আসসালামু’আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে
ধারণা বলতে- কোন ব্যক্তি, বস্তু বা অন্য কিছু সম্পর্কে পূর্বানুমানকে বুঝায়। সেই অনুমানটি ভাল-মন্দ উভয়ই হতে পারে। ভাল ধারণার ব্যাপারে ইসলামে উৎসাহিত করা হয়েছে। তবে তীব্র আপত্তি আছে খারাপ ধারণার ব্যাপারে।
যেকোন কাজ করতে উদ্যোগ নেয়ার পূর্বে পরিস্থিতি সম্পর্কে বা পরিনতি ভালো মন্দ সম্ভাব্য কি হতে পারে, সেই জন্য ধারনা করা হয়। এইক্ষেত্রে ব্যক্তির নিজের সাথেই সংশ্লিষ্ট থাকে ব্যপারটা। এটা নিষেধ নয়।
মানসিকতাই একজন মানুষের প্রকৃত পরিচয়। ধারণা পোষণ করার মূল ভিত্তি এই মানসিকতা। ব্যক্তির বর্তমান মানসিকতা দিয়েই ধারনার কাজটি হয়ে থাকে। তাহলে বর্তমান মানসিকতাকে স্বচ্ছ সুন্দর রাখার জন্য যে শিক্ষা ইসলাম দিয়েছে তার পরিচর্যা করা প্রয়োজন। আর তাই উচিত, আমাদের মানুসিকতাকে ইসলামের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করা।
মন্দ এবং ভালো ধারনা মূলত একটি মানসিকতার সাথে সম্পর্কিত। যার মানসিকতা যেমন সে মানুষের প্রতি ধারনাও করে থাকে তেমন। আমরা মুখে মুখে প্রায়ই এই গল্পটি শুনে থাকি–
একদিন শীতের রাতে সুবহে সাদিকের সময় একজন মুমিন বান্দা অজু করার জন্য পুকুর ঘাটে এলেন । একই সময় এক চোর ব্যক্তি চুরি শেষে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেস হতে এলো। মুমিন বান্দা চোর ব্যক্তিকে দেখে ভাবলেন- ভেবেছিলাম এমন শীতের রাতে আমি বুঝি একাই ফজরের নামাজের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি । নাহ আল্লাহর আরো একজন বান্দাও অজু করতে এসেছেন। অপরদিকে চোর ব্যক্তি মুমিন বান্দাকে দেখে ভাবতে লাগলো- ভেবেছিলাম এমন শীতের রাতে আমি একাই বুঝি মানুষের ঘরে সিদ কাটি। নাহ, আমার চোর এই মহল্লাতে আরো রয়েছ। গল্পটি একটি কৌতুকভিত্তিক ঘটনা হলেও এর মাঝে শিক্ষা নিহিত।
মহান আল্লাহ কুর’আনে ইরশাদ করেছেন-
হে ঈমানদাগণ, বেশী ধারণা ও অনুমান করা থেকে বিরত থাকো কারণ কোন কোন ধারণা ও অনুমান গোনাহ৷ দোষ অন্বেষন করো না৷ আর তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে৷ এমন কেউ কি তোমাদের মধ্যে আছে, যে তার নিজের মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে ? দেখো, তা খেতে তোমাদের ঘৃণা হয়৷ আল্লাহকে ভয় করো৷ আল্লাহ অধিক পরিমাণে তাওবা কবুলকারী এবং দয়ালু৷ সূরা হুজরাতঃ ১২
যে তিন বিষয় থেকে এ আয়াতে বেঁচে থাকতে বলা হয়েছে তার প্রথমটি হচ্ছে ‘যন’ বা ধারণা।
কুরআন মজীদের ইরশাদ- ‘বেঁচে থাক বেশী ধারণা থেকে।’ সেই ‘বেশী ধারণা’ কী – তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি; অনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘বহু ধারণা’ থেকে বেঁচে থাক। অর্থাৎ, ধারণার ক্ষেত্রে সতর্ক হতে বলা হয়েছে। বহু ধারণা আছে যা বর্জনীয়। সুতরাং মনে যা-ই আসে তা-ই বাস্তব মনে কর্রা যাবে না। ভিত্তিহীন ধারণা, অপ্রাসঙ্গিক ধারণা মনে আসামাত্র বাতিল করে দিতে হবে।
মনে স্থান না পেলে তা ক্ষতি করতে পারে না এবং গুনাহও হয় না। কিন্তু মনে স্থান পেলে তা মুখেও আসতে পারে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাথে অন্যায় আচরণও হয়ে যেতে পারে। আর কে না জানে, গীবত ও মিথ্যা অপবাদ গুনাহ। কারো সাথে অন্যায় আচরণ করা গুনাহ।
আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরকারকগণ চার প্রকারের ধারণার কথা বলেছেন।
প্রথমত- আল্লাহ্, তাঁর রাসূল (সাঃ) এবং ঈমানদারদের ব্যাপারে ভাল ধারণা পোষণ করা অত্যন্ত পছন্দনীয়।
দ্বিতীয়ত- বিচারক রায় দেয়ার সময় ধারণার ভিত্তিতেই রায় দেন। তিনি ঘটনার সময় সংশ্লিষ্ট স্থানে উপস্থিত ছিলেন না বিধায় দুই পক্ষের সাক্ষ্য-প্রমাণ যাচাই করে তার যেদিকে মন সায় দেয় সেদিকেই রায় দেন। এমন ধারণা জায়েজ।
তৃতীয়ত- কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দলের দৈনন্দিন আচার-আচরণ, কর্মসূচী ও কর্মপদ্ধতির মাধ্যমে যদি এমন বিষয় ফুটে উঠে যার ভিত্তিতে ভাল ধারণার কোন যুক্তি থাকতে পারেনা তবে এমন ক্ষেত্রে খারাপ ধারণা পোষণ করা নির্দিষ্ট সীমাতে বৈধ। তবে বৈধ খারাপ ধারণা পোষণের চূড়ান্ত সীমা হচ্ছে তার সম্ভাব্য দুষ্কৃতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। নিছক ধারণার ভিত্তিতে আরো অগ্রসর হয়ে তার বিরুদ্ধে কোন তৎপরতা চালানো ঠিক নয়।
চতুর্থত- এই প্রকার ধারণাটি মূলত হারাম।
তা হল- বিনা কারণে কারো প্রতি সন্দেহবশত খারাপ ধারণা পোষণ করা। কারো ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে খারাপ ধারণা নিয়েই শুরু করা অনুচিত। কিংবা এমন লোকদের ব্যাপারে খারাপ ধারণা পোষণ করা যাদের বাহ্যিক চাল-চলন ও ব্যবহার সৎ মানুষের সাক্ষ্য বহন করে। কোন লোকের ব্যাপারে যদি ভাল-মন্দের দিকটি সমান সমান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তবে তার সম্পর্কেও খারাপ ধারণা পোষণ নাজায়েজ। সন্দেহের বশবর্তী হয়ে কারো প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করার ব্যপারে ইসলামে কঠিনভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
আর এই বিষয়টি যেনো আজ পরিবার সমাজ রাষ্ট্রে রন্ধ্র রন্ধ্র প্রবেশ হয়ে যাচ্ছে কোন এক অপশক্তির কারনে, অজ্ঞতার কারনে, অসচেতনতার কারনে।
ফলে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র সামাজিক জীবনে এর প্রভাব অত্যন্ত কঠিন, জটিল ও ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে পরিবারসমূহ। আর ইসলামের মূল প্রান হলো এই পরিবার।
আল-মুআশারাহ অর্থ জীবন-যাপন ও চাল-চলন। ইসলামী শরীয়তে ‘আলমুআশারাহ’ শব্দটা অনেক ব্যাপক। আমরা সামাজিক বলতে সমাজবদ্ধ জীবনকে বুঝি। কিন্তু ইসলামী শরীয়তে মুআশারাহ আরো ব্যাপক অর্থে ব্যবহার হয়। দু’জন ব্যক্তি যেখানে আছে বা যেখানেই কোনো সঙ্গ আছে, সেখানেই ইসলামী শরীয়তের মুআশারাহ ও তার বিধান এসে যাবে।
তাহলে মু’আশারাহ সুন্দর হওয়ার জন্য; শান্তিময় হওয়ার জন্য, এক গুরুত্বপূর্ণ হলো ভিত্তিহীন প্রমাণহীন কুধারণা বা অমূলক ধারণা থেকে বেঁচে থাকা।
স্ত্রী স্বামী সম্পর্কে, স্বামী স্ত্রী সম্পর্কে, বাবা সন্তান সম্পর্কে, সন্তান বাবা সম্পর্কে, ভাই ভাই সম্পর্কে, সঙ্গী সঙ্গী সম্পর্কে, কর্মকর্তা কর্মচারী সম্পর্কে, কর্মচারী কর্মকর্তা সম্পর্কে, কর্মস্থলের সঙ্গী একে অপরের সম্পর্কে এভাবে একে অন্যের বিষয়ে কুধারণা এবং ভিত্তিহীন ধারণা থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
এই ক্ষেত্রে যে ধারনা করছেন তার যেমন ভূমিকা আছে তেমনি যার সম্পর্কে ধারনা করা হচ্ছে তারও ভূমিকা রয়েছে।
