বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
বিতর সালাতঃ
বিতর অর্থই হলো বেজোড়। বিত্র নামায একটানা এক সালামে ৯, ৭, ৫, ৩, ১ রাকআত পড়া যায়
ইমাম আবু হানিফা (রঃ)এর মতে বিতর নামায ওয়াজিব। ইমাম মালেক, শাফেয়ী ও আহমদ ইবনে (রঃ)সহ অধিকাংশ ইমাম, মুহাদ্দিছ ও আলেমের মতে বিতর নামায ওয়াজিব নয় বরং তা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ্। ইমাম আবু হানীফা যে সকল হাদীসের আলোকে বিতর নামাযকে ওয়াজিব বলেন, তা অধিকাংশ যঈফ বা দূর্বল অথবা তা দিয়ে এ নামাযকে ওয়াজিব সাব্যস্ত করা যায় না। তাই তাঁর প্রসিদ্ধ দু’ছাত্র ইমাম ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান (রহঃ) ইমামের সাথে একমত না হয়ে অধিকাংশ ইমামের ন্যায় এ নামাযকে সুন্নাতে মুআক্কাদাহ্ হিসেবে আখ্যা দেন।
বিতর নামাজের গুরুত্ব ও ফযীলত অনেক বেশী।যেমনঃ
খারেজাহ্ ইবনে হুযাফাহ্ (রাঃ) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা আমাদের নিকট এসে বললেন: নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে একটি নামায দিয়ে অনুগ্রহ করেছেন। উহা তোমাদের জন্য লাল উটের চাইতে উত্তম। তা হচ্ছে বিতর নামায। এ নামায আদায় করার জন্য তিনি সময় নির্ধারণ করেছেন, এশার নামাযের পর থেকে ফজর উদিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত।
আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ নামায, অনুচ্ছেদঃ বিতর নামায মুস্তাহাব, হা/১২০৮। তিরমিযি, অধ্যায়ঃ নামায, অনুচ্ছেদঃ বিতর নামাযের ফযীলত, হা/৪১৪।
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতর নামায পড়েছেন এবং বলেছেন, হে কুরআনের অনুসারীগণ তোমরা বিতর নামায পড়। কেননা আল্লাহ তা’আলা একক, তিনি বিতর নামায পছন্দ করেন।
আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ বিতর নামায, অনুচ্ছেদঃ বিতর নামায মুস্তাহাব হা/১৪১৬। ছহীহ ইবনু মাজাহ্- আলবানী হা/১/১৯৩।
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ নামায গুরুত্ব সহকারে আদায় করতেন। এমনকি সফরে গেলেও এ নামায পড়া ছাড়তেন না।
ইবনু উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফর অবস্থায় ফরয নামায ব্যতীত রাতের নফল নামায ইঙ্গিতের মাধ্যমে নিজ বাহনের উপর বসে- বাহন যে দিকে যায় সে দিকেই- পড়তেন। তিনি বিতর নামায আরোহীর উপর পড়তেন। বুখারী, অধ্যায়ঃ জুমআর নামায, অনুচ্ছেদঃ সফরে বিতর পড়া, হা/৯৪৫।
রাক’আত সংখ্যাঃ
আব্দুল্লাহ ইবনে আবী কাইস বলেন- قلت لعائشة : بكم كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر؟ قالت: كان يوتر بأربع وثلاث, وست وثلاث, وثمان وثلاث, وعشر وثلاث, ولم يكن يوتر بأنقص من سبع, ولا بأكثر من ثلاث عشرة. অর্থাৎ আমি হযরত আয়েশা রা.-এর কাছে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবীজী বিতরে কত রাকাত পড়তেন? উত্তরে তিনি বলেন, চার এবং তিন, ছয় এবং তিন, আট এবং তিন, দশ এবং তিন। তিনি বিতরে সাত রাকাতের কম এবং তের রাকাতের অধিক পড়তেন না। -সুনানে আবু দাউদ ১/১৯৩, হাদীস ১৩৫৭ (১৩৬২); তহাবী শরীফ ১/১৩৯; মুসনাদে আহমদ ৬/১৪৯, হাদীস ২৫১৫৯
আবূ নুমান (রহঃ) … আনাস ইবনু সীরীন (রহঃ) খেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি ইবনু উমার (রাঃ) কে বললাম, ফজরের পূর্বের দু’রাকাআতে আমি কিরাআত দীর্ঘ করব কি না, এ সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তিনি বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ দু’ রাকাআত করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন এবং এক রাকাআত মিলিয়ে বিতর পড়তেন। এরপর ফজরের সালাতের পূর্বে তিনি দু’রাকাআত এমন সময় আদায় করতেন যেন একামতের শব্দ তার কানে আসছে। রাবী হাম্মদ (রহঃ) বলেন, অর্থ্যাৎ দ্রুততার সাথে। (সংক্ষিপ্ত কিরাআতে)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু সীরীন (রহঃ) পুনঃনিরীক্ষণঃ সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর মসজিদে এশা নামায আদায় করতেন, অতঃপর এক রাকাত বিতর পড়তেন, এর বেশি নয়। তাঁকে বলা হত, আবু ইসহাক্ব? আপনি এক রাকাতের বেশি বিতর আদায় করেন না? তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি বিতর না পড়ে নিদ্রা যায় না সে দৃঢ়তা সম্পন্ন লোক।” [ মুসনাদে আহমাদ হা/১৩৮২।]
এশার ছালাতের সাথে বিতর পড়ে নিলেও তাহাজ্জুদের ছালাত আদায় করতে পারবে। তবে তাহাজ্জুদ শেষে দ্বিতীয়বার বিতর পড়া যাবে না। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, এক রাতে দু’বার বিতর ছালাত নেই (আবুদাউদ হা/১৪৩৯; ছহীহুল জামে হা/৭৫৬৭)।
বিতর সালাত পড়ার পদ্ধতিঃ
ক) এক রাকাত বিতর: এক রাকাত বিতর পড়ার নিয়ম হল, নিয়ত বেঁধে ছানা, সূরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরা পড়ে রুকূ করবে। রুকূ থেকে উঠে দুআ কুনূত পড়বে। তারপর দু’টি সিজদা করে তাশাহুদ, দরূদ ও দুআ পড়ে সালাম ফিরাবে। আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ] ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻣَﺜْﻨَﻰ ﻣَﺜْﻨَﻰ ﻭَﻳُﻮﺗِﺮُ ﺑِﺮَﻛْﻌَﺔٍ[ রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের নফল নামায দু’দু রাকাত করে পড়তেন এবং এক রাকাত বিতর পড়তেন। বুখারী (বাংলা) হাদীস নং ৯৩৬, ৯৩২, ৯৩৪, মুসলিম হা/১২৫১।
আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে আরো বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ] ﺍﻟْﻮِﺗْﺮُ ﺭَﻛْﻌَﺔٌ ﻣِﻦْ ﺁﺧِﺮِ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ[ বিতর হচ্ছে শেষ রাতে এক রাকাত নামায। মুসলিম, অ্যধায়ঃ মুসাফিরের নামায, অনুচ্ছেদঃ রাতের নামায দু’দুরাকাত করে এবং বিতর শেষ রাতে এক রাকাত হা/ ১২৪৭
