বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
ছালাতের বিস্তারিত নিয়ম-কানূন বিভিন্ন হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। তবে নিম্নের হাদীছটিতে অধিকাংশ বিধান একত্রে পাওয়া যায়
‘হযরত আবু হুমায়েদ সা‘এদী (রাঃ) একদিন দশজন ছাহাবীকে বললেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাত সম্পর্কে আপনাদের চাইতে অধিক অবগত। তাঁরা বললেন, তাহ’লে বলুন। তখন তিনি বলতে শুরু করলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন ছালাতে দাঁড়াতেন, তখন
(১) দুই হাত কাঁধ বরাবর উঠিয়ে তাকবীর বলতেন। অতঃপর ক্বিরাআত করতেন। অতঃপর তাকবীর দিয়ে
(২) দু’হাত কাঁধ বরাবর উঠিয়ে রুকুতে যেতেন। এসময় দু’হাত হাঁটুর উপর রাখতেন এবং মাথা ও পিঠ সোজা রাখতেন। অতঃপর সামি‘আল্লা-হু লেমান হামিদাহ বলে রুকূ থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবার সময়
(৩) দু’হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন। অতঃপর তাকবীর দিয়ে সিজদায় গিয়ে দু’হাত দু’পাঁজর থেকে ফাঁক রাখতেন এবং দু’পায়ের আঙ্গুলগুলি খোলা রাখতেন (‘ক্বিবলার দিকে মুড়ে রাখতেন’ -বুখারী হা/৮২৮; ঐ, মিশকাত হা/৭৯২)।
অতঃপর উঠতেন ও বাম পায়ের পাতার উপর সোজা হয়ে বসতেন, যতক্ষণ না প্রত্যেক হাড় স্ব স্ব স্থানে ঠিকমত বসে যায়। অতঃপর দাঁড়াতেন। অতঃপর দ্বিতীয় রাক‘আতেও এরূপ করতেন। অতঃপর যখন দ্বিতীয় রাক‘আত শেষে (তৃতীয় রাক‘আতের জন্য) উঠতেন, তখন তাকবীর দিয়ে দাঁড়িয়ে (৪) দু’হাত কাঁধ বরাবর এমনভাবে উঠাতেন, যেমনভাবে তাকবীরে তাহরীমার সময় উঠিয়েছিলেন। এভাবে তিনি অবশিষ্ট ছালাতে করতেন। অবশেষে যখন শেষ সিজদায় পৌঁছতেন, যার পরে সালাম ফিরাতে হয়, তখন বাম পা ডান দিকে বাড়িয়ে দিতেন ও বাম নিতম্বের উপর বসতেন (قَعَدَ مُتَوَرِّكًا)। অতঃপর সালাম ফিরাতেন’। এ বর্ণনা শোনার পর উপস্থিত দশজন ছাহাবীর সকলে বলে উঠলেন ‘ছাদাক্বতা’ (صَدَقْتَ), ‘আপনি সত্য বলেছেন’। এভাবেই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছালাত আদায় করতেন’।
. আবুদাঊদ হা/৭৩০ ‘হাদীছ ছহীহ’; দারেমী, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ প্রভৃতি; ঐ, মিশকাত হা/৮০১ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪ ‘ছালাতের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ-১০; বঙ্গানুবাদ মেশকাত শরীফ (ঢাকা : এমদাদিয়া লাইব্রেরী, ৫ম মুদ্রণ ১৯৮৭) হা/৭৪৫ (১২), ১/৩৪০ পৃঃ।
সালাতের সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি
কুরআন-হাদীসের আলোকে আমরা জানি যে, আল্লাহকে খুশি করার জন্য কোন ইবাদত করা হলে তা কবুল হওয়ার জন্য কয়েকটি শর্ত রয়েছে। সেগুলোর অন্যতম হলো যে, উক্ত ইবাদত রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সুন্নাত বা শিক্ষা ও পদ্ধতি অনুসারে পালন করতে হবে। তাঁর শিক্ষার বাইরে ইবাদত করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। কাজেই আমাদেরকে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর শেখান পদ্ধতিতে সালাত আদায় করতে হবে। তিনি বলেছেন: “আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখ, সেভাবে তোমরা সালাত আদায় করবে।” বুখারী (১৪-কিতাবুল আযান, ১৮-বাবুল আযান লিলমুসাফির..) ১/২২৬, নং ৬০৫ (ভারতীয় ১/৮৮)।
হাদীসের আলোকে মুসলিম উম্মাহর প্রাজ্ঞ ইমাম ও ফকীহগণ সালাত আদায়ের নিয়মাবলি বিস্তারিত লিপিবদ্ধ করেছেন। সামান্য কয়েকটি বিষয়ে হাদীসের বর্ণনা বিভিন্ন প্রকারের হওয়ার কারণে ফকীহগণ মতভেদ করেছেন। এখানে সংক্ষেপে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো আলোচনা করছি।