যিনি ধারনা করছেন তার কর্তব্য কুর’আনের শিক্ষাকে সামনে রাখা ও সতর্ক করা নিজেকে।
যার সম্পর্কে ধারনা করা হচ্ছে তার কর্তব্য ধারনা করার মত পরিবেশ বা ঘটনা সৃষ্টি না করা।
আমরা রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের একটি ঘটনা থেকে এটা জানতে পারি।
একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার এক স্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি তাদের কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওই ব্যক্তিকে ডেকে বললেন, ওহে! ইনি হচ্ছে আমার (ওমুক) স্ত্রী। তখন ওই ব্যক্তি বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি অন্য কারো ব্যাপারে এরূপ মন্দধারণা পোষণ করতামও; আপনার ব্যাপারে তো আমি এরূপ মন্দধারণা পোষণ করতাম না।
(তখন) তিনি বললেন, ‘শয়তান আদম-সন্তানের রক্তপ্রবাহের শিরায় শিরায় বিচরণ করে। (আদাবুল মুফরাদি)
এখানে হাদীস থেকে যা বুঝা যাচ্ছেঃ
- তাফসির বিশারদগণ বলেন, ‘মূলত ভালো লোকের প্রতি মন্দ ধারণা পোষণ করা বৈধ নয়। আবার মন্দ লোক পাপাচারীর প্রতি মন্দ ধারণা করা অবৈধ নয়। (কুরতুবি)
- কারো প্রতি অহেতুক খারাপ ধারণা সৃষ্টিতে শয়তান সব সময় মানুষের পেছনে কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে। প্রিয়নবির হাদিস দ্বারাই এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
- ধারনা যেনো না করতে পারে সেইজন্য পূর্বেই সেই বিষয়ে জানিয়ে দেয়া।
আমার উম্মতের মনে যে সকল কথা আসে আল্লাহ তা মাফ করে দিয়েছেন যে পর্যন্ত না (সে অনুযায়ী) কোনো কাজ করে বা মুখে উচ্চারণ করে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৬৬৪)
কিন্তু যখন লাগামহী হয়ে যায় এই ধারনা করার বিষয়টি, তখন ব্যক্তি প্রায় সব ক্ষেত্রেই অধিক ধারনায় মগ্ন হয়ে যান। এর ফলে ব্যক্তির যে ক্ষতিসমূহ দেখা যায়ঃ
অধিক ধারনার ক্ষতিকর দিক সমূহঃ( যিনি সকল ব্যপারেই সব সময়ই অধিক ধারনায় করে থাকেন)
১। মানসিক অস্থিরতায় ভুগেন
২। মানুষের প্রতি আস্থা রাখার যোগ্যতা হারাতে থাকে্ন
৩। প্রশান্ত আত্মা বা কলবে সালীম থেকে বঞ্চিত (মনের ভিতর অন্যের সম্পর্কে খারাপ ধারনা রেখে সুস্থ অন্তর হতে পারে না)
৪। ব্যক্তিগত ইবাদাতেও মনোযোগ হারিয়ে ফেলে
৫। স্মরন শক্তি লোপ পেতে পারে
৬। সহজ ও সাধারন ব্যপারটিও জটিল হয়ে দাঁড়ায়
৭। পারস্পরিক ভালবাসার জায়গাটা দূর্বল হতে থাকে
৮। একসময় মানসিক রোগীতে পরিনত হতে পারে।
৯। আল্লাহর কাছে ভালো কাজের গ্রহনযোগ্যতা হারাতে পারে।(কুধারনা করে কাজের ধরন পালটে যায়,ত্রুটিযুক্ত হয়ে যায় আমল)
১০। প্রায়শঃই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেন।
১১। দৃঢ়চিত্ত যোগ্যতা হারিয়ে দূর্বলতা আসে(দিধা দন্ধে ভুগেন)
এবার একটি বিষয় আরো সুস্পষ্ট করা প্রয়োজন তা হলো- কয়েকটি বিষয়ের ব্যপারে সুধারনা বা পজিটিভ ধারনা করা একজন মুসলিমের জন্য অবশ্যই কর্তব্য।
১। আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে সুধারণা রাখা মুমিনের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এক বিখ্যাত হাদীসে কুদসীতে আছে, (তরজমা) ‘আমার প্রতি বান্দার যে ধারণা আমি সে ধারণার কাছে থাকি। যদি সে আমাকে স্মরণ করে আপন মনে আমিও তাকে স্মরণ করি আপন মনে। আর যদি সে আমাকে স্মরণ করে কোনো মজলিসে আমি তাকে স্মরণ করি তার চেয়ে উত্তম মজলিসে। সে যদি আমার দিকে এক বিঘৎ আসে আমি তার দিক এক হাত যাই। সে যদি এক হাত আসে আমি তার দিকে চার হাত যাই। সে যদি আমার দিকে হেঁটে আসে আমি তার দিকে দৌঁড়ে যাই।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস ৭৪০৫ ; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬৭৫)
সহীহ মুসলিমে হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকালের তিন দিন আগে ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) ‘তোমাদের প্রত্যেকের মৃত্যু যেন এ অবস্থায় হয় যে, সে আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করেছে।’ (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৭৮৮)
২। আল্লাহ পাক যেসব বিধি-বিধান দান করেছেন সে সম্পর্কে সুধারনা রাখা অত্যাবশ্যক।
ইসলামের বিধি-বিধান সম্পর্কে এ দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হবে যে, এর প্রত্যেকটিই আমাদের জন্য কল্যাণকর।
এবং সৎবৃত্তি্কে (ইসলামের বিধি বিধান) সত্য বলে মেনে নিয়েছে, তাকে আমি সহজ পথের সুযোগ – সুবিধা দেবো৷সূরা লাইলঃ৭
জ্ঞান ও অধ্যয়নের স্বল্পতা বা চিন্তা-ভাবনার অগভীরতার কারণে বিশেষ কোনো বিধানের সুফল ও সৌন্দর্য হয়তো আমি পুরোপুরি বুঝতে পারছি না কিন্তু এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যেসব বিধান আমাদের দান করেছেন তা সবই আমাদের কল্যাণের জন্য। আমাদের দুনিয়া-আখেরাতের শান্তি ও সফলতার জন্য। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে এই সুধারণা রাখা ফরয।
কুর’আনে আদম আ সৃষ্টির সময় ফেরেশতাদের সাথে আল্লাহর কথোপকথন জানা যায়–
আবার সেই সময়ের কথা একটু স্মরণ কর যখন তোমাদের রব ফেরেশতাদের বলেছিলেন , “আমি পৃথিবীতে একজন খলীফা- প্রতিনিধি নিযুক্ত করতে চাই ৷” তারা বললো , “আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে নিযুক্ত করতে চান যে সেখানকার ব্যবস্থাপনাকে বিপর্যস্থ করবে এবং রক্তপাত করবে? আপনার প্রশংসা ও স্তুতিসহকারে তাসবীহ পাঠ এবং আপনার পবিত্রতা বর্ণনা তো আমরা করেই যাচ্ছি৷ ” আল্লাহ বললেন, “আমি জানি যা তোমরা জানো না ৷
সূরা আল বাকারাঃ৩০
এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আল্লাহ্পাক জানিয়ে দিলেন- যে বিষয়ে প্রকৃত জ্ঞান নেই সে বিষয়ে শুধু সন্দেহ করে বক্তব্য দেয়া বা মন্তব্য করার কোন সুযোগ নেই।
ফেরেশতাগণ পরবর্তীতে তাদের এরূপ ধারণার জন্য অনুতপ্ত হন। ইরশাদ হয়েছে-
(ফেরেশতারা) তারা বললোঃ “ত্রুটিমুক্ত তো একমাত্র আপনারই সত্তা, আমরা তো মাত্র ততটুকু জ্ঞান রাখি যতটুকু আপনি আমাদের দিয়েছেন ৷ প্রকৃতপক্ষে আপনি ছাড়া আর এমন কোন সত্তা নেই যিনি সবকিছু জানেন ও সবকিছু বোঝেন ৷বাকারাঃ৩২
৩। দ্বীনের ধারক-বাহকের সম্পর্কে ধারণা। সাহাবা-তাবেয়ীন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন, মুজাহিদীন-মুহাদ্দিসীন সম্পর্কে কুধারণা পোষণ থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
