মহাজ্ঞানী। [সূরা বাকারা ২৫৬]  

রব শব্দটি  দ্বারা উদ্দেশ্য, মালিক, সৃষ্টিকর্তা, রিযিক্বদাতা, নিয়ন্ত্রণকারী, আকৃতিদানকারী ও প্রতিপালনকারী। তাঁর অনুমতি ব্যতীত কিছুই হয় না এবং তাঁর অনুমতি ও ইচ্ছা ব্যতীত কোনো কিছু সামান্যতম নড়াচড়াও না।

আর তিনি হচ্ছেন এমন এক সত্তা, যিনি আসমানেও ইলাহ, আর যমীনেও ইলাহ এবং তিনি হাকীম ও আলীম-অতি কৌশলী, মহাজ্ঞানী (অর্থাৎ আসমান-যমীনে রাজত্ব করার জন্যে যে জ্ঞান ওকৌশল দরকার, তা সবই তাঁর আছে)    আয-যুখরুফঃ ৮৪

“নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, যিনি আসমানসমূহ ও যমীন ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশের উপর আরোহন করেছেন। তিনি রাতের ভেতর দিনকে প্রবেশ করান এমনভাবে যে, দিন দৌড়ে রাতের পেছনে আসে। তিনি সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজি সৃষ্টি করেছেন; সেগুলি তাঁর আদেশের অনুগামী। জেনে রেখো, তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান করা। বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ বরকতময়” (আ‘রাফ ৫৪)

সে বললো, আল্লাহ্‌র আশ্রয়! যিনি আমাকে ভালোভাবে রেখেছেন, তিনিই তো আমার রব। ইউসুফ-২৩

সুতরাং তাদের উচিত, এ ঘরের মালিকের ইবাদত করা, যিনি তাদের রিজিক সরবরাহের ব্যবস্থা করেছেন এবং ভয়-ভীতি থেকে তাদের নিরাপদ রেখেছেন। কোরাইশ-৩-৪

 বিশ্ব জাহানের রব, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আমাকে পথ প্রদর্শন করেন, পানাহার করান, আমি পীড়িত হলে আরোগ্য দান করেন, তিনি ব্যতীত তোমাদের এ সকল রব তো আমার দুশমন। শোয়ারা-৭৭-৮০

তোমরা যে নিয়ামত সম্ভোগই লাভ করেছো, তা লাভ করছো আল্লাহর তরফ থেকে। তারপর তোমাদের ওপর কোন বিপদ আপতিত হলে হতচকিত হয়ে তোমরা তাঁর হুজরেই প্রত্যাবর্তন করো। কিন্তু তিনি যখন তোমাদের বিপদ কেটে নেন, তখন তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে, যারা (নিয়ামত দান ও দুর্যোগ মুক্তিতে) আপন রব-এর সাথে অন্যদেরকেও শরীক করতে শুরু করে। আন- নাহাল-৫৪

বল, আল্লাহ ছাড়া আমি কি অপর কোন রব তালাশ করবো? অথচ তিনিই তো হচ্ছেন সব কিছুর রব। আল-আন আম-১৬৪

 তিনি মাশরিক-মাগরিব-প্রাচ্য-প্রতীচ্যের রব। তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, সুতরাং তাঁকেই তোমার উকিল (নিজের সকল ব্যাপারে জামিন ও জিম্মাদার) হিসাবে গ্রহণ করো। আল-মুজ্জাম্মিল- ৯

 অতপর তোমাদের রব- এর কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন।  যুমার-৭

তোমাদের আশে-পাশে যেসব জনপদের চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায় তার বাসিন্দাদের আমরা ধ্বংস করেছি। তারা যাতে প্রত্যাবর্তন করতে পারে এজন্যে আমরা তাদেরকে বারবার পর্যায়ক্রমে আমাদের নিদর্শন দেখিয়েছি। আল্লাহ্ কে ত্যাগ করে তারা যাদেরকে নৈকট্য লাভের মাধ্যমে মনে করে ইলাহ বানিয়ে নিয়েছিলো, তারা কেন তাদের সাহায়্য করে নি? সাহায্য করা তো দূরে থাক, বরং তারা তাদেরকে ছেড়ে উধাও হয়ে গিয়েছিলো। তাদের মিথ্যা মনগড়া আচরণের এটাই ছিলো স্বরূপ। আল আহকাফঃ ২৭-২৮