১. ওযূ, গোসল বা তায়াম্মুম করে পবিত্র হয়ে, পবিত্র কাপড় পরে সতর আবৃত করে, বিনম্র ও শান্ত মনে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়াতে হবে।
পুরুষদের জন্য সদাসর্বদা নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত শরীর অন্য মানুষের দৃষ্টি থেকে আবৃত করে রাখা ফরয। সালাতের মধ্যে এ অংশটুকু আবৃত করে রাখা ফরয। কেউ দেখুক বা না দেখুক শরীরের এ অংশের মধ্যে কোন স্থান অনাবৃত হলে নামায নষ্ট হয়ে যাবে। তবে কাপড় একদম না থাকলে উলঙ্গ অবস্থাতেই সালাত আদায় করতে হবে। এছাড়া কাঁধ ও শরীরের উপরিভাগ আবৃত করা সুন্নাত। মুমিনের উচিত মহান প্রভুর সামনে দাঁড়ানোর জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সা পছন্দনীয়, পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি পোশাক পরিধান করা।
মহিলাদের জন্য সালাতের মধ্যে শুধু মুখমণ্ডল ও কব্জি পর্যন্ত দুই হাত বাদে মাথার চুলসহ মাথা ও পুরো শরীর আবৃত করা ফরয। সালাতের মধ্যে যদি কোন মহিলার কান, চুল, মাথা, গলা, কাঁধ, পেট, পায়ের নলা ইত্যাদি পূর্ণ বা আংশিক অনাবৃত হয়ে যায় তাহলে সালাত নষ্ট হয়ে যাবে।
২. সামনে সুতরা বা আড়াল রাখুন। দেয়াল, খুঁটি, পিলার বা যে কোন কিছুকে সামনে আড়াল হিসেবে রাখুন। না হলে অন্তত একহাত বা আধাহাত লম্বা সরু কোন লাঠি, কাঠ ইত্যাদি সামনে রাখলেও সুতরার সুন্নাত আদায় হবে। যথাসম্ভব সুতরার কাছে দাঁড়াতে হবে, যেন সাজদা করলে সুতরার নিকটে হয়। রাসূলুল্লাহ সা সুতরার তিন হাতের মধ্যে দাঁড়াতেন।
৩. মনে মনে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সাওয়াবের জন্য সালাত আদায়ের নিয়ত করুন। মুখে নাওয়াইতুআন.. ইত্যাদি বলা সুন্নাতের খেলাফ।
৪. তাকবীরে ইহরাম বা তাকবির তাহরিমা বলতে হয় (আল্লাহ আকবার)। এটা সালাতের একটি রুকন। এর সাথে হাত তোলা সুন্নাহ। দু হাত কাঁধ পর্যন্ত অথবা কান পর্যন্ত উঠান। এ সময়ে হাতের আঙুলগুলো স্বাভাবিকভাবে সোজা থাকবে। একেবারে মিলিত থাকবে না, আবার বিচ্ছিন্নও থাকবে না। হাতের তালু কিবলার দিকে থাকবে। সহজে বুঝার জন্য হাতের তালু থাকবে কাধ বরাবর ও আংগুল থাকবে কাধ থেকে উপর কান বরাবর। রাসূলুল্লাহ (স) হাত উঠিয়ে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তাকবীর দিয়েছেন (বুখারী: ৭৩৭, ইফা ৭০১)।
কখন হাত তুলতে হয় বলতে হয়ঃ নিচের যেকোন এক সময় করা যায়ঃ
ক। আগে হাত তুলে তারপর আল্লাহু আকবর বলা, খ। একই সাথে দুটো কাজ করা, গ। আল্লাহু আকবর বলার পর হাত তোলা
৫. বাঁ হাতের পিঠ, কব্জি ও বাজুর উপর ডান হাত রাখুন, অথবা ডান হাত দিয়ে বাঁ হাত ধরুন। এ ভাবে হাত দুটি বুকের উপর রাখুন। অনেকে নাভী বা পেটের উপরে রেখে থাকেন। তবে জোড়ালো সহীহ বক্তব্য বুকের উপর রাখা। তবে এটা অবশ্যই দাঁড়ানো অবস্থার জন্য। হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীর দিয়ে দুই হাত তুললেন। রাবী বলেন, দুই কান বরাবর। এরপর পরিধানের চাদর গায়ে জড়িয়ে নিলেন, এরপর ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেন …।
عن وائل بن حجر : أنه رأى النبي صلى الله عليه وسلم رفع يديه حين دخل في الصلاة كبر، وصف همام حيال أذينه، ثم التحف بثوبه، ثم وضع يده اليمنى على اليسرى …-সহীহ মুসলিম ১/১৭৩
হযরত হুলব আতত্বয়ী রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ইমাম হতেন এবং তাঁর ডান হাত দিয়ে বাম হাত ধরতেন।
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يؤمنا فيأخذ شماله بيمينه. رواه الترمذي وقال : حديث حسن.-জামে তিরমিযী ১/৩৪; ইবনে মাজাহ ৫৯
كان الناس يؤمرون أن يضع الرجل اليد اليمنى على ذراعه اليسرى في الصلاة. قال أبو حاتم : لا أعلمه إلا ينمى ذلك إلى النبي صلى الله عليه وسلم.