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻣِﺠْﻠَﺰٍ ﻗَﺎﻝَ ﺳَﺄَﻟْﺖُ ﺍﺑْﻦَ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﻋَﻦِ ﺍﻟْﻮِﺗْﺮِ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﺭَﻛْﻌَﺔٌ ﻣِﻦْ ﺁﺧِﺮِ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻭَﺳَﺄَﻟْﺖُ ﺍﺑْﻦَ ﻋُﻤَﺮَ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﺭَﻛْﻌَﺔٌ ﻣِﻦْ ﺁﺧِﺮِ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ[ আবু মিজলায হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)কে বিতর নামায সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, বিতর হচ্ছে শেষ রাতে এক রাকাত নামায। তিনি বলেন, ইবনু ওমরকেও এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছি। তিনিও বলেন, আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, বিতর হচ্ছে শেষ রাতে এক রাকাত নামায। মুসলিম, অ্যধায়ঃ মুসাফিরের নামায, অনুচ্ছেদঃ রাতের নামায দু’দুরাকাত করে এবং বিতর শেষ রাতে এক রাকাত হা/ ১২৪৯
ইমাম নবুবী বলেন, এসকল হাদীছ থেকে দলীল পাওয়া যায় যে, বিতর নামায এক রাকাত পড়া বিশুদ্ধ এবং তা শেষ রাতে আদায় করা মুস্তাহাব। শরহে নবুবী ছহীহ মুসলিম, ৬/২৭৭।
খ) তিন রাকাত বিতরঃ এ নামায পড়ার বিশুদ্ধ পদ্ধতি হচ্ছে দু’টি।
প্রথম পদ্ধতিঃ
দু’রাকাত পড়ে সালাম ফেরানো। অতঃপর এক রাকাত পড়া। এ পদ্ধতির দলীল হলো- আবদুল্লাহ্ ইবনে উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ] ﺃَﻥَّ ﺭَﺟُﻼ ﺳَﺄَﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻋَﻦْ ﺻَﻼﺓِ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡ ﺻَﻼﺓُ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻣَﺜْﻨَﻰ ﻣَﺜْﻨَﻰ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺧَﺸِﻲَ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢُ ﺍﻟﺼُّﺒْﺢَ ﺻَﻠَّﻰ ﺭَﻛْﻌَﺔً ﻭَﺍﺣِﺪَﺓً ﺗُﻮﺗِﺮُ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﻗَﺪْ ﺻَﻠَّﻰ [ জনৈক ছাহাবী রাতের নামায সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে জিজ্ঞেস করল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, রাতের নামায দু’দু রাকাত করে, যখন ফজর হওয়ার আশংকা করবে তখন এক রাকাত বিতর পড়ে নিবে। ছহীহ বুখারী, অধ্যায়ঃ বিতর নামায, অনুচ্ছেদঃ বিতরের বর্ণনা। হা/৯৩২ (বাংলা বুখারী)
এ পদ্ধতি অনুযায়ী বিতর মূলত এক রাকাতই। দু’রাকাত পড়ে সালাম ফিরানো অতঃপর এক রাকাত পড়া। যেমন ইবনে ওমর (রাঃ)কে জিজ্ঞেস করা হল দু’দু রাকাত মানে কি? তিনি বললেন: প্রত্যেক দু’রাকাত পর পর সালাম ফিরাবে। মুসলিম- হা/১২৫২।
ইবনে ওমর (রাঃ), ইমাম মালেক, শাফেয়ী, আহমাদ, ইসহাক, প্রমুখ এভাবেই বিতর পড়তেন। আল মুগনী ২/৫৮৯।
দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ
দু’রাকাত পড়ে তাশাহুদের জন্য না বসে সালাম না ফিরিয়ে একাধারে তিন রাকাত পড়ে সালাম ফেরানো। এ কথার দলীল, হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি রাকাত বিতর নামায পড়তেন। এর মধ্যে তাশাহুদের জন্যে বসতেন না, একাধারে তিন রাকাত পড়ে শেষ রাকাতে বসতেন ও তাশাহুদ পড়তেন। রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতর নামাযে প্রথম রাকাতে ‘সাব্বেহিসমা রাব্বিকাল আ’লা’, দ্বিতীয় রাকাতে ‘কুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফেরূন’ এবং তৃতীয় রাকাতে ‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ পড়তেন। আর সবগুলো রাকাত শেষ করেই সালাম ফেরাতেন।নাসাঈ, অধ্যায়ঃ ক্বিয়ামুল্লায়ল ও নফল নামায, অধ্যায়ঃ বিতরের ক্ষেত্রে উবাই বিন কা’বের হাদীছ বর্ণনায় বর্ণনাকারীদের বাক্যের মধ্যে বিভিন্নতা। হা/১৬৮১।
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতর নামাযকে মাগরিবের সাথে সাদৃশ্য করে পড়তে নিষেধ করেছেন। আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ] ﻻَ ﺗُﻮﺗﺮُﻭﺍ ﺑِِﺜَﻼَﺙٍ ﺗَﺸَﺒَّﻬُﻮﺍ ﺑِﺼَﻼَﺓِ ﺍﻟﻤَﻐْﺮِﺏِ، ﻭﻟﻜِﻦْ ﺃﻭْﺗِﺮُﻭﺍ ﺑِﺨَﻤْﺲٍ ﺃﻭ ﺑﺴﺒﻊٍ ﺃﻭ ﺑِﺘِﺴْﻊٍ ﺃﻭْ ﺑِِﺎﺣﺪَﻯ ﻋَﺸَﺮَﺓ[ তোমরা মাগরিবের নামাযের সাথে সাদৃশ্য করে তিন রাকাত বিতর পড়না; বরং পাঁচ রাকাত দ্বারা বা সাত রাকাত দ্বারা বা নয় রাকাত দ্বারা কিংবা এগার রাকাত দ্বারা বিতর পড়। তাহাভী, দারাকুতনী, ইবনু হিব্বান ও হাকিম হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। হাকিম হাদীছটিকে বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী ছহীহ আখ্যা দিয়েছেন এবং ইমাম যাহাবী সমর্থন করেছেন। ইবনু হাজার ও শাওকানীও ছহীহ্ বলেছেন। (দ্রঃ ফাতহুল বারী, ২/৫৫৮, নায়লুল আউতার ৩/৪২-৪৩। শায়খ আলবানীও ছহীহ আখ্যা দিয়েছেন (দ্রঃ ছালাতু তারাবীহ্- ৮৪ ও ৯৭ পৃঃ)
শায়খ আলবানী বলেন, ‘তিন রাকাত বিতর দু’তাশাহুদে পড়লেই তা মাগরিবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়। আর হাদীছে এটাকেই নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু যদি একেবারে শেষ রাকাতে বসে তবে কোন সাদৃশ্য হবে না। হাফেয ইবনু হাজার ফাতহুল বারীতে – ফাতহুলবারী, ৪/৩০১।
একথাই উল্লেখ করেছেন এবং ছানআনী সুবুলস্ সালামে[65] এই পদ্ধতিকে উত্তম বলেছেন।’ ছালাতুত্ তারাবীহ্- আলবানী, পৃঃ ৯৭
সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, বিতর নামাযকে মাগরিবের মত করে আদায় করা তথা দু’তাশাহুদে অর্থাৎ- দু’রাকাতের পর তাশাহুদ পড়ে সালাম না ফিরিয়ে এক রাকাত পড়া সুন্নাতের পরিপন্থী যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য /৩০১।
বিতরের সময়ঃ