 মানব জাতি, তোমাদের প্রতি আল্লাহর যে অনুগ্রহ করয়েছে, তোমরা তা স্মরণ করো। আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন স্রষ্ট্রা আছেন কি যিনি আসমান-যমীন থেকে তোমাদেরকে রিজিক দেন/ তিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। তবুও তোমরা কোথায় ছুটে বেড়াচ্ছ? – ফাতিরঃ ৩

 খ) তাওবা ইস্তিগফার করে ফিরে আসা

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আমি ঐ সত্তার শপথ করে বলছি যার হাতে রয়েছে আমার প্রাণ— যদি তোমরা গুনাহ না করতে তবে আল্লাহ অবশ্যই তোমাদেরকে ধ্বংস করে এমন এক সম্প্রদায়কে সৃষ্টি করতেন, যারা গুনাহ করে আবার ক্ষমা প্রার্থনা করে।”[সহিহ মুসলিম (২৭৪৯)]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন: “প্রত্যেক বনী আদম গুনাহগার। আর গুনাহকারীদের মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে- তওবাকারীগণ।”[সুনানে তিরমিযি (২৪৯৯), আলবানী হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন]

“অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন, যারা ভুলবশতঃ মন্দ কাজ করে, অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে; এরাই হল সেসব লোক যাদের তওবা আল্লাহ কবুল করেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, রহস্যবিদ।”[সূরা নিসা, আয়াত ১৭]।

“অনতিবিলম্বে তওবা করে” এ কথার অর্থ হলো- মৃত্যুর আগে তওবা করে।

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা সবাই আল্লাহ্‌র কাছে তওবা কর, যাতে তোমরা সফল হও।”[সূরা নূর, ২৪:৩১]

আল্লাহ্‌ তাআলার রহমত অবারিত, বান্দার প্রতি তাঁর দয়া সর্বব্যাপী। তিনি সহিষ্ণু; তাৎক্ষণিকভাবে আমাদেরকে পাকড়াও করেন না, শাস্তি দেন না, কিংবা ধ্বংস করে দেন না। বরং আমাদেরকে সময় দেন।

তিনি তাঁর নবীকে নির্দেশ দিয়েছেন যাতে করে তিনি তাঁর মহানুভবতার ঘোষণা দেন:  “বলে দিন, ‘হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ! আল্লাহ্‌র রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ্‌ তো সব গুনাহ মাফ করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল, অসীম দয়ালু”।[সূরা যুমার, ৩৯:৫৩]

বান্দার প্রতি কোমল হয়ে তিনি বলেন: “তবে কি তারা আল্লাহ্‌র কাছে তওবা করবে না (ফিরে আসবে না), তাঁর কাছে ইস্তিগফার করবে না (ক্ষমাপ্রার্থনা করবে না)?! আল্লাহ্‌ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[সূরা মায়িদা, ৫:৭৪]

 “আর যে তওবা করে, ঈমান রাখে, সৎকাজ করে এবং সঠিক পথে অবিচল থাকে তার প্রতি আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল।”[সূরা ত্বহা, ২০:৮২]

“এবং আর যারা কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা নিজেদের প্রতি জুলুম করে ফেললে আল্লাহ্‌কে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ইস্তিগফার করে (ক্ষমা চায়)। আল্লাহ্‌ ছাড়া পাপ ক্ষমা করবে কে? আর তারা জেনেশুনে নিজেদের কৃতকর্মের ওপর জিদ ধরে থাকে না।”[সূরা আলে ইমরান, ৩:১৩৫]

“নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তাআলা রাতের বেলায় তাঁর হাত প্রসারিত করেন দিনের বেলায় পাপকারীর তওবা কবুল করার জন্য এবং তিনি দিনের বেলায় তাঁর হাত প্রসারিত করেন রাতের বেলায় পাপকারীর তওবা কবুল করার জন্য।”[সহিহ মুসলিম (২৭৫৯)]

