কুরআনের বিভিন্ন সূরার ফযীলত
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا لَا أَقُولُ الم حَرْفٌ وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلَامٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ- رواه الترمذي
“যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করে, তাকে একটি নেকি প্রদান করা হয়। প্রতিটি নেকি দশটি নেকির সমান। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ, মীম একটি হরফ।”[তিরমিযী, সহীহ-দ্রষ্টব্য সহীহুত তিরমিযী হা/১৯১০]
সুতরাং যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করবে সে উক্ত সওয়াব লাভ করবে ইনশাআল্লাহ- চাই বুঝে পড়ুক অথবা না বুঝে পড়ুক, দেখে পড়ুক অথবা মুখস্থ পড়ুক, মুসহাফ দেখে পড়ুক অথবা মোবাইল, ল্যাপটপ ইত্যাদি ডিভাইস থেকে পড়ুক, নামাজের মধ্যে পড়ুক অথবা নামাজের বাইরে পড়ুক।
পরকালে কুরআন সুপারিশ করবে
রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমরা কুরআন পাঠ কর। কেননা কিয়ামত দিবসে কুরআন তার পাঠকের জন্য সুপারিশকারী হবে। (মুসলিম) অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ্র রাসূল (সা.) বলেন, কিয়ামতের দিন সিয়াম ও কুরআন বান্দার জন্য আল্লাহ্র কাছে সুপারিশ করবে। (আহমাদ, হাকেম)
আল্লামা মাউসিলী বলেন, কুরআনের ফযীলতের বিষয়ে কিছু হাদীস সহীহ, তবে এ বিষয়ে অনেক বানোয়াট হাদীস সমাজে প্রচার করা হয়েছে। নিম্নলিখিত সূরা বা আয়াতের বিষয়ে বিশেষ মর্যাদা বা ফযীলত জ্ঞাপক সহীহ বা হাসান হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
১। সূরা ফাতিহা
আবু সাইদ রাফে’ ইবনে মুআল্লা (রাঃ) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বললেন, “মসজিদ থেকে বের হবার পূর্বেই তোমাকে কি কুরআনের সব চেয়ে বড় (মাহাত্ম্যপূর্ণ) সূরা শিখিয়ে দেব না?” এই সাথে তিনি আমার হাত ধরলেন। অতঃপর যখন আমরা বাহিরে যাওয়ার ইচ্ছা করলাম, তখন আমি নিবেদন করলাম, “ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ)! আপনি যে আমাকে বললেন তোমাকে অবশ্যই কুরআনের সব চেয়ে বড় (মাহাত্ম্যপূর্ণ) সূরা শিখিয়ে দেব?’ সুতরাং তিনি বললেন, “(তা হচ্ছে) ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন’ (সূরা ফাতেহা), এটি হচ্ছে ‘সাবউ মাসানি (অর্থাৎ নামাযে বারংবার পঠিতব্য সপ্ত আয়াত ) এবং মহা কুরআন; যা আমাকে দান করা হয়েছে”। [সহীহুল বুখারি ৪৪৭৪]
২। সূরা ইখলাস
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত , রাসূলুল্লাহ (সাঃ) (সূরা) ‘কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ সম্পর্কে বলেছেন, “সেই মহান সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রান আছে, নিঃসন্দেহে এটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য”।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবাগনকে বললেন, ‘তোমরা কি এক রাতে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়তে অপারগ?’ প্রস্তাবটি তাদের পক্ষে ভারী মনে হল। তাই তারা বলে উঠলেন ‘হে আল্লাহর রাসূল! এ কাজ আমাদের মধ্যে কে করতে পারবে?’ ( অর্থাৎ কেও পারবে না।) তিনি বললেন, “কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ, আল্লাহুস সামাদ” (সূরা ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য”। (অর্থাৎ, এই সূরা পড়লে এক তৃতীয়াংশের কুরআন পড়ার সমান নেকী অর্জিত হয়।) (সহীহুল বুখারিঃ ৫০১৫)
উক্ত সাহাবী (রাঃ) আরো বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি কোন লোককে সূরাটি বারবার পড়তে শুনল। অতঃপর সে সকালে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিকট এসে তা ব্যক্ত করল। সে সূরাটিকে নগণ্য মনে করেছিল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, “সেই সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ আছে, নিঃসন্দেহে এই সূরা (ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান”। [সহীহুল বুখারি ৫০১৫]
আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) (সূরা) ‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ সম্পর্কে বলেছেন, “নিঃসন্দেহে এটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য”। [মুসলিম ৮১২]
আনাস (রাঃ) হতে বর্নিত, এক ব্যক্তি নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি এই (সূরা) ‘কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ ভালবাসি। তিনি বললেন, ‘ এর ভালবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে’। [সহীহুল বুখারি ৭৭৪]
৩। সূরা ফালাক ও সূরা নাস, সূরা কাফেরুন
উকবাহ বিন আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একদা বললেন, ‘তুমি কি দেখনি, আজ রাতে আমার উপর কতকগুলি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে; যার আনুরূপ আর কিছু দেখা যায়নি? (আর তা হল,) ‘কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক্ক’ ও ‘কুল আউযু বিরাব্বিল নাস’। [মুসলিম ৮১৪]
আবূ সাঈদ খুদরী ( রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন ‘রাসূলুল্লাহ (সূরা ফালাক্ক ও নাস অবতীর্ণ হবার পূর্ব পর্যন্ত নিজ ভাষাতে) জিন ও বদ নজর থেকে (আল্লাহর) আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। পরিশেষে যখন উক্ত সূরা দু’ টি অবতীর্ণ হল, তখন ঐ সূরা দু’টি দ্বারা আশ্রয় প্রার্থনা করতে লাগলেন এবং অন্যান্য সব পরিহার করলেন’। [তিরমিজী ২০৫৮]
সুরা কাফেরুনঃ
জনৈক সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে আরয করলেন, আমাকে নিদ্রার পূর্বে পাঠ করার জন্যে কোন দোআ বলে দিন। “তিনি সূরা কাফিরূন পাঠ করতে আদেশ দিলেন এবং বললেন এটা শির্ক থেকে মুক্তিপত্র।” [আবু দাউদ: ৫০৫৫, সুনান দারমী: ২/৪৫৯, মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৫৩৮]
অন্য হাদীসে এসেছে, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সূরা ‘কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন’ কুরআনের এক চতুর্থাংশ”। [তিরমিযী: ২৮৯৩, ২৮৯৫]
৪। সূরা মূলক
আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘কুরআনের তিরিশ আয়াতবিশিষ্ট একটি সূরা এমন আছে , যা তার পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করবে এবং শেষাবধি তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে,সেটা হচ্ছে ‘তাবা-রাকাল্লাযী বিয়্যাদিহিল মূলক’ (সূরা মূলক)। [আবূ দাউদ ১৪০০]
৫। সূরা বাক্বারা
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বললেন, একদা জিবরাইল (আঃ) নবী(সাঃ)-এর নিকট বসে ছিলেন। এমন সময় উপর থেকে একটি শব্দ শুনতে পেলেন। তিনি (জিবরাইল) মাথা তুলে বললেন, ‘এটি আসমানের একটি দরজা, যা আজ খোলা হল। ইতোপূর্বে এটা কখনও খোলা হয় নাই। ওদিক দিয়ে একজন ফেরেশতা আবতির্ন হল। এই ফেরেশতা যে দুনিয়াতে অবতরণ করেছে,ইতোপূর্বে কখনও অবতরণ করেনি। সুতরাং তিনি এসে নবী (সাঃ)-কে সালাম জানিয়ে বললেন, ‘‘আপনি দুটি জ্যোতির সুসংবাদ নিন। যা আপনার আগে কোন নবীকে দেওয়া হই নাই। (সে দুটি হচ্ছে) সূরা ফাতেহা ও সূরা বাক্কারার শেষ আয়াতসমূহ । ওর মধ্যে হতে যে বর্নটিই পাঠ করবেন, তাই আপনাকে দেওয়া হবে।’’ [মুসলিম ৮০৬]
আবূ মাসাঊদ বদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে সূরা বাক্বারার শেষ আয়াত দু’টি পাঠ করবে, তার জন্য সেই দু’টি যথেষ্ট হবে’। [সহীহুল বুখারি ৪০০৮]
আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা নিজিদের ঘর-বাড়িগুলোকে কবরে পরিণত করো না। কেননা, যে বাড়িতে সূরা বাক্কারা পাঠ করা হয়, সে বাড়ি থেকে শয়তান পলায়ন করে’। [মুসলিম ৭৮০]
৬। আয়াতুল কুরসী পড়ার ফযীলত
উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘হে আবূ মুনযির! তুমি কি জান,মহান আল্লাহর গ্রন্থ (আল-কুরাআন) এর ভিতর তমার যা মুখস্থ আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় (মর্যাদাপূর্ণ) আয়াত কোনটি?’ আমি বললাম, ‘সেটা হচ্ছে আয়াতুল কুরসী।’ সুতরাং তিনি আমার বুকে চাপড় মেরে বললেন, ‘আবুল মুনযির! তোমার জ্ঞান তোমাকে ধন্য করুক’। [মুসলিম ৮১০]
আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বললেন (একবার) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে রমযানের জাকাত(ফিৎরার মাল-ধন) দেখাশোনা করার দায়িত্ব দেন। বস্তুতঃ ( আমি পাহারা দিচ্ছিলাম ইত্যবসরে) একজন আগমনকারী এসে আজঁলা ভরে খাদ্যবস্তু নিতে লাগল। আমি তাকে ধরলাম এবং বললাম, ‘তোকে অবশ্যই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) –এর কাছে পেশ করব।’ সে আবেদন করল,আমি একজন সত্যিকারের অভাবী। পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব আমার উপর, আমার দারুন অভাব।’ কাজেই আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।
সকালে (রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট হাযির হলাম) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘হে আবূ হুরাইরা! গত রাতে তোমার বন্দী কী আচারন করেছে’? আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সে তার অভাব ও (অসহায়) পরিবার-সন্তানের অভিযোগ জানাল। সুতরাং তার প্রতি আমার দয়া হলে আমি তাকে ছেড়ে দিলাম ।’ তিনি বললেন, ‘ সতর্ক থেকো, সে আবার আসবে’।
আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর আনুরুপ উক্তি শুনে সুনিশ্চিত হলাম যে, সে আবার আসবে। কাজেই আমি তার প্রতীক্ষায় থাকলাম। সে (পুর্ববৎ) এসে আজঁলা ভরে খাদ্যবস্তু নিতে লাগল। আমি বললাম, ‘অবশ্যই তোকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) –এর কাছে পেশ করব ।’ সে বলল, ‘আমি অভাবী, পরিবারের দায়িত্ব আমার উপর, (আমাকে ছেড়ে দাও) আমি আর আসব না ।’সুতরাং আমার মনে দয়া হল। আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।
সকালে উঠে (যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে গেলাম তখন) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বললেন, ‘‘আবূ হুরাইরা! গত রাতে তোমার বন্দী কী আচারন করেছে’? আমি বললাম, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ)! সে তার অভাব ও অসহায় সন্তানের-পরিবারের অভিযোগ জানাল। সুতরাং আমার মনে দয়া হলে আমি তাকে ছেরে দিলাম’। তিনি বললেন, ‘ সতর্ক থেকো, সে আবার আসবে’। সুতরাং তৃতীয়বার তার প্রতীক্ষায় রইলাম। সে (এসে)আজঁলা ভরে খাদ্যবস্তু নিতে লাগল। আমি তাকে ধরে বললাম ‘‘এবারে তোকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) –এর দরবারে হাযির করবই।’ এটা তিনবারের মধ্যে শেষবার । ‘ফিরে আসবো না’ বলে তুই আবার ফিরে এসেছিস ।’’ সে বলল ‘তুমি আমাকে ছেড়ে দাও, আমি তোমাকে এমন কতকগুলি শব্দ শিখিয়ে দেব, যার দ্বারা আল্লাহ তোমার উপকার করবেন ।’ আমি বললাম ‘সেগুলি কী?’ সে বলল, ‘যখন তুমি (ঘুমাবার জন্য) বিছানাই যাবে, তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ ক’রে (ঘুমাবে) তাহলে তোমার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রক্ষক নিযুক্ত হবে।