উমর ইবনু হাফস (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) খেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের সকল অংশে (অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন রাতে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে) বিতর আদায় করতেন আর (জীবনের) শেষ দিকে সাহরীরর সময় তিনি বিতর আদায় করতেন। সহীহ বুখারীঃ৯৪২ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
মুসাদ্দাদ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (রাতে) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন, তখন আমি তার বিছানায় আড়াআড়িভাবে ঘুমিয়ে থাকতাম। এরপর তিনি যখন বিতর পড়ার ইচ্ছা করতেন, তখন আমাকে জাগিয়ে দিতেন এবং আমিও বিতর আদায় করে নিতাম।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) পুনঃনিরীক্ষণঃ সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)ঃ৯৪৩
মহানবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, সে শেষ রাত্রে উঠতে পারবে না, তার জন্য উত্তম হল প্রথম রাত্রে বিত্র পড়ে নেওয়া। পক্ষান্তরে যে ধারণা করে যে, সে শেষ রাত্রে উঠতে পারবে তার জন্য উত্তম হল শেষ রাত্রে বিত্র পড়া। কারণ, শেষ রাতের নামাযে ফিরিশ্তা উপস্থিত হন এবং এটাই হল শ্রেষ্ঠতম।” (আহমাদ, মুসনাদ, মুসলিম, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, মিশকাত ১২৬০নং)
একদা তিনি হযরত আবূ বাক্র (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কখন বিত্র পড়?” আবূ বাক্র (রাঃ) বললেন, ‘প্রথম রাত্রে এশার পরে।’ অতঃপর তিনি হযরত উমার (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, “আর উমার তুমি?” উমার (রাঃ) বললেন, ‘শেষ রাতে।’ পরিশেষে তিনি বললেন, “কিন্তু তুমি হে আবূ বাক্র! স্থির-নিশ্চয়তা অবলম্বন করে থাক। আর তুমি হে উমার! (শেষ রাতে উঠার পূর্ণ) আত্মবিশ্বাস গ্রহণ করে থাক।” (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক)
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার প্রাণপ্রিয় বন্ধু আমাকে তিনটি বিষয়ে উপদেশ দিয়েছেন, মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আমি উহা পরিত্যাগ করব না। ১) প্রত্যেক মাসে তিনটি নফল রোযা (প্রত্যেক আরবী মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ)
২) চাশতের নামায (ছালাতুয্ যুহা),
৩) নিদ্রা যাওয়ার পূর্বে বিতর নামায পড়া। বুখারী, হা/১১০৭ মুসলিম,
রাতের শেষ সালাতঃ
মুসাদ্দাদ (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) খেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিতরকে তোমাদের রাতের শেষ সালাত (নামায/নামাজ) করবে। সহীহ বুখারীঃ৯৪৪ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, বিতর নামাযকে রাতের শেষ নামায করতে হবে। সুতরাং কেউ যদি তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করতে চায় সে তাহাজ্জুদের পরে বিতর পড়বে আর কেউ যদি তাহাজ্জুদ পড়তে না চায় তাহলে ইশার সুন্নতের পরেই বিতর পড়ে নিবে। কেননা, এটাই তার রাতের শেষ নামায। আর তা ১ রাকাআত, ৩ রাকাআত, ৫ রাকাআত বা অন্যান্য হাদীসে বর্ণিত যে কোন সংখ্যায় পড়তে পারে।
সফরে বিতর সালাতঃ
মূসা ইবনু ইসমায়ীল (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে ফরজ সালাত (নামায/নামাজ) ব্যতীত তার সাওয়ারীতে থেকেই ইশারায় রাতের সালাত আদায় করতেন। সাওয়ারী যে দিকেই ফিরুক না কেন, আর তিনি বাহনের উপরেই বিতর আদায় করতেন। সহীহ বুখারীঃ৯৪৬ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
বিতর সালাতে কি পড়তেনঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রথম রাকাআতে “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল ‘আলা” (৮৭ : ১৯) দ্বিতীয় রাকাআতে “কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন” (১০৯ : ৬) এবং তৃতীয় রাকাআতে “কুল হুয়াল্লাহু আহাদ” (১১২ : ৪) পড়তেন। নাসাঈ ও হাকিম এবং তিনি একে ছহীহ বলেছেন।
কখনো সূরা ইখলাছের সাথে তৃতীয় রাকাআতে “কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক” (১১৩ : ৫) ও “কুল আউযু বিরাব্বিন না-স” (১১৪ : ৬) যোগ করতেন। তিরমিযী, আবুল আব্বাস আল আছম্ম স্বীয় ‘হাদীছ’ গ্রন্থে (২য় খণ্ড ১১৭ নং), হাকিম এবং তিনি একে ছহীহ বলেছেন ও যাহাবী তার সাথে একমত পোষণ করেছেন।
একবার বিতরের (বেজোড়) রাকাআতে তিনি সূরা ‘নিসা’ (৪ : ১৭৬) থেকে একশত আয়াত পাঠ করেন। নাসাঈ ও আহমাদ ছহীহ সনদে।
বিতর ছালাতের পরের দু’রাকাআতেএই দুই রাকাআত পড়া ছহীহ মুসলিম ও অন্যান্য কিতাবে সাব্যস্ত আছে।
‘ইয-যুলাযিলাত’ (৯৯ : ৮) ও ‘কুল ইয়া-আইয়ুহাল কাফিরুন’ পাঠ করতেন। আহমাদ, ইবনু নাছর, ত্বাহাবী (১/২০০২) ইবনু খুযাইমাহ ও ইবনু হিব্বান, হাসান ছহীহ সনদে।
বিতরের নামাযের সালাম ফি্রিয়ে দুআ:
سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْقُدُّوْسِ،
উচ্চারণ: সুবহা-নাল মালিকিল কুদ্দূস।
অর্থ: আমি পবিত্রময় বাদশাহ্র পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি।
এই দুআটি তিনবার পড়তে হয়। তন্মধ্যে তৃতীয় বারে উচ্চস্বরে পড়া কর্তব্য। (আবূদাঊদ, সুনান, নাসাঈ, সুনান, মিশকাত ১২৭৪-১২৭৫নং)
বিতরের পর নফল ২ রাকআ্তঃ
ব্যতিক্রম নামায হল, বিতরের পরে ২ রাকআত সুন্নত বসে বসে পড়া। মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, রসূল (সাঃ) (বিত্র নামাযের) সালাম ফিরার পর বসে বসে ২ রাকআত নামায পড়তেন। (মুসলিম, সহীহ) হযরত উম্মে সালামাহ্ বলেন। ‘তিনি বিতরের পর বসে বসে (হাল্কা করে) ২ রাকআত নামায পড়তেন।’ (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, মিশকাত ১২৮৪নং)