আব্দুর রহমানের পিতা আব্দুল্লাহ্‌ বিন উমর বিন আল-খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তাআলা ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দার তওবা কবুল করেন যতক্ষণ পর্যন্ত না গড়গড় শব্দ (মৃত্যুর যন্ত্রণা) শুরু হয়।”[সুনানে তিরমিযি (৩৫৩৭)]

“আর হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ইস্তিগফার কর (ক্ষমা চাও), তারপর তওবা কর (তাঁর দিকে ফিরে আস); তাহলে তিনি আসমান থেকে তোমাদের ওপর বারিধারা বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের শক্তির সাথে আরো শক্তি বাড়িয়ে দেবেন। অতএব তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিও না।”[সূরা হুদ, ১১:৫২]

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “আর তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ইস্তিগফার কর (ক্ষমা চাও) ও তওবা কর (তাঁর দিকে ফিরে এসো)। তাহলে তিনি তোমাদেরকে এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সুন্দরভাবে (জীবনের সুখ) ভোগ করতে দেবেন এবং প্রত্যেক মর্যাদাবানকে তার (যথার্থ) মর্যাদা দেবেন।”[সূরা হুদ, ১১:৩]

যেহেতু আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “আর এমন লোকদের জন্য তওবা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে, এমন কি যখন তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকে আমি এখন তওবা করছি।” [সূরা নিসা, আয়াত ১৮]

কিন্তু তওবার পাঁচটি শর্ত রয়েছে। এ শর্তগুলো পূর্ণ করতে হবে। সেগুলো হচ্ছে-

ইখলাস (অকপটতা), কৃতপাপের জন্য অনুতপ্ত হওয়া, অনতিবিলম্বে পাপ ছেড়ে দেওয়া, ভবিষ্যতে পুনরায় গুনাহ না-করার দৃঢ় সংকল্প করা এবং তওবা কবুল হওয়ার সময়সীমার মধ্যে তওবা করা। অর্থাৎ তওবা করতে হবে মৃত্যু শুরু হওয়ার পূর্বে এবং পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় শুরু হওয়ার আগে।

গ) মহান রবের কৃতজ্ঞতা আদায় করা

অতএব, আল্লাহরই ইবাদত কর ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হও।’ (সূরা যুমার : ৬৬)

মুমিনের বিষয়াদি কত আশ্চর্যের! তার সবকিছুই কল্যাণকর। আর এটা তো কেবল মুমিনের ক্ষেত্রেই হতে পারে। সচ্ছলতায় সে শুকরিয়া আদায় করে, তখন তা তার জন্যে কল্যাণকর হয়। আর যদি তার ওপর কোনো বিপদ নেমে আসে তাহলে সে সবর করে, ফলে তাও তার জন্যে কল্যাণকর হয়ে যায়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৯৯৯

তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা আদায় কর তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে আরও বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অস্বীকার কর তাহলে আমার আজাব অবশ্যই কঠিন। -সূরা ইবরাহীম (১৪) : ৭

আর তুমি তোমার প্রভুর নিআমতের কথা বলো। -সূরা দুহা  : ১১

রাত জেগে জেগে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে নফল নামায পড়তে গিয়ে কখনো তাঁর পা ফুলে যেত। হযরত আয়েশা রা. একদিন তাই জানতে চাইলেন- আপনি এত কষ্ট করেন কেন, আল্লাহ কি আপনার আগে-পরের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেননি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন,

أَفَلاَ أُحِبُّ أَنْ أَكُونَ عَبْدًا شَكُورًا

আমি কি একজন কৃতজ্ঞ বান্দা হতে চাই না? -সহীহ বুখারীঃ ৪৮৩৭

হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

 الطَّاعِمُ الشَّاكِرُ لَهُ مِثْلُ أَجْرِ الصَّائِمِ الصَّابِرِ খেয়ে যে আল্লাহর শোকর আদায় করে সে ধৈর্যশীল রোযাদার ব্যক্তির সমান পুরস্কার লাভ করবে। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৭৬৫

একটি হাদীসের শেষাংশ-

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘মুআয! আমি তোমাকে বলছি, কখনোই নামাযের পরে এ দুআটি পড়তে ভুল করো না-

اللّهُمَّ أَعِنِّيْ عَلٰى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ  .