হযরত জাবির রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন নামাযরত ব্যক্তির নিকট দিয়ে গমন করছিলেন, যিনি ডান হাতের উপর বাম হাত রেখে নামায পড়ছিলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত খুলে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেন।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৫০৯০
৬. নামাযের মধ্যে সবিনয়ে সাজদার স্থানে দৃষ্টি রাখুন। এদিক-সেদিক দৃষ্টিপাত করবেন না, উপরের দিকে তাকাবেন না। হাদীসে বলা হয়েছে, “যারা নামায রত অবস্থায় উপর দিকে তাকায়, তাদের অবশ্যই তা থেকে বিরত হতে হবে, অন্যথায় তাদের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হতে পারে। বুখারী (১৬-কিতাবু সিফাতিস সালাত, ১০-বাব রাফয়িল বাসার) ১/২৬১, নং ৭১৭ (ভা.১/১০৩-১০৪)।
৭. তাকবীরে তাহরীমার পরে সানা বা শুরুর দু‘আ পাঠ করুন। দু’আ উল ইস্তিফতাহ, এটা পড়া সুন্নাহ।
৮. এরপর অনুচ্চস্বরে (মনে মনে) বলুন : এটাও সুন্নাহ
أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ/ أَعُوذُ بِاللَّهِ السَّمِيعِ الْعَلِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ مِنْ هَمْزِهِ وَنَفْخِهِ وَنَفْثِهِ
(আ‘ঊযু বিল্লা-হি মিনাশ শায়ত্বা-নির রাজীম) আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি। অথবা বলুন: “আ‘ঊযু বিল্লা-হিস সামী‘িয়ল ‘আলীমি মিনাশ শায়ত্বা-নির রাজীম, মিন হাম্যিহী, ওয়া নাফ্খিহী ওয়া নাফ্সিহী:‘আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে, তার প্রবঞ্চনা, জ্ঞান নষ্টকারী ও অহংকার সৃষ্টিকারী প্ররোচনা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।” আবূ সায়ীদ খুদরী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. সালাতের ‘সানা’ পাঠের পর বলতেন: “আ‘ঊযু …মিন হাম্যিহী, ওয়া নাফ্খিহী ওয়া নাফ্সিহী।” হাদীসটি সহীহ তিরমিযী (আবওয়াবুস সালাত, বাব মা ইয়াকূলু ইনদা ইফতিতাহ..) ২/১০, (ভা ১/৫৭
৯. এরপর অনুচ্চস্বরে (মনে মনে) বলুন: “বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম।” অর্থাৎ (পরম করুণাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি।)——— সুন্নাহ
১০. এরপর অর্থের দিকে লক্ষ রেখে প্রার্থনার আবেগে প্রতিটি আয়াতে থেমে থেমে সূরা ফাতিহা পাঠ করুন।—-রুকন
সূরা ফাতিহা পাঠ করা সালাতের জন্য অতীব প্রয়োজনীয়। তবে যদি কেউ সূরা ফাতিহা না জানেন, তাহলে তা শিখতে থাকবেন। যতদিন শেখা না হবে ততদিন সূরা পাঠের পরিবর্তে তাসবীহ তাহলীল করবেন। বলবেন : (সুব‘হা-নাল্লা-হ), (আল‘হামদু লিল্লা-হ), (লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ), আল্লা-হু আকবার), ( লা- ‘হাওলা ওয়ালা- ক্বুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ)।
১১. সূরা ফাতিহা পাঠ শেষ হলে “আমীন” বলবেন। “আমীন” শব্দের অর্থ “হে আল্লাহ আমাদের প্রার্থনা কবুল করুন।” এরপর কুরআনের অন্য কোন সুরা বা কিছু আয়াত পাঠ করুন। এই কিরাত পড়া সুন্নাহ।
এরপর “আল্লাহ আকবার” বলতে বলতে রুকু করুন। তাকবীর বলতে হবে রুকুতে যেতে যেতে।(তাকবীর অফ মুভমেন্ট) এই তাকবীর বলা ওয়াজীব।
রুকুতে যাওয়ার সময় হাত তোলা(রফে ইয়াদাইন) সুন্নাহ।
রুকু অবস্থায় দুহাত(হাতের তালু) দুহাঁটুর উপর দৃঢ়ভাবে রাখুন, হাতের আঙুল ফাঁক করে হাঁটু আঁকড়ে ধরুন। দুবাহুকে ও দুহাতের কুনুইকে দেহ থেকে সরিয়ে রাখুন। এ অবস্থায় পিঠ লম্বা করে দিতে হবে, পিঠ কোমর ও মাথা এমন ভাবে সোজা ও সমান্তরাল থাকবে যে পিঠের উপর পানি ঢেলে দিলে তা গড়িয়ে পড়বে না। এ ভাবে রুকুতে পুরোপুরি শান্ত ও স্থির হয়ে যেতে হবে। এইক্ষেত্রে মাথা উপরের দিকে খাড়া বা বেশী নীচের দিকে নীচু হয়ে যাবে না। মাঝামাঝি অবস্থায় থাকবে। এই সময় দৃষ্টি কোথায় রাখবে, রাসূল সা এই ব্যপারে নির্দিষ্ট করে বলে দেন নি। তবে স্কলারদের বক্তব্য দৃষ্টি থাকবে দাঁড়ানো জায়গা ও সাজদাহর জায়গার মাঝামাঝি অথবা দুই পায়ের মাঝামাঝি জায়গাতে( শায়েখ আলবানী রহ)।