মহানবী (সাঃ) বলেন, “নিশ্চয় এই (সফর) রাত্রি জাগরণ ভারী ও কষ্টকর। সুতরাং তোমাদের কেউ যখন বিত্র পড়বে তখন সে যেন ২ রাকআত পড়ে নেয়। অতঃপর সে যদি রাত্রে উঠতে পারে তো উত্তম। নচেৎ, ঐ ২ রাকআত তার (রাতের নামায) হয়ে যাবে।” (দারেমী, সুনান, মিশকাত ১২৮৬, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১৯৯৩নং দ্র:)
উক্ত হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, ঐ ২ রাকআত পড়া উত্তম। আর তা মহানবী (সাঃ)-এর জন্য খাস নয়।
আবূ উমামাহ্ বলেন, ‘নবী (সাঃ) ঐ ২ রাকআত নামায বিতরের পর বসে বসে পড়তেন। আর তার প্রথম রাকআতে সূরা যিলযাল ও দ্বিতীয় রাকআতে সূরা কাফিরুন পাঠ করতেন।’ (আহমাদ, মুসনাদ, মিশকাত ১২৮৭নং)
বিতর সালাতে দু’আ কুনূতঃ
সমাজে প্রচলিত কথা যে কুনূত পড়া ওয়াজিব যা সহিহ নয়।
এটা একটি দু’আ। বিতরের কুনূতকে কুনূতে গায়র নাযেলাহ্ বলা হয়। আর তা সব সময় প্রত্যেক রাত্রে বিত্র নামাযে পড়া হয়। অবশ্য কুনূতের দুআ পড়া মুস্তাহাব; জরুরী নয়। সুতরাং কেউ ভুলে ছেড়ে দিয়ে সিজদায় গেলে সহু সিজদা লাগে না। যেমন প্রত্যেক রাত্রে তা নিয়মিত না পড়ে মাঝে মাঝে ত্যাগ করা উচিত। (সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ১৭৯পৃ:, আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৪/২৭)
বিতর সালাতের শেষ রাক’আতের কির’আত করার পর রুকু করার পূর্বে বা পরে দু’আ কুনূত পড়া যায়।
কুনূতের দুআ (শেষ রাকআতের) রুকুর আগে বা পরে যে কোন স্থানে পড়া যায়। হুমাইদ বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, কুনূত রুকূর আগে না পরে? উত্তরে তিনি বললেন, ‘আমরা রুকূর আগে ও পরে কুনূত পড়তাম।’ (ইবনে মাজাহ্, সুনান, মিশকাত ১২৯৪নং)
অনুরুপ (দুআর মত)হাত তোলা ও না তোলা উভয় প্রকার আমলই সলফ কর্তৃক বর্ণিত আছে। (তুহ্ফাতুল আহওয়াযী ১/৪৬৪)
বিতর নামাজের/সালাতের দুআ কুনুতঃ
اَللَّهُمَّ اهْدِنِيْ فِيْمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِىْ فِيْمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِيْ فِيْمَنْ تَوَلَّيْتَ، وَبَارِكْ لِيْ فِيْمَا أَعْطَيْتَ، وَقِنِيْ شَرَّ مَا قَضَيْتَ، فَإِنَّكَ تَقْضِىْ وَلاَ يُقْضَى عَلَيْكَ، إنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَّالَيْتَ، وَ لاَ يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ، تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ، وَصَلَّى اللهُ عَلَى النَّبِىِّ-
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মাহ্দিনী ফীমান হাদায়িত , ওয়া ‘আ-ফিনী ফীমান ‘আ-ফাইত, ওয়া তাওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লাইত, ওয়া বা-রিকলি ফীমা ‘আ‘ত্বাইত, ওয়া ক্বিনী শাররা মা ক্বাযাইত; ফাইন্নাকা তাক্বযী ওয়া লা ইয়ুক্বযা ‘আলাইক, ইন্নাহূ লা ইয়াযিল্লু মাঁও ওয়া-লাইত, ওয়া লা ইয়া‘ইয্ঝু মান্ ‘আ-দাইত, তাবা-রকতা রববানা ওয়া তা‘আ-লাইত, ওয়া সাল্লাল্লা-হু ‘আলান্ নাবী’।
অনুবাদ : হে আল্লাহ! তুমি যাদেরকে সুপথ দেখিয়েছ, আমাকে তাদের মধ্যে গণ্য করে সুপথ দেখাও। যাদেরকে তুমি মাফ করেছ, আমাকে তাদের মধ্যে গণ্য করে মাফ করে দাও। তুমি যাদের অভিভাবক হয়েছ, তাদের মধ্যে গণ্য করে আমার অভিভাবক হয়ে যাও। তুমি আমাকে যা দান করেছ, তাতে বরকত দাও। তুমি যে ফায়ছালা করে রেখেছ, তার অনিষ্ট হ’তে আমাকে বাঁচাও। কেননা তুমি সিদ্ধান্ত দিয়ে থাক, তোমার বিরুদ্ধে কেউ সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। তুমি যার সাথে বন্ধুত্ব রাখ, সে কোনদিন অপমানিত হয় না। আর তুমি যার সাথে দুশমনী কর, সে কোনদিন সম্মানিত হ’তে পারে না। হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি বরকতময় ও সর্বোচ্চ। আল্লাহ তাঁর নবীর উপরে রহমত বর্ষণ করুন
[সুনানু আরবা‘আহ, দারেমী, মিশকাত হা/১২৭৩ ‘বিতর’ অনুচ্ছেদ-৩৫; ইরওয়া হা/৪২৯, ২/১৭২।]
দিনের বেলা বিতর সালাত কাযা করলে তা জোড় সংখ্যায় পড়ার দলীল ও আলেমদের মতামত:
সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان إذا فاتته الصلاة من الليل ـ من وجع أو غيره ـ صلى من النهار ثنتي عشرة ركعة.
“যদি কখনো নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে নিদ্রা জনিত কারণে বা অসুস্থতার কারণে রাতে ক্বিয়ামুল্লায়ল (তাহাজ্জুদ) আদায় করতে অপারগ হতেন, তবে দিনের বেলায় ১২ রাকাত নামায আদায় করতেন।”
(সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: মুসাফিরের নামায, অনুচ্ছেদ: রাতের যাবতীয় নামায এবং যে ব্যক্তি নামায না পড়ে ঘুমিয়ে থাকবে বা অসুস্থ হয়ে যাবে। (এটি দীর্ঘ একটি হাদীছের অংশ বিশেষ) হা/১২৩৩)
এ হাদীস থেকেই অনেক আলেম বলেন, দিনের বেলা বেজোড় নামায নেই। যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো বেজোড় পড়েন নি।উক্ত হাদীস থেকে ইবনে তাইমিয়া রহঃ. বলেন,
الصحيح أنه يقضي شفعه معه
“বিশুদ্ধ মত হল, (দিনের বেলা) কিয়ামুল্লায়ল (তাহাজ্জুদ) এর সাথে বিতর জোড় সংখ্যায় পড়বে”
আল্লামা উসাইমীন রহ. বলেন:
যোহা (অপরাহ্ণ) এর সময় এক রাকাআত যোগ করে বিতর পড়বে। তোমার যদি তিন রাকআত পড়ার অভ্যাস থাকে তাহলে চার রাকাআত পড়বে আর পাঁচ রাকআতের অভ্যাস থাকলে ছয় রাকাআত পড়বে। এরপর তিনি আয়েশা রা. থেকে উপরোক্ত হাদীসটি দ্বারা দলীল পেশ করেন।
সউদী আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি শাইখ বিন বায. একই মত পোষণ করেন।
উল্লেখ্য যে, কোন ব্যক্তি যদি বিতর নামায অন্য রাতে কাযা করতে চায় তাহলে তখন যথানিয়মে (অর্থাৎ বেজোড় সংখ্যায়) আদায় করতে হবে। জোড় সংখ্যায় পড়ার বিষয়টি কেবল দিনে কাযা করার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।
প্রশ্নঃ যিনি শেষ রাতে তাহাজ্জুদ আদায় করতে চান তিনি কি ইমামের সাথে বিতিরের নামায পড়বেন?