হজ্বের মওসুমে মিসরের এক লোক আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা.-এর কাছে এসে বলল, আপনাকে কিছু বিষয় জিজ্ঞাসা করতে চাই। আপনি তার জবাব দিবেন। এক. আপনি কি জানেন, ‘উসমান রা. উহুদ যুদ্ধের দিন পলায়ন করেছিলেন?’ ইবনে ওমর রা. বললেন, ‘হ্যাঁ’। মিসরী বলল, ‘আপনার কি জানা আছে, তিনি বদরের যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন?’ ইবনে ওমর রা. বললেন, ‘হ্যাঁ’। মিসরী বলল, ‘তিনি যে বাইয়াতে রিদওয়ানেও অনুপস্থিত ছিলেন তা-ও কি জানেন?’ ইবনে ওমর রা. বললেন, ‘হ্যাঁ’। মিসরী বলে উঠল, ‘আল্লাহু আকবার!’ (অর্থাৎ এত দোষ যার সে কেমন লোক!) আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বললেন, শোনো, বিষয়গুলো তোমাকে বুঝিয়ে বলছি। (তোমার প্রথম অভিযোগ) ওহুদ যুদ্ধে ছত্রভঙ্গ হওয়া। এ বিষয়ে আমার সাক্ষ্য এই যে, আল্লাহ তা ক্ষমা করে দিয়েছেন। (কারণ, ওহুদ যুদ্ধের ঘটনায় কুরআন মজীদে সাধারণ ক্ষমা ঘোষিত হয়েছে। দ্র. সূরা আলে ইমরান ৩ : ১৫২, ১৫৫)
এরপর বদরের যুদ্ধে তাঁর অনুপস্থিতি। এর কারণ হচ্ছে, আল্লাহর রাসূলের কন্যা ছিলেন তাঁর স্ত্রী। আর তিনি অসুস্থ ছিলেন। একারণে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে (স্ত্রীর কাছে থাকার আদেশ করেছিলেন এবং) বলেছিলেন, তুমি বদরে উপস্থিত একজনের মতো সওয়াব ও গনীমত পাবে।’
এরপর বাইয়াতে রিদওয়ানে তাঁর উপস্থিত না থাকা। এর কারণ হচ্ছে, (স্বয়ং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে মক্কায় কাফিরদের কাছে পাঠিয়েছিলেন) মক্কাবাসীর কাছে তাঁর চেয়ে অন্য কেউ অধিক সম্মান ও মর্যাদা পাত্র হলে উসমান রা.-এর জায়গায় তাকেই পাঠানো হত। উসমান রা. মক্কায় যাওয়ার পর বাইয়াতে রিদওয়ান সংঘটিত হয়েছিল তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান হাতের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, এ হচ্ছে উসমানের হাত। এরপর তা আপন বাম হাতের উপর রেখে বলেছিলেন, এ হচ্ছে উসমানের বাইয়াত! (সুবহানাল্লাহ)
মিসরীর তিন অভিযোগের জবাব দেয়ার পর ইবনে ওমর রা. বললেন, ‘এ জবাবগুলো নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যাও।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৬৯৮)
চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গের জন্য এ ঘটনায় অনেক শিক্ষণীয় বিষয় আছে।
বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম সায়ীদ ইবনুল মুসাইয়াব রাহ. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক সাহাবী আমাকে লিখে পাঠিয়েছেন, তোমার ভাইয়ের কাজ ও অবস্থা তার উত্তম অর্থে গ্রহণ কর যে পর্যন্ত না এর বিপরীতে ভারী কোনো প্রমাণ আসে এবং কোনো মুসলিমের কোনো কথার মন্দ ব্যাখ্যা করো না যে পর্যন্ত তার কোনো ভালো ব্যাখ্যা করা তোমার পক্ষে সম্ভব হয়। আর যে নিজের সম্পর্কে সন্দেহের সুযোগ সৃষ্টি করে সে যেন শুধু নিজেকেই ভৎর্সনা করে। আর যে নিজের গোপন কথা গোপন রাখে কর্তৃত্ব তার হাতেই থাকে। আর যে তোমার বিষয়ে আল্লাহর নাফরমানী করল এর উত্তম বিনিময় এর চেয়ে আর কী হতে পারে যে, তুমি তার বিষয়ে আল্লাহর ফরমাবরদারী কর। (শুআবুল ঈমান, বাইহাকী ৩ : ১৫০)
সতর্কতা বনাম কুধারনাঃ
অভিজ্ঞতার প্রচলিত একটা কথা আছে الحزم سوء الظن ‘অর্থাৎ সতর্কতার দাবি হচ্ছে কুধারণা’-এর অর্থ এই নয় যে, সবার কথাকেই শুধু সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখবে। বরং অর্থ হল, সবার সাথেই সতর্কতা অবলম্বন করা। যদি আগে থেকেই জানা থাকে যে, কোন একজন কোনো ক্ষতি করতে চায় তাহলে যেমন সতর্ক থাকা দরকার তেমন সতর্কতা প্রথম থেকেই অবলম্বন করা। কিন্তু এর জন্যে তো তার সম্বন্ধে কুধারণার প্রয়োজন নেই।