হে আল্লাহ! আপনার জিকির, আপনার কৃতজ্ঞতা ও শোকর আদায় এবং সুন্দর করে আপনার ইবাদত করতে আপনি আমাকে সাহায্য করুন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২১১৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৫২৪

আমি মানুষকে একটি মিশ্রিত বীর্য থেকে সৃষ্টি করেছি, যাতে তার পরীক্ষা নেয়া যায় এবং এ উদ্দেশ্যে আমি তাকে শ্রবণ শক্তি ও দৃষ্টিশক্তির অধিকারী করেছি। আমি তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি, চাইলে সে শোকরকারী হতে পারে বা কুফরকারী।” [সূরা আল-ইনসান: ২–৩]

আমি তাকে পথের নির্দেশ দিয়েছি হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে।’’ (সূরা দাহার ৩ আয়াত)

এরপর আমাদের আরো যা করনীয় তা হলো–

২। পরিবারে সময় দেয়া-

ভালোবাসার সদস্যদের নিয়ে যেনো দুনিয়া আখেরাতে সফল থাকা যায় তার জন্য কষ্ট করা। অবসরের এই সময়েই বেশী করে পরিকল্পিতভাবে সময় দেই পরিবার নামক শস্যক্ষেত্রে, উপড়িয়ে ফেলি আগাছাগুলোকে। পুষ্টি দেই সকলের অন্তরে(কুর’আন, হাদীস, সিরাহ) ।

‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে ও স্বীয় পরিবারবর্গকে আগুন (জাহান্নাম) হ’তে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। সেখানে অত্যন্ত কর্কশ, রূঢ় ও নির্মম স্বভাবের ফেরেশতা নিয়োজিত থাকবে, যারা কখনই আল্লাহর কথা অমান্য করে না এবং নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে’ (তাহরীম ৬)

সাবধান তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। ক্বিয়ামতের দিন তোমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। সুতরাং শাসক জনগণের দায়িত্বশীল। ক্বিয়ামতের দিন তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল, তাকে পরিবারের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। স্ত্রী তার স্বামীর সংসার এবং সন্তানের উপর দায়িত্বশীল। ক্বিয়ামতের দিন তাকে এ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। এমনকি দাস-দাসীও তার মালিকের সম্পদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। সেইদিন তাকেও তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। অতএব মনে রেখো, তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল, আর তোমাদের প্রত্যেককেই ক্বিয়ামতের দিন এই দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে’।বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩৫

৩। কুর’আন  তেলাওয়াত ও অধ্যয়নে সময় দেয়া ও অন্যকেও জানানো।

এমনভাবে কুর’আন পড়া যেনো জীবনকে পবিত্র পরিমার্জিত সুন্দর পূর্ণ মুসলিম হতে মন তাগাদা দেয়।

“এরা কি কুরআন গভীর মনোনিবেশ সহকারে চিন্তা করে না? এটি যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নিকট হতে আসতো, তবে এতে অনেক কিছুই বর্ণনা-বৈষম্য পাওয়া যেতো।” (আন-নিসা ৪:৮২)

“হে আল্লাহ! এদের প্রতি এদের জাতির মধ্য থেকেই এমন একজন রাসূল প্রেরণ কর, যিনি তাদেরকে তোমার আয়াতসমূহ পাঠ করে শুনাবেন। তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দান করবেন এবং তাদের বাস্তব জীবনকে পরিশুদ্ধ ও সুষ্ঠুরূপে পড়বেন। তুমি নিশ্চয়ই বড় শক্তিমান ও বিজ্ঞ।” (আল-বাকারা ২:১২৯)

কুরআন পাঠ কর, যাতে তুমি নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকার সামর্থ্য অর্জন করতে পার। এটা যদি তোমাকে নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত না রাখে, তাহলে বুঝতে হবে সত্যিকার অর্থে কুরআন পাঠ করাই হয়নি (তাবরানী)।