দুটো পদ্ধতি হতে পারে:
প্রথমত : আপনি ইমামের সাথে বিতিরের নামায আদায় করে ফেলবেন। তারপর দুই রাকাত রাকাত করে আপনার সুবিধামত যত রাকাত সম্ভব তাহাজ্জুদ নামায আদায় করে নিবেন। তবে বিতিরের সালাত পুনরায় পড়বেন না। কারণ এক রাতে দুইবার বিতির পড়া যায় না।
দ্বিতীয়ত : আপনি বিতিরের নামায শেষ রাতেরজন্য রেখে দিবেন। অর্থাৎ ইমাম যখন বিতিরের সালাত আদায় শেষে সালাম ফিরাবেন তখন আপনি সালাম না ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে যাবেন এবং অতিরিক্ত এক রাকাত যোগ করবেন যাতে শেষ রাতে আপনি বিতির আদায় করতে পারেন।
শাইখ ইবনে বাযরাহিমাহুল্লাহকে প্রশ্ন করা হয়েছিল: ইমাম বিতিরের সালাত আদায় শেষ করলে কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে যায় এবং অতিরিক্ত এক রাকাত যোগ করে যাতেশেষ রাতে তিনি বিতির পড়তে পারেন। এই আমলের হুকুম কি? এতে কি তিনি “ইমামের সাথে সালাত সম্পন্ন করেছেন” ধরা যাবে?তিনি উত্তরে বলেন: “আমরা এতে কোন দোষ দেখি না। আলেমগণএটা পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন।তিনি এটা করেন যেন বিতির (বেজোড়) নামাযটা শেষ রাতেই আদায় করতে পারেন। তাঁর ক্ষেত্রে এ কথা বলাও সত্য হবে যে, “ইমাম শেষ করা পর্যন্ত তিনি ইমামের সাথে নামায আদায় করেছেন”। কারণ ইমাম নামায শেষ করা পর্যন্ত তিনি তো ইমামের সাথে ক্বিয়াম করেছেন এবং এরপর তিনি এক রাকাত যোগ করেছেনঅন্য একটি শরয়ি কল্যাণের কারণে। সেটা হলো-বিতির (বেজোড়) নামাযটা যাতে শেষ রাতেআদায় করা যায়। তাই এতে কোন সমস্যা নেই। অতিরিক্ত এ রাকাতেরকারণে এ ব্যক্তি ‘যারা ইমামের সাথে শেষ পর্যন্ত নামায পড়েছেন’ তাদের দল থেকে বের হয়ে যাবে না। বরং তিনি তো ইমামের সাথে সম্পূর্ণ নামায আদায় করেছেন। তবে ইমামের সাথে নামায শেষ করেননি;কিছুটা বিলম্বে শেষ করেছেন।” সমাপ্ত
[মাজমূ ফাতাওয়াইবনে বায ( ১১/৩১২)]
শাইখ ইবনে জিবরীনহাফিজাহুল্লাহকে এই প্রশ্নের মত একটি প্রশ্ন করা হয়েছিল, উত্তরে তিনি বলন: “মুক্তাদির ক্ষেত্রে উত্তম হল ইমামের অনুসরণ করা, যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি তারাবী ও বিতির নামাযশেষ করেন। যাতে করে তার ক্ষেত্রে এই কথা সত্য হয় যে তিনি ইমামের সাথে ইমাম শেষ করা পর্যন্ত সালাত আদায় করেছেন এবং তারজন্য সারারাত ক্বিয়াম করার সওয়াব লেখা হয়; যেমনটি ইমাম আহমাদ ও অন্যান্য ‘আলেমগণ হাদিস রেওয়ায়েত করেছেন।”
এর উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, যদি তিনি তাঁর (ইমামের) সাথে বিতির নামায আদায় করেন তবে শেষ রাতে বিতির নামায আদায় করার প্রয়োজন নেই। যদি তিনি শেষ রাতে উঠেন তবে তিনি তার জন্য যত রাকাত সম্ভব তা জোড় সংখ্যায় (অর্থাৎ দুই দুই রাকা‘আত করে) আদায় করবেন। বিতিরের পুনরাবৃত্তি করবে না, কারণ এক রাতে দুইবার বিতির হয় না।
আর কিছু আলেম ইমামের সাথে বিতিরকেজোড় বানিয়ে (অর্থাৎ এক রাকাত যোগ করে) পড়াকে উত্তম হিসেবে গণ্য করেছেন। তা হল এভাবে যে ইমাম সালাম ফিরানো শেষে তিনি অতিরিক্ত এক রাকাত সালাত আদায় করে তারপর সালাম ফিরাবেন এবং বিতিরের নামায শেষরাতে তাহাজ্জুদের সাথে পড়ার জন্য রেখে দিবেন । এর দলীল হচ্ছে- নবীসাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণী
( فَإِذَاخَشِيَأَحَدُكُمْالصُّبْحَصَلَّىرَكْعَةًوَاحِدَةًتُوتِرُلَهُمَاقَدْصَلَّى )
“আপনাদের মধ্যে কেউ ফজর হয়ে যাওয়ার আশংকা করলে আদায় করা সালাতের সাথে এক রাকাত বিতির পড়ে নিবেন।”
তিনি আরও বলেছেন :
( اجْعَلُواآخِرَصَلاتِكُمْبِاللَّيْلِوِتْرًا
“আপনারা বিতিরের (বেজোড়ের) মাধ্যমে আপনাদের রাতের সালাত সমাপ্ত করুন।”সমাপ্ত[ফাতাওয়া রমজান (পৃঃ ৮২৬)]
আল-লাজ্নাদ-দায়িমা দ্বিতীয় ব্যাপারটিকে উত্তম বলে ফতোয়াদিয়েছে।
[ফাতাওয়াল্ লাজনাহ আদ্দায়িমা (ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র) (৭/২০৭)]
আমরা আল্লাহর কাছে আপনার জন্য তাওফিক ও দ্বীনি অটলতার দোয়া করছি।আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।
সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব
প্রশ্ন: রমাযান মাসে রাতে বেশি বেশি নফল ইবাদত করা উত্তম। এখন আমি যদি তারাবীহ পড়ার পর ভোররাতে আবার তাহাজ্জুদ পড়তে চাই তাহলে কি ঠিক হবে? ঠিক হলে কিভাবে পড়ব দয়া করে বুঝিয়ে বলবেন।
উত্তর:
রমযান মাসে অধিক পরিমাণে কিয়ামুল লায়ল বা রাতের নফল সালাত আদায় করা অত্যন্ত ফযিলত পূর্ণ কাজ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সোওয়াবের আশায় রমাযানে কিয়ামুল লাইল বা রাতের নফল সালাত আদায় করবে তার পূর্বের সমস্ত (ছোট) গুনাহ মোচন হয়ে যাবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
এই রাতের নফল সালাত যেমন রাতের প্রথমাংশে (ইশার সালাতের পর) পড়া যায় তেমনি রাতের শেষাংশেও পড়া যায়। যদি কেউ ১মাংশে পড়ে তাহলে তাকে ‘তারাবীহ’ বলে আর যারা শেষাংশে পড়ে তাকে তাহাজ্জুদ বলা হয়।
এ প্রসঙ্গে নিচের হাদিসটি দেখুন:
আব্দুর রাহমান বিন আব্দুল কাদের বলেন: রমাযানের এক রাতে আমি উমর রা. এর সাথে মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম, লোকজন বিচ্ছিন্নভাবে (নফল) নামায পড়ছে। কেউ একাকি নামায আদায় করছে। কেউ বা কয়েকজনকে নিয়ে জামাআত করছে। এ অবস্থা দেখে উমর রা. বললেন, “এ সমস্ত লোককে একজন ক্বারীর পেছনে নামায পড়ার জন্য একত্রিত করা হলে তা হবে অতি উত্তম।”
অতঃপর তিনি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন এবং উবাই ইবনে কা’ব রা. এর পেছনে নামায পড়ার জন্য লোকজনকে একত্রিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন।
এরপর আরেক রাতে তাঁর সাথে বের হলাম। এ সময় লোকজন উক্ত ক্বারীর পেছনে জামাতবদ্ধ হয়ে নামায আদায় করছিলেন। এটা দেখে উমর রা. বললেন: “এ নতুন পদ্ধতিটি কত চমৎকার!
যারা এখন ঘুমাচ্ছে (কিন্তু শেষ রাতে আদায় করবে) তারা এখন যারা পড়ছে তাদের চেয়ে উত্তম। এ সময় মানুষ প্রথম রাতেই কিয়ামুল লাইল করত।” (সহীহ বুখারী, অধ্যায়: ইতিকাফ, সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: ইতিকাফ)
উক্ত হাদীসে উমর রা. এর উক্তি “যারা এখন ঘুমাচ্ছে (কিন্তু শেষ রাতে আদায় করবে) তারা এখন যারা পড়ছে তাদের চেয়ে উত্তম” থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে, ১ম রাতের ও শেষ রাতের সালাত (অর্থাৎ তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ) একই সালাত।
মোটকথা, আপনি কিয়ামুল্লায়ল (রাতের নফল সালাত) যত রাকাতই পড়ুন না কেন (যেমন, ১১, ২৩, ৩৩, ৪৩ রাকাত বা এর চেয়ে কম বা বেশি ) আপনার সুবিধা অনুযায়ী রাতের প্রথমাংশে, মধ্যাংশে বা শেষাংশে তা পড়তে পারেন। আবার ইচ্ছে করলে ১ম রাতে কিছু আবার শেষ রাতে কিছু পড়তে পারেন। ইচ্ছা করলে সারারাত ধরেও পড়তে পারেন। এটা আপনার ইচ্ছা ও সামর্থ্যের উপর নির্ভরশীল। যে যতটুকু পড়তে পারে আল্লাহ তাতে ততটুকু সওয়াব দান করবেন ইনশাআল্লাহ। কেননা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
صلاة الليل مثنى مثنى، فإذا خشي أحدكم الصبح صلى ركعة واحدة توتر له ما قد صلى».