সাবধান থাকার কথা শরীয়তই বলেছে, আবার প্রমাণ ছাড়া কুধারণা থেকেও বাঁচতে বলেছে। এই ভারসাম্যপূর্ণ নির্দেশনাই ইসলামী শরীয়তের শিক্ষা ।
এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় হল, কারো প্রতি যদি আমার অনিচ্ছাতেই কোনো খারাপ ধারণা এসে যায়, তাহলে কী হবে? অনিচ্ছার ধারণায় গুনাহ হবে না। তবে সেই ধারণার ভিত্তিতে যদি তার সমালোচনা করা হয় বা তার সাথে কোনো অন্যায় আচরণ করা হয় তাহলে সেটা হবে গোনাহ। তাই এ সন্দেহের অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্যে কর্তব্য তা মুখে প্রকাশ না করা এবং এর ভিত্তিতে কোনো আচরণ না করা’
অধিক ধারনা করার কবল থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য এই সম্পর্কে অহীর জ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক।
এই সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা কি জানা যাকঃ
১। “যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই সেই বিষয়ে অনুমান দ্বারা পরিচালিত হইয়ো না। নিশ্চয় কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয় ওদের প্রত্যেকের নিকট কৈফিয়ত তলব করা হবে।” (সূরা বনী ইসরাইল: ৩৬)
২। ধারণা বা অনুমান নির্ভর হলো কাফির ও মুশরিকদের কাজ-
“আর যে বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই, তারা কেবলমাত্র ধারণা অনুমানের অনুসরণ করে আর সত্যের মোকাবেলায় ধারনা অনুমান কোন কাজে আসবে না।” ( সূরা ৫৩ আন-নাজম:২৮)
৩। মুমিনের পারস্পরিক সম্পর্ক রক্ষার কিছু ভিত্তি
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ‘তোমরা ধারণা থেকে বেঁচে থাক। কারণ, ধারণা ভিত্তিক কথাই হ’ল সবচেয়ে বড় মিথ্যাকথা। তোমরা একে অপরের দোষ অনুসন্ধান কর না। পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ কর না এবং পরস্পর দুশমনি কর না, বরং তোমরা পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও হে আল্লাহর বান্দারা’।বুখারী হা/৪৮৪৯, ৫১৪৩
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা কু-ধারণা পোষণ করা থেকে বিরত থাক। কারণ কু-ধারণা সব চাইতে বড় মিথ্যা কথা। অপরের গোপনীয় দোষ খুঁজে বেড়ায়ো না, অপরের গোয়েন্দাগিরি করো না, একে অপরের সাথে [অসৎ কাজে] প্রতিদ্বন্দ্বিতা করো না, পরস্পরের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ করো না, একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুভাবাপন্ন হইয়ো না। তোমরা আল্লাহর বান্দা, ভাই ভাই হয়ে যাও; যেমন তিনি তোমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন। এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার প্রতি জুলুম করবে না, তাকে অসহায় অবস্থায় ছেড়ে দেবে না এবং তাকে তুচ্ছ ভাববে না। আল্লাহ-ভীতি এখানে রয়েছে। আল্লাহ-ভীতি এখানে রয়েছে। [এই সাথে তিনি নিজ বুকের দিকে ইঙ্গিত করলেন।] কোন মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ ভাবা একটি মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য যথেষ্ট। প্রত্যেক মুসলিমের রক্ত, সম্ভ্রম ও সম্পদ অপর মুসলিমের উপর হারাম। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের দেহ ও আকার-আকৃতি দেখেন না, বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমল দেখেন।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘তোমরা পরস্পর হিংসা করো না, পরস্পরের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ করো না, অপরের গোয়েন্দাগিরি করো না, অপরের গোপনীয় দোষ খুঁজে বেড়ায়ো না, পরস্পরের পণ্যদ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে দিয়ো না। তোমরা আল্লাহর বান্দা, ভাই ভাই হয়ে যাও।’’
আর এক বর্ণনায় আছে, ‘‘তোমরা পরস্পর সম্পর্ক-ছেদ করো না, একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুভাবাপন্ন হইয়ো না, পরস্পরের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ করো না, পরস্পর হিংসা করো না। তোমরা আল্লাহর বান্দা, ভাই ভাই হয়ে যাও।’’
অন্য আরও এক বর্ণনায় আছে, ‘‘তোমরা একে অন্যের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করো না এবং অপরের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয় করো না।’’ (এ সবগুলি মুসলিম বর্ণনা করেছেন এবং এর অধিকাংশ বর্ণনা করেছেন বুখারী) সহীহুল বুখারী ৫১৪৪, ৬০৬৪, ৬০৬৬, ৬৭২৪, মুসলিম ১৪১৩, ২৫৬৩, হাদিসের মানঃ সহিহ
৪। আখেরাতের জবাবদিহীতা
নিশ্চয় কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয় ওদের প্রত্যেকের কাছে কৈফিয়ত তলব করা হবে’ (সূরা বনি ইসরাইলঃ৩৬)।
৫। যা শুনি তা-ই বিশ্বাস করা বিভ্রান্ত হওয়ার পথ সুগম করে
আর তুমি যদি দুনিয়ার বেশির ভাগ লোকের কথা অনুসরণ করো তাহলে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিভ্রান্ত করে ফেলবে; তারা শুধু ধারণা-অনুমানের অনুসরণ করে আর তারা ধারণা-অনুমান ছাড়া আর কিছুই করছে না’ (সূরা আনআম-১১৬)।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অনুমানকারীরা ধ্বংস হোক।’ (সূরা যারিয়াত : ১০)।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন- “কোন ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে সে যা শুনে তা বলে বেড়ায়।” কথাটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
আল হুজুরাতের ৬ নং আয়াতে আল্লাহ্ বলেন-“হে ঈমান গ্রহণকারীগণ, যদি কোন ফাসেক তোমাদের কাছে কোন খবর নিয়ে আসে তাহলে তা অনুসন্ধান করে দেখ। এমন যেন না হয় যে, না জেনে শুনেই তোমরা কোন গোষ্ঠীর ক্ষতি করে বসবে এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে।
৬। নিজ গৃহেই অপদস্থ হয় অন্যের দোষ খুজায় (অধিক ধারনা আসার পথকে খুলে দেয় দোষ খুঁজতে যাওয়া)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাস আরো বলেন-
‘ওহে যারা মৌখিক স্বীকৃতির মাধ্যমে ঈমান এনেছ, অথচ এখনো অন্তঃকরণে ঈমান পৌঁছেনি! তোমরা মুসলিমদের নিন্দা কর না, তাদের ছিদ্রান্বেষণ কর না। কেননা যে ব্যক্তি অপরের দোষ খোঁজে আল্লাহ তার দোষ অনুসন্ধান করেন। আর আল্লাহ যার দোষ তালাশ করেন, তাকে তার নিজস্ব বাসগৃহেই অপদস্থ করেন’।আবুদাঊদ হা/৪৮৮০
রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনকে এমন দোষে দোষারোপ করবে যা থেকে সে মুক্ত, আল্লাহ তাকে ‘রাদগাতুল খাবাল’ নামক জাহান্নামের (পুঁজ, রক্ত ও মলমূত্রের) গর্তে বাসস্থান করে দেবেন, যতক্ষণ সে অপবাদ থেকে ফিরে না আসে (অপবাদের প্রমাণ দিতে না পারে)।’ (আবু দাউদ)।
৭। সন্দেহ করা শাসকদের জন্য নিষেধ (সন্দেহ থেকেই ধারনা বা ধারনা থেকেই সন্দেহ)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “শাসকরা যখন সন্দেহের বশে মানুষের দোষ অনুসন্ধান করতে শুরু করে তখন তাদের চরিত্র নষ্ট করে দেয়।” [আবু দাউদ: ৪৮৮৯]
মু’আবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ আমি নিজে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ
“তুমি যদি মানুষের গোপনীয় বিষয় জানার জন্য পেছনে লাগো। তাদের জন্য বিপর্যয় সৃষ্টি করবে কিংবা অন্তত বিপর্যয়ের দ্বার প্রান্তে পৌছে দেবে।” [আবু দাউদ: ৪৮৮৮]
সন্দেহপ্রবণতা নিয়ে বিশ্ববিখ্যাত মনিষীদের কয়েকটি উক্তি (নেট থেকে সংগৃহিত)
কার্ভেন্টিস বলেছেন- “দোষী লোকদের মধ্যে সন্দেহ সবসময় প্রখরভাবে বিরাজ করে।”
এমিলি ডিকেনসন বলেছেন- “অতিরিক্ত সন্দেহ অমঙ্গল ডেকে আনে।”
জন উইলসন বলেন- “যে যাকে সন্দেহ করে তার ভাল কাজকেও সে স্বীকৃতি দিতে পারে না।” অল্টার ম্যালোনা বলেন- “সৎলোকেরা কখনো সন্দেহের নিকট নিজেকে সমর্পণ করে না।”
হযরত লোকমান (আ:) বলেন- “সন্দেহপ্রবণতা ত্যাগ করতে না পারলে দুনিয়ায় তুমি কোনো বন্ধু খুঁজে পাবে না।” মনিষীদের আলোচ্য উক্তিগুলোতে অনুমান বা সন্দেপ্রবণতার কু-ফল উল্লেখ করা হয়েছে।
তাহলে বুঝা যাচ্ছে অধিক ধারনা যা অপ্রয়োজনীয়, খারাপ, যা ব্যক্তির অন্তরকে কলুসিত করে দেয়, যা সম্পর্কে ফাটল ধরিয়ে দেয়, যা বিপর্যয় এনে দেয় তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
মক্কা বিজয়ের সময় কা’বার তাওয়াফের পর তিনি যে বক্তৃতা করেছিলেন তাতে বলেছিলেনঃ “সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি তোমাদের থেকে জাহেলিয়াতের দোষ-ত্রুটি ও অহংকার দূর করে দিয়েছেন। হে লোকেরা! সমস্ত মানুষ দু’ ভাগে বিভক্ত। এক, নেককার ও পরহেজগার যারা আল্লাহর দৃষ্টিতে মর্যাদার অধিকারী। দুই, পাপী ও দুরাচার যারা আল্লাহর দৃষ্টিতে নিকৃষ্ট। অন্যথায় সমস্ত মানুষই আদমের সন্তান। আর আদম মাটির সৃষ্টি।” [তিরমিযী: ৩১৯৩]
বিদায় হজ্জের সময় আইয়ামে তাশরীকের মাঝামাঝি সময়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বক্তৃতা করেছিলেন। তাতে তিনি বলেছিলেন, “হে লোকজন! সাবধান তোমাদের আল্লাহ একজন। কোন অনারবের ওপর কোন আরবের ও কোন আরবের ওপর কোন অনারবের কোন কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গের ও কোন শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণঙ্গের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই আল্লাহভীতি ছাড়া। তোমাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বেশী আল্লাহভীরু সেই আল্লাহর কাছে সর্বাধিক মর্যাদাবান। আমি কি তোমাদেরকে পৌঁছিয়েছি? তারা বলল, আল্লাহর রাসূল পৌঁছিয়েছেন। তিনি বললেন, তাহলে যারা এখানে উপস্থিত আছে তারা যেন অনুপস্থিত লোকদের কাছে এ বাণী পৌছিয়ে দেয়।” [মুসনাদে আহমাদ: ৫/৪১১]
মহান আল্লাহ আমাদের নেককার পরহেজগার গ্রুপের মধ্যে শামিল করুন ও তাকওয়ার অধিকারী করে মর্যাদাবান করুন।