যারা কুরআন অধ্যয়ন নিয়োজিত ছিলেন তারা বলেছেন যে, হযরত উসমান ইবনে আফফান এবং আবদুল্লাহ ইবনে আফফান এবং আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা)-এর মতো লোক যাঁরা একবার দশটি আয়াত শিখলে আর সামনে অগ্রসর হতেন না যতক্ষণ পর্যন্ত তা বুঝতে এবং জীবনে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম না হতেন। তাঁরা বলতেন যে, তাঁরা কুরআন ও জ্ঞান একই সাথে শিখেছেন। আর এভাবেই অনেক সময় তাঁরা একটিমাত্র সূরা শিখতে বছরের পর বছর সময় লাগিয়ে দিতেন। (আল-ইতকান ফী উলুমিল কুরআন, সুয়ূতী)

এটি এক বরকতময় কিতাব, (হে নবী!) আমরা তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যেন এই লোকেরা এর আয়াতগুলো সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে এবং জ্ঞান-বুদ্ধি ও বিবেকবান লোকেরা তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে। (সাদ-৩৮:২৯)

আমরা এই কুরআনকে উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ মাধ্যম বানিয়ে দিয়েছি। এ হতে উপদেশ গ্রহণের কেউ আছে কি? (আল কাসাস ৫৪:১৭)

হে নবী! আমরা এই কিতাবকে তোমার ভাষায় খুব সহজ বানিয়ে দিয়েছি। যেন এই লোকেরা নসীহত গ্রহণ করে। (আদ দুখান ৪৪:৫৮)

আমরা এই কুরআনে লোকেদের সম্মুখে নানা রকম ও নানা প্রকারের দৃষ্টান্ত ও উপমা পেশ করেছি, যাতে এদেশ হুঁশ হয়। (আয যুমার ৩৯:২৭)

এতে অত্যন্ত শিক্ষামূলক সবক রয়েছে এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য, যার দিল আছে কিংবা যে খুব লক্ষ্য দিয়ে কথা বলে। (কাফ ৫০:৩৭)

৪।  সকল ফরয সুন্নাহ সালাত সহিহভাবে আদায়ে যত্নশীল হওয়া, সাথে নফল সালাত ও সাওমে অভ্যস্থ হওয়া, মসজিদে যেতে না পারার কারনে এই সময় বাসায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জামা’আতে সালাত আদায় করা।

৫। যিকিরঃ  সকাল বিকালের সহিহ যিকিরে অভ্যস্থ হওয়াসহ রাসূল সাঃ বিভিন্ন সময়ে যে যিকির ও দু’আ পড়তেন তা খুঁজে খুঁজে (অবশ্যই সহিহ রেফারেন্স আমল) আমল করা।

৬। সিরাহঃ  রাসূল স. এর জীবনীসহ সাহাবা আযমাঈনদের (রা) জীবনী থেকে শিক্ষা নেয়া।

৭। হাদীসঃ প্রতিদিন সিয়াহ সিত্তাহ ১টি হলেও পড়া, জানা, আমল করা ও অন্যকেও জানানো।

৮। আত্মীয় প্রতিবেশীর খোঁজ নেয়াঃ বর্তমান পরিস্থিতিতে ফোনেও আমরা এই কাজটি করতে পারি।

৯। একান্তে রবের সাথে সময় দেয়াঃ

একাকী  রবের সাথে সালাতে কাটানো ও দু’আয় মনোনিবেশ করা।  বিশেষ করে  শেষ রাতের  তাহাজ্জুদে  চোখের পানি ফেলে নিজের ও সকল মুসলিমের ক্ষমা ও অমুসলিমের হেদায়েতের জন্য চাওয়া।

১০। গরীবদের পাশে সহযোগীতার হাত বাড়ানোঃ 

   এই সময় সহযোগীতা করতে পারি  সুপরামর্শ ও দান সাদাকার মাধ্যমে। বিশেষ করে দিনমজুর যারা তাদের এই সময় খুব সাহায্যের প্রয়োজন। প্রত্যেকেই যদি যার যার বাড়ীর আশে পাশে, গ্রামের বাড়ীর আশে পাশের সাহায্যের জন্য হাত বাড়াই তাহলে ইন শা আল্লাহ রবের কাছে প্রতিদান পাওয়া যাবে।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন-  ইসলামের কোন্ কাজটি শ্রেষ্ঠ? তিনি বললেন-

تُطْعِمُ الطّعَامَ، وَتَقْرَأُ السّلاَمَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ.