রুকুর তাসবীহ পাঠ করুন। সুবহানা রব্বিয়াল আজীম একবার বলা ওয়াজীব। বেশী পড়া সুন্নাহ।
১২. রুকু থেকে উঠার সময় বলতে হবে সামিয়াল্লাহুলিমান হামীদাহ, পরিপূর্ণ সোজা হয়ে দাঁড়ান ও বলা রব্বানা লাকাল হামদ। রুকু ও সাজদা থেকে উঠে কয়েক মুহূর্ত পরিপূর্ণ সোজা থাকা সালাতের অন্যতম ওয়াজিব। রুকু থেকে উঠে পুরোপুরি সোজা হয়ে না দাঁড়িয়ে সাজদায় চলে গেলে সালাত নষ্ট হয়ে যাবে।
রুকু থেকে উঠার সময়ও হাত তোলা(রফে ইয়াদাইন) করা সুন্নাহ।
ইমামের পিছনে সালাত আদায় করার ক্ষেত্রে ইমাম সামিয়াল্লাহুলিমান হামীদাহ বলবে (ওয়াজীব) কিন্তু পিছনে মুক্তাদী(যারা ইমামের পিছনে সালাত আদায় করছেন) এটা বলবে না, শুধু বলবে রব্বানা লাকাল হামদ। ইমামও রব্বানা লাকাল হামদ বলবেন। এরপর হাত পাশে বা বুকের উপর রাখতে পারেন।
১৩. এরপর আল্লাহু আকবার বলতে বলতে শান্তভাবে সাজদা করবেন। সাজদা করার সময় প্রথম দুহাঁটু এরপর দুহাত অথবা প্রথম দুহাত এরপর দুহাঁটু মাটিতে রাখা- উভয় প্রকার হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। সাজদা অবস্থায় দুপা, দুহাঁটু, দুহাত, কপাল ও নাক মাটিতে দৃঢ়ভাবে লেগে থাকবে। দুহাতের আঙুল মিলিত অবস্থায় সোজা কিবলামুখি থাকবে। দুহাতের পাতা দুকানের নিচে অথবা দুকাঁধের নিচে থাকবে। দুহাতের বাজু ও কনুই মাটি থেকে উপরে থাকবে এবং কোমর থেকে দূরে সরে থাকবে। সাজদার সময়ে নাক মাটি থেকে উঠবে না। হাদীসে বলা হয়েছে: “যতক্ষণ কপাল মাটিতে থাকবে, ততক্ষণ নাকও মাটিতে থাকবে, অনথ্যায় সালাত শুদ্ধ হবে না।” সুনানুদ দারাকুতনী ১/৩৪৮, তাবারানী, আল-মু’জামুল কাবীর ২২/১০৫।
সাজদার সময় পায়ের আঙুল কিবলামুখি থাকবে। সাজদার সময় দুপায়ের গোড়ালি একত্রিত থাকবে।
প্রসিদ্ধ হানাফী ফকীহ আল্লামা ইবনুু আবিদীন শামী রুকুর নিয়ম প্রসঙ্গে বলেন:
(ويسن أن يلصق كعبيه ) قال السيد أبو السعود وكذا في السجود أيضا ….
“সুন্নাত হলো মুসাল্লী তার পায়ের গোড়ালিদুটি একত্রিত করে রাখবে। সাইয়েদ আবুস সাঊদ বলেন:সাজদার মধ্যেও এভাবে পায়ের গোড়ালিদ্বয় একত্রিত রাখা সুন্নাত।” ইবন আবিদীন শামী, হাশিয়াত ইবন আবিদীন (রাদ্দুল মুহতার) ১/৪৯৩, ১/৫০৪।
এ মতটি সহীহ হাদীস দ্বারা সমর্থিত। এক হাদীসে আয়েশা (রা) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সা.) তাহাজ্জুদ আদায় করছিলেন। আমি অন্ধকারে হাত বাড়ালাম,
فَوَجَدْتُهُ سَاجِدًا رَاصًّا عَقِبَيْهِ مُسْتَقْبِلاً بِأَطْرَافِ أَصَابِعِهِ الْقِبْلَةَ
“আমি স্পর্শ করে দেখলাম তিনি সাজদায় রত, তাঁর পায়ের গোড়ালিদ্বয় একত্রিত করে পায়ের আঙুলগুলির প্রান্ত কিবলামুখি করে রেখেছেন। ইবন খুযাইমা, আস-সহীহ ১/৩২৮ (নং ৬৫৪); হাকিম, আল-মুসতাদরাক ১/৩৫২। হাদীসটি সহীহ।
১৪. সাজদায় স্থির ও শান্ত হতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: “সাজদা করবে এবং সাজদায় এমন ভাবে শান্ত হবে যেন তোমার সকল অস্থি ও জোড় শান্ত ও শিথিল হয়ে যায়। আব দাউদ (কিতাবুস সালাত, বাব.. লা ইউকীমু সুলবাহ) ১/২২৪-২২৫, নং ৮৫৭ (ভারতীয় ১/১২৪); মুসতাদরাক হাকিম ১/৩৬৮।
তিনি বলেন, “দৃঢ়ভাবে কপাল, নাক ও দুহাত মাটিতে রেখে সাজদায় স্থির থাকবে, যেন তোমার দেহের সকল অস্থি নিজ নিজ স্থানে থাকে। সহীহ ইবন খুযাইমা ১/৩২২। এ অবস্থায় সাজদার তাসবীহ পাঠ এবং দু‘আ করুন। যেকোন দু’আ করা যাবে।
সাজদাহ অবস্থায় আশে পাশে জায়গা নিয়ে সমস্যা থাকলে হাতকে একটু ভিতরে হাটুর উপর বা ভিতরে নিয়ে আসতে পারেন,তবে কোন অবস্থাতেই মাটিতে হাত বিছিয়ে দিবে না।