“রাতের সালাত দু’রাকাত, দু’রাকাত, যখন তোমাদের কেউ ভোর হওয়ার আশংকা করবে, সে এক রাকাত সালাত আদায় করবে, যা তার পূর্বের সালাতগুলো বেজোড় করে দিবে” (বুখারি, হা/ ৯৯০ ও মুসলিম হা/৭৪৯)
🔹রাতের সর্ব শেষ সালাত বিতির:
কেউ যদি শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়তে ইচ্ছা করে তাহলে সে যেন বিতরকে রেখে দেয় এবং তাহাজ্জুদ পড়ার পর বিতির পড়ে।
আব্দুল্লাহ ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«اجعلوا آخر صلاتكم بالليل وتراً».
“রাতে তোমরা তোমাদের সর্বশেষ সালাত আদায় কর বিতির”। {বুখারি: (৯৯৮), মুসলিম: (৭৫১)}
মুসলিমের অপর বর্ণনায় আছে: “যে রাতে সালাত আদায় করে, সে যেন তার সর্বশেষ সালাত আদায় করে বিতিরর ফজরের পূর্বে। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ নির্দেশ দিতেন”। [মুসলিম: ১৫২-(৭৫১)]
আল্লাহ তাওফিক দান কারী।✒✒✒✒উত্তর প্রদানে:আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীলজুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।।
প্রশ্ন: বাড়ীতে তারাবিহ এর সালাত কিভাবে আদায় করতে হয়? আমাদের মধ্যে কোন হাফেয নাই। তাহলে কীভাবে সালাত আদায় করব?
উত্তর:
রমজান মাসে কিয়ামুল লায়ল (রাতের নফল সালাত) বা তারাবিহ এর সালাত আদায় করা বিরাট মর্যাদাপূর্ণ আমল এবং গুনাহ মোচনের মাধ্যম। আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় রমজান মাসে কিয়ামুল লাইল (বা তারাবিহ এর সালাত) আদায় করবে তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মোচন করে দেয়া হবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
তাই রমজানের মহিমান্বিত মাসে আমাদের কর্তব্য, তারাবিহ এর সালাত আদায়ের প্রতি পর্যাপ্ত গুরুত্ব দেয়া।
নিম্নে বাড়িতে তারাবিহ এর সালাত আদায়ের পদ্ধতি সংক্রান্ত কতিপয় বিধিবিধান পেশ করা হল:
- ১. রোগ-ব্যাধির প্রাদূর্ভাব, ভয়ভীতি, ঝড়-বৃষ্টি ইত্যাদি শরিয়ত সম্মত বিশেষ পরিস্থিতিতে মসজিদে যাওয়া সম্ভব না হলে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, জুমা, সালাতুত তারাবিহ ইত্যাদি নিজ বাড়ি/বাসস্থানে আদায় করতে হবে।
- ২. এ ক্ষেত্রে পরিবারের লোকজন বা সঙ্গী-সাথীদেরকে নিয়ে জামাআতে সালাত আদায় করা ভালো।
- ৩. কেউ না থাকলে একাকী আদায় করা যাবে।
- ৪. পরিবারের লোকজন অথবা একাধিক ব্যক্তি জামাআতে সালাত আদায় করলে তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সবচেয়ে ভালো কুরআন তিলাওয়াত করতে জানে এবং সালাতের বিধিবিধান সম্পর্কে জ্ঞান রাখে সে ইমাম হয়ে সালাত পড়াবে।
- ৫. দু জন পুরুষ থাকলে একজন ইমাম হবে এবং অন্যজন ডান পাশে সমান্তরালভাবে দণ্ডায়মান হবে। (চার আঙ্গুল বা আধাহাত আগে-পিছে নয়। এটি সুন্নাহ পরিপন্থী)
- ৬. তিন জন পুরুষ থাকলে একজন ইমাম হয়ে সামনে যাবে আর বাকি দু জন তার পেছনের কাতারে দাঁড়াবে।
- ৭. সাথে এক বা একাধিক মহিলা থাকলে সর্বাবস্থায় সে/তারা পেছনের কাতারে দাঁড়াবে। গাইরে মাহরাম মহিলা থাকলে পর্দার অন্তরালে থেকে জামাআতে অংশ গ্রহণ করা ভালো। আওয়াজ শোনা গেলে পাশাপাশি কক্ষের এক কক্ষে পুরুষ এবং অন্য কক্ষে মহিলারা দাঁড়ালেও সমস্যা নেই।
- ৮. মহিলার জন্য পুরুষের ইমামতি করা বা পুরুষের পাশে দাঁড়িয়ে জামাআতে সালাত পড়া জায়েজ নয়।
- ৯. কোন পুরুষ না থাকলে মহিলারা মহিলাদের ইমামতি করতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে যে ইমাম হবে সে পুরুষদের মত সামনে যাবে না বরং প্রথম কাতারের মধ্যখানে অবস্থান করবে এবং সালাতে কিরাআত পাঠ করার সময় এতটা গলার কণ্ঠ উুঁচু করবে না যে, কোন পরপুরুষ তার গলার কণ্ঠ শুনতে পায়।
- ১০. তারাবির সালাতে কুরআন খতম করা জরুরি নয়। সুতরাং মুসল্লিদের মধ্যে কেউ হাফেজ না থাকলেও কোন সমস্যা নেই। বরং ছোট ছোট সূরা দিয়ে সালাত পড়ালেও যথেষ্ট। তবে ধীর স্থিরতা, ভয়ভীতি ও বিনয় নম্রতা সহকারে কিছুটা দীর্ঘ কিয়াম, রুকু, সেজদা ইত্যাদির মাধ্যমে সালাত পড়ার চেষ্টা করা উত্তম।
১১. তারাবির সালাতের নিয়ম ও রাকআত সংখ্যা:
তারাবিহ সালাত আদায়ের নিয়ম হল, মনে-মনে সুন্নাতে মুয়াক্কাদার নিয়তে তাকবীরে তাহরীমা দিয়ে দাঁড়ানো। অতঃপর উঁচু আওয়াজে কিরাআত সহকারে
যথানিয়মে দু রাকআত দু রাকআত করে মোট ৮ রাকাআত আদায় করার পর তিন রাকআত বিতর সালাত পড়া।
এটাই রমজানে অথবা রমজানের বাইরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাতের সালাতের সাধারণ পদ্ধতি। (সহিহ বুখারী)
তবে কেউ ইচ্ছে করলে এর থেকে কম বা বেশি যা খুশি তা পড়তে পারে। শুধু ২০ রাকাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা ঠিক নয়।
১২. কেউ ইচ্ছে করলে ইশার সালাতের পর তা না পড়ে ফজরের পূর্বে ভোররাতেও পড়তে পারে। অথবা কিছু অংশ ইশার সালাতের পরে আর কিছু অংশ ভোররাতে ফজরের পূর্বে পড়লেও কোন আপত্তি নেই।
তবে ভোররাতে পড়তে চাইলে সব সালাত শেষ করে সর্বশেষ বিতর পড়বে।
আল্লাহ আমাদের সিয়াম, কিয়াম, তিলাওয়াতুল কুরআন সহ সকল প্রকার ইবাদত কবুল করুন এবং রোগ-ব্যাধি ও মহামারী থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করুন। আমীন।
উত্তর প্রদানে:আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।
সহু সাজদাহ
. ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু বুহায়নাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক সালাতে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’রাক‘আত আদায় করে না বসে দাঁড়িয়ে গেলেন। মুসল্লীগণ তাঁর সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলেন। যখন তাঁর সালাত সমাপ্ত করার সময় হলো এবং আমরা তাঁর সালাম ফিরানোর অপেক্ষা করছিলাম, তখন তিনি সালাম ফিরানোর পূর্বে তাকবীর বলে বসে বসেই দু’টি সিজদা্ করলেন। অতঃপর সালাম ফিরালেন। (৮২৯; মুসলিম ৫/১৯, হাঃ ৫৭০, আহমাদ ২২৯৮১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১৫১) সহীহ বুখারীঃ১২২৪ (তাওহীদ পাবলিকেশন
ভুল বশতঃ সালাত পাঁচ রাক‘আত আদায় করলে।
. ‘আবদুল্লাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত পাঁচ রাক‘আত আদায় করলেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, সালাত কি বৃদ্ধি করা হয়েছে? তিনি বললেন, এ প্রশ্ন কেন? (প্রশ্নকারী) বললেন, আপনি তো পাঁচ রাক‘আত সালাত আদায় করেছেন। অতএব তিনি সালাম ফিরানোর পর দু’টি সিজদা্ করলেন। (৪০১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১৫৩) সহীহ বুখারীঃ ১২২৬ (তাওহীদ পাবলিকেশন
দ্বিতীয় বা তৃতীয় রাক‘আতে সালাম ফিরিয়ে নিলে সালাতের সিজদার মত বা তার চেয়ে দীর্ঘ দু’টি সিজদা্ করা।
১২২৭. আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে যুহর বা আসরের সালাত আদায় করলেন এবং সালাম ফিরালেন। তখন যুল-ইয়াদাইন (রাযি.) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া আল্লাহর রাসূল! সালাত কি কম হয়ে গেল? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীগণকে জিজ্ঞেস করলেন, সে যা বলছে, তা কি ঠিক? তাঁরা বললেন, হাঁ। তখন তিনি আরও দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। পরে দু’টি সিজদা্ করলেন। সা‘দ (রহ.) বলেন, আমি ‘উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রহ.)-কে দেখেছি, তিনি মাগরিবের দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করে সালাম ফিরালেন এবং কথা বললেন। পরে অবশিষ্ট সালাত আদায় করে দু’টি সাজ্দাহ্ করলেন এবং বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রকম করেছেন। (৪৮২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১৫৪) সহীহ বুখারীঃ১২২৭ (তাওহীদ পাবলিকেশন)
সালাত তিন রাক‘আত আদায় করা হল না কি চার রাক‘আত, তা মনে করতে না পারলে বসা অবস্থায় দু’টি সিজদা্ করা।
১২৩১. আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন সালাতের জন্য আযান দেয়া হয়, তখন শয়তান পিঠ ফিরিয়ে পালায় যাতে আযান শুনতে না পায় আর তার পশ্চাদ-বায়ু সশব্দে নির্গত হতে থাকে। আযান শেষ হয়ে গেলে সে এগিয়ে আসে। আবার সালাতের জন্য ইক্বামাত(ইকামত/একামত) দেওয়া হলে সে পিঠ ফিরিয়ে পালায়। ইক্বামাত(ইকামত/একামত) শেষ হয়ে গেলে আবার ফিরে আসে। এমনকি সে সালাত আদায়রত ব্যক্তির মনে ওয়াস্ওয়াসা সৃষ্টি করে এবং বলতে থাকে, অমুক অমুক বিষয় স্মরণ কর, যা তার স্মরণে ছিল না। এভাবে সে ব্যক্তি কত রাক‘আত সালাত আদায় করেছে তা স্মরণ করতে পারে না। তাই, তোমাদের কেউ তিন রাক‘আত বা চার রাক‘আত সালাত আদায় করেছে, তা মনে রাখতে না পারলে বসা অবস্থায় দু’টি সিজদা্ করবে। (৬০৮; মুসলিম ৪/৮, হাঃ ৩৮৯, আহমাদ ৯৯৩৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১৫৯) হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) পুনঃনিরীক্ষণঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
সহু সিজদাহ (আবদুল হামীদ ফাইযী)
সহু সিজদা বা সিজদা-এ সাহও (ভুলের সিজদাহ) ফরয বা নফল নামাযে ভুল করে কোন ওয়াজেব অংশ ত্যাগ করলে ঐ ভুলের খেসারত স্বরুপ এবং ভুল আনয়নকারী শয়তানের প্রতি চাবুক স্বরুপ দুটি সিজদাহ করতে হয়। ভুল অনুপাতে সিজদার আগে বা পরে হাদীসে বর্ণিত নিয়মানুসারে সিজদাহ করা জরুরী।
নামায কম পড়ে সালাম ফিরে দিলে :
ভুলবশত: ১ বা ২ রাকআত নামায কম পড়ে সালাম ফিরে থাকলে যদি অল্প (৫/৭ মিনিট) সময়ের মধ্যে মনে পড়ে, তাহলে (মাঝে কথা বলে থাকলেও) নামাযী বাকী নামায সম্পন্ন করে সালাম ফিরার পর তকবীর ও তাসবীহ সহ্ দুটি সিজদাহ করে পুনরায় সালাম ফিরবে।
এ ব্যাপারে যুল-য়্যাদাইনের হাদীস প্রসিদ্ধ। একদা মহানবী (ﷺ) যোহ্র কিংবা আসরের নামায ভুল করে ২ রাকআত পড়ে সালাম ফিরে উঠে অন্য জায়গায় বসলেন। লোকেরা ভাবল, নামায সংক্ষিপ্ত হয়ে গেছে। আবূ বাক্র, উমার কেউই ভয়ে তাঁর সাথে কথা বললেন না। অবশেষে যুল-য়্যাদাইন বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি ভুলে গেছেন, নাকি নামায কম হয়ে গেল?’ তিনি বললেন, “আমি ভুলিও নি, নামায কমও হয় নি।” অতঃপর সকলের উদ্দেশ্যে বললেন, “যুল-য়্যাদাইন যা বলছে তা কি ঠিক?” সকলে বলল, ‘জী হ্যাঁ।’ সুতরাং তিনি অগ্রসর হয়ে বাকী নামায পূরণ করে সালাম ফিরলেন। অতঃপর তকবীর দিয়ে অনুরুপ অথবা তার চেয়ে লম্বা সিজদা দিলেন। তারপর আবার তকবীর দিয়ে মাথা তুললেন। পুনরায় তকবীর দিয়ে অনুরুপ অথবা তার চেয়ে লম্বা আরো একটি সিজদাহ করলেন। তারপর আবার তকবীর দিয়ে মাথা তুলে সালাম ফিরলেন। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১০১৭নং)
অবশ্য দীর্ঘ সময়ের পর মনে পড়লে নূতন করে পুরো নামাযটাই পুনরায় ফিরিয়ে পড়তে হবে।
নামাযের কোন রুক্ন (যেমন কিয়াম, রুকূ, সিজদাহ প্রভৃতি) ভুলে ত্যাগ করলে নামাযই হবে না। যে রাকআতের রুক্ন ত্যক্ত হবে, সে রাকআত বাতিল গণ্য হবে। ঐ ভুল নামাযের মধ্যে প্রথম রাকআতের রুক্ন ছেড়ে দ্বিতীয় রাকআতে মনে পড়লে, দ্বিতীয়কে প্রথম রাকআত গণ্য করে বাকী নামায সম্পন্ন করবে নামাযী। অতঃপর সালাম ফিরার পর দুই সিজদা করে পুনরায় সালাম ফিরবে। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ২৭/৩৯) পক্ষান্তরে নামাযের সালাম ফিরার পর মনে পড়লে এক রাকআত নামায পড়ে ঐরুপ সিজদাহ করবে