খাবার খাওয়ানো এবং পরিচিত-অপরিচিত প্রত্যেককে সালাম দেওয়া। -সহীহ বুখারী, ১২; সহীহ মুসলিম, ৩৯

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রা. আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তাঁর প্রথম সাক্ষাতের বৃত্তান্ত এভাবে বয়ান করেছেন-     আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় এলেন লোকেরা দলে দলে সেদিক চলল। আর শোর উঠল রাসূলুল্লাহ এসে পড়েছেন! রাসূলুল্লাহ এসে পড়েছেন! রাসূলুল্লাহ এসে পড়েছেন! আমিও সকলের সাথে তাঁকে দেখার জন্য হাজির হলাম। তো তাঁর মুখম-ল গভীরভাবে নিরীক্ষণ করে আমার প্রত্যয় জন্মে গেল যে, এই (মোবারক) চেহারা কোনো মিথ্যুকের চেহারা হতে পারে না। এ সময় প্রথম যে কথাটি তাঁর মুখে শুনি তা এই-

‘লোকসকল! সালামের বিস্তার ঘটাও, খাবার খাওয়াও আর রাতে যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড়, তাহলে নিরাপদে জান্নাতে যেতে পারবে। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৩২৫১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৩৭৮৪; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৮৩৭৫;

আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ক্ষুধার্তকে খাদ্য খাওয়াও, রোগীর শুশ্রুষা করো এবং বন্দীকে মুক্ত করো। সুফ্ইয়ান বলেছেন, وَالْعَانِي অর্থ বন্দী। [৩০৪৬] আ প্রকাশনী- ৪৯৭৩, ই ফাউন্ডেশন- ৯ম খন্ড/৪৮৬৯)

মহানবী (সা.) বলেন, ‘দয়াশীলদের ওপর দয়াময় আল্লাহ দয়া করে থাকেন। তোমরা জমিনবাসীদের ওপর দয়া করো, আসমানবাসী (আল্লাহ) তোমাদের ওপর দয়া করবেন।’। (তিরমিজি : ১৯২৪; আবু দাউদ : ৪৯৪১)

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমরা কি দিইনি তাকে দুটি চোখ? এবং জিহ্বা ও দুটি ঠোঁট? আর আমরা তাকে দেখিয়েছি দুটি পথ। কিন্তু সে তো ধর্মের ঘাঁটিতে প্রবেশ করেনি। তুমি কি জানো ঘাঁটি কী? তা হলো দাসমুক্তি। অথবা ক্ষুধার দিনে এতিম নিকটাত্মীয়কে অথবা ভূলুণ্ঠিত অভাবগ্রস্তকে খাবার দেওয়া।’ (সুরা বালাদ, আয়াত : ৮-১৬)

 রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো গরিবের চলার পথ সহজ করে দেয়, দুনিয়া-আখিরাতে মহান আল্লাহ তার চলার পথ সহজ করে দেবেন।’ (আবু দাউদ : ২৫৯৪; তিরমিজি : ১৭০২)

আর তারা মহব্বত থাকা সাপেক্ষে অভাবগ্ৰস্ত, ইয়াতীম ও বন্দীকে খাবার দান করে ,এবং বলে, শুধু আল্লাহর সস্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমরা তোমাদেরকে খাবার দান করি, আমরা তোমাদের কাছ থেকে প্রতিদান চাই না, কৃতজ্ঞতাও নয়।নিশ্চয় আমরা আশংকা করি আমাদের রবের কাছ থেকে এক ভীতিপ্ৰদ ভয়ংকর দিনের।পরিণামে আল্লাহ তাদেরকে রক্ষা করবেন সে দিনের অনিষ্ট হতে এবং তাদেরকে প্ৰদান করবেন হাস্যোজ্জ্বলতা ও উৎফুল্লতা। আর তাদের সবরের পুরস্কারস্বরূপ তিনি তাদেরকে প্ৰদান করবেন। উদ্যান ও রেশমী বস্ত্ৰ। সূরা দাহরঃ৮-১২

 

মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে ক্ষমা করে তাঁর সন্তুষ্টি পাওয়া  মুক্তিপ্রাপ্ত বান্দাদের মাঝে শামিল করে নিন।

রোগ ও রোগী-ইসলাম কি বলে!-১৬ সাদাকা