আর সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান আসতে পারবে না’। সুতরাং আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। আবার সকালে (রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে গেলাম) তিনি আমাকে বললেন, ‘‘তোমার বন্দী কী আচারন করেছে?’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সে বলল, ‘‘ আমি তোমাকে এমন কতিপয় শব্দ শিখিয়ে দেব, যার দ্বারা আল্লাহ আমার কল্যাণ করবেন ।’’ বিধায় আমি তাকে ছেড়ে দিলাম তিনি বললেন ‘‘সে শব্দগুলি কী?’’ আমি বললাম, ‘সে আমাকে বলল, ‘‘যখন তুমি বিছানাই (শোয়ার জন্য) যাবে, তখন আয়াতুল কুরসী শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ‘আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম’ পড়ে নেবে ।’’সে আমাকে আর বলল, “তার কারনে আল্লাহর তরফ থেকে সর্বদা তোমার জন্য একজন রক্ষক নিযুক্ত থাকবে। আর সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান আসতে পারবে না’’।
(এ কথা শুনে) তিনি (সাঃ) বললেন, ‘‘শোনো ! সে নিজে ভীষণ মিথ্যাবাদী; কিন্তু তোমাকে সত্য কথা বলেছে। হে আবূ হুরাইরা! তুমি জান, তিন রাত ধরে তুমি কার সাথে কথা বলছিলে?’’ আমি বললাম, ‘জী না ।’ তিনি বললেন, ‘‘সে ছিল শয়তান’’। [সহীহুল বুখারী ২৩১১]
৭। সূরা কাহফ
আবূ দার্দা (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি সূরা কাহফের প্রথম দিক থেকে দশটি আয়াত মুখস্ত করবে,সে দাজ্জালের(ফিৎনা) থেকে পরিএাণ পাবে।’’ অন্য বর্ণনায় ‘কাহফ সূরার শেষ দিক থেকে’ উল্লেখ হয়েছে। [মুসলিম ৮০৯]
রাতের বেলায় যে সকল সূরা ও আয়াত পড়ার ব্যাপারে হাদিস বর্ণিত হয়েছে সেগুলো নিম্নরূপ:
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিরাত্রে সূরা বনী ইসরাঈল ও আয-যুমার পড়তেন। [মুসনাদে আহমাদঃ ৬/১৮৯, তিরমিযীঃ ২৯২০]
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুরা ‘আলিফ লাম তানযিল’ (সাজদাহ) এবং সুরা ‘তাবারাকাল্লাজি’ (মুলক) পড়ে ঘুম যেতেন।’ (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, মিশকাত)
প্রশ্ন: হাদীসে বর্ণিত হয়েছে রাতের বেলা ১০০ আয়াত পাঠ করলে সারা রাত নফল নামাযের সওয়াব পাওয়া যায়। এখন প্রশ্ন হল, এই ১০০ আয়াত তেলাওয়াত করার ক্ষেত্রে আমরা নামাযে যে সব সুরা পাঠ করি সেগুলোও কি এর আওতাভুক্ত হবে নাকি নামাযের বাইরে আলাদা ভাবে তেলাওয়াত করতে হবে? বিষয়টি জানালে উপকৃত হবো।
উত্তর: প্রথমে আমরা এ মর্মে বর্ণিত দুটি হাদিস দেখবো।
তামীম দারী রা. থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
قَالَ مَنْ قَرَأَ مِائَةَ آيَةٍ فِي لَيْلَةٍ كُتِبَ لَهُ قُنُوتُ لَيْلَةٍ
“যে ব্যক্তি এক রাতে একশ’টি আয়াত পাঠ করবে, সে ব্যক্তির আমলনামায় ঐ রাতের ইবাদত বন্দেগী ও নফল নামাযের সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হবে।”(আহমাদ ১৬৯৫৮, নাসাঈ কুবরা ১০৫৫৩, ত্বাবারানী ১২৩৮, দারেমী ৩৪৫০, সিলসিলাহ সহীহাহ ৬৪৪)
তিনি আরও বলেছেন,.
مَنْ قرأَ في ليلةٍ مِائةَ آيَةٍ لمْ يُكْتَبْ مِنَ الغَافِلِينَ أوْ كُتِبَ مِنَ القَانِتِينَ
“যে ব্যক্তি রাতে ১০০ আয়াত তিলাওয়াত করে তাকে গাফেলদের (অন্যমনস্ক, অমনোযোগীদের) মাঝে লিপিবদ্ধ করা হবে না। অথবা তাকে আল্লাহর আনুগত্যশীল বান্দাদের মাঝে লিপিবদ্ধ করা হবে।”
(ইমাম মুহাম্মদ বিন নাসর আল মারওয়াযী রহ. ক্বিয়ামুল লাইল, পৃ:৬৬; শাইখ আলবানী সিলসিলা সহীহাহ গ্রন্থে বলেন, এ হাদীসে শাইখাইন তথা ইমাম বুখারী ও মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ। হা/৬৪৩)
উপরোক্ত হাদীসদ্বয়ে কেবল রাতের বেলা ১০০টি আয়াত পড়ার কথা বলা হয়েছে। নামাযের ভিতরে না কি বাইরে সে ব্যাপারে কিছু বলা হয় নি। তাহলে আশা করা যায়, নামাযের ভিতরেই হোক অথবা বাইরে হোক রাতে একশত আয়াত পড়া হলে উক্ত মর্যাদা লাভ করা যাবে ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহু আলাম ▬▬▬❖❖❖▬▬▬
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল, সৌদি আরব