দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে
মহান আল্লাহ আমাদের সহজ ও সঠিক পথে থাকার সুযোগ করে দিন। ভুলগুলো দূর করে দিন।
- ঈদের তাকবীর দেয়া ওয়াজিব (হানাফী মাযহাব মতে), অন্যান্য ইমামদের মতে এটা সুন্নাত,মালেকী, শাফে‘ঈ এবং হাম্বলী মাযহাব মতে ঈদুল ফিতরে “তাকবীর” বলা মুস্তাহাব (উত্তম)। ইমাম নববী রহ.ও এ ব্যাপারে ইজমা‘ বর্ণনা করেছেন।
ঈদের রাতে মাগরিব ও এশার নামাযের পরমুহূর্ত এবং ঈদের নামাযের পরবর্তী মুহূর্তের জন্য তাকবীর উচ্চারণ সীমাবদ্ধ নয়। এটাই হাম্বলী মাযহাবসিদ্ধ মত। অধিকাংশ শাফে‘ঈ মতাবলম্বীদের কাছে এটাই সঠিক ফতোয়া। ইমাম নববী, ইবনে তাইমিয়া ও ইবনে উসাইমিন রহ. এটাকেই গ্রহণ করেছেন।
ঈদের চাঁদ দেখার পর থেকেই তাকবীর দেয়া শুরু করাটাই সুন্নাহ। ঈদ সালাত আদায় পূর্ব পর্যন্ত চলবে তাকবীর।
এর মাধ্যমে একদিকে যেমন ঈদের আনন্দ প্রকাশ করা হয় অন্যদিকে আল্লাহর আনুগত্যের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। তাকবীর পড়ার নিয়ম হল,
الله أكبر الله أكبر ، لا إله إلا الله ، والله أكبر الله أكبر ، ولله الحمد
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লালাহু ওয়াল্লাহু আকবার। আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ্।
- ঈদের সালাতের পূর্বেই সাদাকায়ে ফিতর আদায় করে ফেলা ওয়াজিব।
- ফযরের সালাতের পর সূর্য উঠার পর ঈদের সালাত পড়ার আগে কিছু খাওয়া সুন্নাহ।
আনাস (রা:) বলেন, “নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতরের দিন কয়েকটা খেজুর না খেয়ে ঈদের মাঠে যেতেন না। আর তিনি তা বেজোড়
সংখ্যায় খেতেন।” (বুখারী)।
- মুসলমানগণ পরস্পরে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা। সাহাবীগণ রা ঈদ উপলক্ষে তা করতেন। তারা এই বলে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করতেন
”তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম” অর্থাৎ আল্লাহ আমাদের এবং আপনার (ইবাদত-বন্দেগী) কবুল করুন। (বায়হাকী (২/৩১৯)-সনদ হাসান
- গোসল করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া তারপর সুগন্ধি ব্যাবহার করে ও সাধ্যানুযায়ী সবচেয়ে সুন্দর কাপড় পরিধান করাটা উত্তম।
- ঈদের নামায আদায় করা প্রত্যেকের উপর ওয়াজিব। এটাই হানাফী মাযহাবের স্বতঃসিদ্ধ মত। ইমাম শাফে‘ঈ এর প্রকাশ্য মতও তাই, তাছাড়া এটি ইমাম আহমদ রহ এর একটি বর্ণনা। অনুরূপভাবে মালেকী মাযহাবের ইবনে হাবীবের প্রকাশ্য মতও তাই। ইবনে তাইমিয়া, ইবন বায এবং ইবন উসাইমিন রহ. এটিকেই পছন্দ করেছেন।
বর্তমান অবস্থা(করোনা আক্রান্ত পরিবেশে,মহামারি থেকে নিরাপদ রাখার উদ্দেশ্যে সাবধানতা অবলম্বনের জন্য) পরিপ্রেক্ষিতে ঈদের সালাত ঈদগাহে না যেয়ে যার যার বাড়ীতেই আদায় করার নির্দেশনা দিয়েছেন আলেম ওলামা ও রাষ্ট্রপ্রধানরা।
এই প্রেক্ষিতে বাড়িতে কিভাবে সালাত আদায় করবেন তা জানা ও সঠিকভাবে ইবাদাত করা আমাদের সকলেরই কর্তব্য।
বর্তমান করোনা ভাইরাসে মহামারির সময়ে ঈদের সালাত বাসায় পড়ার সিদ্ধান্ত এসেছে আলেম ওলামা থেকে। নারীরাও ঘরে পরিবারের সাথে জাম’আতে সালাত আদায় করে নিতে পারবে।
“কর্তব্য হল, পর্দানশীন কুমারী মেয়েরা; এমন কি ঋতুবতী মহিলারাও ঈদগাহে যাবে। তবে ঋতুবর্তী মহিলাগণ নামাযের স্থান থেকে দূরে অবস্থান করে কল্যাণময় কাজ এবং মুমিনদের দু’আতে শরীক হবে।” (বুখারীঃ হাদীস নং ৯২৭)