১৫.“আল্লাহ আকবার” বলতে বলতে সাজদা থেকে উঠে বসতে হবে এবং সম্পুর্ণ স্থির হতে হবে যেন শরীরের সকল অস্থি নিজ নিজ স্থানে স্থির হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, সালাত শুদ্ধ হতে হলে দুসাজদার মাঝে অবশ্যই স্থির হয়ে বসতে হবে।
আবূ দাউদ (কিতাবুস সালাত, বাব.. মান না ইউকীমু সুলবাহু) ১/২২৪-২২৭ (ভারতীয় ১/১২৪); মুসতাদরাক হাকিম ১/৩৬৮, সহীহ ইবনু খুযাইমা ১/৩২২।
রাসূলুল্লাহ সা. যতক্ষণ রুকু এবং সাজদায় থাকতেন রুকু থেকে দাঁড়িয়ে ও দু সাজদার মাঝে বসে প্রায় তত সময় কাটাতেন। বুখারী (১৬-কিতাব সিফাতিস সালাত, ৩৯-বাব হাদ্দি ইতমামির রুকু) ১/২৭৩ (ভারতীয় ১/১০৯); মুসলিম (৪-কিতাবুস সালাত, ৩৮-বাব ই’তিদাল আরকান..) ১/৩৪৩ (ভারতীয় ১/১৮৯)
১৬.এ সময়ে বাম পা বিছিয়ে দিয়ে তার উপর শান্ত হয়ে বসতে হবে। ডান পায়ের আঙ্গুলগুলোকে কিবলামুখী করে পা সোজা রাখতে হবে।এই অবস্থাকে ইফতিরাশ বলা হয়। দু হাত দু উরু ও হাঁটুর উপরে থাকবে। আঙ্গুলগুলো স্বাভাবিক সামান্য ফাঁক অবস্থায় কিবলামুখী থাকবে। এ সময়ে মাসনূন যিকর পাঠ করুন।
১৭. এরপর “আল্লা-হু আকবার” বলে দ্বিতীয়বার সাজদা করতে হবে। দ্বিতীয় সাজদাতে প্রথম সাজদার মত শান্ত ও স্থিরভাবে অবস্থান করতে হবে এবং উপরে বর্ণিত যিকর ও দু‘আ পাঠ করতে হবে।
জালসা আল ইস্তিরাহঃ দ্বিতীয় রাক’আতে উঠার আগে দুই সাজদাহর পর একটু বসা যেনো সকল অংগ প্রত্যংগ নির্দিষ্ট জায়গায় আসতে পারে,এটা করা সুন্নাহ।
উল্লেখ্য যে রুকু, সাজদা, রুকু থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ও দুই সাজদার মাঝে বসে শান্ত হওয়া এবং তাড়াহুড়া না করা নামাযের জন্য অতীব গুরুত্বপুর্ণ এবং এতে অবহেলা করলে নামায নষ্ট হয়ে যাবে। কষ্ট করে নামায পড়েও তা যদি নবীজির (সা.) শিক্ষার বিরোধিতার কারণে আল্লাহ কবুল না করেন তাহলে তার চেয়ে দুঃখের বিষয় আর কিছুই হতে পারে না। রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, “যে মুসল্লী পুরোপুরি শান্তভাবে রুকু সাজদা আদায় করে না, তার সালাতের দিকে আল্লাহ তাকান না। মুসনাদ আহমদ ৪/২২,তাবারানী, আল-মু’জামুল কাবীর ৮/৩৩৮।
তিনি বলেন, “সবচেয়ে খারাপ চোর যে নিজের সালাত চুরি করে।” সাহাবীরা প্রশ্ন করেন, “হে আল্লাহর রাসূল, নিজের সালাত কীভাবে চুরি করে?” তিনি বলেন, “সালাতের রুকু ও সাজদা পুরোপুরি আদায় করে না।” মুসনাদ আহমদ ৩/৫৬, ৫/৩১০; সহীহ ইবনু খুযাইমাহ ১/৩৩১; সহীহ ইবনু হিব্বান ৫/২০৯;
তিনি একদিন সালাত আদায় করতে করতে লক্ষ্য করেন যে একব্যক্তি রুকু ও সাজদা করার সময় স্থির হচ্ছে না। তিনি সালাত শেষে বলেন, “হে মুসলিমগণ, যে ব্যক্তি রুকুতে এবং সাজদায় পুরোপুরি স্থির ও শান্ত না হবে, তার সালাত আদায় হবে না। ইবন মাজাহ ১/২৮২ তিরমিযী,
১৮. এরপর “আল্লা-হ আকবার” বলতে বলতে দ্বিতীয় রাক‘আতের জন্য দাঁড়াতে হবে। সাজদা থেকে উঠে দাঁড়ানোর সময় পরিপূর্ণ আদব ও ভক্তির সাথে শান্তভাবে প্রথমে দুই হাত, তারপর দুই হাঁটু মাটি থেকে উপরে উঠাতে হবে। উপরের নিয়মে দ্বিতীয় রাক‘আত আদায় করতে হবে।
১৯. দ্বিতীয় রাক‘আত পূর্ণ হলে তাশাহ্হুদের জন্য বসতে হবে। দুই সাজদার মাঝে মাঝে যেভাবে বসতে হয়, সেভাবে বাম পা বিছিয়ে ডান পা খাড়া করে আঙুলগুলো কিবলামুখী করে বসতে হবে। বাম হাত স্বাভাবিকভাবে বাম উরু বা হাঁটুর উপর বিছানো থাকবে। ডান হাত ডান উরুর উপর থাকবে, ডান হাতের আঙ্গুলগুলো মুঠি করে শাহাদাত আঙ্গুলী বা তর্জনী দিয়ে তাশাহহুদ ও দু‘আর সময় কিবলার দিকে ইঙ্গিত করা সুন্নাত। চোখের দৃষ্টি ইঙ্গিতরত তর্জনীর দিকে থাকবে। দুরাক‘আত সালাত হলে তাশাহ্হুদের পর দরুদ ও দু‘আ পাঠ করতে হবে। তিন বা চার রাক‘আত সালাত হলে তাশাহ্হুদ পড়ে উঠে দাঁড়াতে হবে। শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদ, দরুদ ও দু‘আ পাঠ করতে হবে।
নবী মুবাশ্শির (ﷺ) বলেন, “যখন তোমাদের মধ্যে কেউ(শেষ) তাশাহহুদ সম্পন্ন করবে, তখন সে যেন আল্লাহর নিকট চারটি জিনিস থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে। এরপর সে ইচ্ছামত দুআ করবে।”দুআটি নিম্নরুপ:-
اَللّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ وَ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَ فِتْنَةِ الْمَمَاتِ।
উচ্চারণ:- আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিন আযা-বি জাহান্নাম, অ আঊযু বিকা মিন আযা-বিল ক্বাবর, অআঊযু বিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জা-ল, অআঊযু বিকা মিন ফিতনাতিল মাহ্য়্যা অ ফিতনাতিল মামা-ত।
অর্থ:- হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি জাহান্নাম ও কবরের আযাব থেকে, কানা দাজ্জাল, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (মুসলিম, আহমাদ, মুসনাদ ২/২৩৫, আবূদাঊদ, সুনান ৯৮৩, নাসাঈ, সুনান ১৩০৯, ইবনে মাজাহ্, সুনান ৯০৯, দারেমী, সুনান, ইবনুল জারুদ ১১০, সিরাজ, আহমাদ, মুসনাদ ২/২৩৭, ৪৪৭, বায়হাকী ২/১৫৪, মিশকাত ৯৪০ নং)
তিনি বলেন, “তোমরা কবরের আযাব থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাও, জাহান্নামের আযাব থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাও, মাসীহ্ দাজ্জালের ফিতনা থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাও এবং জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাও।” (মুসলিম, সহীহ ৫৮৮ নাসাঈ, সুনান)
সুতরাং নামাযের শেষ তাশাহ্হুদে দরুদের পর অন্যান্য দুআর পূর্বে উক্ত চার প্রকার আযাব ও ফিতনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা ওয়াজেব।
তাওয়ার্রুক হচ্ছেঃ তাশাহুদের শেষ বৈঠকে বসার সময় বাম পা’কে ডান পায়ের নীচে বের করে দিয়ে নিতম্ব জমিনে রেখে তাঁর উপর বসা এবং ডান পা’কে খাড়া রাখা।(ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম প্রশ্ন নং (২৫৬)
২০. সালামের মাধ্যমে সালাত শেষ করতে হবে। ডান দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলতে হবে “আস্সালা-মু আ‘লাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লা-হ’ এরপর বাম দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলতে হবে “আস্সালা-মু আ‘লাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লা-হ”।
তিনি এতটা মুখ ফিরাতেন যে, (পেছন থেকে) তাঁর ডান গালের শুভ্রতা দেখা যেত। অতঃপর বাম দিকে মুখ ফিরিয়ে অনুরুপ বলে সালাম ফিরতেন। আর এতেও তাঁর বাম গালের শুভ্রতা (পেছন থেকে) দেখা যেত। (মুসলিম, সহীহ ৫৮২, আবূদাঊদ, সুনান ৯৯৬ নং, নাসাঈ, সুনান)
ইমামের পিছনে সালাত আদায়কালে ইমাম যখন দ্বিতীয় সালাম শেষ করবে তখন মুক্তাদি ১ম সালাম দিবে ও ২য় সালাম।
২১. সালামের সাথে সাথে সালাত শেষ হয়ে যায়। সালামের পরে নামাযের আর কোন কর্ম- ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত, মুস্তাহাব কিছুই বাকী থাকে না। সালামের পরে মাসনূন যিকর ও দু‘আ পৃথক ইবাদত।
সংগৃহিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রুকুর তাসবিহও একাধিক ছিল। যেমন
(ক). কখনো سبحان ربي العظيم (আমার মহান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি।) এবং
(খ). কখনো سبحان ربي العظيم وبحمده (আমার মহান রবের পবিত্রতা ও তার প্রশংসা জ্ঞাপন করছি।) পড়তেন,
(গ). আবার কখনো পড়তেন, «سُبُّوحٌ قُدُّوسٌ، رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوحِ». (প্রশংসার পাত্র, মহাপবিত্র, মালায়েকা ও রূহের রব।) (ঘ). আবার কখনো পড়তেন,
«اللَّهُمَّ لَكَ رَكَعْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَلَكَ أَسْلَمْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ أَنْتَ رَبِّي خَشَعَ سَمْعِي وَبَصَرِي وَدَمِي وَلَحْمِي وَعَظْمِي وَعَصَبِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالِمِينَ».