নামায বেশী পড়লে :
নামাযে ভুলবশত: ১ রাকআত বা ১টি সিজদাহ বা বৈঠক অতিরিক্ত হয়ে গেলে সালাম ফিরার পর ২টি সহু সিজদা করে পুনরায় সালাম ফিরবে নামাযী।
একদা মহানবী (ﷺ) ৫ রাকআত নামায পড়ে সালাম ফিরলেন। লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, নামায কি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে? তিনি বললেন, “ব্যাপার কি?” লোকেরা বলল, ‘আপনি ৫ রাকআত নামায পড়লেন।’ এ কথা শুনে তিনি দুটি সিজদাহ করলেন। (অতঃপর সালাম ফিরলেন।) (বুখারী, মুসলিম, সুনানু আরবাআহ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ্), মিশকাত ১০১৬নং)
রাকআতে সন্দেহ্ হলে :
নামায পড়তে পড়তে কয় রাকআত হল -এই সন্দেহ্ হলে যেদিকের সঠিকতার ধারণা অধিক প্রবল হবে, তার উপর ভিত্তি করে নামায শেষ করে সালাম ফিরার পর ২টি সিজদাহ করে পুনরায় সালাম ফিরবে।
যদি দুই দিকের মধ্যে কোন দিকেরই সঠিকতার ধারণা প্রবল না হয়, তাহলে দৃঢ় প্রত্যয়ের উপর আমল করবে নামাযী। অর্থাৎ, কম সংখ্যার উপর ভিত্তি করলে নামায অসম্পূর্ণ হওয়ার আশংকা থাকবে না। সুতরাং সেই প্রত্যয়ের সাথে বাকী নামায সম্পন্ন করে সালাম ফিরার পূর্বে দুটি সিজদা-এ সাহও করে সালাম ফিরবে।
মহানবী (ﷺ) বলেন, “যখন তোমাদের কেউ নামাযে সন্দেহ্ করে এবং বুঝতে পারে না যে, সে কয় রাকআত পড়েছে; ৪ রাকআত, না ৩ রাকআত? তখন তার উচিৎ, সন্দেহ্ দূর করে দিয়ে যা একীন (দৃঢ় প্রত্যয়) হয় তার উপর ভিত্তি করা। অতঃপর সালাম ফিরার পূর্বে দুটি সিজদাহ করা। এতে সে যদি ৫ রাকআত পড়ে থাকে তাহলে ঐ সিজদাহ মিলে তার নামায জোড় হয়ে যাবে। অন্যথা যদি পূর্ণ ৪ রাকআত পড়ে থাকে, তাহলে ঐ সিজদাহ শয়তানের জন্য লাঞ্ছনাকর হবে।” (আহমাদ, মুসনাদ, মুসলিম, মিশকাত ১০১৫নং)
প্রথম তাশাহহুদ ত্যাগ করলে :
নামাযী নামাযের প্রথম তাশাহহুদের বৈঠকে বসতে ভুলে গেলে যদি অর্ধেক উঠে খাড়া না হয়ে যায়, (হাঁটুদ্বয় মাটি ত্যাগ না করে) তাহলে মনে পড়লে পুনরায় বসে ‘আত্-তাহিয়্যাত’ পড়ে নেবে। আর এতে সাহু সিজদার প্রয়োজন নেই। অর্ধেকের বেশী উঠে খাড়া হয়ে গেলে এবং সম্পূর্ণ খাড়া না হয়ে মনে পড়লে পুনরায় বসে ‘আত্-তাহিয়্যাত’ পড়ে নেবে এবং শেষে সহু সিজদাহ করবে। কিন্তু যদি সম্পূর্ণ খাড়া হয়ে যায়, তাহলে আর পুনরায় না বসে বাকী নামায পূর্ণ করে সালাম ফিরার পূর্বে দুই সিজদা করে সালাম ফিরবে।
অবৈধ জানার পরেও সম্পূর্ণ খাড়া হওয়ার পর পুনরায় বসে তাশাহহুদ পড়লে নামায বাতিল নয়। কিন্তু ক্বিরাআত শুরু করার পর বসলে নামায বাতিল গণ্য হবে। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৩/৫১১-৫১৩)
একদা মহানবী (ﷺ) নামাযে প্রথম বৈঠকে না বসে উঠে পড়েন। লোকেরা তাসবীহ বললেও তিনি না বসে নামায শেষে দুই সিজদাহ করে সালাম ফিরেন। (বুখারী, মুসলিম, সুনানু আরবাআহ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ্), মিশকাত ১০১৮নং)
তিনি বলেন, “ইমাম ভুলে গিয়ে (তাশাহহুদ না পড়ে) সম্পূর্ণ খাড়া হয়ে গেলে তাকে ২টি সহু সিজদাহ করতে হবে। অবশ্য সম্পূর্ণ খাড়া না হলে সহু সিজদাহ করতে হবে না।” (ত্বাবারানী, মু’জাম জামে ৬২৩নং)
প্রকাশ যে, ৪ রাকআত পড়ে ৫ রাকআতের জন্য ভুলে উঠে সম্পূর্ণ খাড়া হয়ে গেলেও স্মরণ হওয়া বা করানোর সাথে সাথে নামাযী বসে যাবে। কিন্তু প্রথম বৈঠকের জন্য স্মরণ হওয়া বা করানোর পরেও বসবে না।
সহু সিজদার আনুষঙ্গিক মাসায়েল :
ভুলবশত: যে কোনও ওয়াজেব (যেমন রুকূ বা সিজদার তাসবীহ ইত্যাদি মূলেই) ত্যাগ করলে ঐ একই নিয়মে সিজদাহ করতে হবে।
ইমাম সহু সিজদাহ করলে মুক্তাদী ভুল না করলেও তাঁর অনুসরণে তাঁর সাথে সিজদাহ করতে বাধ্য। ইমামের পশ্চাতে মুক্তাদী ভুল করলে যদি সে প্রথম রাকআত থেকেই ইমামের সাথে থাকে, তাহলে তাকে পৃথকভাবে সিজদাহ করতে হবে না। কারণ, তার এ ভুল ইমাম বহন করে নেবে। অবশ্য মসবূক (জামাআতে পিছিয়ে পড়া মুক্তাদী) হলে, ইমামের সালাম ফিরার পর তার বাকী নামায আদায় করতে উঠলে শেষে ভুল অনুসারে যথানিয়মে সিজদাহ করবে।
কিন্তু যদি ইমাম সালাম ফিরার পর সিজদাহ করেন, তাহলে তাঁর সাথে মসবূকের সহু সিজদাহ করা সম্ভব নয়। কারণ সে সালাম ফিরতে পাবে না। তাই সে উঠে বাকী নামায আদায় করে শেষে যথানিয়মে একাকী সিজদাহ করে নেবে। অবশ্য সে যদি ইমামের ভুলের পর জামাআতে শামিল হয়ে থাকে, তাহলে সে ক্ষেত্রে তাকে সিজদাহ করতে হবে না।
ইমাম ভুল করে এক রাকআত নামায বেশী পড়লে এক রাকআত ছুটে গেছে এমন মসবূক (পিছে পড়ে যাওয়া) নামাযী সেই রাকআত গণ্য করতে পারে না। সে রাকআত যেহেতু ইমামের বাতিল, সেহেতু তারও বাতিল। তাকে নিয়ম মত উঠে বাকী এক রাকআত কাযা পড়তে হবে। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৩০৯)
সতর্কতার বিষয় যে, ভুল করে নামাযের কোন রুক্ন ছুটে গেলে নামাযই হয় না। কোন ওয়াজেব ছুটে গেলে সিজদা-এ সাহও দ্বারা পূরণ হয়ে যায় এবং কোন সুন্নত ছুটে গেলে নামাযের কোন ক্ষতি হয় না তথা সহু সিজদারও প্রয়োজন হয় না।
ক্বিরাআত করতে করতে ভুলে গেলে অথবা কাশিতে ধরলে যদি পরিমাণ মত পড়া হয়ে থাকে, তাহলে ইমাম তখনই রুকূতে চলে যাবেন। অবশ্য ক্বিরাআত ছোট মনে হলে অন্য সূরাও পড়তে পারেন। আটকে যাওয়ার পর সূরা ইখলাস পড়েও রুকূ যেতে পারেন। অবশ্য ক্বিরাআত ভুল পড়লে শেষে ঐ সূরা পড়তে হয় -এ কথা মনে করা ঠিক নয়।
power point presentation