কীভাবে ঈদের নামাজ বাড়ির মধ্যে আদায় করতে হবে এ বিষয়ে মক্কার শীর্ষ আলেমগণ বলেন, ‘নামাজ পড়তে সালাত শুরু করার জন্য তাকবীর পাঠ করবে এবং সূরা ফাতিহা উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করার আগে আরও ছয় তাকবীর সহকারে তা অনুসরণ করবে এবং তারপরে সূরা আল-কাফ পড়া উত্তম।’ দ্বিতীয় রাকাতের শুরুতে তাকবীরের পরে পাঁচটি তাকবীর থাকবে আবার সূরা ফাতিহা তেলাওয়াত শুরুর আগে এবং পরে নবী করীম (সা.) এর উদাহরণ অনুসরণ করে সূরা-কামার পড়বে। প্রতিটি রাকাতে যথাক্রমে সূরা আল-কাফ এবং আল-কামারের পরিবর্তে সূরা আ’লা ও আল-গাশিয়া পাঠ করা উত্তম। ঈদের নামাজের সময় সূর্যোদয়ের পরে শুরু হয় এবং সবচেয়ে ভালো সময়টি হলো এক বা দুটি বর্শার উচ্চতায় যখন সূর্য ওঠে। এর অর্থ সূর্যোদয়ের ১৫ থেকে ৩০ মিনিটের পর ঈদের নামাজ পড়ার উপযুক্ত সময় বলে আলেমগণ মত দিয়েছেন। এটি যোহরের আগ পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। তবে সূর্য ওঠার মুহূর্তে ঈদের নামাজ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ঈদের নামাযের জন্য কোন আযান বা ইকামত শরীয়ত প্রদত্ত নয়। ইবনে রুশদ, ইবনে কুদামা ও ইরাকী রহ. এ ব্যাপারে ইজমা‘ বর্ণনা করেছেন।
উত্তর
আলহামদুলিল্লাহ।
ঈদের নামাযের পদ্ধতি হচ্ছে- ইমাম মুসল্লিদেরকে নিয়ে দুই রাকাত নামায আদায় করবেন। উমর (রাঃ) বলেন: ঈদুল ফিতর এর নামায হচ্ছে- দুই রাকাত এবং ঈদুল আযহার নামায হচ্ছে- দুই রাকাত। আপনাদের নবীর বাণী অনুযায়ী এটাই পরিপূর্ণ নামায; কসর (রাকাত-সংখ্যা হ্রাসকৃত) নয়। যে ব্যক্তি মিথ্যা বলবে সে ব্যর্থ হবে।[সুনানে নাসাঈ (১৪২০), সহিহ ইবনে খুযাইমা এবং আলবানী ‘সহিহুন নাসাঈ’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন] আবু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহের উদ্দেশ্য বের হতেন। তিনি সর্বপ্রথম যা দিয়ে শুরু করতেন সেটা হচ্ছে নামায।[সহিহ বুখারী (৯৫৬)]
প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরিমা দিবেন। তারপর ছয়টি কিংবা সাতটি তাকবীর দিবেন। দলিল হচ্ছে আয়েশা (রাঃ) এর হাদিস: “ঈদুল ফিতরের নামায ও ঈদুল আযহার নামাযে প্রথম রাকাতে সাত তাকবির ও দ্বিতীয় রাকাতে পাঁচ তাকবির; রুকুর দুই তাকবির ছাড়া”।[সুনানে আবু দাউদ, আলবানি ‘ইরওয়াউল গালিল’ গ্রন্থে (৬৩৯) হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]
এরপর প্রথম রাকাতে ‘সূরা ফাতিহা’ ও ‘সূরা ক্বাফ’ পড়বেন। দ্বিতীয় রাকাতের জন্য তাকবির দিয়ে দাঁড়াবেন। দাঁড়ানো শেষ হলে পাঁচ তাকবির দিবেন এবং সূরা ফাতিহা পড়বেন। এরপর اقتربت الساعة وانشق القمر (সূরা ক্বামার) পড়বেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই ঈদের নামাযে এই সূরাদ্বয় তেলাওয়াত করতেন। আর ইচ্ছা করলে তিনি প্রথম রাকাতে ‘সূরা আ’লা’ ও দ্বিতীয় রাকাতে ‘সূরা গাশিয়া’ পড়তে পারেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি ঈদের নামাযে সূরা আ’লা ও সূরা গাশিয়া তেলাওয়াত করতেন।
ঈদের নামাযের ইমামের উচিত এই সূরাগুলো তেলাওয়াত করার সুন্নাহকে পুনর্জীবিত করা; যেন মুসলমানেরা এ সুন্নাহকে জানতে পারে এবং কাউকে আমল করতে দেখলে ভ্রু না-কুচকে না ফেলে।
ঈদের নামাযের পর ইমাম সাহেব মুসল্লিদেরকে উদ্দেশ্য করে খোতবা দিবেন। খোতবার মধ্যে নারীদেরকে উদ্দেশ্য করেও কিছু কথা বলা উচিত। নারীদের যা কিছু করা উচিত তাদেরকে সে নির্দেশনা দিবে এবং যা কিছু থেকে তাদের বিরত থাকা উচিত সে সম্পর্কে তাদেরকে নিষেধ করবে, যেমনিভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছেন।
[দেখুন: শাইখ মুহাম্মদ বিন উছাইমীন এর ‘ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম’ পৃষ্ঠা-৩৯৮ এবং ‘ফাতাওয়াল লাজনাহ্ আদ-দায়িমা’ (৮/৩০০-৩১৬)]