“হে আল্লাহ, আপনার জন্যে রুকু করেছি, আপনার প্রতি ঈমান এনেছি, আপনার নিকট আত্মসমর্পণ করেছি এবং আপনার উপর তাওয়াক্কুল করেছি। আপনিই আমার রব। আমার কান, চোখ, রক্ত, গোস্ত, হাড্ডি ও স্নায়ু ভীত হয়েছে দোজাহানের রব আল্লাহর জন্যে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু থেকে উঠে سمع الله لمن حمده (আল্লাহ তাকে শুনেছেন যে তার প্রশংসা করেছে।) বলার পর বলতেন, ربنا ولك الحمد (হে আমাদের রব, আর আপনার জন্যেই সকল প্রশংসা।)
কখনো বলতেন, ربنا لك الحمد (হে আমাদের রব, আপনার জন্যেই সকল প্রশংসা।)
কখনো বলতেন, اللهم ربنا (و) لك الحمد (হে আল্লাহ, হে আমাদের রব, আর আপনার জন্যেই সকল প্রশংসা।)
আবার কখনো বলতেন, «مِلْءُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ، وَمِلْءُ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ». (আসমান ও জমিন ভর্তি এবং এগুলো ছাড়া যা চান তা ভর্তি আপনার প্রশংসা।) কখনো তার সাথে আরো যোগ করতেন,
«أَهْلُ الثَّنَاءِ وَالْمَجْدِ. اللَّهُمَّ! لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ».
“হে প্রশংসা ও সম্মানের মালিক। হে আল্লাহ, আপনি যা দেন তা আটকে রাখার কেউ নেই এবং আপনি যা আটকে রাখেন তা দান করার কেউ নেই। আর আপনার পাকড়াও থেকে কোনো সম্মানীকে সম্মান নাজাত দিতে পারবে না।)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদায় পড়তেন,
سبحان ربي الأعلى (আমি আমার মহা উচ্চ রবের পবিত্রতা ঘোষণা করছি।)
কখনো পড়তেন, سبحان ربي الأعلى وبحمده (আমি আমার মহা উচ্চ রবের পবিত্রতা এবং তার প্রশংসা করছি।) কখনো পড়তেন, «سُبُّوحٌ قُدُّوسٌ، رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوحِ». (আপনি মহা প্রশংসিত, মহা পবিত্র, মালায়েকা ও রূহের—জিবরিলের রব) কখনো পড়তেন, «سُبحانَكَ اللّهمَّ ربَّنا وَبِحمدِكَ، اللّهمَّ اغفِرْ لي». (হে আল্লাহ, হে আমাদের রব, আপনার পবিত্রতা ও প্রশংসা করছি। হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করুন।) আবার কখনো পড়তেন,
«اللَّهُمَّ لَكَ سَجَدْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ، وَلَكَ أَسْلَمْتُ، سَجَدَ وَجْهِي لِلَّذِي خَلَقَهُ وَصَوَّرَهُ، وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ، تَبَارَكَ الله أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ».
“হে আল্লাহ, আমি আপনার জন্যেই সাজদাহ করেছি, আপনার প্রতি ঈমান এনেছি এবং আপনার নিকটই আত্মসমর্পণ করেছি। আমার চেহারা সে সত্ত্বাকে সাজদাহ করেছে যে তাকে সৃষ্টি করেছে ও আকৃতি দিয়েছে; এবং তার কান ও চোখ বিদীর্ণ করেছে। আল্লাহ বরকতময় ও সর্বোত্তম স্রষ্টা।”
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই সাজদাহ’র মাঝে স্থিরভাবে বসে পড়তেন
«رَبِّ اغْفِرْ لِي رَبِّ اغْفِرْ لِي». (হে আমার রব, আমাকে ক্ষমা করুন। হে আমার রব, আমাকে ক্ষমা করুন।)
কখনো এর সাথে যোগ করতেন, «اللهم اغفرلي وارحمني واجبرني وارفعني واهدني وعافني وارزقني».
(হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করুন, রহম করুন, আমার ক্ষতিপূরণ করুন, আমার মর্যাদা বৃদ্ধি করুন, আমাকে হিদায়েত দিন, আমাকে নিরাপদ রাখুন ও আমাকে রিজিক দান করুন।)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশাহহুদের বৈঠকে একাধিক তাশাহহুদ পড়েছেন প্রমাণিত আছে,
(ক). যেমন ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তাশাহহুদ,
«التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ». متفق عليه.
“মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক সকল ইবাদত আল্লাহর জন্যে। হে নবী, আপনার উপর সালাম, আল্লাহর রহমত ও বরকত। আর সালাম আমাদের ওপর ও আল্লাহর নেক বান্দাদের ওপর। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তার বান্দা ও রাসূল।”
(খ). ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে ইমাম মুসলিম ও আবু আওয়ানাহ প্রমুখ বর্ণিত তাশাহহুদ, যেমন:
«التحيات المباركات الصلوات الطيبات لله، السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته، السلام علينا وعلى عباد الله الصالحين، أشهد أن لا إله إلا الله وأشهد أن محمدًا رسول الله».
“পবিত্র, বরকতময় মৌখিক ও শারীরিক ইবাদতসমূহ আল্লাহর জন্যে। হে নবী, আপনার উপর সালাম, আল্লাহর রহমত ও বরকত। আর সালাম আমাদের উপর ও আল্লাহর নেক বান্দাদের উপর। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল।”
(গ). আবু মুসা আশ’আরি রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে ইমাম মুসলিম ও আবু আওয়ানাহ প্রমুখ বর্ণিত তাশাহহুদ, যেমন:
«التحيات الطيبات والصلوات لله ، السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته ، السلام علينا وعلى عباده الصالحين ، أشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له وأشهد أن محمدًا عبده ورسوله».
“মৌখিক ও শারীরিক পবিত্র ইবাদতসমূহ আল্লাহর জন্যে। হে নবী, আপনার উপর সালাম, আল্লাহর রহমত ও বরকত। আর সালাম আমাদের উপর ও আল্লাহর নেক বান্দাদের উপর। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, তিনি এক, তার কোনো শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তার বান্দা ও রাসূল।”
মুসল্লি যদি কখনো এই তাশাহহুদ কখনো ঐ তাশাহহুদ পড়ে তাহলে সহজে একাগ্রচিত্ত হাসিল হবে। অনুরূপভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর পঠনীয় সালাত ও সালাম বিভিন্ন বাক্যের রয়েছে, যেমন,
1- «اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ».
“হে আল্লাহ, মুহাম্মাদ ও তার পরিবারের উপর রহমত নাযিল করুন। যেমন রহমত নাযিল করেছেন ইবরাহিমের উপর ও তার পরিবারের উপর। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ, আপনি মুহাম্মাদের উপর ও তার পরিবারের উপর বরকত দিন, যেমন বরকত দান করেছেন ইবরাহিম ও তার পরিবারের উপর। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত।”
2- «اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَعَلَى أَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ. وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ بَيْتِهِ وَعَلَى أَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ».
“হে আল্লাহ, মুহাম্মাদের উপর, তার বাড়ির সদস্য এবং তার স্ত্রী ও সন্তানদের উপর রহমত নাযিল করুন, যেমন রহমত নাযিল করেছেন ইবরাহিমের উপর। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। আর আপনি বরকত দিন মুহাম্মাদের উপর, তার বাড়ির সদস্য এবং তার স্ত্রী ও সন্তানদের উপর, যেমন বরকত দান করেছেন ইবরাহিম ও তার পরিবারের ওপর। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত।”
3- «اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ فِي الْعَالَمِيْنَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ».
“হে আল্লাহ, উম্মী নবী মুহাম্মাদের ওপর ও তার পরিবারের ওপর রহমত নাযিল করুন, যেমন ইবরাহিমের উপর রহমত নাযিল করেছেন। আর আপনি বরকত দিন উম্মী নবী মুহাম্মাদের উপর ও তার পরিবারের উপর, যেমন বরকত দান করেছেন উভয় জগতে ইবরাহীমের ওপর। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত।”
আরো অনেক সালাত ও সালাম রয়েছে। কখনো এটা কখনো ওটা পড়াই সুন্নত, যেমন একটু আগে আলোচিত হয়েছে, তবে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হওয়ার কারণে কিংবা হাদিসের কিতাবসমূহে প্রসিদ্ধ হওয়ার কারণে কিংবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন সালাত পাঠ করার পদ্ধতি জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তখন তিনি যেটা যত্নসহ শিখিয়েছেন সেটাকে বিশেষ বিবেচনায় রাখার কারণে কিংবা অন্য কোনো কারণে কোনো একটি সালাত ও সালামকে প্রাধান্য দেওয়া নিন্দনীয় নয়।
উল্লিখিত আযকার, তাশাহহুদ, সালাত (দরূদ) ও সালাম আলবানি রাহিমাহুল্লাহ রচিত ‘সিফাতু সালাতিন নবী’ গ্রন্থ থেকে সংগ্রহ করা। এগুলো তিনি সেখানে খুব পরিশ্রম করে হাদিসের বিভিন্ন কিতাব থেকে জমা করেছেন।
power point presentation
প্রানবন্ত সালাতঃ ৬ষ্ঠ পর্ব [Autosaved]